॥ আহমদ মতিউর রহমান ॥
শক্তিধর রাষ্ট্র রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করে সারাবিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি কিছু সাহসী উচ্চারণ করে সাড়া ফেলেন। তিনি এতে বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভয় পান না এবং তাদের সম্পর্ক ‘গঠনমূলক’। জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশ্বের সবাই ট্রাম্পকে ভয় পায়, এটা সত্য।’ তবে নিজের ক্ষেত্রে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, না আমরা আমেরিকার শত্রু নই। আমরা বন্ধু। তাহলে ভয় পাব কেন? তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আমেরিকা বহু বছর ধরে, হয়তো আরও বহু দশক বা শতাব্দী ধরেই আমাদের কৌশলগত অংশীদার।’
সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি রুশ বাহিনীর হামলায় ইউক্রেনের বহু অঞ্চল বিদ্যুৎবিহীন হলেও ওয়াশিংটনে গত অক্টোবরে ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল না। জেলেনস্কির ভাষায়, তিনি মানে ট্রাম্প কিছু ছুঁড়ে মারেননি, আমি নিশ্চিত। ট্রাম্প সচরাচর যেটা করে থাকেন বলে রেকর্ড রয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, বৈঠকটি ছিল ‘স্বাভাবিক, ব্যবসায়িক এবং গঠনমূলক’, যেখানে মূল আলোচ্য ছিল ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও মস্কোর সামরিক শক্তি দুর্বল করার উপায়। জেলেনস্কি আরও জানান, কিয়েভ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্প থেকে ২৭টি প্যাট্রিয়ট বিমান প্রতিরক্ষা সিস্টেম কিনতে চায় এবং ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে নিজেদের সিস্টেমগুলো সাময়িকভাবে দিতে আহ্বান জানিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়া ইউরোপের বিরুদ্ধে ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ চালাচ্ছে এবং সতর্ক করেন যে, ইউক্রেনে যুদ্ধ চলার মধ্যেই মস্কো অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশের বিরুদ্ধেও নতুন ফ্রন্ট খুলতে পারে।
বিশ্লেষকদের ভয়টা সেখানেই। আর সেটা তিনি ট্রাম্পকে বলতে চেয়েছেন। কয়েকটি দেশ সফরের অংশ হিসেবে তিনি এ ভাষ্য লেখার সময়ে জেলেনস্কি তুরস্ক সফর করার কথা। সেখানে কী নিয়ে আলোচনা হবে তা নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে এবং বন্দি বিনিময়ের প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে তুরস্কে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি জানান, তিনি বুধবার কয়েকটি বৈঠক করবেন। যদিও তিনি তুরস্কের কোন শহরে যাবেন বা কাদের সাথে বৈঠক করবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
তিনি বলেন, আগামীকাল তুরস্কে বৈঠক। আমরা আলোচনাকে আরও গতিশীল করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের অংশীদারদের কাছে আমরা যে সমাধানগুলো প্রস্তাব করব, তা তৈরি করেছি। যুদ্ধের ইতি টানা ইউক্রেনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা বন্দি বিনিময় পুনরায় শুরু করা এবং যুদ্ধবন্দিদের ফিরিয়ে আনার জন্যও কাজ করছি। জেলেনস্কি আরও জানান, আন্তর্জাতিক সফর শেষে তিনি তার সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল দলের আইনপ্রণেতাদের সাথে বৈঠক করবেন। প্রয়োজনীয় কয়েকটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ ও মৌলিক দ্রুত সিদ্ধান্তও উপস্থাপন করবেন। এএফপিকে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ইউক্রেনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বুধবার আঙ্কারায় জেলেনস্কি তার তুর্কি প্রতিপক্ষ রজব তাইয়েব এরদোগানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সফরের ‘প্রধান লক্ষ্য হলো মার্কিনদের পুনরায় শান্তি প্রচেষ্টায় যুক্ত করা।’ কিয়েভ আশা করছে যে, ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিভিন্ন উপায়ে রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করতে পারবে।
এদিকে, মার্কিন গণমাধ্যম সূত্রের খবর যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভেন উইটকফও বুধবার তুরস্কে এসে জেলেনস্কির সাথে আলোচনায় যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, ক্রেমলিন মঙ্গলবার স্পষ্ট জানিয়েছে যে এ সপ্তাহে তুরস্কে অনুষ্ঠিত কোনো বৈঠকেই রাশিয়া অংশ নেবে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আগামীকাল তুরস্কে কোনো রুশ প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন না। আপাতত, এ যোগাযোগগুলো রাশিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়াই চলছে। পেসকভ আরও যোগ করেন যে তুরস্ক বা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ভলাদিমির পুতিন আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে অবহিত হতে প্রস্তুত রয়েছেন। রয়টার্স জানিয়েছে, একটি সূত্রের খবর অনুযায়ী, রুশ দূত দিমিত্রিয় এবং মার্কিন দূত উইটকফ-এর মধ্যে গত ২৪-২৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকেও “খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা” হয়েছিল। ( সূত্র : টিআরটি )।
তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু বুধবার জানায়, তুরস্কের যোগাযোগ পরিচালক বুরহানেত্তিন দুরান জানিয়েছেন, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি বুধবার তুর্কিয়েতে একটি ওয়ার্কিং ভিজিট বা সফর করবেন। তুর্কি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এনসোসিয়ালে এক পোস্টে ডুরান বলেন, “আঙ্কারায় আলোচনায় আমাদের কৌশলগত অংশীদার ইউক্রেনের সাথে দ্বিপাক্ষিক বিষয়সূচির পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত বর্তমান উন্নয়নগুলি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, আলোচনায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং স্থায়ী সমাধান অর্জনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা, বিশেষ করে ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।”
দেখা যাচ্ছে তুরস্ক বৈঠক কেবল দ্বিপাক্ষিক বৈঠক নয়। রাশিয়া এতে অংশ না নিলেও তিনটি দেশ কার্যত ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে বিশদ আলোচনা করবেন বলেই মনে হচ্ছে। রাশিয়া অংশ না নেয়ায় এই বৈঠক কাজে আসবে কি না এমন প্রশ্নও করছেন বিশ্লেষকরা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রুশ আগ্রাসন বন্ধের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বুধবার তুরস্ক সফর করবেন এটা স্পষ্ট। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি স্থগিত হয়ে যাওয়া শান্তি আলোচনা আবার শুরু করতে চান। এ বছর ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে বেশ কয়েকটি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর এই প্রক্রিয়া থমকে আছে। মস্কো যদিও যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়নি, উল্টো ফ্রন্টে তারা অগ্রসর হচ্ছে এবং ইউক্রেনের শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে।
রাশিয়া মঙ্গলবার রাতে পূর্ব ইউক্রেনের খারকিভ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ওই হামলায় কমপক্ষে ৩২ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার ভোরে খারকিভের গভর্নর এ তথ্য জানিয়েছেন। এটি রাশিয়ার তিন দিনের মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে তৃতীয়বার হামলা। মস্কো সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তীব্রতর করছে। রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে এবং শীতের আগে বেশ কয়েকটি বেসামরিক স্থানে আঘাত করছে। খারকিভের গভর্নর ওলেগ সিনেগুবভ বলেছেন, রাশিয়ার রাতের হামলায় কমপক্ষে ৩২ জন আহত হয়েছে। রাশিয়া হামলার ফলে নয় তলা ভবনে আগুন লেগে যায়। মস্কো সম্প্রতি কয়েকমাস ধরে প্রতিদিন ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তীব্রতর করছে। রাশিয়া ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে এবং শীতের আগে বেশ কয়েকটি বেসামরিক স্থানে আঘাত করছে।
এদিকে আরেক খবরে বলা হয়েছে রাশিয়ার ভয়াবহ আক্রমণ মোকাবিলায় নিজেদের আত্মরক্ষার সক্ষমতা বাড়াতে ইউক্রেন ফ্রান্সের কাছ থেকে ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাচ্ছে। প্যারিসের একটি বিমানঘাঁটিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে মন্তব্য করেন।
খবর দিয়ে বিবিসি জানায়, রাফাল এফ-৪ সরবরাহের পরিকল্পনা ২০৩৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে, আর চলতি বছর থেকেই ইন্টারসেপ্টর ড্রোনের যৌথ উৎপাদন শুরু হচ্ছে। আর্থিক দিকগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে অর্থায়ন এবং জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে, যা ইইউ সদস্যদের মধ্যে বিতর্ক তৈরি করেছে। জেলেনস্কি জানান, এ কৌশলগত চুক্তি আগামী বছর থেকে পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত চলবে। ইউক্রেন শক্তিশালী ফরাসি রাডার, আটটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং আরও উন্নত অস্ত্র পাবে।
তার মতে, এসব আধুনিক প্রযুক্তি মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ম্যাক্রোঁ বলেন, “১০০টি রাফাল যুদ্ধবিমান, এটি বিশাল সিদ্ধান্ত। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠনে এগুলো প্রয়োজন।” তিনি আরও জানান, ইউক্রেনকে ভবিষ্যতের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করতেই এ সহায়তা।
রাশিয়ার দীর্ঘপাল্লার হামলার মুখে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষায় রাফাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সের্হি কুজান জানান, রাশিয়া প্রতি মাসে ছয় হাজার গ্লাইড বোমা ব্যবহার করছে। তাই ইউক্রেনের জন্য ২০০ কিলোমিটার পাল্লার ফরাসি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বড় সুবিধা দেবে। তবে আরইউএসআ-এর বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক মনে করেন, এ ঘোষণার প্রভাব নির্ভর করবে বাস্তব সরবরাহের সময়সীমা এবং সাথে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর। এটি মূলত একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি; দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা কম। পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জাম কার্যকর রাখতে বিশাল প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা ও খুচরা যন্ত্রাংশ প্রয়োজন যেমন জার্মান লেপার্ড-২ ট্যাংক বা যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। রাফাল ক্রয়ের ক্ষেত্রেও একই জটিলতা রয়েছে। মূল বাধা হতে পারে অর্থায়ন। ফ্রান্স নিজস্ব বাজেট পর্যালোচনা করছে এবং ইইউ-এর যৌথ ঋণ ব্যবস্থার দিকেও তাকিয়ে আছে। কিন্তু ব্রাসেলসে আলোচনায় স্বীকার করা হয়েছে,অর্থ আসলে শেষের দিকে। জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদ ব্যবহারের প্রস্তাব আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে বিতর্কিত এবং অনেক সদস্য যুদ্ধ শেষে রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ইতোমধ্যে ইউক্রেন ফ্রান্সের মিরাজ, যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ এবং সাময়িকভাবে সুইডেনের গ্রিপেন যুদ্ধবিমান পাওয়ার আশ্বাস পেয়েছে। ফ্রান্স সফর শেষ করে জেলেনস্কি স্পেনে সামরিক সহায়তা চাইতে যান। একই সপ্তাহে তিনি গ্রিসের সঙ্গে গ্যাস চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। এর ফলে মার্কিন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বলকান অঞ্চল হয়ে শীতকালে ইউক্রেনে প্রবাহিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরুর পর থেকে মস্কো এখন ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণে। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যেও রুশ বাহিনী ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে। ইউক্রেন এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল। ১৯২২ সালে ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের একটি ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন, ছিল ইউরেশীয়া পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ, যার অস্তিত্ব ছিল ১৯১৮ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত। কিন্তু গণতন্ত্রের জোয়ারে কমিউনিস্ট ব্যবস্থায় ভাটা পড়ে। মানুষ হয়ে ওঠে স্বাধীনতাকামী। সোভিয়েতের ভেতরকার প্রজাতন্ত্রগুলো স্বাধীনতার দাবি করতে শুরু করে। তারই জেরে ১৯৯১ সালের ইউক্রেন স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং পহেলা ডিসেম্বর এক গণভোটে এটির প্রতি ইউক্রেনের জনগণ সমর্থন দেয়। ইউক্রেনের এই ঘোষণা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে একটি বড় ভূমিকা রাখে। আর সে বছরের ২৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম সোভিয়েতের ঘোষণা নং ১৪২ দ্বারা বিলুপ্ত হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এভাবে অবসান হয় কমিউনিস্ট জামানার। সেই সোভিয়েতের উত্তরসুরী এখন রাশিয়া। ইউক্রেনের স্বাধীনতাকে রুশরা মনে প্রাণে মেনে নেয়নি।
২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি শুরু হয় ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ। যা ছিল দু’দেশের মধ্যে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধেরই এক বিস্তৃতি, যখন ছদ্মবেশী রুশ সৈন্যরা গোপনে ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র ক্রিমিয়া আক্রমণ করে এবং তার নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে রুশ সৈন্য এবং স্থানীয় প্রক্সিরা ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল দখল করে, যার ফলে পূর্ব ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হয়। যা এখনো চলমান। এই যুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিকে পাশে পেয়েছেন জেলেনস্কি। কিন্তু যুদ্ধ থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।