ড. ফোরকান আলী
বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় মর্যাদায় বীরত্বের প্রতীক। অরণ্যের ভয়ংকর সুন্দর এ প্রাণীটির সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক রকম বাঘ রয়েছে। কিন্তু সুন্দরবনের বাঘের মতো এতো সুন্দর, শক্তিবান, দর্পশালী, ভীমমুর্তি এবং পটু বন্যজন্তু আর কোথাও নেই। বাঘ বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী। বাঘ বলতেই মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। ইউরোপীয়রা বাঘকে “রয়েল বেঙ্গল টাইগার” নামে অভিহিত করেছিলেন। বাঘের হিংস্রতা ও শক্তির কারণে জেলে, বাওয়ালী ও অন্যান্য প্রাণী ভীতসম্ভ্রস্থ হয়ে পড়ে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষ ও সুন্দরবনে জীবিকা অর্জনকারীরা বাদাবনে কেউ বাঘের নাম ধরে না। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া আর কোন দেশে পাওয়া যায় না। বর্তমানে সারাবিশ্বে বাঘের সংখ্যা কমে ৩ হাজারেরও নিচে নেমে এসেছে। শুধু বাঘই নয়, পৃথিবীর সব প্রজাতির বাঘই এখন আশঙ্ক্াজনকভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ বিলুপ্তির হাত থেকে বাঘ বাঁচাতে প্রতি বছর ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য “মানুষ এবং বাঘের মধ্যে সুরেলা সহাবস্থান”।
বাঘের আবাস : সৌন্দর্য, মর্যাদা আর শক্তিমত্তায় অতুলনীয় বাঘের আদিনিবাস বাংলাদেশের সুন্দরবন, ভারত, মিয়ানমার, সাইবেরিয়া অঞ্চল, সুমাত্রা এবং জাভা। বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারে বাঘ রয়েছে। হিমালয়ের মতো সুউচ্চ ও হিমশীতল বৈরী পরিবেশেও এরা চমৎকারভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে।
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা : সুন্দরবনে ২০১৮ সালে ১১৪টি বাঘ পাওয়া গিয়েছিল। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ সালের জরিপে পাওয়া গেছে ১২৫টি। অর্থাৎ গত ছয় বছরে প্রায় ১০ শতাংশ বাঘ বেড়েছে সুন্দরবনে। প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২ দশমিক ৬৪টি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং সুন্দরবন বন বিভাগ সুত্র জানায়, ১৯৭৫ সালে একজন ইউরোপীয় বাঘ বিশেষজ্ঞ মি. হেন্ডরিস সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী শুমারি করেন। ওই শুমারিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তখন সুন্দরবনে রয়েল বাঘের সংখ্যা ছিল ৩৫০টি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের তথ্যে জানা যায়, ১৯৯১ সালে একটি বিদেশি সংস্থা সুন্দরবনে জরিপ চালিয়ে পায় বাঘের সংখ্যা ৪৫৯টি। এরপর ১৯৯৩ সালে নেপালের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. কেএম তামাং সুন্দরবনে শুমারি পরিচালনা করেন। ওই শুমারিতে পাওয়া হিসাবে তখন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৩৬২টি। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ টিসা ম্যাকগ্রেগর জানান, বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে ২০০টির বেশি বাঘ নেই। সর্বশেষ ২০০৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারির -৩ মার্চ বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাঘশুমারি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পাগ মার্ক (পায়ের ছাপ গণনা পদ্ধতিতে) এর শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে সুন্দরবন অংশে ৪১৯টি পূর্ণবয়স্ক বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ১২১টি এবং স্ত্রী ২৯৮টি। আর বাচ্চার সংখ্যা ২১টি। ভারত অংশে রয়েছে ২৭৪টি পূর্ণবয়স্ক বাঘ। এর মধ্যে পুরুষ ২৪৯টি ও স্ত্রী ২৫টি। তবে বিশিষ্ট প্রাণীবিদ মনিরুল এইচ খানের মতে, ক্যামেরা ট্যাপিং পদ্ধতিতে নতুন বাঘশুমারিতে বাংলাদেশে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা পাওয়া গেছে ২০০টি এবং ভারতীয় অংশে ১০০ থেকে ১৫০টি। পায়ের ছাপ গণনা পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে যে শুমারি করা হয় তাতে একই বাঘের একাধিক পায়ের ছাপ গণনায় চলে আসার আশঙ্কা থাকে। ২০০৪ সালে পায়ের ছাপ গণনা বা পাগ মার্ক পদ্ধতিতেই বাঘশুমারি করা হয়েছিল। এ পরিসংখ্যান নিরুপণ করাও খুবই কঠিন। তবে বন বিভাগ বলছে, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘ গণনা করা হচ্ছে। গত বছরের ২৩ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় সুন্দরবনের বাঘ স্থানান্তর, অন্তত দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট কলার স্থাপন ও পর্যবেক্ষণ, বাঘের পরজীবী সংক্রমণ ও অন্যান্য ব্যাধি এবং মাত্রা নির্ণয়, উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হবে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের পুরো জরিপ চলতি বছরের আর্ন্তজাতিক বাঘ দিবসের (২৯ জুলাই) আগে শেষ হবে। ওই সময়ের মধ্যে আমরা জরিপের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করব।’ পরে জুলাইয়ে চলমান পরিস্থিতিতে তা আর প্রকাশ হয়নি। ২০০৪ সালে প্রথম বন বিভাগ ও আইইউসিএন যৌথভাবে সুন্দরবনে বাঘশুমারি করে। পায়ের ছাপ গুনে করা ওই জরিপে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ৪৪০। পরে ২০১৫ সালে প্রথম ক্যামেরা ফাঁদ ব্যবহার করে বাঘের ছবি তুলে এবং পায়ের ছাপ গণনা করে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে বাঘের ওপর জরিপ চালানো হয়। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে বনভূমি ৪ হাজার ৮৩২ এবং জলাভূমি ১ হাজার ১৮৫ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই বনভূমির স্থলে ২৮৯ প্রজাতির প্রাণী আর জলে ২১৯ প্রজাতির প্রাণী বাস করে। ২০১৫ সালের বাঘশুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে বাঘ ছিল ১০৬টি। আর ২০১৮ সালের শুমারিতে ছিল ১১৪টি।
বাঘ বিলুপ্তির কারণ : সম্প্রতি গ্লোবাল টাইগার ফোরামের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, বিশ্বের ৪০টি দেশের কালোবাজারে বাঘের চামড়া ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবসা চলছে। পূর্ব এশিয়ায় বাঘের চামড়া, হাড়গোড়সহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবসা অত্যন্ত জমজমাট। চীনা ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ‘শিল্পে’ বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বহুল ব্যবহার রয়েছে। চীনে বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে তৈরি ‘ওষুধ’ বেচাকেনা চলছে। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র্রের মতো বড় বড় বাজারেও এসব ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। সেখানে এসব ওষুধ বেচাকেনা অবৈধ নয়। সুন্দরবনে চোরা শিকারিরা বিভিন্নভাবে বাঘ হত্যা করে চলেছে। গুলী করে, ফাঁদে আটকে বাঘ শিকার করে। গরু, ছাগল, হরিণ মেরে সেগুলোর শরীরে বিষ মেখে বাঘের খাবার হিসেবে জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়। বাঘ এসব বিষমাখা মৃত প্রাণী খেয়ে বিষের প্রতিক্রিয়ায় মারা যায়। নয়তো গুরুতর অসুস্থ’ হয়ে পড়ে। তখন সেটিকে সহজে হত্যা করা যায়। ফাঁদে আটকানো বাঘকে অভুক্ত রেখে অথবা বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মৃত বাঘের শরীর থেকে চোরা শিকারিরা এর চামড়াসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করে। এরপর আর্ন্তজাতিক চোরাকারবারিদের কাছে এসব বিক্রি করে থাকে। বাঘের চামড়া, মাথার খুলি, পাটিসহ দাত ও হাড়গোড় মূল্যবান এন্টিক্স হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় হয়। এখন আর্ন্তজাতিক বাজারে একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘের চামড়ার দাম ১৫ লাখ টাকারও বেশি। বাঘের হাড় প্রতি কেজি লাখ টাকার মতো। অন্য এক পরিসংখ্যানে জানাযায়, বিশ্বের নয় প্রজাতির বাঘের মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়াতে সুমাত্রান প্রজাতির বাঘ পাওয়া যায়। কিন্তু সুমাত্রা দ্বীপে এখন এ প্রজাতির মাত্র ৪০০টি বাঘ রয়েছে বলে জানায় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার সংস্থা। এ জন্য দেশটিকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছে তারা। মূলত বাঘ হত্যা করে তার দেহের অংশ বিক্রি ও জঙ্গলে বাঘের আবাসস্থল ভেঙে ফেলার কারণে এ প্রজাতির বাঘ দ্রুত কমে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সুমাত্রান বাঘ (Sumatran tiger) বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংরক্ষণবাদীরা। দি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার এবং দি ওয়ার্ল্ড কনভারসেশন ইউনিয়নের সদস্যরা ট্রাফিক নামে একটি বৃটিশ ইন্টারন্যাশনাল ওয়াইল্ড লাইফ ট্রেড মনিটরিং নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছেন। ওই নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, বাঘের দেহের অংশ বিক্রি আইনত নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও তারা ২০০৬ সালে ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ সুমাত্রার আটটি শহরে বাঘের হাড়, থাবা, চামড়া, গোফ এসব বিক্রি হতে দেখেছিল। সংস্থাটির হিসাব মতে, সুভেনির (Souvenir) বা স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে, চায়নিজ ওষুধ তৈরির জন্য এমনকি জুয়েলারি স্টোরের জন্য বাঘের দেহের অংশ সংগ্রহ করতে চোরাকারবারিরা সে সময় ২৩টি বাঘ হত্যা করেছিল । বাঘের একটি থাবা ১৪ ডলার ও এক পাউন্ড হাড় ৫২.৫০ ডলার করে বিক্রি হয়েছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার সংস্থার প্রাণী প্রজাতি সংরক্ষণ গ্রুপের পরিচালক সুসান লিবারম্যান বলেছেন, ‘বাঘ হত্যার কারণে দিনে দিনে সুমাত্রান বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ।’বিশ্বের অন্য সব প্রজাতির বাঘের মধ্যে সুমাত্রান বাঘ এখন সবচেয়ে বিপন্ন প্রাণী। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বন-জঙ্গলে এ প্রজাতির বাঘ রয়েছে মাত্র চারশর মতো।
১৯৭০-এর দশকে তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। অবশ্য এ বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়ার পেছনে অন্য একটি কারণও বিশেষভাবে দায়ী বলে বলছেন ওই সংস্থা। বাঘের বাসস্থান ভেঙে, জঙ্গলের সে সব জায়গায় পাম অয়েল ও কাঠ সংগ্রহের জন্য গাছ লাগানো হচ্ছে। লিবারম্যান বলেছেন, ‘কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় এ সমস্যা বড় আকার ধারণ করেছে।’ তার মতে, এ সমস্যা মোকাবেলা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে ইন্দোনেশিয়াকে। সুমাত্রান বাঘ সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়া ১০ বছর মেয়াদি একটি প্ল্যান হাতে নিয়েছে। তবে সংরক্ষণবাদীরা অভিযোগ করেছেন, এ বিপন্ন বন্য বাঘগুলোকে সংরক্ষণ করতে ইন্দোনেশিয়া হয়তো কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে না। ট্রাফিক সংগঠনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ক্রিস শেফার্ড বলেছেন, ‘এ ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।’ তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ার বাঘ বাণিজ্যের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আসছেন। ইন্দোনেশিয়ার বন মন্ত্রণালয়ের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রজেক্টের পরিচালক টনি সোহারতানো জানিয়েছেন, বন্য প্রাণী শিকার ও ব্যবসা করার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতেও বাঘের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি সে দেশের সরকার এক জরিপে দেখেছে, দেশটিতে এখন বাঘ রয়েছে ১ হাজার ৪১১টি। যা আগের জরিপের চেয়ে প্রায় অর্ধেক কম। ভারতে ও বাঘের দেহের অংশ বিক্রির জন্য হত্যা ও বাঘের বাসস্থান ভেঙে ফেলার কারণে বাঘের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বাঘ শুমারি চালয়। এর আগে দেশটিতে বাঘ শুমারি হয়েছিল ২০০১-২০০২ সালে। তখন বাঘের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৪২টি। একশ বছর আগে ভারতে বাঘ ছিল প্রায় ৪০ হাজার। বিভিন্ন তথ্য থেকে বিশ্বে নয় প্রজাতির বাঘ সম্পর্কে জানা গেছে।
বিশ্বে বাঘ নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে বলছে, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে বিশ্বের ২৭টি দেশে বাঘের ৮টি উপ-প্রজাতি (সুমাত্রান, ইন্দোচাইনিজ, দক্ষিণ চীনা, সাইবেরিয়ান, বেঙ্গল, বালিনিজ, ক্যাম্পিয়ান ও জাভান)-এর ১,০০,০০০টি বাঘ জীবিত ছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা ক্রমহ্রাসের মাধ্যমে ১০,০০০টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। আর তা মাত্র ১২টি দেশে দেখা যায়। কালের বিবর্তনে আবাসস্থল সংকোচন এবং অবাধ শিকারের ফলে এর ৩টি উপ-প্রজাতি : বালিনিজ ১৯৩০ সালে, এর ৪০ বছর পর ক্যাম্পিয়ান ১৯৭০ সালে এবং তার ১০ বছর পর জাভান ১৯৮০ সালে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। বাকিরাও সংকটাপন্ন। বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের যে উপ-প্রজাতিটি বাস করে তার ইংরেজি নাম Bengal Tiger, Tiger ev Royal Bengal Tiger এবং বৈজ্ঞানিক নাম Panthera tigris tigris (Linnaeus)।
বাংলাদেশে সুন্দরবন ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন ও রাশিয়ার পাহাড়ি চিরসবুজ এবং আংশিক চিরসবুজ বন, ঘাসে-ঢাকা ভূমি ও জলাভূমি, উš§ুক্ত বনভূমি এবং প্যারাবনে বেঙ্গল টাইগারের উপস্থি’তি রয়েছে। মানুষ সুন্দরবনের বাঘকে সংরক্ষণ করতে চাইলেও তাদের রক্ষা করা কঠিন হচ্ছে। কারণ গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রভাব আমাদেরদেশেও পড়ছে। এর ফলে আগামী ১০০ বছরে সুন্দরবনের বেশিরভাগ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। যে কারণে অনেক আগেই বিশ্ববাসীর কাছে বাঙালির অহংকার রয়েল বেঙ্গল টাইগার হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্মকে বাঘ দেখতে হলে শুধু নির্ভর করতে হবে চিড়িয়াখানার ওপর। আর তারপর এক সময় মিউজিয়ামে ছবি টাঙিয়ে বাঘকে প্রদর্শন করা হবে। এ দিনগুলো আসতে আমাদের যেন বহুকাল অপেক্ষা করতে হয় এ কামনাই করছি।
লেখক : গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ।