স্বাধীনতার পর নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য স্বাধীনতা আন্দোলন করেছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন তাৎক্ষণিক ঘটনার ফলশ্রুতি নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে মূলত দু’টি চেতনা কাজ করেছিল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে গণতান্ত্রিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার দ্বারা দেশ পরিচালনা করা। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে সমতা ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ গঠন করা। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়ে বাংলাদেশে মানুষ অনেকটা বাধ্য হয়েই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসক চক্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে বাধ্য হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ এ অঞ্চলের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। তাই তারা এক সময় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে স্বাধীন করে। নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন আওয়ামী লীগ ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’ শিরোনামে একটি পোস্টার প্রকাশ করেছিল। সে পোস্টার ভোটারদের মনে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। যে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের দু’অংশের মধ্যে বিদ্যমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের অঙ্গীকার নিয়ে আন্দোলন করে, তারাই স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে ব্যাপক লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। লাইসেন্স-পারমিটবাজি করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। স্বাধীনতা অর্জনের পর অর্থাৎ পাকিস্তান আমলের শেষের দিকে বাংলাদেশের মানুষের আয় বৈষম্য ছিল অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে। এখন তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগের প্রথম আমলের ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি চালু হয়। ফলে বিত্তবান ও বিত্তহীনের মধ্যে বাড়তে থাকে বৈষম্য।
আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে তাদের দ্বারা দুর্নীতিহীন দেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ২০০১ সালে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) তাদের এক প্রতিবেদনে দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশকে শীর্ষস্থানে বসিয়েছিল। এটা নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের তীব্র সমালোচনা করতো। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি, টিআই ২০০১ সালে দুর্নীতির যে ধারণাসূচক প্রকাশ করেছিল তার ভিত্তি বছর ছিল ২০০০ সাল, যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। আর দুর্নীতি কখনোই একদিনে বা হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয় না। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়। ফলে ২০০০ সালে বাংলাদেশ দুর্নীতির ধারণা সূচকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আবারো ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি শুরু করে। দুর্নীতির কারণে মানুষে মানুষে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। এমনকি দেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। পতিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একজন পিয়ন ৪শ’ কোটি টাকার মালিক বলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই উল্লেখ করেছিলেন। দুর্নীতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা ভাবলেও অবাক হতে হয়। শ্বেতপত্র কমিটি অর্থ পাচারের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ অর্জনের পূর্ণাঙ্গ চিত্র নয়। অভ্যন্তরীণভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে না পেরে তারা বিদেশ থেকে ব্যাপক মাত্রায় ঋণ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগের নীতি ছিল, ‘অতি উন্নয়ন অতি দুর্নীতি।’ সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করার সুযোগ পায় না, তাই তারা ক্রমশ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়-প্রশয়প্রাপ্ত মানুষগুলো ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির মাধ্যমে বিত্তের পাহাড় গড়ে তুলেছে।
দুর্নীতি আর দারিদ্র্য পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। বর্তমানে দেশের এক অঞ্চলের সঙ্গে অপর অঞ্চল এবং এক শ্রেণির মানুষের সঙ্গে অপর শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। কিছু মানুষ মনে করেন, ‘money is the second god.’ তারা অর্থ উপার্জনকে মুখ্য মনে করে। সে অর্থ কিভাবে উপার্জিত হলো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। অনৈতিক পথে অর্থ উপার্জনের এই ব্যাপক খায়েশ সমাজে ধন বৈষম্য বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে শ্রেণি বৈষম্য দিন দিন প্রকট হচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে দারিদ্র্য। এক সময় আমাদের দেশের দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে প্রচণ্ড ঘৃণা করা হতো। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকলে তার সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্ক বা আত্মীয়তা করতে সম্মত হতো না। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। যার যত অর্থ সমাজে তার তত সম্মান। অসৎভাবে উপার্জিত অর্থ যেহেতু দেশের অভ্যন্তরে প্রশ্নাতীতভাবে ব্যবহার করা যায় না তাই অনেকেই তাদের উপার্জিত অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গঠিত শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়।
অবশ্য অর্থ পাচারের এ পরিসংখ্যানকে চূড়ান্ত বিবেচনা করার কোন অবকাশ নেই। কারণ যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন অথবা বিদেশে পাচার করেন তারা তাদের অর্থ আয়ের উৎস এবং পরিমাণ কারো নিকট প্রকাশ করেন না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিশ্বাস ও আস্থার প্রতীক। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে কার্যত অর্থ লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত ‘ ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনা, শিগগির কী করতে হবে’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা এবং করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছে। সংস্থাটি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, গত ১৫ বছরে (২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল) দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে বড় ধরনের ২৪টি অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্নীতির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অবশ্য এটা দৃশ্যমান খেলাপি ঋণ। ঋণ হিসাব অবলোপন, ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ এবং মামলাধীন প্রকল্পের নিকট পাওনা খেলাপি ঋণ যোগ করা হলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করে যেতে পারে। খেলাপি ঋণের বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষেত্র বিশেষে অনিয়মকে প্রশ্রয় দেবার কারণে এসব দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে।
যাদের ক্ষমতা ও শক্তি আছে তারা নানা প্রক্রিয়ায় অর্থ লুটে নিচ্ছে। আর যারা ক্ষমতাহীন তারা অসহায়ভাবে চেয়ে চেয়ে দেখছে। পাকিস্তান আমলে একটি দেশের দু’টি অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাজমান ছিল। আর এখন নিজ দেশের মানুষের মধ্যে বিত্তের বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা দিন দিন উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। উন্নয়নের সুফল সবাই ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করতে পারছে না।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। বর্তমানে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। এর মধ্যে অতি দরিদ্র মানুষের হার হচ্ছে ৯দশমিক ৩৫শতাংশ। আরো অনেকেই আছেন যারা দারিদ্র্য সীমার সামান্য উপরে অবস্থান করছেন। সামান্য অভিঘাতেই তারা দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে আসতে পারেন।
দারিদ্র্য বৃদ্ধির এ প্রবণতা যে কোন বিচারেই উদ্বেগজনক। ২০২২ সালে সার্বিকভাবে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারি মানুষের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সে সময় অতি দরিদ্র মানুষের হার ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। দারিদ্র্য সীমার উপরে বসবাস করছে কিন্তু সামান্য অভিঘাতেই দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যেতে পারে এমন পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে ১৮ শতাংশ। পিপিআরসি দেশের ৮ হাজার ৬৭টি পরিবারের ৩৩ হাজার ২০৭ জন সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এই জরিপ কার্য সম্পন্ন করে। উন্নয়নের সুফল সঠিকভাবে বণ্টনের ব্যবস্থা না থাকায় বিত্তের বৈষম্য ক্রমশ বাড়ছে। গত ৫৫ বছরে দেশের শীর্ষ ১০ বিত্তবান পরিবারের সম্পদের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর বিপরীতে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ১০ শতাংশ পরিবারের সম্পদের পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে কমছে। পাকিস্তান আমলে কোটিপতি ২২ পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলতাম। এখন দেশে কত হাজার কোটিপতি আছে তার হিসাব কেউ রাখে না। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে যেমন অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে তেমনি অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য বাড়ছে। এক সময় দেশের জিডিপি’তে গ্রামীণ অর্থনীতির অবদান ছিল ৮০ শতাংশেরও বেশি। এখন জিডিপি’তে শহরের অবদান বাড়ছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অন্য সব শহরকে অতিক্রম করে গেছে। ফলে শহরে শহরে বৈষম্য বাড়ছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম দু’টি লক্ষ্যের মধ্যে একটি ছিল সমাজে বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ এবং ন্যায় ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দীর্ঘ ৫৫ বছরেও এ ব্যাপারে তেমন কোন অগ্রগতি সাধিত হয়নি। বরং দিন দিনই অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (ডিসিসিআই)’র উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিছু জাতীয় আয়ের চেয়ে রাজধানী ঢাকা শহরের মানুষের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয়ের দ্বিগুন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় জাতীয় আয় ছিল ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এটা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৮২ মার্কিন ডলার বেশি। আর একই সময়ে রাজধানী ঢাকার মানুষের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় হচ্ছে ৫ হাজার ১৬৩ মার্কিন ডলার। দেশের শহরগুলো অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হচ্ছে। বিপরীত দিকে গ্রামীণ অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশের মোট জিডিপি’র ৪৬ শতাংশই আসছে ঢাকা থেকে। আর কর্মসংস্থানের ৪০ শতাংশই ঢাকা কেন্দ্রিক। দেশের শহুরে জনসংখ্যার ৩২ শতাংশ বাস করে ঢাকা শহরে। এটা দেশের মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ২ শতাংশের মতো। ঢাকা শিল্পঘন একটি শহর। দেশের পণ্য রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি হয় ঢাকা শহর ও তার আশেপাশের অঞ্চল অর্থাৎ বৃহত্তর ঢাকা থেকে। ঢাকায় কর্মসংস্থান ও আর্থিক সংকুলানের সুবিধা তুলনামূলক বেশি হবার কারণে ঢাকামুখি অভিবাসন বাড়ছে।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর যত জোর দেওয়া হয়েছে, সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই অবহেলা প্রদর্শন করা হয়েছে। সমাজে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং দেশের সকল অঞ্চলকে তার উপযুক্ততা অনুযায়ী উন্নয়নের সুফল প্রাপ্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে শরীরের সব রক্ত মুখে এসে জমা হলে তাকে যেমন সুস্বাস্থ্য বলা যায় না তেমনি উন্নয়নের সুফল মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষ বা অঞ্চলে গিয়ে জমা হলে তাকে সুষম ও টেকসই উন্নয়ন বলা যায় না।
লেখক : সাবেক ব্যাংকার।