আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশ নেপালে টানা বিক্ষোভ ও সহিংসতার মুখে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। তার পদত্যাগের পর মঙ্গলবার দেশটির প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌদেলও পদত্যাগ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। হঠাৎ করেই নেপালে জেন জি নামে পরিচিত তরুণ বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে। তাদের আন্দোলনের ও প্রতিবাদ কর্মসূচীর ধরণ বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের অনুরূপ বলে বর্ণনা করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। দু’দিনের আন্দোলনেই ধসে পড়ে সরকার। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি বাসভবন ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে গেছেন। সরকার জনপ্রিয় প্রায় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দিলে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পদত্যাগের ঘোষণার আগেই সকালে বিক্ষোভকারীরা ভক্তপুরের বালকোট এলাকায় অলির ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। শুধু অলির বাড়িতে নয়, এদিন বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতাসীন জোটের শরিক নেপালি কংগ্রেস পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ কয়েকজন মন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের বাড়িতে হামলা চালান। আগুন দেওয়া হয়েছে পার্লামেন্ট ভবনেও। ভক্তপুরের বালাকোটে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার বাড়িতেও আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুস্প কমল দাহালের বাড়িতেও পেট্রোল বোমা ছুড়েছে বিক্ষোভকারীরা। তারা পার্লামেন্ট ভবনের পাশাপাশি নেপালের মন্ত্রীপাড়া হিসেবে পরিচিত সিংহ দরবারে ঢুকে সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হামলায় একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রী আহত ও অপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের পত্নী রবি লক্ষী চিত্রকর নিহতের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনা নেপালে ছিল অকল্পনীয়।

নেপালে বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছর। বিগত বছরগুলোতে কয়েকবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। গত বছর জুলাইয়ে অলির নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় ভিন্ন এক মেরুকরণের মাধ্যমে। অলির দল ইউএমএল (ইউনাইটেড মার্ক্সবাদী লেনিনবাদী পার্টি) জোট করেছিল চির প্রতিদ্বন্দ¦ী নেপালি কংগ্রেসের সঙ্গে। অলি চীনঘনিষ্ঠ আর কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠতা নয়াদিল্লির সঙ্গে। তিনটি প্রধান দলের কেউই এককভাবে সরকার গঠন করতে না পারায় তেলে জলে মিশ খাইয়ে গঠিত হয়েছিল সরকার। ২৭৫ আসনের পার্লামেন্টে নেপালি কংগ্রেসের সদস্য ৮৮ জন, অলির দলের ৭৬ জন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল প্রচন্ডের মাওবাদী সেন্টারের ৩২ জন। অলির আগে প্রচণ্ড কম আসন নিয়েও ভিন্ন এক সমীকরণে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কিছুদিন। তার পর সরকারে বদল আসে, কিন্তু পার্লামেন্ট টিকে থাকে। কিন্তু তরুণদের আন্দোলনে সেই সরকারের অবসান হলো।

বুধবার বার্তা সংস্থা এপি জানায়, রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিস এবং বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় অবস্থিত এমন একটি ভবন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর অফিস ভবন থেকে ঘন ধোঁয়া বের হচ্ছিল। অপর খবরে বলা হয়, কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলি চালানোর জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন এবং ক্রমবর্ধমান অজনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। জানা যাচ্ছে শুধু সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করাই আন্দোলনের একমাত্র কারণ নয়। সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তারও প্রকাশ ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘নেপো কিডস’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে আন্দোলনের ডাক দেন বিক্ষোভকারীরা। যাঁরা ‘জেন-জি’ প্রজন্ম হিসেবে পরিচিত।

বিভিন্ন বার্তা মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদে থাকা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দেশটির রাজনৈতিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলল। নেপালে ২৬টি জনপ্রিয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তকে গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে তরুণ প্রজন্ম। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৭ জন কাঠমাণ্ডুতে, বাকি ২ জন নিহত হন ইতাহারিতে। আহত হয়েছেন আরও শত শত বিক্ষোভকারী। রাজধানীসহ অন্তত সাতটি শহরে ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। আর এ পরিস্থিতিেিত নেপালে বিক্ষোভকারী জেন-জি নেতাদের প্রতি শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল। তবে তার পরও বিশৃঙ্খলা না কমায় নেপালের আইন-শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। কাঠমান্ডু পোস্টের বরাতে জানা যায়, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে নেপালি সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশটির বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। বর্তমানে সেনাবাহিনী নেপালের প্রধান বিমান বন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেনাবাহিনী সতর্ক করে বলেছে, কিছু গোষ্ঠী এই অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন ও সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষতি করছে। সেনাবাহিনী নাগরিকদের সংযত থাকতে এবং দেশজুড়ে আরও ধ্বংস রোধে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানিয়েছে। এক ভিডিও বার্তায় নেপাল সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল বলেন, বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা ও জাতির সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। আমি বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিতের অনুরোধ করছি এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সংলাপের পথে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

তরুণদের ফুঁসে ওঠার কারণ কী? ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) বা ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে ‘জেনারেশন’ বা জেন জি-র ডাকে এদিন সোমবার কাঠমান্ডুতে দেশের পার্লামেন্টের সামনে জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সে ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হলে পরিস্থিতি একটা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা কারফিউ বিধিনিষেধ ভেঙে পার্লামেন্ট কমপ্লেক্সের সুরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়লে রাজধানীতে সেনাবাহিনী নামানো হয়। নেপালের যোগাযোগমন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা বিবিসিকে বলেছেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর বল প্রয়োগ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

এর আগে সরকার বলেছিল, ফেক নিউজ, হেইট স্পিচ বা অনলাইন জালিয়াতির মোকাবিলায় নেপালে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু সে দেশে ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী আছেন, যারা খবর, বিনোদন বা ব্যবসায়িক কাজে এ অ্যাপগুলোর ওপর নির্ভরশীল। ফলে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই তারা এ বিক্ষোভের ডাক দেন। ফেসবুক, ইউটিউবে ব্যান-ই একমাত্র কারণ নয়। তবে এদিন প্রতিবাদকারীদের হাতে ‘এনাফ ইজ এনাফ’ (ঢের হয়েছে) বা ‘এন্ড টু কোরাপশন’ (দুর্নীতি খতম হোক) লেখা প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারও দেখা গেছে। অনেক বিক্ষোভকারী বলেন, তারা এই প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সরকারের ‘আধিপত্যবাদী মানসিকতা’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে।

পরিস্থিতি যেভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলো : একটি প্রতিবাদ মিছিল যখন নেপালের পার্লামেন্টে সাধারণের প্রবেশের জন্য নিষিদ্ধ এলাকার দিকে এগোচ্ছিল, জনাকয়েক বিক্ষোভকারীকে কমপ্লেক্সের প্রাচীরের ওপরে উঠে পড়তে দেখা যায়। বিক্ষোভকারীরা রেস্ট্রিক্টেড এলাকাতে জোর করে ঢুকে পড়েছিলেন বলেই তাদের ওপর জলকামান ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হয়। পার্লামেন্ট ভবনসহ আশেপাশের সব এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু পরে রাজধানীর সব হাই সিকিওরিটি এলাকায় কারফিউ সম্প্রসারিত করা হয়-যার মধ্যে ছিল প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ (শীতল নিবাস), লেইনচাউরে ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, মহারাজগঞ্জ, সিংহ দরবারের চারদিক, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর নিবাস ও আশেপাশের এলাকা।

সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে সরকার কি বলছে? গত সপ্তাহে নেপালের কর্তৃপক্ষ মোট ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে সে দেশে ‘ব্লক’ করার নির্দেশ দিয়েছিল। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, যে সময়সীমার মধ্যে এ প্ল্যাটফর্মগুলোকে নেপালের যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নথিভুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল তারা সেটা মানেনি। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ইউজাররা এ প্ল্যাটফর্মগুলো অ্যাকসেস করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছিলেন। সরকার নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে চাইছে যে তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে ‘নিষিদ্ধ’ করতে চায় না-কিন্তু সেটা যাতে নেপালের বিদ্যমান আইন ও বিধিনিষেধ মেনে চলে সেটাই কেবল নিশ্চিত করতে চাইছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট এ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, এরপরই সরকার এগুলোর বিরুদ্ধে তৎপরতা শুরু করে। তারও আগে নেপালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল টিকটকও। সে দেশের যাবতীয় বিধিনিষেধ তারা মেনে চলবে, টিকটক এ মুচলেকা দেওয়ার পরই ন’মাস পরে সে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

পরে তরুণ প্রজন্মের বিদ্রোহের কাছে নতিস্বীকার করল নেপাল সরকার। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয় সমাজমাধ্যমের উপর থেকে। নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুং ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, বিক্ষোভ প্রত্যাহারের জন্য। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। নেপালের কাঠমান্ডু পোস্ট লিখেছে, দুর্নীতি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জেন-জি প্রজন্মের বিক্ষোভ ডিজিটাল স্পেস থেকে রাজপথে চলে এসেছে। বিক্ষোভকারীরা তাঁদের অসন্তোষের কথা তুলে ধরতে কাঠমান্ডুর মাইতিঘর এলাকায় সমবেত হন। কয়েক দিন ধরে অনলাইনে ‘নেপো কিড’ ও ‘নেপো বেবিজ’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে পোস্ট করা হচ্ছিল। সরকার অনিবন্ধিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দিলে এটা নতুন করে গতি পায়। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ‘হামি নেপাল’ নামের একটি সংগঠন আজ এ সমাবেশের আয়োজন করে। এ জন্য তারা আগেই অনুমোদন চেয়েছিল। এই সংগঠনের চেয়ারপারসন সুধান গুরুং বলেছেন, সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা এ বিক্ষোভের আয়োজন করেছেন। একই ধরনের সমাবেশ দেশের অন্যান্য জায়গায়ও হয়েছে।

তরুণদের বিক্ষোভের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বলপ্রয়োগে বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পরে কৃষিমন্ত্রী রামনাথ অধিকারীও পদত্যাগ করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলিকেও পদত্যাগের আহ্বান জানান বিভিন্ন মহল। শেষে তিনিও পদত্যাগ করেন।

এখন কী হবে? সেটা নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘন্টায় ঘন্টায় পরিস্থিতির বদল হচ্ছে। হামলার মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে গেছে হিমালয়ান টাইমস ও কান্তিপুর টিভিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম। ফলে সেখান থেকে সংবাদ পেতেও সমস্যা হচ্ছে। হিমালয়ান টাইমস সম্পাদকীয় লিখে অলি সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিল। তারপরও জেন জি সে পত্রিকাকে টার্গেট করেছে। আসল কারণ এখনো অজ্ঞাত। সেনা বাহিনী আন্দোলনকারীদের শান্ত করে কতখানি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়। প্রতিবেশী ভারত সতর্কভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে, জোরদার করেছে সীমান্তে নিরাপত্তা। চীনের তরফেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। নেপাল নিয়ে চীন-ভারতের যে দ্বৈরথ রয়েছে সেটা মাথায় রেখে বিশ্লেষকরা মনে করেন নেপালকে কোন পক্ষই হাতছাড়া করতে চাইবে না।

অন্যদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবও নেপালে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। নেপালে চলছিল কোয়ালিশন সরকারের শাসন। কোন দলই পার্লামেন্টরে মেয়াদ শেষের আগে নতুন নির্বাচনের দিকে যেতে চায়নি। আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে কোন রাজনৈতিক নেতাকে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে না। দেশের তিনটি প্রধান রাজিৈনতক দলের নেতাদের বাড়িঘর ও অফিসে হামলা করা হয়েছে। ফলে এই অচলাবস্থার সমাধান কোন পথে তা নির্ধারিত হতে আরো কিছু সময় লাগবে। তবে যে রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তার রেশ সহজে শেষ হবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।