DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

কলাম

ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অনীহা কাম্য নয়

জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহানগর ও জেলা পর্যায়ে ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস রয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে উন্নয়নের নামে লুটপাট, প্রতারণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

Default Image - DS

অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল বিন আমীন

জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মহানগর ও জেলা পর্যায়ে ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস রয়েছে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনামলে উন্নয়নের নামে লুটপাট, প্রতারণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। দেশের স্বার্থের পরিবর্তে একটি গোষ্ঠীর দুর্নীতির স্বার্থে অযথা বহু জায়গায় কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। শুধু ফুটওভার ব্রিজ নয়; আওয়ামী লীগের শাসনামলে অযথা সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের খবর পত্রিকার পাতায় ছাপা হয়েছিল। ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলোর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, ৩ হাজার সেতু কোনো কাজে লাগছে না। অনেক সেতুর নির্মাণকাজ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও শেষ হচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ের দায়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড়ানো হোক।

রাজধানী ঢাকা শহরে বর্তমানে দুই সিটি করপোরেশন, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে এবং রাজউক নির্মিত ও নির্মাণাধীন ২৬টিসহ মোট ফুটওভার ব্রিজের সংখ্যা একশর উপরে এবং কয়েকটি আন্ডারপাস রয়েছে। (সুত্র ঃ ২৪ অক্টোবর ২০২৪, যুগান্তর) কিন্তু অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজ পথচারী ব্যবহার করে না। কেন করে না? সে কারণগুলো উদঘাটন করা জরুরী। প্রয়োজন সমস্যার সমাধান করা। রাজধানী শহরের অনেক স্থানে ফুটওভারব্রিজে ওঠার জন্য চলন্ত সিঁড়ির (এস্কেলেটর) ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফুটওভারব্রিজে ওঠা চলন্ত সিঁড়িগুলোর অনেকটিই বিকল হয়ে পড়ে আছে। অথচ এগুলো দেখার কেউ নেই। রাজধানী ফার্মগেইটে রাস্তা পারাপার হওয়ার জন্য এস্কেলেটর স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো চালু হয়নি। কবে হবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজ পথচারীরা ব্যবহার করে না। কারণ অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজ অপরিষ্কার, কফ-ফুতু, নোংরা পানি, ছেঁড়া কাপড়, কাগজ, ধুলাবালির আস্তর, হকার ফেরিওয়ালা, ভবঘুরে, ভিক্ষুক ও মাদকসেবীদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। ফলে পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে চলন্ত গাড়ির পাশ কাটিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে। আইন অমান্য করার একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতিদিন যত পথচারী প্রাণহানী ঘটে তার ৬১ শতাংশ নিয়ম না মেনে রাস্তা পারাপার হওয়ার কারণে সংঘটিত হচ্ছে।

রাজধানীর অধিকাংশ ফুটওভারব্রিজ পথচারীদের চলাচলের অনুপযোগী। ফলে পথচারীরা ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করতে ভয় পায়। দৈনিক নয়াদিগন্তের সম্পাদকীয় খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর পরিবাগ ফুটওভারব্রিজে দিনের বেলা পড়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের ভিজিটিং কার্ড যেগুলো দিয়ে মানুষকে বাজে কাজের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কার্ডগুলোর ঠিকানা দেখলেই বুঝা যায় এগুলো মানুষের চরিত্র নষ্ট করার হাতিয়ার। সেখানে সন্ধ্যায় চলে ছিনতাই আর রাতে হয় অসামাজিক কার্যকলাপ। অসামাজিক ভিজিটিং কার্ড শুধু পরিবাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; রাজধানীর নিউমার্কেটের ফুটওভার ব্রিজটিতে বিভিন্ন ধরনের ভিজিটিং কার্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অথচ ব্রিজগুলো বসানো হয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও পথচারীদের চলাচল সহজ করার জন্য। কিন্তু সেগুলো দিনের বেলা মাদক কারবারিদের দখলে থাকে। কখনো কখনো মাদক কারবারিরা পথচারীদের লাঞ্ছনা করে। তবে নারীরা মাদক সেবীদের দ্বারা সবচেয়ে বেশি লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। (সূত্র : নয়াদিগন্ত ১২.০২.২৫) বিশেষ করে ছিনতাই তো এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। একজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭.০০ টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ দিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। কিন্তু যখন ওভারব্রিজের ওপরে উঠলেন তখন পেছন থেকে ৩-৪ জন এসে যাপটে ধরলেন। একজন গাড়ের পেছনে ডেগার ধরে বললেন চাচা শব্দ করবেন না। আপনার কাছে যা যা আছে তা দিয়ে দেন। বাড়াবাড়ি করলে কল্লা যাবে। এ পরিস্থিতি মোটেও সুখকর নয়! ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়ে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এখন তো আর ফ্যাসিস্ট নেই। তাহলে কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সন্ধ্যা হলেই ফুটওভার ব্রিজে হরহামেশাই ছিনতাই হচ্ছে। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ?

পথচারীরা কেন ফুটওভার ব্রিজ এর ওপরে উঠছে না। কিছু পথচারীর ভাষ্যমতে, ফুটওভার ব্রিজের সিঁড়িগুলোর উচ্চতা বেশি থাকায় শিশু, অসুস্থ এবং বয়স্করা সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারে না। তারা উপরে উঠতে গিয়ে অল্পতে হাঁপিয়ে ওঠেন। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজে বড় বড় সাইনবোর্ড লাগানো, ব্যানার টানানো, পোস্টার ও ফেসটুনে একাকার। সাইনবোর্ড থাকার কারণে ছিনতাইকারীদের সুবিধা হচ্ছে। রাতের বেলায় আলোর ব্যবস্থা না থাকায় বিদঘুটে অন্ধকার বিরাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের সকল ফুটওভার ব্রিজের সাইনবোর্ড সরানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজে ছিনতাইকারী, ভবঘুরে, নেশাখোর ও পতিতাদের জমজমাট হার্ট বসে। অপরদিকে পতিতারা খদ্দেরের খোঁজে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করে। এমনকি পথচারীদের গায়ে ও হাত দেয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ ফুটওভার ব্রিজে উঠতে চায় না। কারণ মাদকসেবী, ছিনতাইকারীরা সুযোগ বুঝে পথচারীদের মূল্যবান জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। নিরাপত্তার কারণে সাধারণ পথচারীরা সন্ধ্যার পর ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে চায় না। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ। হারাচ্ছে প্রাণ। সাধারণ মানুষ ও পথচারীদের আকুল আবেদন ফুটওভার ব্রিজ নিরাপদ করুন, হকার ও ভিক্ষুকমুক্ত করুন, পথ চলার ব্যবস্থা করুন। এ অবস্থার আশু পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় সংকল্প, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন। পাশাপাশি ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করলে জরিমানার বিধান চালু করা প্রয়োজন। যেন ঠুনকো অজুহাতে কেউ অবৈধভাবে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে জীবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দেয়। কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন দয়া করে ফুটওভার ব্রিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। কারণ, একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। লেখক : কলামিষ্ট