রাজনীতিতে ঐকমত্য ব্যতীত স্বস্তির পরিবেশ ফিরে আসতে পারে না। বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলসমূহকে নিজ নিজ অবস্থানের ছাড় দিতে হয়। যারা সরকারে থাকেন তাদেরকেও সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। কোন সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে নিজেরাই যেন বিতর্কিত না হয়ে পড়েন সে বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ব্যাপারে আরও বেশি সজাগ থাকা উচিত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মুক্ত বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। তাই তাদেরকে সকল রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোন একটি দলের মতকে গ্রহণ করলে তা পক্ষপাতদুষ্ট হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন ছিলো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ। সরকার গত ১১ মাসে তাদের কর্মকাণ্ডে বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে পারেননি। রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকা খুবই স্বাভাবিক। সরকার কোন একটি মতকে প্রাধান্য দিলে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে পরিস্থিতি বিরাজমান তা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত ব্যতীত নিরসন করা সম্ভব নয়। অভ্যুত্থানের সাথে সম্পৃক্ত প্রধান শক্তিগুলো বারবার বিচার ও সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে। তারা এটাও বলেছে শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য দেশের ছাত্র-জনতা রক্ত দেয়নি। স্বৈরাচারী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই ছাত্রজনতা রক্ত দিয়েছে। দেশের আপামর জনগণ ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে চায়। জনগণের সে প্রত্যাশা পূরণ করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থবহ কোন ভূমিকা পালন করতে পারেনি। প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে অতীতে যে কয়টি ভাষণে নির্বাচনের টাইমলাইন দিয়েছিলেন তাতে জনগণের মধ্যে খুব বেশি বিরোধ দেখা দেয়নি। যারা দ্রুত ক্ষমতায় যেতে চান তাদের মধ্যেই অস্থিরতা দেখা গিয়েছে।

সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের কবল থেকে দেশ ও জাতি মুক্তি লাভের পর জনগণের প্রত্যাশ্যা ছিলো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার মূলোৎপাটন করে দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে দেশে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র কাঠামোর প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সে উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করেছিলো। সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের বৈঠক সম্পন্ন করে দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ ঘোষণা করা হবে।

মে মাসের ১৩ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত রাজনীতিতে হঠাৎ এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আপাতত সে সংকটটির অবসান ঘটে। জাতীয়তাবাদী দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নানান ধরনের আক্রমণাত্মক ভাষায় বক্তব্য রাখতে থাকে। তাদের বক্তব্য জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে মর্মে ঘোষণা প্রদান করেন। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ৬ জুন সন্ধ্যায় ঈদুল আযহার পূর্বে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত বক্তব্যে এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার পর বিএনপি তা মেনে নিতে অস্বীকার করে গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য পেশ করে। বিএনপির এ অবস্থান দেশের সাধারণ মানুষ মোটেই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। জনগণ গণহত্যার বিচার ও সংস্কার সম্পন্ন করে মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান ভোটারদের মধ্যে সাড়া জাগাতে পারেনি।

ঈদের পরপরই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরে যান। মিডিয়ায় আলোচনা হতে থাকে সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে। অবশেষে ১৩ জুন শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার সাথে কাক্সিক্ষত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা হয়। প্রায় ৯০ মিনিটের এ বৈঠক শেষে জনাব তারেক জিয়া হাস্যোজ্জ্বল মুখে বৈঠক থেকে বের হয়ে আসেন। বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়,

‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও মনে করেন, ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সে সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এ অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।’

লন্ডনে বৈঠকের বিষয় কোন রাজনৈতিক দলই আপত্তি উঠায়নি। কোন কোন রাজনৈতিক দল বৈঠককে ইতিবাচক হিসেবে মন্তব্য করেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে লন্ডনের বৈঠকটিকে খুবই স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করা হয়। যেকোন রাজনৈতিক দলের সাথে সরকার প্রধানের আলোচনা হবে, মতবিনিময় হবে এবং রাজনৈতিক দলের ভিন্নমতসমূহ নিরসনে সরকার কার্যকর ভূমিকা পালন করবেন এটাই স্বাভাবিক। এ ধারাটি বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়েছে বললেই চলে। প্রধান উপদেষ্টা সকল রাজনৈতিক দলের সাথে বাংলাদেশে আলোচনা করেছেন। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আলোচনার মাধ্যমে দূরত্বের অবসান ঘটে স্বস্তিদায়ক পরিবেশের অবতারণা করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা। কোন রাজনৈতিক দলই বৈঠকের বিরোধিতা করেনি।

বৈঠক শেষে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নিয়েই মূলত কথা। দেশের সরকার প্রধান শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ করে জাতির সাথে সম্পৃক্ত ইস্যুতে বিদেশে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে কোন ঘোষণা দিতে পারেন না। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ঘটনা। প্রধান উপদেষ্টা সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করার পরই ৬ জুন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। তিনি যদি তার অবস্থান পরিবর্তন করতে চান তাহলে আবারও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা করে তার অভিমত ব্যক্ত করতে পারেন। এটাই ছিলো স্বাভাবিক। কিন্তু তা না করে তিনি একটি দলের সাথে আলাপ করার পর সে দলকে নিয়ে যৌথভাবে প্রেস ব্রিফিং করা নিয়েই প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। তিনি নৈতিকভাবে এটা করতে পারেন কিনা? তার জবাব তাকেই দিতে হবে। একটি দলের প্রতি ঝুঁকে পড়ার কারণে আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রশ্ন উঠার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী লন্ডনের বৈঠক সম্পর্কে বলেছে, ‘একটি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে তিনি একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা মনে করি দেশে ফিরে এসে প্রধান উপদেষ্টার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে এব্যাপারে তাঁর অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বিগত ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশি মিশনের সাথে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ২০২৬ সালের রোজার পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে মর্মে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনে করে, সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সাথে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সাথে বৈঠকের পর যৌথ প্রেস ব্রিফিং করায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু কোনো একটি দলের সাথে আলাপ করে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। আমরা আশা করি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবেন।

সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনকল্পে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের অভিমতটি প্রায় সকল মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলা হয়েছে, ‘এ বৈঠক নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তাতেই বলা আছে যে, জামায়াতের আমীর ১৬ এপ্রিল একটি বিদেশী মিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ২০২৬ সালে রোযার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে বলে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিলেন। ফলে লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে যে ঘোষণা তা জামায়াতের আমীরের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এটা কোন দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ নয়।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর সর্বদাই দেশ ও জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে মতামত ব্যক্ত করে আসছেন। জামায়াতের আমীর নিজের মতকে কখনো প্রতিষ্ঠিত করার জেদ ধরেননি। জামায়াতের বক্তব্য দলীয় স্বার্থকে সামনে রেখে নয়, জাতির প্রয়োজনকে সামনে রেখে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে জামায়াতের অসন্তুষ্টি বা প্রতিক্রিয়া নয়। জামায়াতের বক্তব্য হচ্ছে যেখানে বাংলাদেশের জনগণের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় জড়িত সেখানে শুধুমাত্র একটি দলের সাথে আলাপ করে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা সমীচীন নয়। তদুপরি সরকার প্রধানের একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যৌথ ব্রিফিং-এর বিষয়ে জামায়াত আপত্তি উত্থাপন করেছে। কারণ একটি রাজনৈতিক দল সারাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ করে অতঃপর প্রধান উপদেষ্টা তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে সেটাই হতো যথার্থ। এ ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। এখানেই আপত্তি জানিয়েছে জামায়াত।

জামায়াত অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন দেশে একটি উৎকৃষ্ট নির্বচান উপহার দিবেন। উৎকৃষ্ট নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। সরকার প্রধান নিজেই যদি কোন দলকে সন্তুষ্ট করে নির্বাচনের আয়োজন করতে চান সেটা নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ বলে বিবেচিত হতে পারে না। অতীতে এ ধরনের নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ভূমিকা রাখতে পারলে বাংলাদেশে নতুন করে গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল গণমাধ্যমে তাদের অভিমত তুলে ধরেছেন। তাদের লেখনীতে দেশের চলমান পরিস্থিতির একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীদের উপর হামলা, দলীয় কোন্দল, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে নির্বাচনে ভোটারগণ স্বস্তির সাথে ভোট দিতে পারবেন কিনা সে বিষয় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন উৎকৃষ্ট নির্বাচন তো দূরের কথা আদৌ নির্বাচনের কোন পরিবেশ তৈরি হবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।

গণহত্যার বিচার ও সংস্কার বিষয়েও এক ধরনের উদ্বেগ রয়েছে। বিচার সম্পন্ন না হলে পরাজিত শক্তি আবারও দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। ব্যর্থ হতে পারে রক্তের বিনিময় অর্জিত বিজয়। তাই বিচার ও সংস্কার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট মুক্ত পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার পরিবেশ ফিরে পেতে চায়। জনগণের মধ্যে তাই প্রশ্ন- শঙ্কা ও সংকটের অবসান ঘটিয়ে রাজনীতিতে স্বস্তির পরিবেশ ফিরে আসবে কি?

লেখক : কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগীয় সেক্রেটারি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।