অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিডিউল ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং যেসব ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকে সরকারের শেয়ার আছে তাতে কর্মরত পরিচালকদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। একই সঙ্গে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ব্যবস্থা করা হবে প্রশিক্ষণের। তাদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। আর পরিচালক নিয়োগদানের ক্ষেত্রে সততা এবং নৈতিকতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। পরিচালকগণ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণ কাজ করবেন। তারা ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে অংশ নিতে পারবেন না। পরিচালকদের বয়স হবে ৪৫ বছর থেকে ৭৫ বছর। বর্তমানে ১৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আছে যার মালিকানা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অথবা রাষ্ট্রের শেয়ার আছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জারিকৃত এ প্রজ্ঞাপন নানা কারণেই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এ সার্কুলারে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা নতুন কিছু নয়। আইনের এ শর্তগুলো আগে থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। তবে বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই। বলা হয়েছে,পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতাকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে। এর মাধ্যমে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে যে, এতদিন পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সততাকে বিবেচনা করা হয়নি। বিগত সরকার আমলে এমন ব্যক্তিকেও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যার দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম কোন ধারনা ছিল না। শুধু দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে এদের নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দেয়। ধরনা করা হয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নিশ্চিতভাবেই নীতিবান এবং সৎ হবেন। কিন্তু তারা সে ধারণার মূল্য দিতে পারেনি। ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অনেকেই দেখিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি কাকে বলে। একজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নিয়োগ পাবার পর এ ব্যাংকটি নানা ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রন্তে চলে যায়। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড এ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি কাকে বলে। হয়তো রবিবার পরিচালনা পর্ষদের মিটিং এবং সোমবার অডিট কমিটির মিটিং। দুটো মিটিংয়েই তিনি উপস্থিত থাকবেন। তিনি রাজশাহী থেকে বিমান যোগে রবিরাব বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে বিকেলে আবার বিমান যোগে রাজশাহী চলে যেতেন। পরদিন আবারো তিনি বিমানে রাজশাহী থেকে ঢাকা আসতেন এবং বিকেলে বিমানে রাজশাহী চলে যেতেন। তিনি মিটিংয়ে উপস্থিতি থাকার জন্য যাওয়া-আসা বাবদ ৪বার বিমান ভাড়া গ্রহণ করতেন। অথচ মিটিংয়ের কয়েকদিন আগে থেকেই তিনি ঢাকায় অবস্থান করতেন। ব্যাংকের নতুন শাখা স্থাপনের জন্য জেলা পর্যায়ে অফিস নির্ধারণ করতে গেলে সে পরিচালক তার পছন্দনীয় ভবন ভাড়া নেবার জন্য চাপ দিতেন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালক ব্যাংকের মালিক নন। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালকগণ সাধারণত উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। কাজেই তারা ব্যাংকের মালিকানা দাবি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালকগণ সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন মাত্র। দেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালকদের অদক্ষতা একটি জটিল সমস্যা বটে কিন্তু তার চেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে এ খাতে চলমান দ্বৈতশাসন বা নিয়ন্ত্রণ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে দ্বৈত শাসনের আওতায়। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশের ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অত্যন্ত দু:খ করে বলেছেন, দেশে দুটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে। একটি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, যাকে আমরা সবাই চিনি। আর একটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা একটি বিশেষ গোষ্ঠী। এ বিশেষ গোষ্ঠী অত্যন্ত ক্ষমতাবান এবং তাদের সম্মতি ব্যতীত ব্যাংকিং সেক্টরে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আসলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা তিনটি কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। একটি হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের সকল ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সবার উপরে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা বিশেষ গোষ্ঠী। এ বিশেষ গোষ্ঠীর অনুমোদন ছাড়া ব্যাংকিং সেক্টরে একটি গাছের পাতাও নড়ে না। এরা যে কোন কাজ করার আগে প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স ব্যবহার করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা গোষ্ঠীটি অত্যন্ত শক্তিশালি কিন্তু তাদের কোন দায় বহন করতে হয় না। অর্থাৎ এ মহলটি ক্ষমতাবান কিন্তু দায়বদ্ধ নয়। ব্যাংকিং সেক্টরকে সঠিক পথে আনতে হলে অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যাতে ব্যাংকিং সেক্টরের উপর কোন ধরনের প্রভাব বিস্তার করা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপি সরকার আমলে এম সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রী থাকাকালে একবার অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তুলে দেয়া হয়েছিল। আবারো একই কাজ করা যেতে পারে।

গত সরকার এমন এক ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছিল যাকে বাংলাদেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ বলে মনে করা হয়। বিগত সরকারে আমলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলো ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের অনুকূলে পরিবর্তন করা হয়। এর পেছনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্ররোচনা ছিল বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয়। খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় না করেই ব্যাংকের লেজারকে ক্লিন দেখানোর যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার ৯ শতাংশ ফিক্সড করে রাখার ফলে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। একইভাবে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক না করে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকায় ফিক্সড করে রাখার ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। কারণ সেই সময় ক্যাংকের কস্ট অব ফান্ডের হার ছিল সোয়া ৮ শতাংশ। সোয়া ৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে সৃষ্ট ফান্ড কি কখনো ৯ শতাংশ সুদে বিনিয়োগ করা সম্ভব? ব্যাংকগুলো নতুন প্রকল্পে ঋণদান কমিয়ে দেয়। কিন্তু সরকারের আশির্বাদপুষ্ট গোষ্ঠী ব্যাংকের উপর চাপ দিয়ে বিপুল পরিমাণ ঋণ বের করে নিয়ে অন্য খাতে প্রবাহিত করেছে। এমনকি বিদেশে পাচার করেছে।

অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান এবং পরিচালক নিয়োগের যে বিধান জারি করেছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ নীতি কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সেটাই বিবেচ্য বিষয়। ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর সততা এবং দক্ষতাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। দলীয় বিবেচনায় বা অন্য কোন বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগ দেয়া হলে সমস্যার কোন সমাধান হবে না। ব্যাংকের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের মূল দায়িত্ব হচ্ছে নীতিমালা প্রণয়ন করা। ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট সেই নীতিমালার আলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এটাই নিয়ম। ব্যাংকের দৈনন্দিন কাজে পরিচালকদের কোন ভূমিকা নেই। কিন্তু আিধকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিচালকগণ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে অথবা প্রভাব বিস্তার করে। নিয়োগ-বদলী থেকে হেন প্রশাসনিক কাজ নেই যাতে তারা হস্তক্ষেপ করেন না। কোন কোন পরিচালক ব্যাংকে রীতিমতো অফিস করেন। তারা মাঝে মাঝেই ব্যাংকে আসেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের তাদের পছন্দ মাফিক কাজ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তারা ব্যাংকের এক শ্রেণির অসৎ কর্মকর্তাকে তাদের এজেন্টে পরিণত করেন। এদের মাধ্যমে তারা ঋণ আবেদনকারিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ঋণ মঞ্জুরের ব্যবস্থা করে দেন। কোন কর্মকর্তাকে বদলি করতে হবে কাকে শস্তি দিতে হবে পরিচালকরা তার নির্দেশনা প্রদান করেন। এদের দাপটে ব্যাংক প্রশাসন স্বাধীন ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিব্রত বোধ করেন। এটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

একটি নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত ঋণ অনুমোদনের প্রস্তাব পরিচালনা বোর্ডে উপস্থাপন করতে হয়। পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পরিচালকগণ যদি দক্ষ এবং সৎ হন তাহলে তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে কোন দুর্বল ঋণ প্রস্তাব বোর্ডে পাশ হতে পারে না। কোন অনুপযোগি ঋণ প্রস্তাব যদি পরিচালনা বোর্ডে অনুমোদিত হয় তাহলে সে জন্য পরিচালনা বোর্ডের সদস্যাদের দায়বদ্ধ করা যেতে পারে। অনেক সময় পরিচালকগণ প্রস্তাবিত ঋণ আবেদনের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য সরেজমিনে প্রকল্প পরিদর্শন করেন। কোন কোন ব্যাংক পরিচালক রীতিমতো ব্যাংকারদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ান। কোন কোন পরিচালক কর্তৃক ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কাজে হস্তক্ষেপ এবং আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ব্যাংকের সুশাসন ক্ষুন্ন হচ্ছে। কারণ তারা নানাভাবে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিলেও কৃতকর্মের দায়ভার তাদের বহন করতে হয় না। দায়হীন কর্তব্য বা ক্ষমতা দুর্নীতিকে উস্কে দেয়। একজন পরিচালক যদি সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেন,সুনির্দিষ্ট সীমার বাইরে গিয়ে তারা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করেন তাহলে ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে রাজনৈতিক বিবেচনায় পরিচালক নিয়োগদানের ক্ষেত্রে কঠোরতা অনুসরণ করা হচ্ছে। তার প্রভাব ইতিমধ্যেই ব্যাংকিং সেক্টরের উপর পড়তে শুরু করে।ে ব্যাংকিং ব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে,যদি বিগত সরকারের আমলে সৃষ্ট ক্ষত এখনো শুকায় নি। গত জুলাই মাসের তুলনায় আগষ্ট মাসে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ কমেছে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগষ্ট মাসে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এক মাস আগে জুলাই মাসে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। বিগত সরকার আমলে রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী নানা ভাবে ঋণের নামে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ হাতিয়ে নেবার ফলে সাধারণ মানুষের মনে ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়।

দেশের পত্র-পত্রিকায় ব্যাংকিং ব্যবস্থান নানা দুর্নীতি-অনিয়মের খবর প্রকাশিত হলে মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। অনেকেই ব্যাংকে সঞ্চিত তাদের অর্থ উত্তোলন করে নিজেদের জিম্মায় রাখতে শুরু করে। ফলে পুরো ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার মতো অবস্থায় চলে যায়। এখন ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ আবারো তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে শুরু করেছে। ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যার ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হচ্ছে নির্ভেজাল বিশ্বাস। কোন কারণে বিশ্বান নষ্ট হলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান প্রশাসন ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছেন। তারই ফলশ্রুতিতে উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকগণ আবারো ব্যাংকমুখো হতে শুরু করেছে। অবশ্য মানুষের হাতে থাকা টাকা ব্যাংকে ফিরে আসার একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে স্থবিরতা বা বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হলেও মানুষ তাদের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকে রাখতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন।

বর্তমানে দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব চলছে। আগষ্ট মাসে ব্যক্তি খাতে ব্যাংকের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এটা সাম্প্রকিত সময়ের মধ্যে ব্যাংক ঋণ প্রবাহের সবচেয়ে নিম্ন প্রবৃদ্ধি। বিগত সরকারের আমলে এক মুদ্রানীতিতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। আর প্রকৃত অর্জন হয়েছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংক থেকে গৃহীত ঋণের অর্থ সঠিক ভাবে উদ্দীষ্ট প্রকল্পে ব্যবহার না করে তা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়। ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পাবার পাশাপাশি যদি ব্যাংকে নগদ অর্থের উপস্থিতি বাড়ে তাহলে সেটাই সবচেয়ে ভাল অবস্থা বা ব্যাংকিং সেক্টরের সুস্থ্যতার নির্দেশক। শুধু শুধু ব্যাংকে নগদ অর্থ জমা পড়া সব সময় শুভ লক্ষণ নাও হতে পারে। এটা বিনিয়োগ বন্ধ্যাত্বের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।