সমস্যাগ্রস্থ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ৫ ইসলামি ধারার ব্যাংককে একীভূতকরণের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে সবচেয়ে আলোচিত প্রসঙ্গ হচ্ছে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূতকরণ। মূলত বিগত সরকারের শেষের দিকেই দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে কথা-বার্তা শুরু হয়। এমনকি অন্তত ৪টি ব্যাংক একীভূতকরণের লক্ষ্যে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তবে ছাত্র-জনতার প্রচণ্ড আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে চলে যাবার পর ব্যাংক একীভূতকরণ কার্যক্রম অনেকটাই স্থিমিত হয়ে পড়ে। কয়েক বছর আগে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) এর নিকট থেকে বাংলাদেশ ৪শ’ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ করে। সে ঋণের একটি শর্ত ছিল দেশের ব্যাংকের সংখ্যা কমাতে হবে। এ জন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তুলনামূলক শক্তিশালি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ করতে হবে। আইএমএফ’র শর্ত পরিপালনের লক্ষ্যেই মূলত নতুন করে ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে শরিয়াহ্ভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে শরিয়াহ্ভিত্তিক যেসব ব্যাংক একীভূতকরণ করা হবে সেগুলো হচ্ছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক। প্রত্যকটি ব্যাংকই ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং এরমধ্যে ৪টি ব্যাংক চট্টগ্রামের বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের। ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নরকে আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়ার্কি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এ একীভূতকরণ কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। একীভূত ব্যাংকের নামকরণ করা হতে পারে ‘ইউনাইটেড ইসলামি ব্যাংক।’ একীভূত নতুন ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা যোগান দেবে সরকার। অবশিষ্ট ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের মধ্যমে সংকুলান করা হবে।

অর্থমন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আসলে পুনর্গঠন বলা যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোতে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে সেগুলোকে সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগেরই অংশ হচ্ছে ব্যাংক একীভূতকরণ। নানাভাবে ব্যাংকিং সেক্টরের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে একটি পন্থা বা পদ্ধতি হচ্ছে ব্যাংক একীভূতকরণ। নিকট অতীতে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূতকরণ করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক গঠন করা হয়েছে। এ একীভূতকরণের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। এই ব্যাংকের কার্যক্রম বা অবস্থা যে আগের তুলনায় খুব একটা ভালো হয়েছে তা বলা যাবে না।

ব্যাংক একীভূতকরণ বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে সাধারণত এক বা একাধিক ব্যাংক স্বেচ্ছায় একীভূত হয়ে থাকে। একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত উপর থেকে চাপিয়ে দেয়া হয় না। কিছদিন আগে ব্যাংক রিস্ট্র্যাকচার অর্ডিনেন্স, ২০২৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ অর্ডিনেন্সে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে রিস্ট্র্যাকচারিং করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে যথেষ্ট ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ ক্ষমতা বলেই বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্য রিস্ট্র্যাকচারিং একমাত্র টুলস নয়। আরো বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। সেগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্দশা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা যেতো। উন্নত দেশে একটি ব্যাংক স্বেচ্ছায় অন্য একটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয় তাদের মার্কেট শেয়ার বাড়ানোর জন্য। রেগুলেটর সেখানে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয় না। কিন্তু আমাদের এখানে তো রেগুলেটর তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। উন্নত দেশগুলোতে ব্যাংক একীভূত করা হয়ে তাদের মার্কেট শেয়ার বাড়ানোর জন্য। আর আমাদের এখানে ব্যাংক একীভূত করা হচ্ছে এদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য। কাজেই আমাদের এ অভিজ্ঞতা হবে অনন্য সাধারণ। এ একীভূতকরণের ফলাফল কী হবে তা দেখার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। সমালোচকগণ বলছেন, পাঁচটি শূন্য যোগ করা হলে তো শূন্যই হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে ইস্যুটি নিয়ে আলাপ হলে তিনি বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে এ ধরনের একীভূতকরণের রেকর্ড যেহেতু আমাদের নেই। তাই আমি শঙ্কিত এ উদ্যোগ কতটা সফল হবে বা কোন ভালো ফলাফল দেবে কিনা। যে পাঁচটি ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাদের প্রত্যেকটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে। তাদের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। তারা মূলধন সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছে না। প্রতিটি ব্যাংকের পর্বত প্রমান খেলাপি ঋণ রয়েছে। মোট কথা ব্যাংকগুলো ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে মোটেও কোন সফলতা দেখাতে পারছে না। মূলধন ঘাটতি পূরণ করবে বাংলাদেশ সরকার। আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোন কিছু ভালো চলতে পারে না। তাহলে কোনো ৫টি ব্যাংককে একীভূত করে সরকারি তহবিল থেকে মূলধন যোগান দেয়া হবে? যদি একীভূতকরণের পর ভালো ফলাফল পাওয়া না যায় তাহলে সরকারের কতগুলো টাকা লোকসান যাবে সেটা আমাদের ভেবে দেখা দরকার ছিল। আমার কেন যেনো মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁটি দুর্দশাগ্রস্ত ইসলামি ধারার ব্যাংককে একীভূত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা থেকে কোন ভালো ফল পাওয়া যাবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, একীভূতকরণের পর এটি হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামি ব্যাংক। কিন্তু অনেকেই বলছেন, এটি হবে একটি দুর্দশাগ্রস্ত ইসলামি ব্যাংক। এ ধরনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংক ভালো করার দায়িত্ব সরকারের নয়। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে আগে ঠিক করা। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা নানা ধরনের জটিল সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ সমস্যা সবচেয়ে জটিল আকার ধারণ করেছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)তাদের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সবার শীর্ষে রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ ও ২০২২ সালে খেলাপি ঋণের হার ছিল যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৮দশমিক ৭ শতাংশ। আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের হার শুধু বাড়ছেই। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের খেলাপি ঋণের হার কমে আসছে। যেমন, ২০২০ সালে ভুটানের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২ সালে তা ৩ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০ সালে ভারতের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

২০২৩ সালে তা ১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একই সময়ে মালদ্বীপের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের হার ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে কম হচ্ছে তাইপে ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। জুন, ২০২৫ সময়ে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। প্রদর্শিত মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তা খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র নয়। এর বাইরে ঋণ হিসাব অবলোপন, ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ এবং মামলাধীন প্রকল্পের নিকট দাবিকৃত বিপুল পরিমাণ ঋণাঙ্ক হিসাবের বাইরে রাখা হয়েছে। বিগত সরকার আমলে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। সরকারের উচিৎ হবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে আগে সুশৃঙ্খল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংক একীভূতকরণের মাধ্যমে কতটা সুফল অর্জিত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আর যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো একীভূতকরণের মাধ্যমে ভালো অবস্থানে চলে আসে তাহলে সরকারের কি লাভ হবে? আমি মনে করি, ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা না করে তাদেরকে উন্মুক্ত করে দেয়া যেতে পারে। একটি নিদিষ্ট সময় দিয়ে এসব সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর ম্যানেজমেন্টকে বলা যেতে পারে, এ সময়ের মধ্যে যদি তারা ভালো করতে না পারে, লাভজনকতা অর্জন করতে না পারে তাহলে তাদের বিলুপ্ত করে দেয়া হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোন কিছুই কৃত্রিমভাবে টিকয়ে রাখার চেষ্টা করা উচিৎ নয়। যোগ্যতার ভিত্তিতেই তাদের টিকে থাকতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। যেহেতু এগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংক এদের দায়িত্ব সরকার কেন নিতে যাবে?

বিশিষ্ট ব্যাংকার এটিএম হাবিব বলেন, যে ৫টি ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তাতে কর্মরত অফিসার ও কর্মচারিরা চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ একীভূতকরণের পর ব্যাংকগুলোর শাখা কমে যেতে পারে। সেই অবস্থায় অনেকেরই চাকরি হারানোর ভয় থাকবে। যদিও কর্তৃপক্ষীয় পর্যায় থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে কারো চাকরি হারানোর ভয় নেই। কিন্তু তারপরও আতঙ্ক কাটছে না। যেমন, শান্তিনগর এলাকায় যদি উল্লেখিত ৫টি ব্যাংকের একটি করে শাখা থাকে তাহলে একীভূতকরণের পরও কি ৫টি শাখা চালু থাকবে? নিশ্চয়ই শাখা সংখ্যা কমে যাবে। তাহলে যেসব শাখা বন্ধ করা হবে তার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কি চাকরিতে বহাল থাকবেন? পুরো বিষয়টি আরো ভালোভাবেই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

ব্যাংক কিভাবে পরিচালিত হবে এবং ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের কী দায়িত্ব হবে তা সুনির্দিষ্ট করে একটি বাস্তবধর্মী ব্যাংক পলিসি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি দেশের অর্থনীতির ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে বিবেচিত হয়। কোন দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা যদি সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়তে বাধ্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, আমরা ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে পারছি না। দিন দিন পরিস্থিতি শুধু খারাপই হচ্ছে। বিগত সরকার আমলের রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর অধিকাংশই ভালোভাবে চলছে না। বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সব মিলিয়ে ৬২টি ব্যাংক ব্যবসায় করছে। অথচ প্রতিবেশি দেশ ভারতে ব্যাংকের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। পলিসি সার্পোট দিয়ে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা না করে এদের উন্মুক্ত প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় বা যে কোন কারণেই এতগুলো ব্যাংকের অনুমোদন দিয়ে থাকুক না কেন তাদের তো এ আশ্বাস দেয়া হয়নি যে ব্যাংকগুলো ভালোভাবে পরিচালিত না হতে পারলে তার ‘দায়’ সরকার বহন করবে। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে কোন কিছুটা রাষ্ট্রীয় সাপোর্ট দিয়ে টিকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। যোগ্যতা দিয়েই প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকে থাকতে হবে। যারা টিকে থাকতে পারবে না তারা বাজার থেকে চলে যাবে এটাই রীতি।

মাত্রাতিরিক্ত ব্যাংক কেন অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এর পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছিল তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ইসলাামি ব্যাংকের মতো একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের মালিকানা কোন পরিস্থিতিতে এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা দরকার। এস আলম শিল্পগোষ্ঠী কিভাবে এতগুলো ব্যাংকের মালিকানা অর্জন করলো? সরকারের মধ্য থেকে কারা এ অন্যায় কর্মে সহায়তা করেছে তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। মহল বিশেষের অন্যায় কর্ম আড়াল করার জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে এসব দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংককে বাঁচানোর চেষ্টা করা কোনভাবেই উচিৎ হবে না। বরং তাদের মার্কেটে অবাধ প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দেয়া যেতে পারে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।