গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ পেট্রোবাংলা কর্তৃক আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশের জ¦ালানি সেক্টর বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ ড.ইজাজ হোসেন। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের গ্যাস সেক্টরের বিভিন্ন সমস্যা এবং সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রতি বছর গ্যাস অপচয়ে দেশের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সোয়া ৩ হাজার কোটি টাকা। কারিগরি ক্ষতির নামে গ্যাস অপচয় বেড়েই চলেছে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ । এতে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে গ্যাস অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যাতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে ক্ষতি হয় ২ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে ২ শতাংশ গ্যাস অপচয় গ্রহণযোগ্য।’ কিন্তু বাংলাদেশে গ্যাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। অনেকেই আছেন যারা কাপড় শুকানোর জন্য গ্যাসের চুলা জ¦ালিয়ে রাখেন। অনেকেই ম্যাচের কাঠি বাঁচানোর জন্য গ্যাসের চুলা জ¦ালিয়ে রাখেন। সাধারণত কয়েক ধরনের জ¦ালানির সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে জ¦ালানি তেল, কয়লা এবং গ্যাস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিদ্যুতকে জ¦ালানি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় না।

জ¦ালানি বলতে আমরা বুঝি যেটাকে পোড়ানো হয়। অর্থাৎ যে পদার্থ পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদন করা হয় সাধারণভাবে তাকেই জ¦ালানি বলা হয়। গ্যাস, কয়লা, জ¦ালানি তেলকে আমরা জ¦ালানি খাতের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। এ তিনটি জ¦ালানি উপকরণের মধ্যে বাংলাদেশে গ্যাস এবং কয়লা পাওয়া যায়। বাংলাদেশে এখনো জ¦ালানি তেল পাওয়া যায়নি। তাই বলা যায়, বাংলাদেশ জ¦ালানি তেলে সমৃদ্ধ জনপদ নয়। বাংলাদেশ গ্যাস সম্পদে বেশ সমৃদ্ধ। শিল্পোৎপাদন এবং বাসা বাড়িতে ব্যাপকভাবে গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে গ্যাসের অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশের জ¦ালানি খাতের সিংহভাগ জুড়ে আছে গ্যাস। গ্যাস ছাড়া আমরা চলার কথা চিন্তাও করতে পারি না। বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশে গ্যাস পাবার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। বাংলাদেশে খননকৃত কূপে গ্যাস প্রাপ্তির হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিশ্বের যেসব দেশে অনুসন্ধানের মাধ্যমে গ্যাস প্রাপ্তির হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ গ্যাসসমৃদ্ধ একটি জনপদ। বাংলাদেশে জ¦ালানির উৎস যেহেতু সীমিত তাই আমাদের গ্যাসের উপর অতিমাত্রায় নির্ভর করতে হয়।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানবজীবনে গ্যাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ এক সময় গ্যাস সম্পদে অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন গ্যাসের যোগান হ্রাস পেতে পেতে সঙ্কটজনক অবস্থায় চলে এসেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রমাণিত যে গ্যাস মজুত রয়েছে তার পরিমাণ ৯ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট) এর নিচে নেমে এসেছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা হচ্ছে ৩ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি। এর মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি। অর্থাৎ গ্যাসের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে পার্থক্যের পরিমাণ হচ্ছে ১০০০ এমএমসিএফডি। আমরা এ গ্যাপ পূরণ করতে পারছি না। গ্যাসের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ স্থানীয়ভাবে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রমাণিত গ্যাসের মজুত দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। যে পরিমাণ গ্যাস প্রতি দিন ব্যবহার করা হচ্ছে সে অনুপাতে গ্যাসের যোগান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে গ্যাস সঙ্কট বাড়ছে। স্থানীয়ভাবে গ্যাসের যোগান বাড়ানো সম্ভব না হলে বিদেশ থেকে এলএনজি(লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা রয়েছে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট রয়েছে। তাই ইচ্ছে করলেই বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের তরল এলএনজিকে গ্যাসে পরিণত করার প্রযুক্তি পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই।

অধ্যাপক ড. ইজাজের বক্তব্য মতে, বাংলাদেশ আগামীতে ভয়াবহ জ¦ালানি সঙ্কটে পড়তে যচ্ছে। বর্তমানে দেশে যে প্রমাণিত গ্যাস মজুত আছে তা ২০৩০ সালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা যদি নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে আবিষ্কার এবং গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে না পারি তাহলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের যে আর্থিক অবস্থা এবং সক্ষমতা তাতে বিদেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে গ্যাসের সম্পূর্ণ চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না। তাই এ মুহূর্তে আমাদের জরুরি ভিত্তিতে নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যমান যেসব গ্যাস ক্ষেত্রের অব্যবহৃত এবং বর্ধিত অংশে এখনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি সেখানে দ্রুত অনুসন্ধান চালিয়ে গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন গ্যাস ক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। কারণ ইস্যুটি জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত। গ্যাস শূন্য বাংলাদেশের কথা আমরা চিন্তা করতে পারি না। সরকার নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২৮ সালের মধ্যে ৩৫/৪০টি নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও খননের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানা গেছে। এ কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হলে আমরা বুঝতে পারবো নিজস্ব উৎস থেকে আমরা আর কত পরিমাণ গ্যাস পেতে পারি। আমরা যদি অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়াতে না পারি তাহলে আমাদের গ্যাস আমদানির উপর নির্ভর করতে হবে। তবে গ্যাস আমদানি করতে হলে আমাদের বুঝেশুনে এগুতে হবে। জ¦ালানি আমদানি খাতে যে বিশাল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের প্রয়োজন হবে তা বহন করার সক্ষমতা আমাদের আছে কিনা তা বিবেচনায় রাখতে হবে।

অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, আমাদের আমলাদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী আছেন যারা স্থানীয়ভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের চেয়ে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির প্রতিই বেশি উৎসাহী। ড. ইজাজ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমিও শুনেছি। উত্থাপিত এ অভিযোগের ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে কিছু এখনই বলা সম্ভব নয়। এ অভিযোগ কতটা সত্যি তা জানার জন্য আমাদের আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। সরকার গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে যদি সফলতা অর্জিত না হয় তাহলে বুঝতে হবে বর্ণিত অভিযোগ সত্যি নয়। আমাদের সত্যি সত্যি এলএনজি আমদানির দরকার ছিল। তারা হয়তো উদ্যোগটি আগেভাগেই নিয়েছিল। তাহলে উত্থাপিত অভিযোগ মিথ্যে বলেই প্রতীয়মান হবে। কিন্তু যদি নতুন করে খনন কাজের মধ্যমে কাক্সিক্ষত পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা ছিল। আমলাদের একটি অংশ স্থানীয়ভাবে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে পাশ কাটিয়ে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানির চেষ্টা করেছিল।

তিন পার্বত্য জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা অনুসন্ধানের বাইরে রয়ে গেছে। এখানে গ্যাস অনুসন্ধান করা হলে নতুন করে গ্যাস পাবার সম্ভাবনা কতটুকু প্রায়শই আমাদের এ ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। আমি মনে করি, তিন পার্বত্য জেলায় অনুসন্ধান করা হলে গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে। ইউএসজিএস একটি স্টাডি আছে যেখানে বাংলাদেশে মাটির নিচে কোথায় কী সম্পদ লুকিয়ে আছে তা তুলে ধরা হয়েছে। ভোলা জেলার বিভিন্ন স্থানে আমরা গ্যাস পাচ্ছি। স্টাডিতে দেখানো হয়েছে, পুরো ভোলা জেলাতেই গ্যাস এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ পাবার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য তিন জেলায় গ্যাস পাওয়া যেতে পারে তবে তা ভোলার মতো এতটা সম্ভাবনাময় নয়। আমি প্রায়ই একটি কথা বলে থাকি তাহলো, বাংলাদেশকে এখন গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ঝাঁজরা করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতি অঞ্চলে গ্যাস অনুসন্ধান চালাতে হবে। স্থানীয়ভাবে একটি কূপ খনন করে যদি সামান্য কিছু পরিমাণ গ্যাসও পাই তাও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। কারণ এলএনজি আমদানিতে যে অর্থ ব্যয় হবে তার চেয়ে অনেক কম অর্থ ব্যয় করে স্থানীয়ভাবে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। স্থানীয়ভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করা হলে যে অর্থ ব্যয় হবে এলএনজি আমদানি করতে হলে তার চেয়ে অন্তত ৫/৬ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় হবে। এ মুহূর্তে সরকার গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা অব্যাহত রাখতে হবে। আমরা হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে খুব বেশি গ্যাস নাও পেতে পারি। কিন্তু তারপরও আমাদের অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে।

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন হয়। প্রশ্ন হলো,আমাদের কি গ্যাস অনুসন্ধানের মতো দক্ষ লোকবল আছে? এক সময় বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য প্রচুর দক্ষ লোকবল ছিল। কিন্তু এদের কাজে লাগানো হয় নি। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না দেবার কারণে অনেকেই চলে গেছে। কেউ বা বিদেশে চলে গেছে। ফলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে দক্ষ লোকবলের অভাব রয়েছে বলেই মনে হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে যারা তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের মধ্যেও প্রচুর সম্ভাবনা আছে। তাদের সঠিকভাবে পরিকল্পিত উপায়ে কাজে লাগাতে হবে। দায়িত্ব পালনরত লোকবলের শুধু দক্ষতা বাড়ালেই চলবে না। সে দক্ষ লোকগুলো যেনো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে চলে না যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে এ খাতে দক্ষ লোকবলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কাজেই দক্ষ লোকবল ধরে রাখার জন্য তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিই আসল কথা। কাজেই জ¦ালানি অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য আমাদের উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।

আন্তর্জাতিক আদালতের মধ্যেমে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমা চিহ্নিত হবার পর সমুদ্র সীমায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সমুদ্র সীমাকে দু’টো ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হচ্ছে স্যালো অফসোর এবং অন্যটি ডিপ অফসোর। স্যালো অফসোরে আমাদের অনেক ড্রিলিং হয়েছে। কিন্তু সেখানে আমরা খুব বেশি কিছু পাই নি। সাংগু পেয়েছিলাম। কুতুবদিয়া পেয়েছিলাম। ডিপ অফসোরে কী পরিমাণ গ্যাস আছে তা আমরা জানিনা। তবে বাংলাদেশ যেহেতু গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ তাই ডিপ অফসোরে গ্যাস পাবার সম্ভাবনা আছে। ডিপ অফসোরে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য অত্যন্ত দক্ষ লোকবল ও প্রযুুক্তি প্রয়োজন। এছাড়া বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের দরকার হয়। বাংলাদেশের পক্ষে সে দক্ষ লোকবল যোগান দেয়া এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে না। তাই বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে বা যৌথ উদ্যোগে অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা করতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানকালে বলেছিল, বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে। এ মন্তব্য কতটা সত্যি তা নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। মার্কিন কোম্পানিকে এ মর্মে শর্ত দেয়া হয়েছিল যে, উত্তোলিত গ্যাস বিদেশি রপ্তানি করা যাবে না এবং বাংলাদেশে তারা কোনো সাংবাদিক সম্মেলন করতে পারবেন না বলেও শর্তারোপিত ছিল। মার্কিন কোম্পানি গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এ ধরনের তথ্য প্রচার করেছিল। তারা বাংলাদেশ থেকে কিছু সাংবাদিককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে তাদের সামনে এমন একটি বক্তব্য তুলে ধরেছিল। মার্কিন কোম্পানির সে যুক্তি যদি আমরা গ্রহণ করতাম তাহলে লাভ হতো এটাই যে আরো আগেই দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাস অনুসন্ধান কার্য চালাতে পারতাম। কী পরিমাণ গ্যাস আছে বা আদৌ গ্যাস আছে কিনা তা আমরা নিশ্চিত হতে পারতাম। মার্কিন কোম্পানি যদি ২০ টিসিএফ গ্যাস আবিষ্কার করতে পারতো এবং তা থেকে ১০ টিসিএফ গ্যাস রপ্তানি করতো তাহলেও আমরা ১০ টিসিএফ গ্যাস ব্যবহার করতে পারতাম। তা না করায় এখন আমাদের নতুন করে গ্যাস অনুসন্ধান করতে হচ্ছে।

স্থানীয়ভাবে গ্যাসের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে এবং যোগান কমে যাচ্ছে তাতে আচিরেই বাংলাদেশ মারাত্মক জ¦ালানি সঙ্কটে পতিত হতে চলেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের ব্যাপকভিত্তিক গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।