একটি দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে যদি এ খাতকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়। কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উৎপাদনশীল খাতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করে উৎপাদনের উদ্বৃত্ত অংশ বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আর্থিক চাহিদা মেটানো সম্ভব। বিশ্বে এমন একটি দেশও দেখানো যাবে না যারা শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং সুষমকরণ করতে সমর্থ হয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদকে রূপান্তর এবং পরিবর্তনের মাধ্যমে চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদকে শিল্পের কাঁচামাল এবং উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিটি দেশই চেষ্টা করে কিভাবে তাদের ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা যেতে পারে। বাংলাদেশও ব্যক্তি খাতের সুষম বিকাশের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য খুব একটা আশাপ্রদ নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ঋণের প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এটা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন।

আমাদের দেশে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাগণ বিনিয়োগের জন্য অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রধানত ব্যাংকিং সেক্টরের উপর নির্ভর করে থাকেন। ফলে ব্যাংকিং সেক্টরের উপর অতিমাত্রায় চাপ পড়ে। ব্যাংকগুলো ঋণ গ্রহীতাদের চাহিদা মতো ঋণ দিতে পারছে না। ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় অসুবিধা হচ্ছে ঋণ গ্রহণের পর নির্দিষ্ট সময় অন্তর কিস্তি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ অধিকাংশ ব্যাংক ঋণ গ্রহীতাদের ঋণদানের সময় ইন্টারেস্ট ডিউরিং কনস্টাকশন পিরিয়ড(আইডিসিপি) নির্ধারণ করে ৬ মাস। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো মনে করেন, ঋণ গ্রহণের পর ৬ মাসের মধ্যে একটি প্রকল্প বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারবে। এ সময় ব্যাংক তুলনামূলক স্বল্পহারে সুদারোপ করে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে একটি প্রকল্প অনুমোদন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে এক থেকে দেড় বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু ব্যাংকতো ৬ মাস পরই প্রচলিত নিয়মে সুদের হার নির্ধারণ করে। ফলে দেখা যায়, একটি প্রকল্প বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করার আগেই তার উপর বিরাট অংশের খেলাপি ঋণের দায়ভার চেপে বসে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা যদি ব্যাংকের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন সংগ্রহ করতে পারতেন তাহলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। কারণ পুঁজিবাজার থেকে কোনো কোম্পানি শেয়ার ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করলে বিনিয়োগকারীগণ তখনই মুনাফা পাবেন যখন প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে লাভজনকতা অর্জন করতে পারবে। প্রকল্প বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে লাভজনতা অর্জন না করা পর্যন্ত তারা শেয়ার হোল্ডারদের মুনাফা প্রদানে বাধ্য নয়।

উন্নত দেশগুলো ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তাগণ তাদের প্রকল্পের জন্য দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের জন্য সাধারণত ব্যাংকিং সেক্টরের উপর নির্ভর করে না। তারা পুঁজিবাজার থেকেই কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আহরণ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখনো সেভাবে বিকশিত হতে পারেনি। পুঁজিবাজার উপর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে পুঁজি বাজারে যে ভয়াবহ কেলেঙ্কারি সংঘঠিত হয়েছে তার বিচার না হবার কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীগণ এখনো পুঁজিবাজার বিনিয়োগের কথা শুনলে আতকে উঠেন। ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালে পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির পেছনে যে মানুষটির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি তিনি পরবর্তীতে সরকারের উপদেষ্টা মনোনীত হয়েছিলেন। ফলে পুঁজিবাজার সংস্কার বা সংঘটিত দুর্নীতির কোনো বিচার হয়নি। এখনো পুঁজিবাজারে একটি শক্তিশালী মহল সক্রিয় রয়েছে যারা নানাভাবে বাজারকে ম্যানিপুলেট করছে।

নানাভাবে চেষ্টা করা সত্ত্বেও দেশের পুঁজি বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে না। হঠাৎ হঠাৎ পুঁজি বাজারে শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি এবং হ্রাস ঘটছে। যে কোনো দেশের পুঁজি বাজারে অস্থিতিশীলতা বা অনিশ্চয়তা লক্ষ্য করা যায়। পুঁজি বাজারের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে অনিশ্চয়তা। তবে তা বাংলাদেশের পুঁজি বাজারে যে অস্থিতিশীলতা প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে তা আর কোনো দেশে লক্ষ্য করা যায় না। একটি মহলবিশেষ নানাভাবে পুঁজি বাজারকে প্রভাবিত করে নিজস্ব ফায়দা লুটে নিচ্ছে। কিন্তু এ মহলের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়না। কারণ যারা পুঁজি বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে তৎপর রয়েছেন তারা কোনো না কোনোভাবে সরকারের ছত্রছায়ায় থাকেন। এমনকি সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ তারা পরিবর্তিত সরকারকেও ম্যানেজ করে ফেলতে পারেন। পুঁজি বাজারের অভ্যন্তরেও একটি শক্তিশালী মহল রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে প্রায়শই দুর্নীতি এবং মার্কেট ম্যানিপুলেট করার অভিযোগ উত্থাপিত হয় কিন্তু সরকারিভাবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না।

এ অবস্থায় পুঁজিবাজারের অবস্থা উন্নয়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় দেশের পুঁজিবাজার উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫টি সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেসব বিদেশি কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার রয়েছে সেগুলো দ্রুত পুঁজি বাজারে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানাধীন যেসব কোম্পানি রয়েছে তাদের শেয়ার পুঁজিবাজারে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে ভালো মৌল ভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের অভাব রয়েছে। পুঁজি বাজারের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি ভালো কোম্পানির শেয়ার নিয়ে আসা গেলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। বিগত সরকার আমলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ২৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বাজারে নিয়ে আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি। রাষ্ট্র কখনোই ভালো উৎপাদনকারি হতে পারে না। রাষ্ট্র উৎপাদন কার্যে যুক্ত হলে করাপশন বাড়ে। তাই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। একান্ত প্রয়োজন না হলে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রাখার যুক্তি নেই। যেমন, ব্যাংকিং সেক্টরে মোট ৬১টি ব্যাংক ব্যবসায় পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের সংখ্যা দশের অধিক। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে অন্য ব্যাংকগুলোকে দ্রুত ব্যক্তি মালিকানাধীনে ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এসব ব্যাংকের শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া যেতে পারে।

ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার একই সূত্রে গাঁথা। এর একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির উন্নয়ন প্রত্যাশা করা যায় না। সম্প্রতি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো সিডিউল ব্যাংকের মালিকানা গ্রহণ অথবা ব্যাংক একীভূতকরণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার প্রাপ্ত হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপনের আওতায় আগামীতে দেশের দুর্বল এবং লোকসানি ব্যাংকগুলোকে ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এতে কোনো সন্দেহ নেই। ক’দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, কয়েকটি ইসলামি ধারার ব্যাংক একীভূত করা হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে। বিগত সরকার আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল মূলত সে ব্যাংকগুলোই সবচেয়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সর্বশেষ ব্যক্তি মালিকানায় ৯টি ব্যাংক অনুমোদন দানকালে বলেছিলেন, এ মুহূর্তে দেশে আর কোনো ব্যাংকের আবশ্যকতা নেই। কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে ৯টি ব্যাংকই সবচেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি করে চলেছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে আপত্তি জানিয়েছিলো। কিন্তু অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তিকে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরাজমান দ্বৈত শাসন সবচেয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে চলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানত ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের উপর কর্তৃত্ব করতে পারে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ খুবই কম। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের উপর একক নিয়ন্ত্রণ আরোপসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের উপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে থাকে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলেই সবক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারছে না। ব্যাংকিং সেক্টরের উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের একক নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, এম সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকাকালে একবার অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হয়েছিল।

ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণকালে বিগত সরকার ব্যাংকিং সেক্টরে সংস্কারের অংশ হিসেবে কয়েকটি সিডিউল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ করার প্রাথমিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখানেও বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা গেছে। যেভাবে ব্যাংকের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করা হয়েছিল তা কি অধিগ্রহণ নাকি একীভূতকরণ তা নিয়ে বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যাংক একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ কোনো যৌক্তিক সমাধান হবে না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক তথা সরকার কোনো সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের দায়িত্ব কেনো নিতে যাবেন? তারচেয়ে বরং সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে এক বছর বা দুই বছর দিয়ে বলা যেতে পারে, এর মধ্যে যদি ব্যাংকের অবস্থা ভালো না হয় তাহলে তাকে বিলুপ্ত করা হবে। ব্যাংকগুলো টিকে থাকার স্বার্থে তাদের কার্যক্রমে উন্নয়ন ঘটাবে। বাংলাদেশে ব্যবসায়রত ব্যাংকগুলোর শ্রেণি চরিত্র নিয়েও সমস্যা রয়েছে। বিশ্বে দু’ ধরনের ব্যাংক প্রত্যক্ষ করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সামান্য কয়েকটি শাখা নিয়ে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ইউনিট ব্যাংকিং ব্যবস্থার সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে সামান্য অভিঘাতেই একটি ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যাংক দেউলিয়া হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। যুক্তরাজ্যে যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তাকে ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং বলা যেতে পারে। সেখানে সামান্য কয়েকটি ব্যাংক তাদের বিপুল সংখ্যক শাখার মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সাধারণত কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয় না। হলেও তার সংখ্যা খুবই কম। বাংলাদেশ উত্তরাধিকার সূত্রে ব্র্যাঞ্চ ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু অবিবেচনাপ্রসূতভাবে অধিক সংখ্যক ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেয়ার কারণে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঝুঁকির মধ্যে পতিত হয়েছে। ভারতের মতো বড় দেশেও বাংলাদেশের মতো এত অধিক সংখ্যক ব্যাংকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় না। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান আবেগ দিয়ে চলে না অর্থনীতির সাধারণ সূত্র অনুসরণ করেই ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালাতে হবে।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থার অভাব রয়েছে। কারণ অতীতে এ সেক্টরে যেসব দুর্নীতি এবং অনাচার সংঘটিত হয়েছে তার কোনোটিরই সঠিক বিচার হয়নি। ব্যাংক চলে সাধারণ মানুষের অর্থে। কাজেই সাধারণ মানুষ যদি ব্যাংকের উপর আস্থা রাখতে না পারে তাহলে তারা কেনো ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে? বিনিয়োগ বলি আর উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থায়ন বলি সব কাজেই ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাপোর্ট লাগে। কাজেই আমরা যদি দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাই তাহলে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ধারার উপর প্রবাহিত করতে হবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক।