ড. মুহাম্মদ আনসার মুস্তাকিম

বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের জাতীয় সমাবেশ হয়ে গেল গত ১৯ জুলাই। সাংবাদিকদের পরিসংখ্যান ও মতামত ধরলে বলা যায় প্রায় ২০ লাখের উপর উপস্থিতি ছিল সমাবেশে। ইতিহাস বলছে জামায়াতে ইসলামী বিগত ১৬ বছর পর এটিই প্রথম দেশে আয়োজিত করল এক সফল ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় সমাবেশ। কোনো দেশের রাজনৈতিক দলের আহূত কেন্দ্রীয় জাতীয় সমাবেশ প্রকৃতপক্ষে দেশের ও বহির্বিশ্বের রাজনীতিতে বহুবিধ গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এসব জাতীয় সমাবেশ শুধু তাদের জনশক্তির উপস্থিতি দেখানোর জন্য হয় না; নয় শুধু সংখ্যার আধিক্য প্রদর্শন করার জন্য। তবে বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপট এবং ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণে জাতীয় সমাবেশ দেশের রাজনীতিতে এবং বহির্বিশ্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।

এসব অন্তর্নিহিত বার্তা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এক এক দেশ ও রাজনৈতিক ব্লকের নিকট এক এক ভাবে বিশ্লেষিত হয়ে থাকে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে জামায়াত সম্ভবত সাম্প্রতিক জাতীয় সমাবেশ থেকে দেশের জনগণ ও বিশ্বের জন্য নিম্নোক্ত মৌলিক বার্তা প্রদান করার চেষ্টা করেছে। তবে এ কথা বলে রাখা আবশ্যক যে, সমাবেশের লিখিত বা অলিখিত-উদ্দেশ্য যেটাই হোক না কেন আলোচ্য আর্টিকেলটি হচ্ছে আমাদের পর্যালোচনা। তবে জামায়াত বাংলাদেশের একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের পর্যালোচনা বা আন্ডারলাইং অবজেক্টিভস সম্ভবত থাকতে পারে আরো গভীর আরো সুদূরপ্রসারী। সেক্ষেত্রে আমাদের পর্যালোচনা সঠিক নাও হতে পারে অথবা তাদের অনেক উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে আমাদের পর্যালোচনা থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এসব বার্তা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য একরকম এবং বিশ্ব তথা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য হতে পারে অন্যরকম। দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য যে মৌলিক বার্তা তা নিম্নে আলোচিত হলো।

দেশের ইসলামী আদর্শিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে এক প্লাটফর্মে আসার উদাত্ত আহবান : জামায়াত এর পূর্বেও অনেকবার এরূপ ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। মূলত জামায়াত সবসময়ই ঐক্যের কথা বলে আসছে। তবে ২৪ এর জুলাই পরিবর্তনে এ ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা যে বর্তমান সময়ের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ এবং কত সুদূরপ্রসারী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জামায়াত নিশ্চিত যে আল কুরআন বর্ণিত উম্মাহর ঐক্যের ঐতিহাসিক আহ্বান তথা এক প্লাটফর্মে আসা এবং বসার উদাত্ত আহ্বান শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক চর্চা নয়, এটি একটা গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ফরজ।

ইসলামী দলগুলোর দ্বিধা বিভক্তি বা নানা প্লাটফর্মে অবস্থানের অর্থই হচ্ছে মুসলিম উম্মার ধ্বংস। বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত। মুসলিম উম্মার ঐক্য হচ্ছে ফরজ বা অত্যাবশ্যকীয়। ইসলামী মূল্যবোধের দলগুলোর নানা প্ল্যাটফর্মে অবস্থান নেয়া, পরস্পরের প্রতি কুৎসা রটানো প্রকৃতপক্ষে কুফরীর সমান। এজন্য ঈমানদারদেরকে ব্যাক্তি, দেশ এবং জাতি হিসেবে আল কুরআনকে আঁকড়ে ধরে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত অনস্বীকার্য। এ ঐক্য কুরআন বর্ণিত একটি বিশেষ ইবাদাত। এটি বর্তমান সময়ের জন্য মুসলিম উম্মার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।

উপরন্ত বিগত ২৪-এর জুলাই বিপ্লবের পর এ ঐক্যের গুরুত্ব আরো অপরিসীম হয়ে উঠেছে। অতীতের সকল সময়ের চেয়ে জামায়াত সকল রাজনৈতিক দল ও প্লাটফর্মকে কাছে টানার জন্য সবচেয়ে এখন বেশি প্রস্তুত। জামায়াত প্রয়োজনে ঐক্যের প্ল্যাটফর্মকে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ন্যায় ও সততার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় স্পেস দিতেও প্রস্তুত। ইসলামের নামে রাজনীতি করাটাতো মুসলমানদের জন্য একটা মৌলিক ইবাদাত। শুধু ইবাদত নয় এটা ফরজ। জামায়াত রাজনীতিকে এভাবেই মূল্যায়ন করে এবং এভাবেই প্র্যাকটিস করে। সুতরাং জামায়াত যে অন্যান্য ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ন্যায় পরায়ণতা, সততা ও আন্তরিকতার পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায় তা এবাদতের অনুপ্রেরণা থেকেই তারা প্র্যাকটিস করে। এজন্য তারা ম্যাক্সিমাম সেক্রিফাইস করে ঐক্যকে প্রাধান্য দিতেই প্রস্তুত। তাদের বক্তব্য, ঐক্য সকল কিছুর ঊর্ধ্বে।

২৪ জুলাই পরবর্তী দেশের কোনো নির্বাচন মোকাবেলা করা ঐক্যবদ্ধতাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। অনৈক্য, বিভক্তি ও অন্তর্দ্বন্দ্বের অর্থ হচ্ছে মুসলিম উম্মার ধ্বংস এবং বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করা। জামায়াত সুনিশ্চিতভাবে অনুধাবন করে দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়েও ইসলামী দলগুলোর ইস্পাত কঠিন ঐক্য আরো গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ক্ষমতা গ্রহণ বা যাওয়া এবাদত হবেনা যদি ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধতাকে জামায়াত গুরুত্ব না দেয়। এক্ষেত্রে জামায়াত সমস্ত ধর্মীয় দলগুলোর ঐক্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করে। তবে ২৪ জুলাই পট পরিবর্তনে এবং দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সাম্প্রতিক কার্যকলাপের পরিবর্তনে একটা বড় রাজনৈতিক সংশয় ও সংকট পরিলক্ষিত হচ্ছে। কারণ ২৪ জুলাই-এর পরিবর্তন শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন ছিল না। ক্ষমতার পালাবদল ২৪ শে জুলাই এর অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ছিল না। এক রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে অন্য আরেকটি রাজনীতির দলকে নিয়ে আসা উদ্দেশ্য ছিল না। ২৪ জুলাই এর লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদ মুক্ত গুম-হত্যা, জেল-জুলুম এবং ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। কিন্তু বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরাজিত ফ্যাসিবাদের দোসরদের অনুপ্রবেশ দেশের জনগণকে আশঙ্কিত করে তুলছে।

জামায়াত গভীরভাবে লক্ষ্য করছে পরাজিত ফ্যাসিবাদ তাদের খোলস বদলে বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পরিকল্পিতভাবে আবার পুনর্বাসিত হচ্ছে। জামায়াত গভীরভাবে অনুধাবন করছে ফ্যাসিবাদের গোপন পুনর্বাসন দেশের রাজনৈতিক সংস্কারসহ সকল দিক ও বিভাগের মৌলিক সংস্কারকে নিশ্চিতভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। হাজার হাজার হত্যা, আয়না ঘরের বর্বর নির্যাতন, বিগত জুলাই-অগাস্টে নির্বিচারে হত্যাসহ সকল বিচার বহির্ভূত হত্যা, জেল জুলুম ও সরকারি অর্থের অবিরাম লুটপাটের একটা ন্যায় সঙ্গত বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। জামায়াত আশঙ্কা করছে একটা নব্য ফ্যাসিবাদ কর্তৃক সকল রাজনৈতিক গণহত্যার বিচার বাধা গ্রস্তের নীল নকশা। এ ব্যাপারে দেশের একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ফ্যাসিবাদ সমর্থিত কর্মসূচি জাতিকে আশঙ্কিত করে তুলছে। ২৪ এর পরিবর্তন ছিল অত্যন্ত সুদূর পরাহত, ব্যাপক ও কম্প্রিহেনসিভ। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, রাজনীতিতে পুনরায় পেশী শক্তির উত্থান রোধ এবং সকল অর্থ লুটপাট দুর্নীতিবাজদের বিচার রাজনৈতিক সংস্কারের অন্যতম মৌলিক দিক।

জামায়াত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে ইসলামী দলগুলোর এক প্লাটফর্মে আসার নিশ্চয়তা অন্যান্য রাজনৈতিক দল গুলোর জন্য একটা শক্তিশালী মেসেজ। ২৪ এর পট পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক রাজনীতির সম্প্রসারণ লালন ও শক্তিশালী করন। এ বৃক্ষটাকে শক্তিশালী করতে প্রয়োজন ইসলামী দলগুলোর সিসাঢালা প্রাচীরের মতো ঐক্য। দলগুলোর ঐক্যই কেবল পারে কমপ্রিয়েন্সিভ রাজনৈতিক সংস্কারের অগ্রাধিকারকে আর এক ধাপ এগিয়ে দিতে। শুধুমাত্র এক প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা শক্তিশালী মেসেজ দিতে পারে দেশের রাজনীতিতে । জনগণ বিগত ১৬ বছরে যে রাজনীতির স্বাদ পেয়েছে তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন ধর্মীয় দলগুলোর ঐক্যবদ্ধতাই ঐ ঘৃনাকে আরো বেগবান করতে পারে। এখন আভ্যন্তরীণ সকল বিরোধ মতপার্থক্য এবং পারস্পরিক দ্বন্দ্ব অপেক্ষা এক প্লাটফর্মে আসাই হচ্ছে জামায়াতের সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক অগ্রাধিকার। সুতরাং এ জাতীয় সমাবেশ বিশ্ব ভু-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কি মেসেজ বহন করে? বিশ্ব ভু-রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের সাথে জামায়াত কিভাবে খেলবে, কোন টার্মস অফ রেফারেন্সে জামায়াত তাদেরকে সাথে নিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতিকে সামাল দিতে ভূমিকা পালন করবে তার একটা দিক নির্দেশনা হতে পারে এ সমাবেশ।

জামায়াত এ কথা পরিষ্কারভাবে বলতে চায়, ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শ কোন শক্তি, পার্টি, দেশ কিংবা পরাশক্তির শত্রু নয় বরং কম্পিট্যাবল। জামায়াতে ইসলামীর দক্ষ, সুশিক্ষিত ও যোগ্য নেতৃবৃন্দ বিশ্বের যে কোন রাজনৈতিক ব্লক, শক্তি, দেশ ও জাতির সাথে নিবিড় ভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। বিশেষ করে ভারত আমেরিকা এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ ন্যাটো, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইউএন, হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা শক্তির সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। বস্তুত জামায়াতের দক্ষ নেতৃবৃন্দই বিশ্বের খেলোয়াড়দের সাথে অত্যন্ত সফলতার সাথে কাজ করতে সক্ষম। জামায়াত বিশ্ব সংগঠনের যে কোন মনিটরিং গ্রুপকে দেশে যেকোনো সময় ভিজিটের অনুমোদনের জন্য প্রস্তুত। দেশের কলুষিত রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করে নতুন ডাইমেনশনে পরিচিত করতে একমাত্র জামায়াত ইসলামী যোগ্যতা সম্পন্ন।

দুর্নীতির সাথে জিরো টলারেন্স নীতি একমাত্র বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামের নেতৃবৃন্দ পরীক্ষিত হবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশের সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান একমাত্র জামায়াতের হাতেই সম্ভব। দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর সাথে একনিষ্ঠ করার কঠিন কাজকে একমাত্র জামায়াতে ইসলামী পারে সক্ষমভাবে ডেলিভারি দিতে। যেকোনো আন্তর্জাতিক বৈধ ও আইনানুক প্রতিষ্ঠানকে জামায়াত সকল সময় ইনভাইট করতে প্রস্তুত।

জামায়াতের জাতীয় সমাবেশের আরেকটি অন্যতম আহ্বান হচ্ছে : সৎ, দক্ষ ও পরীক্ষিত রাজনীতিবিদদের পক্ষেই দেশের মেগা প্রজেক্টগুলোকে যথাসময়ে জন্য ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব। যথাসময়ে ডেলিভারির অর্থ হচ্ছে দেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন শক্তিশালী হওয়া। এর অর্থ হচ্ছে দেশের মুদ্রা মান শক্তিশালী হওয়া। এর অর্থ হচ্ছে দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হওয়া। এর অর্থ হচ্ছে দেশের জনগণের ক্রয় ক্ষমতার শক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। এর অর্থ হচ্ছে দেশের মুদ্রা মান বৈদেশিক মুদ্রার সাথে শক্তিশালী হওয়া। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন শুধু বাস্তবায়ন নয় এতে করে দেশের জিডিপি শক্তিশালী হওয়া, মুদ্রাশক্তিশালী হওয়া, বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরতা হ্রাস, আভ্যন্তরীণ সম্পদের সদ্ব্যবহার, যথোপযুক্ত সততা ও উন্নত প্রযুক্তির বাস্তবায়ন একমাত্র করতে পারে জামায়াতে ইসলামী। এ গুরুত্বপূর্ণ মেসেজের সমষ্টি হচ্ছে এ জাতীয় সমাবেশ।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো বৃদ্ধি পাবে যদি দেশের জনগণ জামায়াত কেন্দ্রিক ইসলামিক ঐক্যকে সমর্থন করে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আভ্যন্তরীণ মর্ডানাইজেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রান্সফর্মেশন কেবল সততার সাথে জামায়াতের ব্লকই ডেলিভারি দিতে পারে। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসহ আমেরিকা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাকে এমব্রেস করে জামায়াতই কেবল সন্ত্রাসবাদ, মানিলন্ডারিং, গুম হত্যাসহ সকল মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ রোধ সফলভাবে ডেলিভারি দিতে পারে।

দেশের রাজনীতিকে বিশ্ব রাজনীতির মানে একমাত্র জামায়াতের নেতৃত্বে ইসলামী দলগুলোই ডেলিভারি দিতে সক্ষম। এ ডেলিভারি ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ডেলিভারি কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশের দরজা খুলে দিতে পারে। এই ডেলিভারি দেশের এক নতুন রাজনৈতিক মডেলের সূচনা করতে পারে। এ ডেলিভারি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে একটা মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

সরকারি অফিসাররা যদি তাদের মাসিক নির্ধারিত বেতন দ্বারা পরিবারের সকল খরচ সম্পন্ন করে একটা অংক সাশ্রয় করতে চান তবে জামায়াত কেন্দ্রিক নতুন ইসলামী দলগুলোর ঐক্যকে সমর্থন করুন। অর্থনীতির এ কঠিন মেকানিজমকে একমাত্র ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ দল এটা ডেলিভারি দিতে পারে। একটা শক্তিশালী সিভিল প্রশাসন, নৈতিকতা সম্পন্ন পুলিশ প্রশাসন এবং দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী পুনর্গঠন শুধুমাত্র জামায়াত কেন্দ্রিক ইসলামী দলগুলোই গ্যারান্টি দিতে পারে। জামায়াতের সাম্প্রতিক জাতীয় সমাবেশের এ সবই হচ্ছে মেসেজ।

জামায়াতের বক্তব্য হচ্ছে উপরোক্ত দিকনির্দেশনাগুলো শুধু গতানুগতিক রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। তাদের মেসেজ হচ্ছে, এসবগুলো দেশের অর্থনীতিতে অংকের যতো কাজ করবে। প্রত্যেকটি বিষয় একটার সাথে পরস্পর সংযুক্ত। দেশের মুদ্রা মান শক্তিশালী হলে ইনফ্লেশন কমবে, আভ্যন্তরীণ মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে আসবে, দেশের অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে, মুদ্রা মান শক্তিশালী হবে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কম অর্থ দিয়ে অধিক ইন্টারন্যাশনাল দ্রব্যাদি আনা সম্ভব হবে। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা হবে শক্তিশালী। ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত করতে পারবে। সবকিছুই অংকের মত কাজ করবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ এ মেসেজই দিতে চেয়েছে দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে।

তাদের কথা, আসুন আপনাদের সকলের সাথে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করতে প্রস্তুত। দেশের জনগণ যেহেতু প্রস্তুত সুতরাং আমাদেরকে দেশ গড়ার জাতীয় কাজে একবার সুযোগ দেয়া হোক। আমরা গণতন্ত্রের প্রতি সত্যিকার ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, আন্তরিকতার ব্যাপারে আমরা অনন্য, সততার ব্যাপারে আমাদের ১০০% গ্যারান্টি, দেশের আইন প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ সবই ছিল জামাতের জাতীয় সমাবেশের মৌলিক মেসেজ।

লেখক : লন্ডন প্রবাসী প্রাবন্ধিক।