মনসুর আহমদ
কুরআনে প্রচুর অনুপ্রেরণা প্রদানকারী সুন্দর সুন্দর আয়াত রয়েছে যা মানুষকে ধৈর্য, আশা, জীবন পরিচালনার সঠিক পথের দিশার শিক্ষা প্রদান করে শািক্তশালী করে গড়ে তুলতে সহায়তা প্রদান করে। পৃথিবীতে মানুষরূপে আমরা বসবাস করি বটে কিন্তু এ জগতের বাইরে কী সব বিরাজ করছে সে সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি, অথবা এ জগতের বাইরে আরও অধিক কিছু আছে কি না সে ব্যাপারে অজ্ঞাত।
আমরা সৌরজগতের অসংখ্য গ্রহের একটি গ্রহের অধিবাসী, অসংখ্য মিল্কীওয়ের একটি মিল্কি ওয়ে, মহাবিশ্বের সীমাহীন গ্যালাক্সির একটি গ্যালাক্সিতে অবস্থান করছি। এ মহাবিশ্বে কী বর্তমান আছে যে সম্পর্কে সামান্যমাত্র ধারণা করতে পারি। মহাবিশ্বের বিশালতা জটিলতা যা সত্যিই অসাধারণ তা দেখে আমাদেরকে অভিভূত হতে হয়। মহাবিশ্বের সৗন্দর্য যে কত ব্যাপক যা আমাদের হৃদয় ধারণ করত অক্ষম। আমাদের সবুজে নীলে আবৃত প্রিয় পৃথিবীর বাইরে আরও কত কী রয়েছে সে ব্যাপারে আমরা কতটুকুই বা জানি? নীল আকাশে ছড়িয়ে থাকা মিটিমিটি তারায় কী মহাসঙ্গীত সুর ধ্বনিত হচ্ছে কে শোনে, কে জানে? আমাদের উপরে রয়েছে মহাকাশ বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি গ্রহ তারা; তাদের পরিমাণ এত বিশাল যে মানব মন তা ধারণা করতে পারে না। এ মহাবিশ্ব সম্পর্কিত প্রচুর আয়াত বর্তমান রয়েছে কুরআনে যা অনুধাবনের মাধ্যমে মহাশক্তিশালী আল্লাহর বিরাটত্ব ও মহানত্ব সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পারা যায়। সে সব আয়াতের মধ্য থেকে সামান্য কয়েকটি আয়াত নিয়ে সামান্য আলোচনা করা হলো।
১. মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ : ১৯ শতকের আগ পর্যন্ত মানুষের জানা ছিল না যে, মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। ১৯২৯ সালে, এডউইন হাবল মহাবিশ্বের একটি সীমিত বয়সের প্রথম পর্যবেক্ষণমূলক প্রমাণ প্রদান করেন। তৎকালীন বৃহত্তম টেলিস্কোপ ব্যবহার করে তিনি আবিষ্কার করেন যে, ছায়পথগুলো আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তিনি আবিষ্কার করেন যে, একটি ছায়াপথ আমাদের থেকে যত দূরে থাকবে, তত দ্রুত এটি মহাকাশে সরে যাচ্ছে বলে মনে হয়। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সকল দিকে সমানভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, এই মহাবিশ্ব আলোর গতিবেগের চেয়ে অধিক দ্রুত গতিতে সম্প্রসারিত হয়ে চলছে। কোরআনের একটি মোযেযা এই যে, আজ থেকে ১৪০০ বছরের পূর্বে এই তত্ত্ব কোরআনে বলতে গিয়ে বলা হয়েছে ‘আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার ক্ষমতাবলে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী। (সূরা আজ্ -জারিয়াত- ৪৭)
২. মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরে চলছে : টলেমী ছিলেন একজন গ্রীক জোতির্বিদ ও গণিতবিদ। তার সময়কাল ছিল ১০০-১৭০ খ্রিষ্টপূর্ব সালে। কীভাবে মহাবিশ্ব কাজ করছে, গ্রহ তারাসমূহ কীভাবে চলাচল করে এ সম্পর্কে তিনি একটি একটি ধারণা পেশ করলেন। তিনি বললেন, মহাবিশ্বে যা কিছু বিদ্যমান তার সবকিছু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে। টলেমীর এ মতবাদ দীর্ঘ প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে মানুষের কাছে নির্ভুল মতবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।
যাহোক, ১৫৪৩ সালে পোল্যাণ্ডের জ্যোতির্বিদ কোপার্নিকাস মানুষের সামনে মহাবিশ্বের ‘হেলিওসেন্ট্রিক ছাঁচ বা মডেল’ (Heliocentric model) পেশ করেন। অর্থাৎ তিনি বলেন যে, মহাবিশ্বের কেন্দ্র হলো সূর্য এবং তাকে কেন্দ্র করে গ্রহ, তারা, পৃথিবী এর চারিদিকে ঘুরছে। নিকোলাস কোপর্নিকাস On the revolutions of the heavenly spheres' তত্ত্বটি ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করেন। এভাবে তিনি টলেমীর প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে চলে আসা মতবাদকে খণ্ডন করেন।
গ্যালিলিও গ্যালিলি তার নিজস্ব আবিষ্কৃত টেলিস্কোপের মাধ্যমে আকাশ জগতের অনেক কিছু নিরীক্ষণ করে বললেন যে, সূর্যকে কেন্দ্র করে সবকিছু নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে। এর পরে বলা হয়েছে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এখানেই শেষ নয়, সূর্যও স্থির নয়, সেটিও তার জন্য নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে। যে তথ্য টলেমীর বেশ শতাব্দীর পরে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন তা তাদের থেকে প্রায় হাজার বছর আগে মহাগ্রন্থ আল কুরআন মানুষের সামনে স্পষ্ট করে পেশ করেছে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং চাঁদ সূর্য, প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করে।’ (সূরা আল-আম্বিয়া-৩৩)
আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করছে।’ (সূরা ইয়াসীন-৪০)
৩. আকাশ সুরক্ষা প্রদানকারী ছাদ : আমাদের মাথার উপরে দিগন্ত প্রসারিত আকাশ। আকাশ হলো পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে উপরের একটি অবাধ দৃশ্য। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বায়ুমণ্ডল এবং মহাকাশ। এটিকে ভূমি এবং মহাকাশের মধ্যে একটি স্থান হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে যা মহাকাশ থেকে আলাদা। এটি এমন একটি এলাকা যেখানে সূর্য, চন্দ্র, অসংখ্য তারকা ও মেঘমালা প্রভৃতি দেখা যায়। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষত্রে, আকাশকে স্বর্গীয় গোলকও বলা হয়।
আল্লাহ আকাশকে আমাদের উপরে ছাদরূপে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন
‘এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ’( সূরা আল -আম্বিয়া -৩২)
৪. পানির পৃষ্ঠ টান : আল্লাহ ১৪শত বছর আগে ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি প্রবাহিত করেন দুই দরিয়া যারা পরস্পরে মিলিত হয়; কিন্তু তাদের মধ্যে রয়েছে এক অন্তরাল যা তারা অতিক্রম করতে পারে না। (সূরা আর রহমান-১৯,২০)
কেন দুই দরিয়ার পানি মিলিত হতে পারে না তা মানুষের জানা ছিল না। আল্লাহর ঘোষণার প্রায় দেড় হাজার বছর পরে মানুষ এ রহস্য জানতে পেরেছে।
বর্তমান বিজ্ঞান বলছে, হাইড্রোজেন বন্ধন জালিকার মধ্য দিয়ে পানির একটি মলিক্যুলের সাথে অন্য আর একটি মলিক্যুলের তুলনামূলকভাবে অন্য সব তরলের আন্তমলিক্যুলের মধ্যে বিদ্যমান আকর্ষণের চেয়ে অধিক আকর্ষণ থাকার কারণে পানির রয়েছে উচ্চ পৃষ্ঠটান (72.milline wtons(mN)per meter at 200c)..
পৃষ্ঠটান তত্ত্ব নিয়ে প্রথম অনুসন্ধান শুরু করেন ১৯শত শতাব্দীতে অ্যাগনেস পকেলস ও লর্ড রেলী। (Agnes pockels, Lord Rayleigh)
গবেষক দল দেখতে পেয়েছেন যে, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা যদি রুম টেম্পারেচার থেকে বেড়ে বয়েলিং তাপমাত্রায় উন্নীত হয় তা হলে পৃষ্ঠটান ২০% কমে যায়। ইত্যবসারে যদি লবণাক্ততা বেড়ে যায় তা হলে পৃষ্ঠটানও বেড়ে যায়।
৫. সময়ের বিস্তৃতি : সময় মানব জীবনের সর্বাধিক মূল্যবান বিষয়। এর কোনও শুরুও নেই, শেষও নেই; সময়কে না সৃষ্টি করা যায়, না ধ্বংস করা যায়। সময় হলো একমাত্র একটি ডাইমেনশন বা পরিমাণ যার মধ্যে আমরা বেঁচে থাকি এবং এটি সকল বিষয়কে প্রভাবিত করে।
সময় সম্পর্কে বলতে গিয়ে আইনস্টাইন বলেন, ‘আমরা যারা পদার্থবিদ্যায় বিশ্বাস করি, তাদের কাছে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য কেবল একটি জেদী, অবিচলিত বিভ্রম।” যার সহজ অর্থ সময়ের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই।
আদি থেকে সময়ের ধারণার ব্যাপারে ইসলাম পূর্ববর্তীকাল পর্যন্ত কোন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু মহান আল্লাহ সময়ের ব্যাপারে একটি নতুন ধারণার ইঙ্গিত প্রদান করলেন কুরআনের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের কাছে। ইরশাদ হলো : ‘ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছর। ’ (সূরা আল-মায়ারিজ- ৪)
এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তাফসীরে এসেছে যে, সাইয়্যেদেনা আবু সাঈদ খুদরী বলেন যে, একবার কতিপয় সাহাবী রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, ‘এক দিনের পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান’ এ বিষয়ে। রাসূল উত্তরে বললেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, ঈমানদারদের জন্য সে দিনটি মনে হবে যেন এক ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায় করতে যে সময় অতিবাহিত হয় তার সমান।’ (বায়হাকী)।
এক হাদিসে বলা হয়েছে বিচার দিনের পরিমাণ হবে এক হাজার বছর আবার অন্য হাদিসে বলা হয়েছে পঞ্চাশ হাজার বছর, এতে মনে হতে পারে দুই হাদিসের মধ্যে গরমিল রয়েছে। এতে কোন গরমিল নেই কারণ সময়ের পার্থক্য একটি আপেক্ষিক ধারণা মাত্র। দল ও তাদের অবস্থান ভেদে সময়ের পার্থক্য মনে হবে। মানসিক অবস্থা ভেদেও সময়ের পার্থক্য মনে হতে পারে। যখন এক ব্যক্তি কষ্টে পতিত হয় তার কাছে মনে হয় সময় খুব ধীরে কাটছে, এক দিনকে মনে হয় যেন এক সপ্তাহ, অন্যদিকে একজন সুখী বক্তির কাছে দীর্ঘ সময় খুব খাট মনে হয়। সংক্ষেপে বলা যায় যে, সূরা আস -সিজদায় বর্ণিত একদিন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পৃথবীর দিন, কিন্তু সূরা আল-মায়ারিজ-এ বর্ণিত দিন বিচারের দিন, যে দিনটি হবে জগতের বর্তমান দিনের চেয়ে অনেক দীর্ঘ। সে দিনের দীর্ঘ ও হ্রস্ব হওয়ার রহস্য ব্যক্তির পার্থক্য ও অবস্থার পার্থক্য।
৬. পর্বতমালা পৃথিবীকে স্থির রাখে : পর্বতমালা পৃথিবীকে স্থির রাখে এ তত্ত্ব মানুষের জানা ছিল না। আমেরিকান ভূতত্ত্ববিদ ক্লারেন্স ডুটন ১৮৮৯ সালে ‘আইসোস্ট্যাসি’ (isostasy) থিওরী বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, পর্বতমালা পৃথিবীর ভূত্বকে স্থিরতা সৃষ্টি করে। এ তত্ত্ব আবিষ্কৃত হওয়ার বহু শতাব্দী আগে আল্লাহ এ ব্যাপারটি কুরআন পাকের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা যাতে তা তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সব ধরনের জীব জন্তু। ’(সূরা লোকমান-১০)
এ আয়াত যখন নাজিল হয় তখন মানুষ এ বিষয়ে ছিল অজ্ঞ। কুরআন নাজিলের বহু শতাব্দী পরে বিষয়টি সম্পর্কেমানুষ জানতে সক্ষম হয়েছে।
যে পর্বতমালা পৃথিবীকে স্থির রাখে প্রথমে দেখা যাক সে পর্বতমালা কী ভাবে সৃষ্টি হয়। পর্বতমালা কীভাবে সৃষ্টি হয়? যখন ভূস্তরের অনেক গভীরে থাকা দুটি টেকটোনিক প্লেট যাকে লিথোস্ফিয়ারিক প্লেটও বলা হয়ে থাকে (একটি বিশাল অনিয়মিত আকৃতির কঠিন শিলার স্লাব) ধাক্কা দেয় তখন শক্তিশালী প্লেটটি দুর্বল প্লেটটিকে নীচ থেকে ধাক্কা দেয়, ফলে তা বেঁকে গিয়ে পর্বতের সৃষ্টি হয়।
পর্বতমালার শিকড় বা নিম্নভাগ মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে যে কারণে লিথোস্ফিয়ার-এর গতি কমে গিয়ে সংঘর্ষ কমে যায়।
যখন পর্বত বিশাল আকৃতির হয়, তখন গ্রাভিটি চাপ তাকে অনেক গভীরে অগ্নিকুণ্ড স্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। যে কারণে পৃথিবী সাম্যাবস্থায় থাকে।
৭) মহাবিশ্বের সব কিছুই আল্লাহকে সিজদা করছে : কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় মহবিশ্বের সবকিছু আল্লাহকে সিজদা করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন :
ক. ‘নক্ষত্ররাজি ও বৃক্ষাদি তাঁরই সিজদায় রত রয়েছে।’ (সূরা আর- রহমান-৬)
খ. ‘তুমি কি দেখ না যে আল্লাহ্কে সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে ও পৃথিবীতে, সূর্য , চন্দ্র, নক্ষত্রমণ্ডলী, পর্বতরাজি, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং সিজদা করে মানুষের মাঝে অনেকে? (সূরা আল-হজ্জ - ১৮)
গ. ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই আল্লাহর পবিত্রতা মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। ’ (সূরা আস্-সফ-১)
ঘ. ‘সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং এ সবের অন্তর্বর্তী সবকিছুই তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না; নিশ্চয়ই তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ন।’ (সূরা আল -ইসরা-৪৪)
সূরা আর-রহমানে বর্ণিত ৬নং আয়াতে ‘আন নাজম’-এর উল্লেখ করা হয়েছে, এর সর্বপরিচিত অর্থ হলো ‘তারা’, কিন্তু আরবী অভিধানে এর অর্থ লেখা হয়েছে গাছপালা, লতাপাতা, শাকসব্জি, তরমুজ ইত্যাদি। তবে শব্দটি এখানে কোন অর্থে বুঝিয়েছে এ ব্যাপারে তাফসীরকারকদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইবনে আব্বাস, সাইদ ইবনে জুবায়ের, সুদ্দী এবং সূফিয়ান সওরী এর অর্থ গ্রহণ করেছেন গুঁড়িবিহীন গাছ-গাছড়া, কারণ ‘আশ্ শাজার’ বা গাছের পরে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এ অর্থই অধিকতর প্রাসঙ্গিক। এর বিপরীতে মুজাহিদ, কাতাদাহ্ এবং হাসান বসরী এ মত প্রকাশ করেছেন যে এখানে গাছপালা অর্থে আসেনি বরং আকাশের তারা অর্থে এসেছে কারণ এটিই এর সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অর্থ।
অর্থে ও এমন ভিন্নতাকে মেনে নিয়ে যখন আমাদের সামনে আসে, ‘নক্ষত্ররাজি ও বৃক্ষাদি তাঁরই সিজদায় রত রয়েছে।’ এ আয়াতসহ উপর্যুক্ত আয়াতসমূহ আমাদেরকে এ ধারণা দেয় যে, মহাবিশ্বের সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং তাঁর হুকুম মেনেই সব কিছু চলছে। তাঁর বিধান অতিক্রম করে চলার শক্তি-সামর্থ্য কারও নেই। মহাবিশ্বের সবকিছু যে আল্লাহর বিধান মেনে চলছে তাকেই বলা হয়েছে; তাঁকে সকলেই সিজদা করছে। লেখক : প্রাবন্ধিক।