গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলে আবাসিক ছাত্র ছিলাম। আমরা চারজন এক রুমে থাকতাম। এর মধ্যে একজন ছিলেন বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি এলাকার। কুষ্টিয়ার কুমারখালি এলাকার অনেকেই আমার সে রুমমেটের কাছে আসতেন নানা প্রয়োজনে। একবার এক ভদ্রলোক এলেন বেশ কিছুদিন হলে অবস্থান করার জন্য। ভদ্রলোক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। তিনি প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যেতেন আর রাতে ফিরে আসতেন। স্থানীয়ভাবে কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারায় তিনি ঢাকায় আসেন চাকরির সন্ধানে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর আমার সঙ্গে তার বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে। একদিন তাকে অত্যন্ত বিষণ্ন অবস্থায় থাকতে দেখে আমি তার বিষণ্নতার কারণ জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে যা বললেন তাতে আমি বিস্মিত হয়ে যাই। তিনি জানালেন, তিনি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির জন্য প্রচুর আবেদন করছেন কিন্তু কোথাও চাকরি হচ্ছে না। একদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখেন, ধানমণ্ডির এক বিত্তবান পরিবারের জন্য গৃহকর্মী প্রয়োজন। তিনি সকাল বেলা উল্লেখিত ঠিকানায় গিয়ে হাজির হন। বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গে আলাপ করে তিনি চাকরির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেন। গৃহকর্তা জানতে চান কে চাকরি করবে? ভদ্রলোক বলেন আমি নিজেই কাজ করতে চাই। গৃহকর্তা বললেন, আমি আরো কম বয়সী গৃহকর্মী চাই। তিনি ব্যর্থ মনোরথ হয়ে হলে ফিরে আসেন এবং কিছুদিনের জন্য বাড়ি চলে যান। পরবর্তীতে তার চাকরি হয়েছিল কিনা বা হলে কেমন চাকরি হয়েছিল তা আমার জানার কোনো সুযোগ হয়নি।

এটি হয়তো বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিন্তু চাকরির বাজারের বাস্তবতা এটাই। পরবর্তী সময়ে চাকরির বাজার আরো সংকুচিত হয়েছে। চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরার জন্য যুবসমাজ এখনো অবিরাম ছুটছে। স্বাধীনতার পর বিগত ৫৪ বছরে বাংলাদেশে অনেক সরকার পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কোনো সরকারই যুবসমাজের ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের জন্য কার্যকর কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলেও প্রতিটি সরকারই বেকারের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশে এখন বেকারের সংখ্যা হচ্ছে ২৬ লাখ থেকে ২৭ লাখ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া এ তথ্য পাগলেও বিশ্বাস করবে না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো হয়তো বলবে তারা আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী বেকারের সংখ্যা নির্ধারণ করে থাকেন। ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে বিকারের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় আমাদের মতো উন্নয়নশীল তা মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারণ উন্নত দেশগুলোতে বেকারদের ভাতা প্রদানসহ নানা ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তো সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, ছদ্ম বেকার, মৌসুমি বেকার, খণ্ডকালীন বেকার ও পূর্ণ বেকার মিলিয়ে বাংলাদেশে মোট বেকারের সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটির বেশি হবে। অর্থনীতির ভাষায় কর্মসংস্থান বলতে এমন এক অবস্থাকে বুঝায়, যেখানে একজন ব্যক্তি তার ইনকাম দিয়ে ৫/৬ জন সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারেন। বাংলাদেশে এমন অনেক চাকরিজীবী আছেন যারা তাদের আয় দিয়ে সংসারের সদস্যদের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন না। এ অবস্থাকে পূর্ণ কর্মসংস্থান বলা যায় না। আগে দেখা যেতো পরিবারের একজন সদস্য চাকরি করলে পুরো পরিবার তার উপর নির্ভর করে জীবনযাপন করছে। কিন্তু এখন প্রায়শই সেটা সম্ভব হয় না।

ক্রমবর্ধমান বেকার সমস্যার কারণ সম্পর্কে অনেকেই বলে থাকেন বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। ফলে সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। চীন বা ভারতের জনসংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু তাদের দেশের বেকারত্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে না। জনসংখ্যা এমনই এক উন্নয়ন উপকরণ যা প্রশিক্ষিত এবং দক্ষ হলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হতে পারে।

আবার জনসংখ্যা যদি অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ হয় তাহলে তা একটি দেশের জন্য সবচেয়ে বড় দায় বা আপদ হিসেবে গণ্য হতে পারে। বাংলাদেশের এক স্বৈরশাসক এক সময় বলেছিলেন, অপরিকল্পিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেশের প্রধান জাতীয় সমস্যা। তিনি আসলে সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। জনসংখ্যা কখনোই একটি দেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হতে পারে না। সমস্যা হচ্ছে জনসংখ্যাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা ও পরিকল্পনার অভাব। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের প্রচেষ্টাকালে প্রায়শই বলে থাকি, বাংলাদেশে সস্তায় প্রচুরসংখ্যক শ্রমিকের উপস্থিতি থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। কিন্তু এ ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কারণ বিদেশি উদ্যোক্তা বা স্থানীয় উদ্যোক্তা সবাই চাইবে তাদের প্রতিষ্ঠানে যেনো দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত কর্মী কাজ করেন। স্বল্প মজুরিতে কর্ম পাওয়া গেলেই যদি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসতেন তাহলে বাংলাদেশ বিদেশি পুঁজির বন্যা বয়ে যেতো।

বাংলাদেশী উদ্যোক্তাগণ তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত বা পাকিস্তান থেকে কর্মী নিয়োগের কোনো প্রয়োজন বোধ করতেন না। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে ভারতীয় কর্মীরা প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশী উদ্যোক্তাগণ নিশ্চয়ই দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাক তা চাইতে পারেন না।

বাংলাদেশের সরকারগুলোর ব্যর্থতা হচ্ছে তারা জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা কোনো কার্যকর পরিকল্পনা বা উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করেননি। যদিও সব সরকারই জনসংখ্যাকে উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের অঙ্গীকার করে থাকেন। উন্নয়নের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাহবা নেবার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও জনসম্পদের উন্নয়নে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিগত সরকার আমলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে যেসব বিদেশি উদ্যোক্তা পুঁজি বিনিয়োগ করবেন তারা তো শ্রমিক বা কর্মী নিজ দেশ থেকে নিয়ে আসবে না। স্থানীয়ভাবে দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত কর্মী যোগান দেয়া না গেলে তারা ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কা থেকে কর্মী আনতে বাধ্য হবেন। বিগত সরকার মানব সম্পদ উন্নয়নের বাস্তবধর্মী উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিবর্তে বিদেশি শ্রমিক-কর্মচারিরা যাতে আমাদের এখােেন কাজ করার ক্ষেত্রে উৎসাহি হয় সে ব্যবস্থা করেছে। আগে একজন বিদেশি কর্মী বাংলাদেশে চাকরি করে যে বেতন-ভাতা পেতেন তার ৭৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে নিজ দেশে প্রেরণ করতে পারতেন। অবশিষ্ট ২৫ শতাংশ বেতন-ভাতার মধ্য থেকে ট্যাক্স, খাওয়া খরচ ইত্যাদি বাদ দিয়ে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকতো তা স্থানীয় এক বা একাধিক ব্যাংকে আমানত আকারে সংরক্ষণ করতে হতো। তারা চূড়ান্তভাবে দেশে ফিরে যাবার সময় এ অর্থ নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু বিগত সরকার আমলের শেষের দিকে এ আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন বিদেশি কর্মী তাদের মোট বেতন-ভাতার ৮০ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে দেশে প্রেরণ করতে পারছেন। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ বেতন-ভাতার মধ্যে ট্যাক্স প্রদান, খাওয়া খরচ বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকবে তাও নিজ দেশে প্রেরণ করতে পারছেন। কাকে সন্তুষ্ট করার জন্য এ আইন পরিবর্তন করা হলো? তা কারো বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে। প্রায় ২০ বছর আগে আমাদের দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সূচনা হয়েছে। এ অবস্থা আগামী ২০৩০ বা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু নীতি নির্ধারকদের মধ্যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার দু’তৃতীয়াংশ বা তারও বেশির বয়স যখন ১৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হয় অর্থাৎ কর্মক্ষম থাকে সে অবস্থাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। জনসংখ্যা তত্ত্ববিদদের মতে, একটি দেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থা একবারই সৃষ্টি হয়। আবার কারো মতে, হাজার বছরে একবার এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। যারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে পারে তারাই উন্নয়নের শিখরে আরোহণ করতে পারে। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুফল কিভাবে কাজে লাগাতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছে চীন। কয়েক দশক আগেও চীন স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে ছিল। কিন্তু তারা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সুযোগ পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগিয়ে আজ বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। কয়েক বছর আগে চীন জাপানের ৪৪ বছরের আধিপত্যকে খর্ব করে বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের আগেই চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে বিশ্ব অর্থনীতিতে শীর্ষ স্থানে উঠে আসবে। বাংলাদেশ যে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে নীতি নির্ধারকদের অনেকেই বিষয়টি অবগত নন।

বাংলাদেশ কোনোভাবেই বেকার সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। এর মূল কারণ হচ্ছে কিভাবে বেকার সমস্যা নিরসন করা যায় সে সম্পর্কে জাতীয় পর্যায়ে আমাদের তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। বেকার সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে তা কোনোভাবেই কর্মমুখী নয়। একজন উচ্চ শিক্ষিত যুবক বা যুবতী জানেন না তিনি শিক্ষা জীবন শেষে কর্মসংস্থানের অধিকার পাবেন কিনা। আমাদের দেশে কর্মসংস্থানকে ‘সুযোগ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু একজন উচ্চ শিক্ষিত যুবক বা যুবতীর জন্য কর্মসংস্থান কখনোই সুযোগ হতে পারে না। এটা তার অধিকার। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে উপযুক্ততা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আত্ম অহমিকা পূর্ণ বেকার তৈরি করছে মাত্র। কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না। আর শিক্ষার মানও এতটাই নিম্ন পর্যাযের যে উচ্চশিক্ষা অর্জনের পরও একজন শিক্ষার্থী উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারে না। শুধু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করে বেকার সমস্যা সমাধান করা যাবে না। বেকার সমস্যা সমাধান করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমিক পর্যায় থেকেই কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

বিশ্বে যাদের আমরা উন্নত দেশ হিসেবে জানি তাদের সবাই কারিগরি শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপের মাধ্যমেই সাফল্য অর্জন করেছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে যদি কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যায় তাহলে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা লাভের পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হিসেবে আত্ম প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেন। ভালো কর্মী অনেকেই হতে পারেন। কিন্তু ভালো উদ্যোক্তা হতে হলে তাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। একজন উদ্যোক্তাকে ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা থাকতে হয়। বাজারজাতকরণ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই ভালো উদ্যোক্তা হবার গুনাবলি অর্জন করা সম্ভব। দক্ষিণ এশিয়ার যেসব দেশ অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি অর্জন করেছে তাদের বেশির ভাগই কারিগরি শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, জাপান, চীন এসব দেশে কারিগরি শিক্ষার হার হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার হার ১২ থেকে ১৪ শতাংশের মতো।

বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি উন্নয়নশীল দেশের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা শ্রেণি গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে কর্মহীন রেখে কোনো উন্নয়নই টেকসই এবং স্থিতিশীল হতে পারে না। অবকাঠামোগত উন্নয়নের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ চুরি করে কখনোই টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এবং কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশে যেসব রাজনৈতিক দল রাজনীতি চর্চা করছেন তাদের কারো উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা আছে বলে জানা যায় না। তাদের উদ্দেশ্য হলো যে কোনো মূল্যেই হোক রাষ্ট ক্ষমতায় আসীন হওয়া এবং নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়া। এ রাজনীতির পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।