॥ আলী আহমাদ মাবরুর ॥

বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতিতে প্রবাসীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমাত্রিক। বর্তমানে আনুমানিক এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশী নাগরিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন। কেউ গিয়েছেন শ্রমিক হিসেবে, কেউ শিক্ষার্থী, কেউ পেশাজীবী, কেউ আবার প্রবাসে স্থায়ীভাবে বসতি গড়েছেন। তারা পরিবার চালাচ্ছেন, দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, নিজেদের পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা দেশের অর্থনীতির মেরুদ- হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এত বড় অবদান রাখার পরও এসব মানুষ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও নিজ দেশের রাজনীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় মৌলিক অধিকারÑ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এ বৈপরীত্য আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোর একটি বড় দুর্বলতা এবং রাষ্ট্রের নৈতিক ব্যর্থতার পরিচয় বহন করছে।

আমাদের সংবিধানের ১১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার এবং স্বাধীনতা, সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করিবার জন্য একটি কার্যকর অংশগ্রহণমূলক সরকার ব্যবস্থা থাকবে।’ অর্থাৎ জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই সংবিধানের অন্যতম লক্ষ্য। সে জনগণের একটি বৃহৎ অংশ, যারা রাষ্ট্রের জন্য বিশাল অবদান রাখছেন, তারা ভোট দিতে পারছেন নাÑ এটি একটি সাংবিধানিক অসঙ্গতি। ভোটাধিকার শুধু একটি কার্ড নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ব্যালট দেয়ার প্রক্রিয়া নয়; এটি একজন নাগরিকের আত্মপরিচয়, মতপ্রকাশের অধিকার এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ। এ অধিকার থেকে প্রবাসীদের বঞ্চিত রাখা মানে গণতন্ত্রকে খ-িত রাখা।

বিশ্বের অনেক দেশেই প্রবাসীদের ভোটাধিকার স্বীকৃত ও কার্যকর। ফ্রান্স, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, ফিলিপাইন, ঘানা, তিউনিশিয়া, মেক্সিকোসহ বহু দেশ প্রবাসীদের জন্য ইলেকট্রনিক ভোটিং, পোস্টাল ব্যালট বা দূতাবাসকেন্দ্রিক ভোটের সুযোগ দিয়েছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার আলোচনা হয়েছে, এমনকি ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয় যে সরকার চাইলে আইন ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রবাসীদের ভোটের অধিকার কার্যকর করতে পারে; কিন্তু বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং নির্বাচন কমিশন ও সরকার বিষয়টিকে অবহেলার দৃষ্টিতে দেখে আসছে।

জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের অবহেলিত এ দাবিটি সামনে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ দলটিই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবিকে শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ হিসেবে তুলে ধরছে। দলটি মনে করছে, প্রবাসীরা শুধু রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন না, তারা দেশের রাজনৈতিক গতিধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন, মতামত দেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং দেশে রাজনৈতিক দলগুলোকে নানাভাবে সহায়তা করেন। এ প্রেক্ষাপটে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত না করা হলে রাষ্ট্র একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করছে।

জামায়াতের এ দাবির পেছনে কয়েকটি বাস্তবিক ও কৌশলগত কারণ রয়েছে। প্রথমত, জামায়াতের একটি সুসংগঠিত প্রবাসী শাখা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কাজ করে আসছে। শাখাগুলো দলীয় তহবিল সংগ্রহ, মতাদর্শ প্রচার, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক জনমত তৈরি করার কাজে যুক্ত। দ্বিতীয়ত, জামায়াত মনে করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার একটি ফ্যাসিবাদী ধারা প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে দেশের সাধারণ জনগণ এমনকি প্রবাসীরাও স্বাধীন মতপ্রকাশ করতে পারেনি। নির্বাচনের নামে প্রহসন, বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন, ভোটাধিকার হরণÑ এসব পরিস্থিতির মধ্যেও জামায়াত একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের জনগণকে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। প্রবাসীদের ভোটাধিকার এই আন্দোলনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবির অংশ।

তৃতীয়ত, জামায়াতের দাবি, বহু প্রবাসী জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা দলের আদর্শে বিশ্বাস করে এবং দেশে একটি ন্যায়ভিত্তিক ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে। এ জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত হলে জামায়াত রাজনৈতিকভাবে একটি বড় শক্তি হিসেবে উদিত হতে পারে। এ কারণে দলটি এ দাবিকে তাদের কৌশলগত এজেন্ডার অংশ হিসেবে দেখছে। অবশ্য বিষয়টিকে শুধু জামায়াতের স্বার্থে সীমাবদ্ধ করে দেখা উচিত নয়। কারণ প্রবাসীদের ভোটাধিকার কোনো নির্দিষ্ট দলের দাবিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি জাতীয় দাবি, গণতন্ত্রের দাবি, ন্যায়বিচারের দাবি।

জামায়াত শুধু গতানুগতিক দাবি তুলেই ক্ষান্ত হয়নি। গত ১৯ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশ আয়োজন করে। মূলত ৭ দফা দাবি পূরণের দাবিতেই জামায়াত এই সমাবেশটি আয়োজন করে। এ ৭ দফার মধ্যে একটি হলো প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। জামায়াতের উত্থাপিত বাকি দফাগুলো হলো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ, সকল গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার, জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান।

বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় যে অনিয়ম, দুর্নীতি, দলীয় প্রভাব, জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, প্রশাসনিক পক্ষপাতÑ এসব চর্চা প্রবাসীদের ভোটাধিকারের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তিগত উপায়ে, যেমনÑইলেকট্রনিক ভোটিং, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন, আঙ্গুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইÑএইসব প্রক্রিয়া প্রয়োগ করে একটি নিরাপদ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য ভোট ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তা। এখন অনেক প্রবাসী দূতাবাসে গিয়ে এনআইডি সংগ্রহ করতে পারেন, পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেন, এমনকি কনস্যুলেট সেবা পানÑ তবে ভোট দিতে পারেন না। এ এক প্রহসনের নামান্তর।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও এ দাবির প্রতি সমর্থন ক্রমশ বাড়ছে। কারণ বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে নাগরিক অধিকার, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি এবং স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রবাসীরা বিদেশে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক সমাজব্যবস্থায় অভ্যস্ত হওয়ায় তাদের মধ্যে নাগরিক অধিকার নিয়ে সচেতনতা বেশি। বিগত আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে সংযুক্ত আরব আমীরাতে বাংলাদেশীরা জীবন ও কর্মসংস্থানের ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তা তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার শক্তিশালী দৃষ্টান্ত। এরপরও প্রবাসী এই মানুষগুলো যদি দেশ পরিচালনায় অংশ নিতে না পারেন, তবে দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়বে।

এ মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে একটি নিরপেক্ষ গবেষণা পরিচালনা করে প্রবাসীদের ভোটাধিকার কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় কৌশল নির্ধারণ করা। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন চালু, পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা, নিরাপদ সফটওয়্যার ব্যবহারÑ এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনেই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। এতে করে প্রবাসীদের প্রতি রাষ্ট্র্রের দায়িত্বশীলতা প্রমাণিত হবে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইমেজ উন্নত হবে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার অনেক দেশেই প্রবর্তিত ও কার্যকর করা হয়েছে, এবং দেশের নিজস্ব আইন, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে এর বাস্তবায়ন ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখা যায়। যেমন ভারতে এ প্রক্রিয়াটি অনেকদিন থেকেই কার্যকর রয়েছে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাসী জনগোষ্ঠী নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। ভারতের জবঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ ড়ভ চবড়ঢ়ষব অপঃ, ১৯৫০ এবং নির্বাচন কমিশনের নীতিমালা অনুসারে, প্রবাসী ভারতীয় নাগরিকরা দেশের বাইরে থেকে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকরা তাদের স্থায়ী ঠিকানা ভিত্তিক ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। তবে বিদেশ থেকে ভোট দেওয়ার জন্য সরাসরি কোন ই-ভোটিং বা পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা নেই।

ফ্রান্স ১৯৯৮ সাল থেকে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসবাসরত ফরাসি নাগরিকরা ফরাসি রাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন। ফ্রান্সের প্রবাসীরা দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে ভোট দিতে পারেন। তবে এজন্য তাদেরকে দেশটির ঈড়হংঁষধৎ ঊষবপঃড়ৎধষ খরংঃ-এ নাম নিবন্ধন করতে হয়। ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, পার্লামেন্ট নির্বাচন, ইউরোপীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীরা ভোট দিতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী নাগরিকদের ভোটাধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত এবং নিরাপত্তার দিক থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা যেখানেই থাকুন না কেন, তাদের নিবন্ধিত নির্বাচনী এলাকায় অনলাইনে বা ডাকযোগে ভোট দেয়ার সুযোগ রয়েছে। পোস্টাল ব্যালট ও ই-ভোট: প্রবাসীরা ইলেকট্রনিক ভোট আবেদন করে পোস্টাল ব্যালট নিতে পারেন, যা তারা ডাকযোগে ফেরত পাঠান। কিছু রাজ্যে অনলাইন ভোটের সুবিধাও রয়েছে।

ফিলিপাইনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃত এবং দেশে পালিত নির্বাচন ব্যবস্থায় তারা সরাসরি অংশগ্রহণ করে। প্রবাসী ভোটাররা ‘ঙাবৎংবধং অনংবহঃবব ঠড়ঃরহম’ এর মাধ্যমে ভোট দেন। তারা ফিলিপাইনের দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধন করান এবং ভোট দেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনে এভাবেই তারা অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচনী আইনে প্রবাসী নাগরিকদের ভোটের অধিকার দেওয়া হয়েছে, তবে সময় সীমাবদ্ধতা ও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রবাসীরা দূতাবাস বা দূতাবাস কেন্দ্রে ভোট দিতে পারেন, কিন্তু প্রবাসী ভোটাধিকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সীমাবদ্ধ (যেমন, যারা গত পাঁচ বছর ধরে দেশের বাইরে আছেন, কেবল তাদের ভোটাধিকার রক্ষা করা হয়)। প্রবাসীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচন কমিশন নিয়মিত কাজ করে।

বাংলাদেশ সরকারও প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অনলাইনে এরকম আবেদনপত্র এবং আবেদনের সাথে সংযুক্তি হিসেবে বিভিন্ন উপকরণের নামও দেখলাম। এগুলো নিয়ে অনলাইনে এরই মধ্যে বেশ সমালোচনাও দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, যতগুলো ক্রাইটেরিয়া পূরণ করে এই নিবন্ধন করতে হবে তা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। তাছাড়া ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে এত বিশাল সংখ্যক প্রবাসীর পক্ষে এতগুলো প্রক্রিয়া অবলম্বন করাও বাস্তবসম্মত নয়। অনেকেই আবার এমনও বলছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর চাপে অন্তর্বর্তী সরকার বা নির্বাচন কমিশন এই উদ্যোগগুলো নিলেও তারা এর বাস্তবায়নে আন্তরিক নয়। এ কারণে দায়সারাভাবে কাজটি করা হয়েছে এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া এতা জটিল করা হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে, নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করা জরুরি। যেহেতু প্রবাসী নাগরিকদের বড়ো অংশই জীবন সংগ্রামে ব্যস্ত এবং এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ততা শিক্ষিতও নন; তাই এই প্রক্রিয়াকে আরো সরল ও জনবান্ধব করার কোনো বিকল্প নেই।

সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রবাসী নাগরিকরা রাষ্ট্রের মূল অংশ, তারা কেবল অর্থনীতির জন্য নয়, গণতন্ত্রের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা মানে কেবল একটি প্রশাসনিক কাজ নয়; এটি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রতি তাদের অবদানের স্বীকৃতি, তাদের সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার একটি রূপ। তাই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার এই দাবি সমসাময়িক বাস্তবতা ও ইনসাফের প্রশ্নের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে এ দাবিকে কেবল জামায়াত বা একক কোনো দলের দাবি হিসেবে না গণ্য করে বরং দেশের সব রাজনৈতিক দলের, সব নাগরিকের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দাবি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সময় এসেছে এ দাবিকে বাস্তবায়ন করার। কেননা, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কেবল ভূখ-েই নয়Ñ বরং তার নাগরিকদের হৃদয়ে বসবাস করে।