দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণ দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া হঠাৎ করে যুদ্ধে জড়িয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। অন্তত ৫ দিন ধরে চলা এ যুদ্ধে বেশ কিছু লোক নিহতের ঘটনাও ঘটেছে। তবে প্রতিবেশী মালয়েশিয়ার চেষ্টাতে তাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতিরও খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু উভয়পক্ষই তা লংঘন করছে বলে অভিযোগ। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী। থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর গোলাবর্ষণ বন্ধ করেছে। কিন্তু সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে কম্বোডিয়ার দিক থেকে গুলির মুখে পড়েছে। তবে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে যে মধ্যরাতের পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে কোনও সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়নি।
ব্যাংকক পোস্ট অনলাইন ৩০ জুলাই জানায়, সীমান্তে কম্বোডিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। রয়্যাল থাই আর্মির মুখপাত্র এ সপ্তাহের শুরুতে করা থাই-কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি বারবার লঙ্ঘনের জন্য কম্বোডিয়ার নিন্দা জানিয়েছেন। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল উইনথাই সুভারি থাইল্যান্ডের জাতীয় সম্প্রচার পরিষেবাকে জানিয়েছেন যে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সি সা কেতের ফু মাকুয়ায় রাইফেল এবং হাতবোমা নিয়ে কম্বোডিয়ার একটি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর অস্ত্র ব্যবহারের এটি দ্বিতীয় ঘটনা বলে জানানো হয়। সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আরও বলেন যে থাই বাহিনী নজরদারির জন্য সীমান্তে অবস্থান করেছে এবং তাদের অস্ত্র ব্যবহার করেনি। তিনি নিকটবর্তী উবোন রাতচাথানি প্রদেশে উইং ২১-এ আক্রমণের জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে এমন গুজব অস্বীকার করেছেন।
বুধবার সকালে সরকারি মুখপাত্র জিরাইউ হৌংসুব গভর্নমেন্ট হাউসের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে কম্বোডিয়ার সেনারা ফু মাকুয়ায় থাই সৈন্যদের লক্ষ্য করে রাইফেল গুলি এবং হাতবোমা নিক্ষেপ করেছে। থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার জানিয়েছে যে ফু মাকুয়ায় কম্বোডিয়ার হামলা বুধবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল এবং সোমবার মধ্যরাতে উভয় দেশের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরেও এই ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের আগ্রাসন আবারও কম্বোডিয়ার বাহিনীর যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। একই পত্রিকার আরেকটি খবর হলো কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন কম্বোডিয়ান জেনারেল স্রে দুক সাম্প্রতিক থাই-কম্বোডিয়া সীমান্ত সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন।
আগের খবরে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থাই সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া থাই মাটিতে নির্বিচারে আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী সোমবার কুয়ালালামপুরে দু’প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনায় সম্মত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। এতে বলা হয়, থাই সরকার আন্তরিকভাবে সে চুক্তিটি সমর্থন করে এবং যৌথভাবে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি কঠোরভাবে মেনে চলে। তবে কম্বোডিয়ার সামরিক বাহিনী সম্মত যুদ্ধবিরতির সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় থাই ভূখণ্ডে ক্রমাগত এবং নির্বিচারে আক্রমণ চালিয়ে চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সংবাদপত্র খেমার নিউজ বলছে ভিন্ন কথা। তারা এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
এ যুদ্ধবিরতি টিকবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। আল-জাজিরার খবর অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পরও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় থাই ও কম্বোডিয়ার সীমানায় লড়াই চলছিল আগের মতোই। এ চুক্তিতে দু’দেশের দাবি করা সীমান্ত অঞ্চল নিয়ে কোনো সমাধান হয়নি। এ সীমান্ত বিরোধ সংঘাতের মূল কারণ।
যাই হোক উভয় দেশের অভিযোগ করা বা অস্বীকার করার পর পরিস্থিতি মোটামুটি স্পষ্ট। সীমান্তে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজমান। কারণ দু দেশের সংকটটা বেশ গভীরে বলেই মনে হয়। আর ইগো সমস্যা তাদেরকে যুদ্ধ থামাতে নাও দিতে পারে।
পাঠকদের স্মরণে থাকতে পারে, একটি টেলিফোন কলের সূত্র ধরে থাইল্যান্ডে বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে গেছে, প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাতে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। আর সে ফোন কলটি পেতংতার্ন করেছিলেন কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ডিফেক্টো নেতা হুনসেনকে। দু দেশের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির আলোচনার গভীরে না ঢুকে রাজনীিিততে কম অভিজ্ঞ পেতংতার্ন হুনসেনকে আংকেল বলে সম্বোধন করায় তা নিয়ে দেশে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শেষে সাংবিধানিক আদালত তাকে বরখাস্ত করে। কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন, সে ফোন কলের সূত্র ধরেই কার্যত শেষ পর্যন্ত দুটি দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। দুটি দেশ পাল্টাপাল্টি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি নিষিদ্ধ করে, থাই চলচ্চিত্র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় এবং থাইল্যান্ড থেকে আসা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। অন্যদিকে থাইল্যান্ড তাদের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সব পথ বন্ধ করে দেয়, দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে। কম্বোডিয়া এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জানায়, তারা থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনছে ও ব্যাংককে তাদের দূতাবাস থেকে সব কম্বোডীয় কর্মী ফিরিয়ে নিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে মারাত্মক ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।
দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ১১ মাসের মাথায় থাইল্যান্ডের ৩৮ বছর বয়স্কা প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা সাময়িক বরখাস্ত হন। একটি ফোনকলকে ঘিরে থাইল্যান্ডের সাংবিধানিক আদালত প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। একে ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ফোনকলে তিনি কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেন’কে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন এবং এক থাই সেনা কমান্ডারের সমালোচনা করেন। কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত বিষয়ক আলোচনায় ‘নমনীয়তা’ দেখানোর প্রস্তাব দেন। এ ফোনকল থাইল্যান্ডে জাতীয় মর্যাদা ও সামরিক কর্তৃত্বের অবমূল্যায়ন হিসেবে দেখা হয়েছে, যা জনমনে ক্ষোভ তৈরি করে। এর ফলে তার অব্যাহতির আবেদন আদালতে জমা পড়ে। ফলে ৭-২ ভোটে সাংবিধানিক আদালত তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। বর্তমান যুদ্ধ বা সংঘাত সে ঘটনারই পরের অংশ মাত্র। দেখা যাচ্ছে পেতংতার্ন যে নমনীয়তা দেখিয়েছেনা সেনারা মেনে নেয়নি। তারা যুদ্ধ করে প্রমাণ করেছে তারা সঠিক। আর পেতংতার্নের স্থলে নতুন একজনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে। পেতংতার্ন সংস্কৃতি মন্ত্রী পদে আসীন হয়ে পদাবনতি স্বত্তেও আছেন মন্ত্রিসভায়। এ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। সেনা বাহিনি আর কতখানি অগ্রসর সেটাও রয়েছে বিশ্লেষকদের বিবেচনায়।
কেন এ বিরোধ ও সংঘাত? থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এ সীমান্ত বিরোধের সূচনা এক শতাব্দীর বেশি আগে। সে সময়ে কম্বোডিয়া ফ্রান্সের উপনিবেশ (১৯৫৩ সাল পর্যন্ত) ছিল। ফ্রান্স প্রথমবার দু’দেশের স্থলসীমান্তের মানচিত্র তৈরি করে দেওয়ার পর থেকেই বিরোধের সূত্রপাত। এরপর সীমান্ত নিয়ে দু’দেশের বিরোধ বারবারই মাথাচাড়া দিয়েছে। আর প্রতিবারই তা দেশ দুটির অভ্যন্তরীণ জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিয়েছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সম্পর্ক ২০০৮ সালে খারাপ হতে শুরু করে। ওই সময় বিতর্কিত অঞ্চলে অবস্থিত ১১শ শতকের একটি মন্দিরকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে নিবন্ধন করার চেষ্টা করে কম্বোডিয়া। কিন্তু তা থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনামলে কম্বোডিয়ার সীমানা ঠিকমতো নির্ধারণ হয়নি এবং স্বাধীন শ্যাম দেশের (বর্তমান থাইল্যান্ড) সঙ্গে করা চুক্তিগুলোও অস্পষ্ট ছিল। থাইল্যান্ড কখনো কোনো বিদেশি শক্তির উপনিবেশ ছিল না। ব্রিটিশরা মিয়ানমার দখল করেছিল আর ফরাসিরা যেমন ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়াকে উপনিবেশ বানিয়েছিল। কিন্তু থাইল্যান্ড তাদের হাত থেকে স্বাধীন থাকতে পেরেছিল। তবে কখনো কখনো তারা ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর সঙ্গে আপস করে সীমান্ত চুক্তি করেছিল। এ ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, কম্বোডিয়া ছিল ফরাসি উপনিবেশ এবং ফরাসিরাই অনেক আগে সীমান্ত চিহ্নিত করেছিল, যা নিয়ে আজকের এ বিরোধ।
কম্বোডিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচীন উপদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি দেশ। জন সংখ্যা প্রায় দু’কোটি। এর আয়তন ১,৮১,০৩৫ বর্গকিলোমিটার (৬৯,৮৯৮ বর্গমাইল) এবং দেশটির উত্তর-পশ্চিমে থাইল্যান্ড, উত্তরে লাওস, পূর্বে ভিয়েতনাম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে থাইল্যান্ড উপসাগর অবস্থিত। থাইল্যান্ডও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ৫,১৩,১২০ বর্গকিলোমিটার (১,৯৮,১২০ বর্গমাইল) জুড়ে বিস্তৃত ৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশ। এর উত্তরে মিয়ানমার ও লাওস, পূর্বে লাওস ও কম্বোডিয়া, দক্ষিণে থাইল্যান্ড উপসাগর ও মালয়েশিয়া এবং পশ্চিমে আন্দামান সাগর ও মিয়ানমার অবস্থিত। পাশাপাশি দুটি দেশ। উভয় দেশের সংখ্যাগুরু জনগণের ধর্ম বৌদ্ধধর্ম। তবে থাইল্যান্ডে গণতন্ত্র থাকলেও কম্বোডিয়ায় রয়েছে একনায়কতান্ত্রিক শাসন। কম্বোডিয়া একটি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, কারণ ক্ষমতা হুন মানেতের নেতৃত্বে কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) এর হাতে কেন্দ্রীভূত। নাগরিক সমাজ গোষ্ঠী, স্বাধীন মিডিয়া এবং বিরোধী দলগুলিকে দমন করা হয় এবং নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না। আয়তন ও জনসংখ্যার বিচারে একটি আরেকটির চেয়ে বেশ ছোট। কম্বোডিয়ার সৈন্য সংখ্যাও থাইল্যান্ডের চেয়ে অনেক কম। তবু দুটি দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সর্বশেষ উত্তেজনা শুরু হয় গত মে মাসে। তখন সীমান্তের একটি বিতর্কিত এলাকায় দু’দেশের সেনাদের মধ্যে অল্প সময়ের গোলাগুলি হয়। এতে কম্বোডিয়ার এক সেনা নিহত হন। এর পরপরই শুরু হয় পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া। উত্তেজনা কমাতে থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন কম্বোডিয়ার নেতা হুনসেনকে ফোন করেন। তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়, সে কথা আগেই বলেছি।
এরপর থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পারাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। আর কম্বোডিয়া পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি আমদানি নিষিদ্ধ করে, থাই চলচ্চিত্র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় এবং থাইল্যান্ড থেকে আসা ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশটি। ২৭ জুলাই টহল দেওয়ার সময় থাইল্যান্ডের পাঁচ সেনা স্থলমাইনের বিস্ফোরণে আহত হলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। থাই কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, মাইনগুলো নতুন করে পুঁতে রাখা হয়েছে। প্রতিবাদে থাইল্যান্ড তাদের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কম্বোডিয়ার সঙ্গে সব পথ বন্ধ করে দেয়, দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে।
কম্বোডিয়া এসব পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় জানায়, তারা থাইল্যান্ডের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে ও ব্যাংককে তাদের দূতাবাস থেকে সব কম্বোডীয় কর্মী ফিরিয়ে নেয়। কম্বোডিয়া নতুন স্থলমাইন পুঁতে রাখার অভিযোগ অস্বীকার করে।
উভয় দেশের মধ্যকার ৫ দিনের যুদ্ধে যা হয়েছে তাও প্রনিধানযোগ্য। দেখা যাচ্ছে থাই সৈন্যরা কম্বোডিয়ার কিছু এলাকা দখল করেছে। সেখানে কিছু লোক হামলায় নিহত হয়েছে। একজন জেনারেলের নিহত হওয়ার খবর জানা যাচ্ছে। আর প্রায় দু লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত পরিস্থিতি বিষয়ক অ্যাডহক সেন্টারের মুখপাত্র র্যাডম সুরাসান্ত কংসিরি বলেছেন, থাই সৈন্যরা কম্বোডিয়া সীমান্তের ১১টি এলাকা দখল করেছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ার সংবাদপত্র খেমার টাইমস জানিয়েছে, কম্বোডিয়ায় রাজকীয় সরকারের মুখপাত্র পেন বোনা বলেছেন তার দেশ বর্তমান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে এমন যেকোনো তথ্য কম্বোডিয়া প্রত্যাখ্যান করে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত সমস্ত অনলাইন তথ্য প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই ধরনের তথ্যকে মিথ্যা, বানোয়াট বলে মনে করে।
দেখা যাচ্ছে পরস্পরকে দোষারোপের ধারা অব্যাহত রয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরও সংঘাতপূর্ণ এলাকায় থাই ও কম্বোডিয়ার সীমানায় লড়াই চলছে আগের মতোই। যুদ্ধ আদৌ বন্ধ হবে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। সবাই চায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বেজে ওঠা যুদ্ধের দামামা বন্ধ হোক।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।