॥ এম এ খালেক ॥

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন দেশের ওপর রেসিপ্রোক্যাল ট্যাক্স বা বাড়তি শুল্ক আরোপের ফলে আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক সামগ্রি রপ্তানি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে ৬০টি দেশের ওপর রেসিপ্রোক্যাল ট্যাক্স বা বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছিল। এ সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তাদের ওপর আরোপিত রেসিপ্রোক্যাল ট্যাক্স বা বাড়তি শুল্ক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে নানা অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়। প্রাথমিকভাবে শুল্ক নির্ধারণের পর যে তিন মাস সময় দেয়া হয়েছিল তা বাংলাদেশ সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারিনি। বাংলাদেশ এমন সময় আলোচনা শুরু করে যখন রেসিপ্রোক্যাল ট্যাক্স বা বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিদল যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন ঠিক তখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ অন্তত ২১টি দেশের ওপর রেসিপ্রোক্যাল ট্যাক্স আরোপ করে পত্র দেয়।

বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের প্রধান বাণিজ্য উপদেষ্টা যদিও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইস্যুটি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে এবং খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে একটি সন্তোষজনক সমঝোতায় উপনীত হওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু তার এ বক্তব্যে পুরোপুরি আস্থা রাখা যাচ্ছে না। শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করার জন্য আমদানিযোগ্য মার্কিনী পণ্যের ওপর থেকে বর্তমানে যে শুল্কারোপ করা হচ্ছে তা পুরোপুরি প্রত্যাহারের চিন্তা করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক যদি প্রত্যাহার করা হবে তাহলে আগেই তা করা হলো না কেনো? বাংলাদেশ যদি আরো আগেই এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতো তাহলে এ পরিস্থিতিতে হয়তো পড়তে হতো না। কথায় বলে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের হাজার ফোঁড়ের সমান। বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তি শুল্কারোপ ইস্যুতে আলোচনার ক্ষেত্রে যে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে তার দায়ভার কে নেবে?

এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিদন্দ্বী হচ্ছে ভিয়েতনাম। বিশ^বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বর্তমানে দ্বিতীয়। ভিয়েতনাম তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিশ^বাণিজ্য সংস্থার তথ্য মতে, ২০২৪ সালে চীন বিশ^বাজারে ১শ’ ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে শীর্ষস্থানে অবস্থান করছিল। আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক পণ্যের বাজার চীনের অংশিদারিত্ব হচ্ছে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ। একই বছরে বাংলাদেশ মোট ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক বাজারে বাংলাদেশের অংশিদারিত্ব হচ্ছে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম ঐ বছর মোট ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। তাদের বাজার অংশিদারিত্ব হচ্ছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। তুরস্ক মোট ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। তাদের বাজার অংশিদারিত্ব হচ্ছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। ভারত ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে পঞ্চম অবস্থানে ছিল। তাদের বাজার অংশিদারিত্ব হচ্ছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা পরিসংখ্যানের দিকে দৃষ্টি দিলেই অনুধাবন করা যাবে। বাংলাদেশ প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে তার মধ্যে ৮৪ শতাংশ জুড়ে আছে তৈরি পোশাক। এ তৈরি পোশাক রাপ্তানি কার্যক্রম মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা সম্বলিত জিএসপি প্রদান করে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৪৮ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির জন্য কোটা সুবিধা দিয়েছে ২০০৫ সাল পর্যন্ত। কোটা সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করতো। ২০০৫ সালে বিশ^বাণিজ্য সংস্থার আওতায় সব ধরনের কোটা সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেয়া কোটা সুবিধা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সীমিত পরিসরে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের জন্য জিএসপি সুবিধা প্রদান শুরু করে। কিন্তু এক পর্যায়ে কারখানায় শ্রম অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এ অজুহাত তুলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দেয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। এরপর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সময় গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক প্রদান করতে হচ্ছে। একক দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশি পণ্যের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ মোট ৮শ’ ৬৯ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয় ৭শ’ ৫৮ কোটি মার্কিন ডলারের। বাংলাদেশি ২ হাজার ৩শ’ ৭৭টি প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প রয়েছে ১ হাজার ৮শ’ ২১টি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কারোপের ফলে এসব প্রতিষ্ঠান চাপের মধ্যে পড়বে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের খসড়া শুল্ক নীতিতে বাংলাদেশের ওপর বর্তমানে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ শুল্কের ওপর আরো ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করেছিল। ফলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশি পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করার জন্য ৫২ শতাংশ শুল্ক প্রদানের শর্তারোপ করা হয়। পরবর্তীতে চূড়ান্ত বিবেচনায় বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হার ২ শতাংশ কমিয়ে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভিয়েতনামের ওপর খসড়া তালিকায় ৪৬ শতাংশ শুল্কারোপের কথা জানানো হলেও দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফলপ্রুসূ আলোচনার ভিত্তিতে তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হার ২৬ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে। ভিয়েতনামকে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে বিদ্যমান ১৫ শতাংশসহ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক্র প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভিয়েতনামকে বাংলাদেশের তুলনায় ১৫ শতাংশ কম শুল্ক প্রদান করতে হবে। ১৫ শতাংশ কম শুল্ক প্রদানের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ভিয়েতনাম খুব সহসাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ব্যাপকভাবে বাড়াতে পারবে। তুলনামূলক মূল্য তত্ত্বের বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারা বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের পরিবর্তে ভিয়েতনামি তৈরি পোশাক ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার তো বটেই সার্বিকভাবে বিশ^বাজারে ভিয়েতনাম বাংলাদেশি তৈরি পোশাক শিল্পকে টেক্কা দিতে পারবে। ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক উৎপাদন ব্যয় বাংলাদেশের তুলনায় কম। তাই তারা ইচ্ছে করলেই আনুপাতিক হারে কম মূল্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারবে। ভিয়েতনাম নানাভাবে লবিং করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত খসড়া শুল্ক হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে আর এক প্রতিযোগী হচ্ছে ভারত। যদিও তাদের বাজার অংশিদারিত্ব বাংলাদেশের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু তারা এবার এ শুল্কারোপের সুবিধা গ্রহণ করে বাংলাদেশকে টপকে যাবার চেষ্টা করবে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, তুলনামূলক কম শুল্কারোপের সুবিধা গ্রহণের জন্য ভারত তৎপর রয়েছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের তৈরি পোশাকের হিস্যা হচ্ছে ৬ শতাংশ। প্রতিযোগী দেশগুলোর নিকট থেকে ৫শতাংশ বাজার হিস্যা দখল করতে পারলে ভারতের জিডিপি শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম,ইন্দোনেশিয়া হচ্ছে ভারতীয় তৈরি পোশাক পণ্যের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ প্রতি বছর যে পণ্য রপ্তানি করে তার ৮৮ শতাংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। কম্বোডিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বছর যে পণ্য রপ্তানি করে যথাক্রমে তার ৩১ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ হচ্ছে তৈরি পোশাক। চূড়ান্ত পর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়ার পণ্যে বাড়তি শুল্কারোপ করেছে ৩৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৩০শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করা হয়েছে।

ভারতের রপ্তানি পণ্যে কত শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করা হবে তা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ভারত প্রথম থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে লবিং করছে। শোনা যাচ্ছে, ভারতীয় পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চূড়ান্ত পর্যায়ে ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপ করতে পারে। তবে ভারত প্রত্যাশা করছে তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাড়তি শুল্ক আরো কম হবে। এটা হতে পারে ১৫ শতাংশ। ভারত যদি সত্যি সত্যি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে তাহলে সেটা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভিয়েতনাম এবং ভারত তৈরি পোশাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিশেষ করে ভারত। আগামীতে ভারত তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অতিক্রম করে যেতে পারে। স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্কারোপ করায় ভারতের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেছে। তারা এই সম্ভাবনা পুরো মাত্রায় কাজে লাগাতে চায়।

আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও তুরস্কের সঙ্গে। এসব দেশ আগামীতে কেমন করে তার ওপর নির্ভর করছে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে কতটা সাফল্য অর্জন করতে পারে। তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে নানা ক্ষেত্রেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্যও আমদানি করে থাকে। ফলে তৈরি পোশাক শিল্প খাত জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। অপর দিকে ভারত তৈরি পোশাকের কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে যোগান দিয়ে থাকে। তারা ক্যাপিটাল মেশিনারিজও নিজেরাই উৎপাদন করে। ফলে ভারতের জাতীয় অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের একমাত্র সুবিধা হচ্ছে এখানে তুলনামূলক স্বল্প পারিশ্রমিকে শ্রমিকের নিশ্চিত যোগান রয়েছে। আমরা শিল্পায়ন বা বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে গর্ব করে বলি আমাদের এখানে সস্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক শ্রমিকের যোগান পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা একবারও ভেবে দেখি না অশিক্ষিত এবং অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি সব সময়ই কম হয়ে থাকে। কাজেই সস্তা শ্রমিক নিয়ে গর্বিত হবার কিছু নেই।

এটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমিয়ে আনতে না পারে তাহলে আগামীতে এই শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসা স্বাভাবিক। আর তৈরি পোশাক শিল্পে বিপর্যয় সৃষ্টি হলে পুরো রপ্তানি ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য অতিমাত্রায় তৈরি পোশাকনির্ভর। তাই আমাদের আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। লেখক : সাবেক ব্যাংকার।