‘আমরা অতীত নিয়ে সমালোচনা করি; কিন্তু অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না। ফলে আমাদের দুর্ভোগ কাটছেই না।’ কথাটি মনে পড়লো খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলারের পরিপ্রেক্ষিতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগ থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের জন্য কিছু বিধিমালা জারি করেছে। গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় তার প্রেক্ষিতে ব্যবসায়-বাণিজ্য ব্যবসায়ী হয়েছে। অনেকেই ঋণের কিস্তি সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারেনি। ফলে তারা ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। মূলত এসব ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের এ উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় পড়ে নির্ধারিত সময়ে গৃহীত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি তারা মোট খেলাপি ঋণের ২ শতাংশ এককালীন নগদ ডাউন পেমেন্ট আকারে জমা দিয়ে তাদের ঋণ হিসাব ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলিকরণ করিয়ে নিতে পারবেন। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্ব স্ব ব্যাংকে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের জন্য আবেদন জানাতে হবে। ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে আবেদন পাবার পর সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে ব্যাংক সিদ্ধান্ত জানাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নতুন কিছু নয়। আগেও অন্তত একবার ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছিল। আ হ ম মোস্তাফা কামাল অর্থমন্ত্রী থাকাকালে তার মেয়াদ শেষ হবার কিছুদিন আগে ঋণ খেলাপিদের এ ধরনের অস্বাভাবিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছিল। এবার বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ খেলাপিদের অনুকূলে আরো একটু এগিয়ে গেছে। আগের বার এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। আর এবার ২ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আ হ ম মোস্তাফা কামাল ছিলেন একজন জাত ব্যবসায়ী। তিনি ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য যেসব নীতিমালা প্রণয়ন ও আইনি পরিবর্তন সাধন করেছিলেন তার সবই ছিল ঋণ খেলাপি ও বাজে লোকদের অনুকূলে। তার উদ্দেশ্য ছিল খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রেখে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ কম দেখানো। আ হ ম মোস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্বকালে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল তা নানাভাবে দেশের অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারদের দ্বারা সমালোচিত হয়েছিল। কিন্তু তারপরও তিনি তার অবস্থানে দৃঢ় ছিলেন।

তারও আগে ২০১৪ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পূর্তিকালে দেশের বিরোধি রাজনৈতিক দলগুলো ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে প্রচণ্ড আন্দোলন শুরু করে। সে আন্দোলনে ব্যবসায়ী হয়েছে এ অজুহাতে দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের একটি অংশ সরকারের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের দাবি জানালে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুকূল সাড়া দেয়। কথিত আছে, এ ধরনের একটি উদ্যোগের পেছনে কলকাঠি নাড়েন বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান। মোট ১১টি শিল্পগোষ্ঠী তাদের ঋণ হিসাব পুনর্গঠনের সুযোগ গ্রহণ করে। এদের অধিকাংশই পরবর্তীতে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হবার কারণে পুনরায় ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন একটি অনৈতিক উদ্যোগের বিরুদ্ধে অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তারা প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন, আন্দোলনে ব্যবসায়ী হয়েছে এই কারণে যদি ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব অঙ্কের ঋণ খেলাপিদের ঋণ হিসাব পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে যার নিকট ব্যাংকের পাওনা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৯৯ কোটি ্টাকা তাকে কেন একই ধরনের সুযোগ দেয়া হলো না? আইন সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত।

২০১৫ সালে ঋণ খেলাপিদের যে সুযোগ দেয়া হয়েছিল তাকে বলা হয় ‘ঋণ হিসাব পুনর্গঠন। আর এবার যেটা দেয়া হচ্ছে সেটা ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ। নামে ভিন্ন হলেও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ঋণ হিসাব পুনর্গঠন এবং ঋণ হিসাব পুনঃ তফসিলিকরণ কার্যত এই ধরনের একটি উদ্যোগ। ঋণ হিসাব পুনর্গঠন এবং ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের অর্থ হচ্ছে যে ঋণ হিসাব থেকে নির্ধারিত সময়ে নিয়মিত কিস্তি আদায় হচ্ছে এবং ঋণ হিসাবটি শ্রেণিকৃত হয়েছে তাকে সামান্য কিছু ডাউন পেমেন্টের বিনিময়ে ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বর্ধিতকরণ বা কমিয়ে আনা। কিন্তু ঋণ পরিশোধের সময়সীমা কমিয়ে আনার প্রয়োজন পড়ে না। কারণ একজন ঋণ গ্রহীতা চাইলে যে কোন সময় নির্ধারিত সিডিউলের আগেও তার ঋণের কিস্তি অথবা পাওনা পুরো ঋণের অর্থ ব্যাংকে ফেরত দিতে পারেন। ঋণ হিসাব পুনর্গঠন এবং ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ একই বিষয় শুধু নামে ভিন্ন। একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। যেমন করিম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নিকট হয়তো কোন ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকা ঋণ পাওনা আছে। ২০২৫ সালের ৩১ ডিসিম্বর তাদের ৫০ কোটি টাকা কিস্তি পরিশোধের সময় নির্ধারিত আছে। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি ঋণের নির্ধারিত কিস্তি পরিশোধ করতে না পারে তাহলে ঋণ হিসাবটি খেলাপি মানে শ্রেণিকৃত হবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণের কিস্তি হিসেবে ৩১ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে পারবেন না। এ অবস্থায় কোম্পানির পক্ষ থেকে ব্যাংকের নিকট ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় সীমা বর্ধিতকরণের আবদেন জানানো হলো। ব্যাংক সার্বিক দিক বিবেচনা করে তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় সীমা ৩০ জুন, ২০২৬ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করে দিল। ফলে কোম্পানিটি ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোন কিস্তি পরিশোধ না করতে পারলেও ঋণ হিসাবটি খেলাপি হিসেবে গণ্য হবে না।

আমাদরে দেশের আইন এবং নিয়মগুলো এমনভাবে প্রণীত যাতে ‘দুষ্ট’ মানুষ সুবিধা পায়। অর্থাৎ শিষ্টের পালন এবং দুষ্টের দমনের পরিবর্তে আমরা দুষ্টের পালন এবং শিষ্টের দমনে ব্যস্ত আছি। প্রশ্ন হলো, বিগত স্বৈরাচারি আমলে সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের অনৈতিক সুবিধা প্রদানের জন্য ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলোকে এমনভাবে পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হয়েছিল যাতে তারা সুবিধা পেতে পারে। এভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে কার্যত বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আমি যদি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন করতো চাই, আপনারা আন্দোলনের ব্যবসায়ীদের আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে সুরক্ষা দিতে চান ভালো কিন্তু যারা আন্দোলনকালেও নিয়মিত তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে গেছেন তাদের জন্য কি প্রণোদনা দিলেন? যারা নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ক্ষণকালের জন্য ঋণের কিস্তি অপরিশোধিত রাখেননি সেসব দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের জন্য কি সুবিধা দেবেন? বিগত সরকার আমলে যারা দেশের বড় বড় ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করেছেন অথবা বিদেশে পাচার করেছেন। এক মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। সে মুদ্রানীতি বাস্তবায়নকালে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ঠিক একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল ও মধবর্তী পণ্য আমদানি কমেছিল ১৪ শতাংশ করে। আর ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছিল ব্যাপক হারে। এখন প্রশ্ন হলো, শিল্পে ব্যবহার এসব আবশ্যিক উপকরণের আমদানি যদি কমে যায় তাহলে ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেয়া হলো তা কোথায় গেলে?

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপন গ্রেডে পদোন্নতির ইন্টারভিউ গ্রহণের জন্য এসেছিলেন। তিনি একজন প্রার্থীকে প্রশ্ন করেন, আচ্ছা বলুন তো দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের দুরবস্থার কারণ কী? খেলাপি ঋণের পরিমাণ কেনো কমানো যাচ্ছে না? ইন্টারভিউ প্রার্থী কোন ধরনের দ্বিধা না করেই উত্তর দেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবিবেচনাপ্রসূত নীতিমালার কারণেই ব্যাংকিং সেক্টরে দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্য একজন ইন্টারভিউয়ার এ বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করলে পদোন্নতি প্রার্থী বলেন, একজন ঋণ গ্রহীতা যদি ৫ বছরে সুদাসলসহ ১০ কোটি টাকা নিয়মিত পরিশোধ করেন তাকে কোন আর্থিক সুবিধা দেয়া হয় না। কিন্তু একজন ঋণ গ্রহীতা যদি ১০ কোটি টাকা ৫ বছর আটকে রাখেন তাহলে ব্যাংক তাকে ২ বা ৩ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে দেয়। কে এমন বোকা আছেন যে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করবেন কিন্তু এক টাকাও মওকুফ সুবিধা পাবেন না অথবা মওকুফের আশা করতে পারবেন না। তার চেয়ে বরং ১০ কোটি টাকা ৫ বছর আটকে রাখাই ভালো। তাহলে ২ বা ৩ কোটি টাকা সুদ মওকুফ পাওয়া যাবে। এখানে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, আমরা প্রায়শই বলি ব্যাংক ঋণ মওকুফ করেছে। আসলে ব্যাংক কোন অবস্থাতেই আসল ঋণ মওকুফ করে না। ব্যাংক সুদ মওকুফ করে মাত্র।

বলা হচ্ছে, আন্দোলনকালে ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের কারখানা ভালোভাবে চলছে না তাই তারা ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। বিগত সরকার আমলে যারা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে অন্য খাতে প্রবাহিত অথবা বিদেশে পাচার করেছে মূলত তারাই এখন ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। কারণ এরা বেশির ভাগই বিদেশে আত্মগোপন করে রয়েছেন। অথবা দেশেই বন্দী অবস্থায় আছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ সুবিধা মূলত তারাই ভোগ করবে। আমাদের দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ঋণ খেলাপিদের বড়ই সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। কয়েক মাস পূর্বে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা তৈরি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল কিন্তু এখন সেই উদ্যোগে ভাটা পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা নতুন কিছু নয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ব্যাংকিং সেক্টরে খেলাপি ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু আমাদের দেশের মতো এত ঢালাওভাবে এই সুবিধার অপব্যবহার করা হয় না। বাংলাদেশে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ প্রক্রিয়া প্রথম প্রকাশ্যে আসে ১৯৯১ সালে। সেই বছর ২০ মে বাংলাদেশ ব্যাংক পত্রিকার মাধ্যমে ১৭১জন বৃহৎ ঋণ খেলাপির একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল। যারা এই তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন তাদের নিকট ব্যাংকগুলোর পাওনা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব। এ তালিকা প্রকাশিত হবার পর ঋণ খেলাপিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা সরকারের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। তখন অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রদান সাপেক্ষে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বছর দশেক আগ পর্যন্তও ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের নীতিমালা এখনকার চেয়ে কঠোর ছিল। প্রথমবার ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের জন্য খেলাপি ঋণের স্থিতির বিপরীতে নগদ ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিতে হতো। দ্বিতীয় বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বার ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট প্রদান করতে হতো। আইন একটি ঋণ হিসাব কতবার পুনঃতফসিলিকরণ করা যাবে তা বলা ছিল না।

এ সুযোগে অনেকেই তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব বারবার পুনঃতফসিলিকরণ করিয়ে নিতেন। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এক পর্যায়ে বিধিনিষেধ আরোপ করে যে কোন ঋণ হিসাব তিনবারের বেশি পুনঃতফসিলিকরণ করা যাবে না। প্রতিবারের পুনঃতফসিলিকরণের সময় সীমা হবে ৩ বছর। অর্থাৎ তিন বার কোন ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ করা হলে ৯ বছর সময় পাওয়া যেতো। আর আ হ ম মোস্তফা কামালের সময় একবারে পুনঃতফসিলিকরণের সময় সীমা এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর করা হয়। আর নতুন আইনে দুই বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণ করা যাবে। ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ লাভ করে মূলত দেশের প্রভাবশালী ঋণ গ্রহীতারা। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকে আজ পর্যন্ত ঋণ খেলাপিরা বারবার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেলেও যারা নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তারা কোন বিশেষ সুবিধা পান না। যারা পরীক্ষিত সৎ এবং নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন তাদের জন্য সুদের হার কমিয়ে দেয়া যেতে পারে। অর্থাৎ যারা ঋণের কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ না করে আটকে রাখেন তাদের তুলনায় নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধকারীদের সুদের হার অন্তত ২ থেকে ৩ শতাংশ কম হওয়া উচিত। আশা করি, বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।