॥ ইবরাহীম বাহারী ॥
যারা এখনো The Research and Analysis Wing (RAW)- ইন্ডিয়ান নেরেটিভ নিয়েই শিবির বিদ্বেষে পড়েছিলেন, সদ্য সমাপ্ত ডাকসু নির্বাচন তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। এ নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক কথা বলে ছাত্রদল তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারির উপস্থিতিতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা সভাপতি গণেশচন্দ্র সাহস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানকে প্রকাশ্যে ধমক দিয়েছেন। এ এক ভয়ংকর অনৈতিক অশোভনীয় আচরণ। বিশ্ববাসী তা দু’চোখে প্রত্যক্ষ করেছে। এগুলোই ছাত্রদলের ভূমিধস পরাজয়ের কারণ। এ কারণেই যারা ছাত্রলীগ করেছিল আজ তারা পালাতে বাধ্য হয়েছে। তাদের সকল বৈশিষ্ট্যগুলো কী এখন ছাত্রদলের ওপর আছর করেছে।
বিএনপি এবং ছাত্রদলকে অবশ্যই বুঝতে হবে জেন জি প্রজন্ম তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে কেন ? ইন্ডিয়ান নেরেটিভের বিরুদ্ধে জুলাই যুদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বর্তমানে একমাত্র বাধা হচ্ছে ইন্ডিয়ান নেরেটিভ। জুলাইয়ে পরাজিতরা ইন্ডিয়াতে গুজরাটের কসাইয়ের পায়ের তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বিজয়ীদের একটি অংশ পরাজিতদের স্থান দখল করেছে। তাদের ভাষায়, তাদের মুখেই এরা এখন কথা বলছে। তাদের চরিত্রেই নিজেদের চিত্রাইত করছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নারী বিদ্বেষী বলে প্রচার করা হয়, অথচ ছাত্রীরা তাদের সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়ে এ অপপ্রচারের জবাব দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের সবচেয়ে মেধাবী এবং যোগ্যতা সম্পন্ন ছাত্রছাত্রী। তারাই জুলাই বিপ্লবের মতো ভূমিধস বিজয় এনে দিয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবির কে। ভারতের শিখানো চেতনাবাজদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন। বুঝতে হবে এ প্রজন্ম তাদের বস্তা পঁচা ইন্ডিয়ান নেরেটিভ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইন্ডিয়ার সে নেরেটিভে নেই দেশপ্রেম, নেই দেশের স্বাধীনতা - সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ, নেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কোন পরিকল্পনা, নেই দেশের মানুষের জীবন ও মানের উন্নয়ন কোন প্লান, নেই কোটি কোটি বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের কোন পরিকল্পনা, নেই দেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, নেই দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে শত্রু মোকাবেলার মতো দক্ষ করে গড়ে তোলার কোন প্লান, নেই ১৮ কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের টার্গেট, কর্মসংস্থান তৈরি, শিক্ষা- চিকিৎসা- বাসস্থানের মৌলিক নিশ্চয়তার কোন ব্যবস্থা।
আছে শুধুমাত্র দেশের জনগণকে বিভক্ত করা, আছে ধর্মীয় অনুভূতি ধ্বংস করে দিয়ে জাতিকে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বানিয়ে একদলের বিরুদ্ধে আরেক দলকে দিয়ে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, খুন-গুম, লুটপাট, টাকা পাচার, মাফিয়া তন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের উন্নতি কে দমিয়ে রাখা। আছে চেতনার দোহাই দিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে রাখা, আছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের তাবেদার বানিয়ে রাখা। আছে স্বপ্ন দমিয়ে রেখে পুরো জাতিকে গোলাম বানিয়ে রাখার সুদূরপ্রসারী মাস্টার প্ল্যান। ছাত্রশিবিরের অতুলনীয় প্রশংসনীয় গুণগুলো খুঁজে দেখুন। নিজের জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিবর্তণ হয়ে যাবে।
বর্তমানে পঙ্কিলতা যুক্ত আকাশ সংস্কৃতি, ইয়াবা মাদকের ছোবল নৈতিক অবক্ষয়ের যুগে সমাজে আমাদের মতো বহু অভিভাবক তার সন্তানকে শিবিরে ভর্তি করে দিয়ে নিজে চাপমুক্ত থাকতে পারেন। মনে করেন আমার সন্তানকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সমাজে, বন্ধু-বান্ধবের আড্ডায়, নৈতিক ও ধর্ম পালন সহ সর্বত্র রক্ষার দায়িত্ব ছাত্র শিবিরের। শিবির আমার সন্তানকে আমার থেকেও দক্ষ-কর্মঠ, উন্নত ক্যারিয়ারে গড়ে তুলবে।
শিবির চরিত্রবান, মেধাবী, যোগ্যতা সম্পন্ন, পরিশ্রমী, সমাজ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দক্ষ, পরোপকারী, নিরহংকারী, দয়ালু, ধর্মীয় অনুশাসন অনুকরণীয়, অধূমপায়ী, মাদকাসক্তি মুক্ত, দুর্নীতি মুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত, দখলবাজ মুক্ত, ইভটিজিং মুক্ত, ধর্ষক নয়, আমানতদারি অর্থাৎ মানবিক নৈতিক-জৈবিক এবং সামাজিক সকল প্রয়োজনীয় গুণ শিবিরের মাঝে আছে। অপ্রয়োজনীয় গুণ শিবির পরিত্যাগ করতে পেরেছে। শিবির হচ্ছে জুয়েল এবং নৈতিকতা তৈরির কারখানা। এমন সোনার ছেলেদের সংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রতিনিধিদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে বিজয়ী করে নিজেদের সম্মান-ই তারা বৃদ্ধি করেছে।
এ শিবিরকে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা ব্যর্থ হয়ে শুধুমাত্র ৭১এর চেতনার ট্যাগ দিয়ে পরাজিত করা কখনোই সম্ভব নয়। তার সর্বশেষ নজির হচ্ছে ডাকসুতে শিবিরের ভূমিধস বিজয় । আলহামদুলিল্লাহ, নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নসিঁড়ি আরেক ধাপ।
লেখক : প্রাবন্ধিক।