জাহিদ হাসান

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। দীর্ঘকাল ধরে এ ধারার শিক্ষা মুসলিম সমাজে নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বিকাশের পাশাপাশি প্রশাসনিক, আইনগত ও জাগতিক জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ শিক্ষাব্যবস্থা একাধিক কাঠামোগত, একাডেমিক ও নীতিগত সংকটে পড়েছে। ফলে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আজ একটি জাতীয় দাবি।

ভারতীয় উপমহাদেশে মাদরাসা শিক্ষার সূচনা হয়েছিল সুলতানি ও মোগল আমলে। তবে আধুনিক অর্থে আলিয়া মাদরাসা ধারার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় ১৭৮০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত “আলিয়া মাদরাসা” প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। ব্রিটিশ গভর্নর লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস ও মুসলিম শিক্ষাবিদদের সম্মিলিত উদ্যোগে গঠিত এ প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল মুসলমান সমাজকে শিক্ষার আলোর পথে ফিরিয়ে আনা এবং প্রশাসনিক চাকরিতে মুসলিম যুবকদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করা।

প্রথমদিকে এ মাদরাসায় দরসে নিজামি ধারার পাঠ্যক্রম অনুসৃত হলেও সময়ের পরিক্রমায় ব্রিটিশ নীতির প্রভাবে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আসে- হাদিস, তাফসির প্রভৃতি ধর্মীয় বিষয় বাদ দিয়ে আইন, যুক্তি ও ইংরেজি ভাষার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে আবারও পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় বিষয় পুনরায় চালু হয়। কিন্তু এ টানাপোড়েন আলিয়া ধারার শিক্ষাকে দ্বিমুখী করে তোলে- একদিকে ইসলামি তাহযিব-তামাদ্দুন রক্ষা, অন্যদিকে জাগতিক কর্মসংস্থানের প্রস্তুতি।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়, যা ১৯৭৩ সালে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে জাতীয় শিক্ষার মৌলিক ভিত্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকীকরণের প্রস্তাব করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ধীরে ধীরে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পর্যায়ের পাঠ্যক্রম সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে সমমান ঘোষণা করা হয়।

১৯৭৮ সালের Madrasah Education Ordinance এবং পরবর্তী Bangladesh Madrasah Education Board Act, , ২০২০-এর মাধ্যমে আইনি কাঠামো আরও সুসংহত হয়। কিন্তু একাডেমিক মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে একাধিক বাধা থেকে যায়-বিশেষত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার ভারসাম্য, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং নীতি-নির্ধারণী বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় নয় হাজারেরও বেশি আলিয়া মাদরাসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ শিক্ষা পাঁচটি স্তরে বিভক্ত-ইবতেদায়ী (প্রাথমিক), দাখিল (মাধ্যমিক), আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) ফাজিল (স্নাতক), কামিল (স্নাতকোত্তর)-এ ব্যবস্থাকে একাডেমিক ও প্রশাসনিকভাবে পরিচালনা করছে চারটি প্রধান প্রতিষ্ঠান: বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (IAU)-- দাখিল ও আলিম পর্যায়ের পাঠ্যক্রম, পরীক্ষা ও স্বীকৃতি প্রদান করে। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়(IAU)- ফাজিল ও কামিল পর্যায়ের উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর (DME) - প্রশাসনিক ও তদারকি কার্য পরিচালনা করে। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (BMTTI)- শিক্ষক প্রশিক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত।

আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার সবচেয়ে আলোচিত সংকট হলো ধর্মীয় ও সাধারণ জ্ঞানের ভারসাম্যহীনতা। বর্তমান পাঠ্যক্রমে কুরআন, হাদিস, ফিকহ, আরবি ভাষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও এই দুই ধারার মধ্যে প্রয়োজনীয় সুষমতা রক্ষা করা যায়নি। ২০২৩ সালের ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবই বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট ১৫টি বইয়ের মধ্যে মাত্র ৪টি ধর্মীয় বিষয়, বাকি ১১টি সাধারণ শিক্ষা বিষয়। ফলে মাদরাসার মূল লক্ষ্য- ইসলামি আলেম তৈরি যা ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। আবার আধুনিক জ্ঞানের ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।

আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার প্রাণ হলো আরবি ভাষা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ ভাষা শিক্ষায় ভয়াবহ দুর্বলতা রয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আরবি পাঠের প্রতি ভীতি বোধ করে; পাঠদানের পদ্ধতি এখনো প্রাচীন ও অনুপ্রেরণাহীন। ফলে কুরআন-সুন্নাহর মূল গ্রন্থসমূহের গভীর উপলব্ধি থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে পাঠক্রম প্রায়ই অনুবাদ ও গাইডনির্ভর হয়ে পড়ে, যা জ্ঞানের গভীরতা সীমাবদ্ধ করে রাখে।

বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (BMTTI) নিয়মিত প্রশিক্ষণ পরিচালনা করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। প্রশিক্ষণ মডিউলগুলো আধুনিক গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (IER)-এর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দাখিল পর্যায়ের শিক্ষকগণের অনেকেই বিষয়ভিত্তিক পাঠদান পদ্ধতিতে দক্ষ নন। বিশেষত ইংরেজি, গণিত ও আরবি বিষয়ে কার্যকর প্রশিক্ষণের অভাব স্পষ্ট। এছাড়া NTRCA-এর মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াতেও সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে আরবি বিষয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক সংখ্যা সীমিত, ফলে ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে যোগ্য শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে সরকার আলিয়া মাদরাসা শিক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত পরিবর্তন এনেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম পুনর্বহাল করে ধর্মীয় পরিচিতি ও ইসলামি সংস্কৃতির ওপর গুরুত্ব বৃদ্ধি। দাখিল ও আলিম পর্যায়ে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ সংযোজন, যাতে শিক্ষার্থীরা বৃত্তিমুখী ও কর্মসংস্থানে উপযোগী হয়। বেসরকারি মাদরাসা নীতিমালা ২০২৫-এর প্রণয়ন, যার মাধ্যমে নতুন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, স্বীকৃতি ও মাননিয়ন্ত্রণে কঠোর নিয়ম আরোপ করা হয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা ২০২৫ চালু করার উদ্যোগ, যা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় উৎসাহ দেবে এবং ঝরে পড়া হ্রাস করবে। তবে এসব সংস্কার প্রায়ই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে ওঠানামা করে, ফলে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় না।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ শিক্ষার তুলনায় মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে কিছুটা পিছিয়ে। ‘লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি ইনস্টিটিউশনস- ২০১৭’ এবং ‘ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস-২০১৯’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের দক্ষতা সাধারণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় দুর্বল। ফলে তাদের উচ্চশিক্ষায় সাফল্যের হারও তুলনামূলকভাবে কম।

মাদরাসা শিক্ষার অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি বা গ্রন্থাগারবিহীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার খুবই সীমিত। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় টিকে থাকার জন্য ডিজিটাল শিক্ষা সরঞ্জাম, আধুনিক পাঠদান এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা এখন অপরিহার্য। কিন্তু আলিয়া মাদরাসাগুলিতে এসব সুযোগ এখনও অপ্রতুল।

ফাজিল ও কামিল ডিগ্রি বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সমমান হিসেবে স্বীকৃত। ফলে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে, বিশেষত বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। তবে সমমান থাকা সত্ত্বেও বাস্তব প্রয়োগে বৈষম্য থেকে গেছে। অনেকে মনে করেন, মাদরাসা সনদধারীদের প্রতি প্রশাসনিক চাকরিতে অনানুষ্ঠানিক বৈষম্য এখনো বিদ্যমান।

অন্যদিকে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের অভাবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিষয়ে পাঠদানে অগ্রসর হওয়ার সুযোগও সীমিত। যদিও সাম্প্রতিক ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ সংযোজন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ এ পরিস্থিতি পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারে।

শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক সমাজের আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা জরুরি। এজন্য মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও এমপিওভুক্তির সুযোগ সম্প্রসারণ অথবা জাতীয়করণের দাবি ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক সংখ্যা সীমিত হওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিটি বিষয়ের জন্য অন্তত দুজন করে প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (MEB), ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় (IAU) মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর (DME) এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (BMTTI)-এই চারটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। একাডেমিক সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনিক বাস্তবায়নের মধ্যে যোগাযোগহীনতা সংস্কারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য একে অপরের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় ও যৌথ কার্যক্রম চালু করা অপরিহার্য। এছাড়া মাদরাসাগুলোর গভর্নিং বডি বা পরিচালনা কমিটিতে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও শিক্ষাগতভাবে যোগ্য সদস্য নিয়োগের দাবি উঠেছে। শিক্ষাবিদদের মতে, সভাপতি ও সদস্যদের ন্যূনতম স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা হলে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

ইবতেদায়ী স্তর মাদরাসা শিক্ষার ভিত্তি। কিন্তু এ পর্যায়ের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই এখনো সরকারি নয়। ফলে শিক্ষক সংকট, বেতনবৈষম্য ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা তীব্র। অনেক শিক্ষাবিদ মনে করেন, ইবতেদায়ী মাদরাসাগুলোকে জাতীয়করণ করলে প্রাথমিক শিক্ষার মান ও ধর্মীয় চেতনা দুটোই শক্ত ভিত্তি পাবে।

আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার সংস্কারকে টেকসই করতে হলে কেবল পাঠ্যক্রম পরিবর্তন নয়, সমন্বিত কৌশল প্রণয়ন জরুরি। সম্ভাব্য সংস্কার হতে পারে-সাধারণ, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা পাঠদানের জন্য দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের যথাযথ সম্মানী-ভাতা প্রদান এবং এবতেদায়ী মাদরাসাগুলো সরকারিকরণ করা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আদলে স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষক নিয়োগ করা জরুরি । দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে আরবি-ইংরেজি ভাষার দক্ষতা অর্জন বাধ্যতামূলক করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা অনুবাদের ওপর নির্ভর না করে মূল পাঠবই পাঠে দক্ষ হয়। ফাজিল ও কামিল উত্তীর্ণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের ইসলামী বিষয়ক গবেষণায় উৎসাহ দিতে সরকারি বৃত্তি ও ফেলোশিপ চালু করা দরকার। এতে তারা কেবল চাকরি-নির্ভর না হয়ে একাডেমিক গবেষণার দিকে আগ্রহী হবে। ওঊজ-এর গবেষণার আলোকে BMTTI -এর প্রশিক্ষণ মডিউল আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন। ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানে দুর্বলতা দূর করতে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। আলিম ও ফাজিল স্তরের শিক্ষক প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে ন্যস্ত করলে বিশেষায়িত দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। BMEB, IAU, DME ও BMTTI-এর মধ্যে একটি সমন্বিত “মাদরাসা শিক্ষা কাউন্সিল” গঠন করা যেতে পারে, যা পাঠ্যক্রম, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে অভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। প্রতিটি সরকারের পরিবর্তনের সঙ্গে নীতির অস্থিরতা রোধে একটি স্থায়ী “মাদরাসা শিক্ষা কমিশন” গঠন করা জরুরি, যা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে। শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানমুখী করতে ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে ইসলামী ফাইন্যান্স, ইসলামিক ব্যাংকিং, ইসলামিক ল, শিক্ষা ও গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষায়িত কোর্স চালু করা যেতে পারে।

বাংলাদেশের আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় দাবি। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রসারের জন্য আলিয়া মাদরাসার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সামাজিক বাস্তবতা ও আধুনিক যুগের চাহিদার সমন্বয়েই প্রকৃত সংস্কার সম্ভব। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষা সমুন্নত রেখে, আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, ভাষা ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে মাদরাসা শিক্ষা হতে পারে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের অন্যতম শক্তিশালী ক্ষেত্র। তবে, এর জন্য প্রয়োজন দূরদৃষ্টি, আন্তরিকতা ও ধারাবাহিক নীতিনিষ্ঠতা। সর্বশেষ, যে জাতি তার শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তোলে, সেই জাতিই ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেয়। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার তাই কেবল শিক্ষা নয়, এক নতুন জাতীয় জাগরণের প্রত্যাশা।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।