তাবিতা বিনতে রফিক

জার্মান সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী একেকটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মডেলকে প্রশিক্ষণ দিতে নির্গত কার্বনের পরিমাণ একটি গাড়ির জীবদ্দশায় কার্বন নিঃসণের পাঁচগুণ। আর চ্যাট জিপিটির মাধ্যমে একটা ছবি তৈরি করতে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হয় তা দিয়ে একটি মোবাইল চার্জ করা সম্ভব।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে ছবি তৈরি, সিভির ভুল সংশোধন কিংবা রিসার্চ গ্যাপ খোঁজার মতো অসংখ্য কাজ চোখের পলকে করা সম্ভব। কিন্তু একটা আউটপুট দিতে প্রোগ্রামটিকে অনেকগুলো কাজ করতে হয়, যা সম্পন্ন হয় বিশাল বিশাল ডাটাসেন্টারে। যেখানে রাখা সুপার কম্পিউটারগুলো প্রথমে ইনপুট বা আমাদের লেখা প্রম্পট গ্রহণ করে। এরপর প্রম্পট সংশ্লিষ্ট সব ধরনের রিসোর্স ঘেঁটে উত্তর তৈরি করে তা ব্যবহারকারীকে পাঠায়। প্রতি সেকেন্ডে এমন লাখো ব্যবহারকারীর জন্য উত্তর তৈরির এ কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে প্রয়োজন হয় প্রচুর বিদ্যুৎশক্তি। উৎপন্ন হয় প্রচুর তাপ।

গুগলের একটা ডেটাসেন্টারে যুক্তরাষ্টের আশি হাজার বাড়ির সমপরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। আর এআই এর একটা সার্চে গুগলের তুলনায় দশগুণ বেশি শক্তি খরচ হয়। কারণ, গুগল আউটপুট হিসেবে শুধু কতগুলো লিংক পাঠায়, যেগুলো থেকে ব্যবহারকারীকে উত্তর খুঁজে নিতে হয় কিন্তু এআই মডেল এ কাজটুকু করে দেয় এবং মানুষের বচনভঙ্গি অনুকরণ করে উত্তর সাজিয়ে দেয়। এ বাড়তি প্রক্রিয়াকরণে বেশি শক্তি ব্যয় হয়।

প্রায় সকল বড় এআই প্রতিষ্ঠানে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও ভূতাপশক্তির মত নবায়নযোগ্য উৎস ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকলেও কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানিকে মূল উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে ডাটা সেন্টার ও ডাটা ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক বার্ষিক ১ শতাংশ বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী যা এভিয়েশন শিল্পের সমপরিমাণ বলে আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

আর এমন ডাটাসেন্টারের সংখ্যা অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দশ বছরে নতুন সাত হাজার ডাটাবেজ যুক্ত হয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব শুধু বায়ু নয় বরং পরিবেশের প্রায় প্রতিটি উপাদানের উপর পড়ছে। যেমন শক্তি যোগানের আরেকটি অন্যতম উৎস পানি। সে সাথে যন্ত্রাংশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য বৈদ্যুতিক পাখার পাশাপাশি তরল তাপ নিয়ন্ত্রক হিসেবেও মূলত পানির উপর নির্ভর করা হয়। এতে পানির উৎসসমূহের উপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়াও ডাটাসেন্টারগুলোতে প্রতিনিয়ত যান্ত্রিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে যা এখনো সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তাই এসব থেকে ক্ষতিকর উপাদান ও রেডিয়েশন পরিবেশের সাথে মিশ্রিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

তবে ডিজিটাল দূষণ শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সীমাবদ্ধ নয়। বরং সকল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ই কমার্স অ্যাপ্লিকেশন, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম (ইউটিউব, স্পটিফাই) কোনো না কোনো শক্তি আগ্রাসী ও ইলেকট্রনিক বর্জ্য উৎপাদনকারী ডাটাসেন্টার থেকে পরিচালিত হয়। এমনকি ইউটিউবে বেশি পিক্সেল ব্যবহার করে ভিডিও দেখলেও এখানকার যন্ত্রাংশের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ শক্তি খরচ ও দূষণ উভয়ই বৃদ্ধি পায়।

পরিবেশ সুরক্ষায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু এআই মডেলসমূহের দূষণের মাত্রা তুলনামূলকভাবে অধিক। তাই নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারে অধিক সচেতনতার প্রয়োজন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।