মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হবার পর থেকে বিশ্ব বাণিজ্যে নানা ধরনের মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এককভাবে টিকে থাকা খুবই কঠিন। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলক দুর্বল দেশগুলোকে নানা জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম-কানুন যেনো শুধু দুর্বল দেশগুলোর জন্যই প্রযোজ্য। অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে তুলনামূলক সক্ষম দেশগুলো চাইলেই মুক্তবাজার অর্থনীতির সাধারণ নিয়মগুলো লঙ্ঘন করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি প্রায় ৬০টি দেশের উপর অতিরিক্ত হারে শুল্কারোপ করেছে। এর মধ্যে চীনের উপর ২৪৫ শতাংশ বর্ধিত শুল্কারোপ করা হয়েছে, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের উপর একতরফা শুল্কারোপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন। দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিবাদের মুখে বর্ধিত শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে। কিন্তু চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর বর্ধিত শুল্ক হার স্থগিত করা হয়নি। এতে বুঝা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ উদ্দেশ্যে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর বর্ধিত শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনেকদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনৈতিকতার অভিযোগ উত্থাপন করে আসছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে আসছে চীন পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের অনৈতিক সুবিধা দেবার জন্য স্থানীয় মুদ্রার মূল্যমান ইচ্ছে করেই কমিয়ে রাখছিল। কিন্তু চীন বারবারই এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য দেশটির প্রতিকূলে রয়েছে। বিশেষ করে চীনা পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজার দখল করে আছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মার্কিন পণ্য আমদানিকৃত চীনা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কুলিয়ে উঠতে পারছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ৬০টি দেশের উপর বর্ধিত শুল্কারোপ করেছে তার অধিকাংশ দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিকূলে রয়েছে। বিশ্ববাণিজ্যের রীতি অনুযায়ী, কোনো দেশ একতরফাভাবে আমদানি পণ্যের শুল্ক বাড়াতে পারে না। কিন্তু দেশটি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই দেশটির কাছে সব নিয়ম-নীতি উপেক্ষিত হচ্ছে। এটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে যে, আগামীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন ভয়াবহ বাণিজ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে। কাজেই চীনকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতি ধরে রাখার জন্য বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
আমরা যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইস্যুটি আলোচনা করি তাহলে আরো ভয়াবহ চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে নতুন শুল্কারোপ করেছে। তিন মাস পর এ নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে। যদিও ৬০টি দেশের উপর একই সঙ্গে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের জন্য এ পদক্ষেপটি বিপদ ডেকে আনতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক হার কার্যকর হলে বাংলাদেশ যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবার পর। পরিকল্পনা মোতাবেক বাংলাদেশ আগামী বছর (২০২৬) উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত জিএসপি (জেনারালাইজড সিস্টের অব প্রেফারেন্স) সুবিধা প্রদান করবে। তারপর জিএসপি+ নামে নতুন এক ধরনের বাণিজ্য সুবিধা দেয়া হবে। তবে বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে জিএসপি+ সুবিধা অর্জন করতে পারবে বলে মনে হয় না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে একক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক পার্টনার। ১৯৭৬ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দিয়ে আসছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক উপস্থিতির মূলে রয়েছে জিএসপি সুবিধা। জিএসপি সুবিধার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির জন্য কোনো শুল্ক প্রদান করতে হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৪৮ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার হারালে বাংলাদেশের অবস্থা কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। তাই বাংলাদেশকেও চীনের মতো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ধরে রাখার জন্য বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। আগামীতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। সে অবস্থায় এককভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে না। তাই নতুন অর্থনৈতিক জোট গঠন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক জোট গঠিত হয়েছে। কিন্তু সেসব অর্থনৈতিক জোট খুব একটা ফলপ্রুসূ হয়নি। এক্ষেত্রে সাউথ এশিয়ান এসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন (সার্ক) এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা যেতে পারে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম সার্কের স্বপ্ন দেখেছিলেন। সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিতি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকে নিয়ে একটি আঞ্চলিক জোট গঠনের লক্ষ্যে প্রাথমিক যোগাযোগ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমানের নির্মম শাহাদাতের পর সার্ক গঠন প্রক্রিয়া অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সামরিক শাসক এইচএম এরশাদের সময় ১৯৯৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানের সমন্বয়ে সার্ক গঠিত হয়। সার্ক গঠনের পর ভারত শর্তারোপ করে যে, সার্কে কোনো দ্বিপাক্ষিক ইস্যু আলোচনা করা যাবে না। ভারতের এমন শর্ত মেনে নেবার কারণে সার্ক মূলত একটি পিকনিক পার্টিতে পরিণত হয়। জিয়াউর রহমান যে সার্কের স্বপ্ন দেখেছিলেন তার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে বিদ্যমান সমস্যা দূরীকরণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া। কিন্তু ভারতের অযৌক্তিক শর্তের কারণে সেই লক্ষ্য ব্যর্থ হয়। উল্লেখ্য, ভারত এমনই একটি রাষ্ট্র যার সঙ্গে তার কোনো প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক নেই। বাস্তবতা হচ্ছে এটাই যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে যদি কোনো অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক জোট গঠন করা হয় সেখানে ভারত এবং পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করলে সেই জোট সফল হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে বিমসটেক জোট গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এই জোটও খুব একটা সফল হবে বলে মনে হয় না।
বর্তমান বিদ্যমান বাস্তবতায় চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্ককে নিয়ে একটি নতুন অর্থনৈতিক জোট গঠনের চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক মিলে রিজিওয়ানাল কো-অপারেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আরসিডি) নামে একটি অর্থনৈতিক জোট গঠিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে এ জোটের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আরসিডির অনুকরণে সিপিবিএআইটি (চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্ক) গঠন করা যেতে পারে। বর্ণিত দেশগুলো মোটামুটি একই মনমানসিকতা ধারণ করে। তারা আন্তর্জাতিক ফোরামে বিভিন্ন ইস্যুতে পরস্পরকে সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ দেশগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও আদর্শিক মিল রয়েছে। কোনো অর্থনৈতিক জোট সফল হবার জন্য দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বুঝাপড়া থাকতে হয়। রাজনৈতিক বুঝাপড়া না থাকলে এবং পরস্পর সহযোগিতার মনোভাব না থাকলে কোনো জোট সফল হতে পারে না। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালি একটি দেশ যদি কোনো অর্থনৈতিক জোটের নেতৃত্ব দেয় তাহলে সেই জোট সফল হবার সম্ভাবনা থাকে। চীন বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কয়েক বছর আগে বিশ্ব অর্থনীতিতে জাপানের ৪৪ বছরের আধিপত্য খর্ব করে চীন দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। ৪৪ বছর ধরে জাপান বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ভবিষ্যৎবাণী করেছে, ২০৫০ সালের আগেই চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্ব অর্থনীতিতে শীর্ষস্থান দখল করে নেবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের প্রাধান্য ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভয় এখানেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতিতে তার প্রাধান্য ধরে রাখার জন্য যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পিছপা হবে না। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বর্ধিত শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও চীনের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ প্রত্যক্ষ করা যায়। ৬০টি দেশের আমদানি পণ্যের উপর বর্ধিত শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হলেও চীনের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এটা কি এক যাত্রায় দুই ফল নয়?
সন্নিহিত এলাকায় অবস্থিত এমনকি দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক জোট গঠিত হতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শগত মিল থাকতে হবে অথবা জোটের স্বার্থে নিজের সংকীর্ণ স্বার্থ ত্যাগ করার মতো মানসিকতা থাকতে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতকে অসহযোগী দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। অর্থাৎ ভারত নামক দেশটি আঞ্চলিক অথবা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদারতা এবং সহযোগিতার মনোভাব প্রদর্শন করতে পারছে না। আমরা যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আলোচনা করি তাহলে একই চিত্র প্রত্যক্ষ করবো। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত তোষণ করতেন এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। শেখ হাসিনা একবার প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, ভারতকে আমরা যা দিয়েছি তা দেশটির সারা জীবন মনে রাখতে হবে। তার এ বক্তব্য সঠিক এবং কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। ভারতেকে তুষ্ট রাখার জন্য এমন কোনো সুযোগ নেই যা দেয়া হয়নি। কিন্তু তার বিনিময়ে ভারত আমাদের কী দিয়েছে? ফারাক্কা বাঁধ তৈরি করে বাংলাদেশকে পানি শূন্য করে মারার ব্যবস্থা করেছে। তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতে ভারত কোনো সাড়া দেয়নি। ভারত সব সময়ই লর্ড ডালহৌসির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে বিশ্বাসী। অর্থাৎ তুমি আমার বন্ধু যদি অধীনতা স্বীকার করো। দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের মধ্যে কখনোই এভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হতে পারে না। তাই আমাদের আগামী দিনের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য ভারতের বাইরে অর্থনৈতিক জোট গড়ে তুলতে হবে।
চীন যেহেতু এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে তাই চীনের নেতৃত্বে নতুন অর্থনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন অত্যন্ত প্রভাবশালি ভূমিকায় রয়েছে। অর্থনৈতিক জোট গঠন করে চীন এবং জোটভুক্ত অন্যান্য দেশ যদি তাদের বাজার উন্মুক্ত করে তাহলে প্রতিটি দেশই উপকৃত হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসম শুল্ক নীতির কারণে চীনের শিল্প-কারখানা গন্তব্য পরিবর্তন করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশ চীনা কলকারখানা আকৃষ্ট করতে পারে। যদি বাংলাদেশের কথাই বিবেচনা করি তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলক কম শুল্ক নির্ধারণ করেছে। চীনের উপর শুল্ক বাড়িয়েছে ২৪৫ শতাংশ। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে ৪৬শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে চীন সবার শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে ছিল বাংলাদেশ। তবে অতি সম্প্রতি ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। চীন এবং ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের পণ্যের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম শুল্কারোপ করেছে। কাজেই আগামীতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ভালো করবে বলেই আশা করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় চীনের উদ্যোক্তাগণ তুলনামূলক কম শুল্ক প্রদানের সুবিধার কারণে তাদের কিছু কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করতে পারে।
চীনের নেতৃত্বে উপরোল্লিখিত দেশগুলো মিলে যদি একটি নতুন অর্থনৈতিক জোট গঠন করে তাহলে তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে পারবে। একটি অর্থনৈতিক জোটের সফলতার প্রধান শর্ত হচ্ছে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শগত মিল থাকা, যা বর্ণিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। তাই ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।