অনেক দিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা চলছিল এবং কেউ কেউ ঘোষণাও দিয়েছিল। অবশেষে ২১ সেপ্টেম্বর ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া। পরদিন স্বীকৃতি দেয় শক্তিধর রাষ্ট্র ফ্রান্স। ফ্রান্সের সাথে এদিন আরো স্বীকৃতি দিয়েছে বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মালটা, মোনাকো ও আনদোরা। এর ফলে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আরও জোরালো হলো। এ পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন চলছে। চলছে গণহত্যা। এক রকম ধ্বংসস্তূপই বলা চলে গাজাকে। নিহতের সংখ্যা দু’বছরে ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। প্রশ্ন আসতে পারে কেন এই স্বীকৃতি? এর তাৎপর্যই বা কি? এতে গাজা পরিস্থিতির কোন উপশম করবে? বিশ্লেষকরাও এ প্রশ্ন করছেন। ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য হাজির করছেন।
রবি ও সোমবার দেশগুলো আলাদাভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৫০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল। গাজায় প্রায় দুই বছর ধরে চলমান ইসরাইলের গণহত্যার মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে এসব শক্তিধর দেশের স্বীকৃতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলছেন বিশ্লেষকরা। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। যথারীতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ইসরাইল।
নিউইয়র্ক টাইমস ২২ সেপ্টেম্বর জানাচ্ছে, সোমবার নিউইয়র্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে একমত হয়েছেন। গাজা উপত্যকার যুদ্ধ দু’বছরের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা ব্যাপক মৃত্যু, ধ্বংস এবং ক্ষুধা ডেকে এনেছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগে ফ্রান্স এবং সৌদি আরব আয়োজিত একটি শীর্ষ সম্মেলনকে ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাতের দীর্ঘস্থায়ী দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের দৃষ্টিভঙ্গি উদ্ধারের একটি জরুরি প্রচেষ্টা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
২১ সেপ্টেম্বর সবার আগে কানাডার স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আসে। এর মধ্য দিয়ে জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিনকে সবার আগে স্বীকৃতি দেওয়ার গৌরব অর্জন করে কানাডা। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয়ের জন্য শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিশ্রুতির প্রতি আমরা আমাদের অংশীদারত্ব প্রস্তাব করছি।’ অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এতে অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের বৈধ রাষ্ট্র প্রত্যাশা স্বীকার করছে। এ স্বীকৃতিতে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ইসরাইল ও ফিলিস্তিন উভয়ের জন্য স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার একমাত্র পথ।
কী বলছেন যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের নেতারা? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এ যুক্তরাজ্যই ১৯৪৮ সালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত। যুক্তরাজ্যের এ স্বীকৃতিকে তাৎপর্যপূর্ণই বলতে হবে। বক্তব্যের শুরুতে স্টারমার বেশ ভাল ভাল কথাই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান বীভৎসতার মুখে আমরা শান্তির সম্ভাবনা এবং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে বাঁচিয়ে রাখতে কাজ করছি। এর অর্থ হলো একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত ইসরাইল রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র, এ মুহূর্তে যার কোনোটিই আমাদের কাছে নেই।’ কিন্তু কেন কার্যকর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলো না সে প্রশ্ন আসতে পারে। যাহোক এরপর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় হয়েছে। শান্তি ও দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান পুনরুজ্জীবিত করার আশায় আজ আমি এ মহান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছি, যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’
জানা যাচ্ছে, গত জুলাই মাসেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। তখন স্টারমার প্রশাসন বলেছিল, ইসরাইল যদি ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির শর্ত পূরণে রাজি না হয় এবং দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই শান্তি স্থাপনে চুক্তি না করে, তাহলে যুক্তরাজ্য সরকার নিজেদের অবস্থান বদলাবে। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। ইসরাইল শর্ত পূরণ করেনি আর তাই যুক্তরাজ্য তার কথাতে স্থির থেকেছে।
বিবিসির খবরে জানানো হয়, গত সোমবার ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ পরিষদের বৈঠকের আগে ফ্রান্স ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। কয়েক মাস আগে দেশটি এ আভাস দিয়েছিল। এক ভিডিও বার্তায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে শান্তিপূর্ণভাবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নীতির বাস্তবায়নই ফ্রান্সের একমাত্র দাবি। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর একটি এই ফ্রান্স। তাদের স্বীকৃতির বাড়তি মূল্য রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বের্ত দি ওয়েভার সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক বৈশ্বিক সম্মেলনে স্বীকৃতির এ ঘোষণা দেন। এ সম্মেলনটি মধ্যপ্রাচ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ফ্রান্স ও সৌদি আরবের উদ্যোগে আয়োজিত হয়েছিল সে কথা আগেই বলেছি।
ফিলিস্তিনকে পশ্চিমা দেশের স্বীকৃতির ঘোষণা ভালোভাবে নেয়নি ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে ইসরাইল বলেছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত’ করা হবে। তবে ভিডিও বার্তায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ইসরাইলের এ অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের আহ্বান বিদ্বেষপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিপরীত। এ সমাধানের অর্থ হামাসকে পুরস্কৃত করা নয়। এর অর্থ, এখন হামাসের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। সরকারে তাদের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং নিরাপত্তাব্যবস্থায়ও কোনো অংশীদারত্ব থাকবে না।’ সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট বলেন, মি. ট্রাম্প এ স্বীকৃতির সাথে “অসম্মতি” প্রকাশ করেছেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি হামাসের জন্য একটি পুরষ্কার। দেখা যাচ্ছে ইসরাইল ও আমেরিকা একই সুরে কথা বলছে।
ফিলিস্তিনীরা কিভাবে দেখছে এ ঘটনাকে? তাদের প্রতিক্রিয়াই কি? ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি অঞ্চলটিতে স্থায়ী শান্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তাঁর কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক বৈধতার সঙ্গে ন্যায়সংগত ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের পথে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর দেশটির যুক্তরাজ্য মিশনের প্রধান হুসাম জুমলত বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
কী বলছে হামাস? গাজা শাসনকারী ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এ স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘এই স্বীকৃতি আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণের ভূমি ও পবিত্র স্থানের অধিকার এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার নিশ্চিত করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া যে সবচেয়ে মারাত্মক হবে তা আগে থেকেই ধারণা করা যাচ্ছিল। বাস্তবে হয়েছেও তাই। যুক্তরাজ্যের স্বীকৃতির পর এক্সে এক পোস্টে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হলো, সরাসরি জিহাদি হামাসকে পুরস্কৃত করা। আর স্বীকৃতিদানকারী দেশগুলোর উদ্দেশে এক ভিডিও বার্তায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আপনাদের জন্য আমার আরেকটি বার্তা আছে। তা হলো, এটা হবে না। জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হবে না।’ মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম বার্ষিক অধিবেশনে এই স্বীকৃতির বিরোধিতা করারও ঘোষণা দেন তিনি। বলা যেতে পারে দুষ্টক্ষত ইসরাইল এ ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে তা এসব দেশের জানাই ছিল।
এখনই কেন এই স্বীকৃতি?
এ প্রশ্নে ভিন্ন ভিন্ন বিশ্লেষণ করছেন ভাষ্যকাররা। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে ৬৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটির প্রায় ২১ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সম্প্রতি গাজার বৃহত্তম শহর গাজা নগরীতে সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। এদিকে জাতিসংঘ স্বীকৃত রোমভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তা পর্যবেক্ষণবিষয়ক প্যানেল (আইপিসির) গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে গাজায় গণহত্যার (জেনোসাইড) কথা স্বীকার করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গণহত্যা বন্ধে ইসরাইলকে বাধ্য করতে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছিল। তাদের স্বীকৃতিতে তার ছাপ রয়েছে।
ফ্রান্স স্বীকৃতি দেয়ার ফলে জাতিসংঘের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই শুধু বাকি থাকল।
এখন জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পথে চূড়ান্ত পর্যায়ে বাধা হয়ে থাকল যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, সংস্থাটির নিরাপত্তা পরিষদে ওয়াশিংটনের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। কোনো রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে স্থায়ী পাঁচ দেশের কোনো দেশ ভেটো দিলে তা আর এগোয় না।
ফিলিস্তিনকে একের পর এক দেশ স্বীকৃতি দেওয়ায় শান্তি আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে বলে খবর। ফক্স নিউজের খবর অনুযায়ী, তারা এরইমধ্যে চিঠিটির খসড়া তৈরি করেছে, যা বর্তমানে কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের কাছে আছে এবং এই সপ্তাহে ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চিঠিতে হামাস জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তির বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা চেয়েছে। ট্রাম্প, যিনি বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে একজন শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন এবং তার ভাষায় পাক-ভারত যুদ্ধসহ সাতটি যুদ্ধ বন্ধের জন্য সাতটি নোবেল শান্তি পুরস্কারের দাবিদার তিনি। তিনি বারবার হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালের হামলায় যাদের বন্দি করেছিল, সে জিম্মিদের সবাইকে মুক্তি দেয়। গত সপ্তাহে ইংল্যান্ড সফরের সময় ট্রাম্প আবারও জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এ মাসের শুরুতে ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে হামাসের প্রতি জিম্মিদের মুক্তির জন্য তার শেষ সতর্কবার্তা জারি করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সবাই জিম্মিদের বাড়ি ফেরত চায়। সবাই চায় এ যুদ্ধের অবসান হোক। ইসরাইলিরা আমার শর্ত মেনে নিয়েছে। হামাসেরও এখন সময় এসেছে মেনে নেওয়ার। ৭ অক্টোবরের হামলার প্রায় দুই বছর পরেও গাজায় হামাসের হাতে ৪৮ জন জিম্মি আছেন বলে ধারণা করা হয়। মার্কিন ও ইসরাইলি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন যে তাদের মধ্যে এখনও ২০ জন জীবিত আছেন। তবে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতিকে ভালভাবে নেয়টি আমেরিকা। ফলে হামাসের এই চিঠির ফল শুভ বার্তা বহন করে কি না তা এখন দেখার বিষয়।
ফিলিস্তিনকে বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি দেয়ার তাৎপর্য কী সে বিষয়ে বিশ্লেষকরা আরো কিছু কথা বলেছেন। তারা বলছেন, এর ফলে ফিলিস্তিন আত্মনিয়ন্ত্রণকারী একটি রাষ্ট্র হিসেবে আরো বেশি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। যারা এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের ওপর চাপ বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো (যেমন জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য) ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর ভূমিকা নিতে উৎসাহিত হতে পারে। এছাড়া কিছু আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কাঠামোতে অংশগ্রহণের অধিকার পাবে ফিলিস্তিন আর রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ বাড়বে। এটি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে তার নিয়ন্ত্রণযোগ্য এলাকা ও দায়িত্ব সম্পর্কে আরো খোলামেলা দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো মোকাবেলা করার জন্য শক্তি দেবে। এর বাইরে আরো কিছু তাৎপর্যের কথা বলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অর্থ ও উন্নয়নমূলক সহায়তা, দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় প্রকল্পগুলোর জন্য বেশি স্বীকৃতি পাওয়া যেতে পারে। ফিলিস্তিনি প্রশাসন যদি নির্দিষ্ট রিফর্ম ও ভালো গভর্নেন্স নিয়ে কাজ করে, তাহলে বৈধ পার্টনার হিসেবে সহযোগিতা বাড়বে- যেমন কানাডিয়ান ঘোষণায় বলা হয়েছে, নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ও প্রশাসনিক সংস্কার ইত্যাদিতে কাজ করার ক্ষেত্রে সার্বিক সহায়তা বাড়বে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০ তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। এ অধিবেশনে ফিলিস্তিন বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে এ বিষয়ে আরো অগ্রগতি সাধিত হতে পারে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।