ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করে বিগত সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছিলেন, ‘আজ থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়বে না। তার এ বক্তব্যে সংশ্লিষ্ট মহল এবং অর্থনীতিবিদগণ আশ্বস্ত হয়েছিলেন। তারা মনে করেছিলেন, এবার হয়তো ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা হবে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আ হ ম মোস্তাফা কামালই ছিলেন সরাসরি ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা। কাজেই তিনি ব্যাংকিং সেক্টরের সমস্যা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানতেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল সাবেক অর্থমন্ত্রী ব্যাংকিং সেক্টরের আইনগুলো এমনভাবে পরিবর্তন/পরিমার্জন করতে থাকলেন যাতে কিস্তি আদায় না করেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানো যায়। একজন অর্থনীতিবিদ তার এ উদ্যোগকে কার্পেটের নিচে ময়লা রেখে ঘর পরিষ্কার দেখানোর প্রচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।

অর্থমন্ত্রী থাকাকালে আ হ ম মোস্তফা কামাল ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে এ সেক্টরের যে ক্ষতি করেছেন আর কোনো অর্থমন্ত্রী তা করতে পারেনি। সে অন্যায় কর্মের ফল এখন আমরা ভোগ করে চলেছি। মার্চ কোয়ার্টারে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এটা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ। ডিসম্বের,২০২৪-এর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে পৌণে এক লাখ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরের মোট ছাড়কৃত ঋণের এক-চতুর্থাংশই খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকগুলোর মোট ছাড়কৃত ঋণের ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকগুলোর ছাড়কৃত ঋণের ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর ছাড়কৃত ঋণের ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, যা তাদের ছাড়কৃত মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ছিল তুলনামূলকভাবে কম। কিন্তু এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকেরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিগত সরকার আমলে দলীয় বিবেচনায় বেশ কিছু ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এসব ব্যাংকের উদ্যোক্তাগণ নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থ লোপাটের কৌশল গ্রহণ করেন। আমানতকারীদের অর্থ নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে ঋণ মঞ্জুর করিয়ে নিয়ে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম অন্তত ৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দখল করে সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঋণের নামে বের করে নিয়ে দেশের বাইরে পাচার করেছেন। তাদের এ অপকর্মের কারণে ব্যাংকিং সেক্টর খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, খেলাপি ঋণের অস্বাভাবিক স্ফীতির কারণে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগযোগ্য অর্থ সঙ্কটে পতিত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রদর্শন করছে তা কোনোভাবেই মোট খেলাপি ঋণের বাস্তব চিত্র নয়। প্রদর্শিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। কারো কারো মতে, খেলাপি ঋণের মোট পরিমাণ ৮লাখ কোটি টাকার বেশি হবে। কারণ ৫০০ কোটি টাকা ও তদূধর্¦ বৃহৎ ঋণ হিসাব পুনর্গঠন, নতুন নীতিমালার আওতায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ, ঋণ হিসাব অবলোপন নীতিমালা সহজীকরণ ও তার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণকে ব্যাংকের মূল লেজার থেকে বাইরে রাখার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম মনে হচ্ছে। বিগত সরকার আমলে দলীয় সমর্থনপুষ্ট একটি শ্রেণি নানাভাবে ব্যাংক থেকে ঋণের নামে অর্থ বের করে নিয়ে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছে। অনেকেই এ টাকা দেশের বাইরেও পাচার করেছে। কোনো কোনো শিল্পগোষ্ঠী ব্যাংকের মালিকানা হাতিয়ে নিয়ে জনগণের আমানতকৃত অর্থ লুটে নিয়ে দেশের বাইরে পাচার করেছে। ইউরোপীয় দেশ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থ এক বছরের ব্যবধানে ৩৩গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্রাঁ। ২০২৪ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ ৪৪ হাজার ফ্রাঁতে উন্নীত হয়েছে। প্রতি ফ্রাঁ ১৫০ টাকা হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়া।

ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড এ্যাকাউনটেন্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছে, বিগত সরকার আমলে ব্যাংকিং সেক্টরে নিরীক্ষার ক্ষেত্রে তাদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। তাদের যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেয়া হতো সেভাবেই কাজ করতে হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক মহল বিশেষের স্বার্থ রক্ষায় সদাব্যস্ত ছিল। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামাল এবং সরকারের একজন উপদেষ্টা মিলে ব্যাংকিং সেক্টরকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। ব্যাংকিং সেক্টরের মাধ্যমে অর্থ পাচারের সবচেয়ে সহজ পন্থা ছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার করা। পণ্য আমদানিকালে ওভার ইনভয়েসিং এবং পণ্য রপ্তানিকালে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হতো। বাংলাদেশ ব্যাংক এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল যা অর্থ পাচারকারীদের জন্য ছিল অত্যন্ত সহায়ক। যেমন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক উচ্চ মাত্রায় পৌঁছে গেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) পলিসি রেট (কিন্দ্রীয় ব্যাংক সিডিউল ব্যাংকগুলোকে ঋণদানের ক্ষেত্রে যে সুদ চার্জ করে) বৃদ্ধি করে। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার(গ্রাহক পর্যায়ে ঋণদানের ক্ষেত্রে ব্যাংক যে হারে সুদ চার্জ করে) আনুপাতিকভাবে বৃদ্ধি পায়। এতে ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে নতুন করে ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে যায়। বাজারে অর্থ প্রবাহ হ্রাস পায়।

এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন্ন দেশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকও একাধিকবার পলিসি রেট বৃদ্ধি করে। আগে যেখানে পলিসি রেট ছিল ৫ শতাংশ, বর্তমানে তা ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এ পদক্ষেপের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক না করে সর্বোচ্চ সুদ হার অনেক দিন পর্যন্ত ৯ শতাংশে নির্ধারিত করে রাখে। ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ তুলনামূলক সস্তা হয়ে পড়ে। অনেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে থাকে। এ ঋণের অর্থ নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারে চলে আসে। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা দেশের বাইরে পাচার করে দেয়। এক মুদ্রানীতিকালে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের টার্গেট ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। আর অর্জিত হয়েছিল ১৪দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু সে সময় শিল্পে ব্যবহার্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, কাঁচামাল এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি ব্যাপকভাবে কমেছিল। তার অর্থ হচ্ছে ব্যাংক থেকে যে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছিল তা উদ্দিষ্ট কাজে ব্যবহার করা হয়নি। নতুন গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণের পর ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার প্রত্যাহার করে নেন। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করা হয়। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৪/১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে অপ্রয়োজনীয় ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমে গেছে। কিছুদিন আগে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

ব্যাংক ঋণের সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের যোগসূত্র রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকায় নির্ধারণ করে রেখেছিল। সে সময় কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১২২/১২৩ টাকায় উন্নীত হয়েছিল। কর্তৃপক্ষীয় পর্যায় থেকে বলা হচ্ছিল, যদি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয় তাহলে স্থানীয় মুদ্রা টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটবে। এতে বাজারে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বিস্তর অবমূল্যায়ন ঘটবে। এ যুক্তি মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না। কিছুদিন আগে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এরপর মার্কিন ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সরকার সমর্থক গোষ্ঠীকে অর্থ পাচারের সহায়তা করার জন্যই মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত করে রাখা হয়েছিল। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারিত করে রাখার ফলে রপ্তানি আয়ের পুরোটা দেশে আসেনি। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা হুন্ডির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করতেন। ফলে রেমিট্যান্স যেভাবে বৃদ্ধি পাবার কথা ছিল তা হয় নি। বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার ফলে কার্ব মার্কেটের প্রভাব কমে গেছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করছে। জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স আহরণ করেছে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতিপূর্বে আর কখনো পুরো অর্থ বছরেও ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাওয়া যায় নি।

বিগত সরকার আমলে নানাভাবে খেলাপি ঋণকে আড়াল করে রাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা ভালো দেখানোর চেষ্টা করার কারণে এ সেক্টর এখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংক বিনিয়োগযোগ্য তহবিল সঙ্কটে ভুগছে। এমন কী অধিকাংশ ব্যাংক গ্রাহক আমানতের নিরাপত্তা বিধানের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতেও ব্যর্থ হচ্ছে। সাধারণত নিয়মিত ঋণ হিসাবেব বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। নিম্ন মানের ঋণ হিসাবের বিপরীতে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণ হিসাবের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণ হিসাবের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয় গ্রাহকের আমানতকৃত অর্থের নিরাপত্তা বিধানের জন্য। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। গত মার্চ মাসে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এটা দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতি। ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ, ঋণ হিসাব অবলোপন, ঋণ হিসাব পুনর্গঠনের নামে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খেলাপি খাতার বাইরে রাখা হয়েছে তা যুক্ত করা হলে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি হবে।

প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে কখনোই সমস্যা সমাধান করা যায় না। তাই বিগত সরকার আমলে ব্যাংকিং নীতিমালা পরিবর্তনের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণকে হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন। পরিবর্তিত আইনগুলো বাতিল করে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণকে ব্যাংকের মূল লেজারে নিয়ে আসতে হবে। কাউকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের জন্য আইনি পরিবর্তন কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না। সমস্যা দেখে ভয় পেলে চলবে না। সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ।