বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট, অক্টোবর সংস্করণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র এবং বিদ্যমান সমস্যাসমূহ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে মোটা দাগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদ্যমান চার ধরনের চ্যালেঞ্জের কথা বলেছে। তারা বলেছে, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান স্থবিরতা, কর্মসংস্থানের মন্থর গতি, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব আহরণে ক্রমাবনতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, রেমিট্যান্স এবং পণ্য রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রবণতা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দু’টি খাতের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সঙ্কট অনেকটাই কেটে গেছে। আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্ফীতি আরো বাড়বে বলেই তারা মনে করছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৮০শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। এদিকে অন্য উন্নয়ন সহযোগী এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরে ৫ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। বাংলাদেশ সরকার এ খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সাড়ে ৫ শতাংশ। কাজেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রক্ষেপন বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ। অবশ্য এ মুহূর্তে জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কাক্সিক্ষত মাত্রায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ গত কয়েক বছর ধরে একই স্থানে মন্থর হয়ে আছে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের হার কোনভাবেই জিডিপির ২৩/২৪ শতাংশের উপরে উঠানো যাচ্ছে না। এক বছরের ব্যবধানে দেশে দারিদ্র্য পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২ শতাংশ, যা এক বছর আগে ছিল ২০ দশমিক ৫০শতাংশ। সংস্থাটি আরো বলেছে, ৩০ লাখ কর্মক্ষম মানুষ কর্মসংস্থানের বাইরে চলে গেছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ মানুষ রয়েছেন যারা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে সপ্তাহে এক ঘন্টাও কাজ করতে পারছে না। ৮৫ লাখ মানুষ যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর তারা কর্মসংস্থানে নেই আবার পড়াশুনাতেও নেই। একটি বেসরকারি সংস্থার মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতির প্রশংসা করেছে। তবে তারা বলেছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশের উচিত হবে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে শ্রম শক্তির জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। সংস্থাটি বাংলাদেশের স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত মাত্রায় আহরিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকেই বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, একটি দেশের টেকসই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। ব্যক্তিখাতে প্রত্যাশিত মাত্রায় বিনিয়োগ আহরণ না করেই কোন দেশে উন্নতির শিখড়ে আরোহণ করেছে এমন নজীর দেখানো যাবে না। বিনিয়োগ এমন একটি অর্থনৈতিক উপকরণ যার একই সঙ্গে অনেক ধরনের সমস্যা দূরীকরণপূর্বক নতুন প্রত্যাশার সৃষ্টি করে। প্রতিটি দেশই চায় দারিদ্র্য বিমোচন করতে। পারতপক্ষে দারিদ্র্যাবস্থাকে সহনীয় পর্যায়ে সীমিত রাখার জন্য। কিন্তু চাইলেই দারিদ্র্যাবস্থা দূরীকরণ বা সীমিত রাখা যায় না যদি পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো না হয়। নীতি নির্ধারকদের ভাবতে হবে কি করলে কি হয়। যেমন সাড়ম্বরে পদ্মাসেতু উদ্বোধনকালে বলা হয়েছিল, পদ্মাসেতু চালুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। একই সঙ্গে এ সেতু জিডিপি দেড় শতাংশ থেকে ২ শতাংশ বাড়ানোর ব্যাপারে অবদান রাখবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পদ্মা সেতু কিভাবে জিডিপি বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে যদি সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোকে শিল্পায়নের আওতায় আনা না হয়। আমরা পদ্মা সেতু সংলগ্ন জেলাগুলোতে শিল্পায়নের জোয়ার সৃষ্টি করার মতো কোন উদ্যোগ নিয়েছি?

ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ নানাভাবে জাতীয় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। যদি একটি দেশ দ্রুত জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিতকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন করতে চায় তাহলে তাকে প্রথমেই ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখের মতো। সপ্তাহে এক ঘন্টাও পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করতে পারছে না এমন ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এটা উন্নত দেশের বেকারের সংজ্ঞা হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে বেকারের সংজ্ঞা এভাবে নির্ধারণ করলে হবে না। কারণ উন্নত দেশগুলোতে বেকারভাতা প্রদান করা হয় আমাদের দেশে যা এখনো কল্পনার বাইরে। এছাড়া বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত আছে তারা যদি পরিবারের ব্যয় নির্বাহের মতো অর্থ উপার্জন করতে না পারেন তাহলে তাকে আন্ডার এম্পøয়েড বলা যেতে পারে। এছাড়া রয়েছে ছদ্ম বেকার, মৌসুমি বেকার। কাজেই শুধু কর্মে নিযুক্ত থাকলেই তাকে বেকারত্বের অভিশাপ মুক্ত বলা যাবে না। একটি পরিবারের প্রতিটি সদস্য তার যোগ্যতা অনুযায়ী যদি বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত হতে পারেন তাহলে সে পরিবারে দারিদ্র্য থাকবে না। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণ ব্যতীত কোনভাবেই দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়। আগে অবস্থা এমন ছিল যে, কোন পরিবারের একজন বা দু’জন সদস্যের কর্মসংস্থান হলে পুরো পরিবারের ব্যয় নির্বাহের মতো অর্থ তাদের হাতে চলে আসতো। কিন্তু এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, কোন পরিবারের প্রতিটি সদস্য উপযুক্ততা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেলে সেই পরিবারের আর্থিক দীনতা থেকেই যায়।

বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশের বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু তাদের এ বক্তব্য প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণ করার সুযোগ নেই। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেই স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে এটা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। বিগত সরকারের আমলে সাড়ে ১৫ বছর দেশে কার্যত কোন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছিল না। রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রাম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তাহলে সে সময় স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সে সুযোগ লুফে নিলো না কেন? বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি দেশ। বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ক্ষেত্র। বাংলাদেশে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। ইউরোপের অনেক অঞ্চলে দু’/তিনটি দেশ মিলেও ১৭ কোটি মানুষ নেই। কয়েক বছর আগে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল,বাংলাদেশে কার্যকর মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। এক থেকে তিন দশক আগে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত পরিবারের হার ছিল ১২ শতাংশ। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ভোগ ব্যয় এবং ভোগ করার সামর্থ্য বা ক্ষমতাও আগের তুলনায় বেড়েছে। বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। একজন বিদেশি উদ্যোক্তা যদি ভারতে কারখানা স্থাপন করে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে রপ্তানি করে তাহলে সে রপ্তানিকারককে অন্তত ১২ শতাংশ হারে শুল্ক প্রদান করতে হবে। কিন্তু সেই একই উদ্যাক্তা যদি বাংলাদেশ কারখানা স্থাপন করে উৎপাদিত পণ্য ইউরোপীয় ইউনয়নভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি করে তাহলে তাকে কোন শুল্ক প্রদান করতে হবে না। একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী হচ্ছেন ‘শীতের অতিথি পাখির মতো। শীতের অতিথি পাখি সেই পুকুরেই অবস্থান গ্রহণ করে যেখানে প্রচুর পরিমাণ মাছ পাওয়ার পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তা পাওয়া যায়। বিদেশি উদ্যোক্তাগণও কোন দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সেই তার পুঁজির নিরাপত্তা, বিনিয়োজিত পুঁজি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হবে কিনা এসব বিষয় ভালোভাবেই যাচাই করে তারপরই বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশের মতো একটি অর্থনীতিতে জিডিপির অন্তত ৪০ শতাংশ বিনিয়োগ হওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করেন।

বিশ্বব্যাংক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অন্যতম প্রতিবদ্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আসলে এটা প্রশ্নাতীত সত্য নয়। কারণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজমান রয়েছে এমন অনেক দেশে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি বিনয়োগ হচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রোডাক্টিভ সেক্টরে খুব একটা প্রভাব ফেলে না। কাজেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলেই সে দেশে বিনিয়োগ হবে না এটা মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা এবং অবৈধ অর্থ উপার্জনের নোংড়া মানসিকতা। স্থানীয় অথবা বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে কোন প্রোডাকশন ইউনিট স্থাপন করেছে অথচ কোন পর্যায়েই উৎকোচ প্রদান করেননি এমন দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। একটি প্রকল্প প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য ছোটখাটো সব মিলিয়ে অন্তত ২৫/২৬টি দপ্তরে যেতে হয়। এর প্রত্যেকটিতে ঘুষ প্রদান করতে হয়। যারা ঘুষ প্রদান করতে চান না তাদের কাজ নানা অজুহাতে বিলম্বিত করা হয়। ব্যাংক কোন প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানের সময় ইন্টারেস্ট ডিউরিং কনস্ট্রাকশন পিরিয়ড (আইডিসিপি) বলে ৬ মাস সময় নির্ধারণ করে দেয়। এ সময়ে ব্যাংক ঋণের হার তুলনামূলকভাবে কম নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংক ধরে নেয় একটি প্রকল্প প্রস্তাব বিনিয়োগ বোর্ড অথবা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দাখিলের পর ৬ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশে খুব কম সংখ্যক প্রতিষ্ঠান আছে যারা অনুমোদনের পর ৬ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারছে।

বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দেখিয়েছিল ১৭৬তম। অর্থাৎ ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের দুর্বলতম স্থানে রয়েছে। সম্প্রতি অন্য একটি সূচকে বাংলাদেশকে চতুর্থ ধাপে স্থান দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ মন্থরতার মূল কারণ এখানেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসে ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এটা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর জুলাই মাসে ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিগত সরকার আমলে এক পর্যায়ে ব্যক্তি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। অবশ্য সে ঋণ যে উদ্দিষ্ট কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ সে একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছিল ৭৬ শতাংশ। কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছিল ১৪ শতাংশ করে। তার অর্থ হচ্ছে ব্যাংক থেকে যে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছিল তা উদ্দিষ্ট কাজে ব্যবহার না করে অন্যত্র প্রবাহিত করা হয়েছিল। এমনকি বিদেশে পাচার করা হয়।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে না। বর্তমান দেশের অর্থনীতিতে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে চলেছে। আমরা মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার কথা বলি কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসইভাবে মূল্যস্ফীতি কিভাবে কমানো যাবে তা নিয়ে ভাবি না। মূল্যস্ফীতির হার টেকসইভাবে কমানোর জন্য অভ্যন্তরীণ খাতে উৎপাদন বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। আর এ উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব ব্যক্তিখাতের প্রোডাক্টিভ সেক্টরকে গতিশীল করার মাধ্যমে। আমরা যদি ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের গতি বাড়াতে পারতাম তাহলে অর্থনীতির অনেক জটিল সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যেতো। তাই আমাদের ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের পথে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।