বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মোতাবেক দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। এছাড়া মামলার জালে আটকে থাকা ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যাংকের ১ হাজার ৮৬ জন ঋণ গ্রহীতার ২৭ হাজার ৩০২টি ঋণ হিসাবের পাওনা এ বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ প্রদর্শন করা যাচ্ছে না আইনি জটিলতার কারণে। প্রদর্শিত খেলাপি ঋণ এবং আইনি জটিলতায় আটকে থাকা ঋণ মিলিয়ে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৯৩ হাজার ৫শ’ ৭৭ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকিং সেক্টরের ছাড়কৃত মোট ঋণের ৩৯ শতাংশ। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৮৬ জন ঋণ গ্রহীতার নিকট পাওনা ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা খেলাপি হিসেবে প্রদর্শন করতে পারছে না। বর্তমানে দৃশ্যমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেখানো হচ্ছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪শ’ ২৮ কোটি টাকা।

ব্যাংকিং সেক্টরের সবচেয়ে জটিল সমস্যা হচ্ছে বকেয়া পড়ে থাকা পর্বত প্রমাণ খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারা। বিগত সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঋণ খেলাপিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও তাদের কোনো সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়নি। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বসে থাকা এক শ্রেণির আর্থিক দুর্বৃত্ত নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলো পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এক গভর্নর রাজধানীর অভিজাত এলাকায় অনুষ্ঠিত ব্যবসায়িদের সম্মেলনে উপস্থিতি হয়ে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ব্যাংকের আইন পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। এটা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। অতীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর কোন গভর্নর ব্যবসায়িদের সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে প্রচলিত আইন পরিবর্তনের নির্দেশনা প্রদান করেননি। যে ব্যক্তি চেহারা দেখলেই দুর্নীতির কথা মনে হয় এমন এক ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তিনি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানের আইনগুলো ঋণ খেলাপিদের অনুকূলে পরিবর্তন করাতে বাধ্য করেন। আ হ ম মোস্তাফা কামাল অর্থমন্ত্রী থাকাকালে যে সব আইনি পরিবর্তন সাধন করা হয় তার সবই ছিল ঋণ খেলাপি এবং দুষ্টু গ্রাহকদের অনুকূলে।

উল্লেখ্য, আ হ ম মোস্তাফা কামাল ছিলেন একজন পেশাদার ব্যবসায়ি। বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনো ব্যবসায়ী ব্যক্তি অর্থমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে পারেননি। অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তির পর তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, আজ থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়াবে না। তার এ বক্তব্য শুনে সংশ্লিষ্ট সবাই আশান্বিত হয়েছিলেন। কারণ আ হ ম মোস্তাফা কামাল ব্যবসায়ি হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা বেশ ভালোভাবেই অনুধাবন করতেন।

কিন্তু কিছুদিন পরই দেখা গেলো তিনি এমন সব আইনি পরিবর্তন সাধন করতে থাকলেন যার ফলে কিস্তি আদায় না করেও খেলাপি ঋণকে নিয়মিত ঋণ হিসেবে প্রদর্শন করা সম্ভব হতো। দেশের একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আইনি মারপ্যাচে খেলাপি ঋণ লুকিয়ে রাখার প্রবণতাকে ‘কার্পেটের নিচে ময়লা রেখে ঘর পরিস্কার দেখানোর নামান্তর বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। বিগত সরকার আমলে কিভাবে আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণকে নিয়মিত ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছিল তার কিছু দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।

ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখানো যায়। ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের অর্থ হচ্ছে কোনো ঋণ হিসাব থেকে কিস্তি আদায়ের সময় সীমা বাড়ানো বা কমানো। যেমন, একটি ঋণ হিসাব থেকে ৩০ জুন কিস্তি আদায়ের কথা। ব্যাংক ঋণের কিস্তি আদায়ের সময় সীমা হয়তো পরবর্তী ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিতকরণ করলো। তাহলে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও সে ঋণ হিসাবকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে ব্যাপকভিত্তিক ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় ১৯৯১ সালে। সে সময় বিএনপি সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ প্রাপ্তির প্রত্যাশায় সংস্থাটির দেয়া শর্ত মোতাবেক ব্যাংকিং সেক্টরের ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৯১ সালের ৩০ মে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টরের ১৭১জন বৃহৎ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করে। তালিকায় স্থানপ্রাপ্তদের নিকট ব্যাংকগুলোর দেড় কোটি টাকা থেকে তদুর্ধ্ব পরিমাণ খেলাপি ঋণ পাওনা ছিল। তালিকা প্রকাশের পর দেশের উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ি মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের ব্যবস্থা করে।

পরবর্তীতে ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের প্রবণতা অব্যাহত থাকে। একটি ঋণ হিসাব সর্বমোট ৩বার পুন:তফসিলিকরণ করা যেতো। প্রথমবার পুন:তফসিলিকরণের জন্য মোট খেলাপি ঋণের ১০ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যাংকে জমা দিতে হতো। দ্বিতীয় বার ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বার ৩০ শতাংশ নগদ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যাংকে জমা দিতে হতো। আ হ ম মোস্তাফা কামাল অর্থমন্ত্রী থাকাকালে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ১০ বছরের জন্য ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণের সুযোগ দেয়া হয়। এ সুযোগ গ্রহণ করে ৩৮ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব পুন:তফসিলিকরণ করিয়ে নেয়। এ ঋণ হিসাবগুলো এখনো খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।

খেলাপি ঋণ হিসাব অবলোপন সংক্রান্ত নীতিমালাও সহজীকরণ করা হয়েছে। আগে কোন ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরপূর্বক শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ পূর্বক ঋণ হিসাবটি অবলোপন করা যেত। সাধারণভাবে ‘ঋণ হিসাব অবলোপন’ কথাটি উচ্চারিত হলেই অনেকের মনে হতে পারে সম্ভবত ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ঋণের দাবি ত্যাগ করেছে বা ঋণ মওকুফ করে দিয়েছে। আসলে ঋণ হিসাব অবলোপন অর্থ তা নয়। ঋণ হিসাব অবলোপন বলতে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাবে পাওনা অর্থ ব্যাংক আলাদা একটি হিসাবে সংরক্ষণ করে। এ টাকা খেলাপি ঋণ হিসেবে প্রদর্শন করা হয় না। তবে ব্যাংক মনে করে অবলোপনকৃত ঋণ হিসাব থেকে কিস্তি আদায়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাই অবলোপনকৃত ঋণ হিসাব থেকে কিস্তিা আদায় হলে তা সরাসরি ব্যাংকের মুনাফা হিসেবে গণ্য হয়। বিগত সরকার আমলে কোনো ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর দুই বছর অতিক্রান্ত হলেই তাকে অবলোপনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এজন্য ৫ লাখ টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়েরের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের বিধানও বাতিল করা হয়েছে। অনেকেই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের খেলাপি ঋণ হিসাব নিয়মিতকরণ করে নিয়েছেন।

আগে কোন ঋণ হিসাবধারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধ না করতে পারলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার ৩ মাস পর থেকে ঋণ হিসাবটি শ্রেণিকৃত করা হতো। বিগত সরকার আমলে এ বিধান পরিবর্তন করা হয়। কোন ঋণ হিসাব থেকে নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি আদায় না হলে ৯ মাস সময়ে দেয়া হতো। ৯ মাস পরও যদি কিস্তি অপরিশোধিত থাকে তাহলে সেই ঋণ হিসাবকে শ্রেণিকৃত করা হতো। আগে নিয়ম ছিল কোন শিল্প গোষ্ঠীর একটি শিল্প ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লে অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কোন ব্যাংক ঋণ দিতে পারতো না। বিগত সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবার মাত্র কয়েক মাস আগে এ বিধান বাতিল করা হয়। এখন কোন শিল্প গোষ্ঠীর একটি শিল্প ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লেও অন্য কারখানাগুলোর অনুকূলে ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে।

বিগত সরকার আমলে ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) থেকে ৪শ’ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ গ্রহণ কালে বেশ কিছু শর্ত মেনে নেবার অঙ্গিকার করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যাংকিং সেক্টরে বেশ কিছু আইনি সংস্কার করা হয়। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে আগে একই পরিবার থেকে একযোগে ২জন পরিচালক নিযুক্ত থাকতে পারতেন। তারা অব্যাহতভাবে দুই টার্ম (প্রতি টার্ম তিন বছর) দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। কিন্তু বিগত সরকার আমলে এই আইন পরিবর্তন করে একই পরিবার থেকে ৪জন পরিচালক নিযুক্তির বিধান করা হয়। তারা অব্যাহতভাবে চার টার্ম দায়িত্ব পালন করতে পারতেন।

এতে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে পারিবারিক প্রাধান্য বিস্তারের পথ সুগম হয়। প্রস্তাবিত সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে একই পরিবার থেকে একযোগে সর্বোচ্চ দু’জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হচ্ছে। তারা অব্যাহতভাবে সর্বোচ্চ দু’টার্ম দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ২০২৩ সালে আইএমএফ’র পরামর্শ মোতাবেক ব্যাংক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেখানে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রণয়ন করে তা নিয়মিত বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছিল। এখন শোনা যাচ্ছে, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ বাতিল করা হচ্ছে। প্রশ্ন হলো, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের প্রতি এত দরদ কেন? ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের ‘আর্থিক খাতের ক্রিমিনাল’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা উদ্দিষ্ট কাজে ব্যবহার না করে অন্যখাতে প্রবাহিত করেছেন এবং যারা সামর্থ্য থাকা সত্বেও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন না তারাই ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি। এদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। যারা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করবেন তাদের বুঝতে হবে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা না হলে কোনভাবেই ছাড় পাওয়া যাবে না।

বিগত সরকার আমলে ব্যাংকিং সেক্টর অর্থ লোপাটের বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল। এক শ্রেণির প্রভাবশালী মানুষ নানা ভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা নির্দিষ্ট খাতে ব্যবহার না করে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। এমনকি বিদেশে পাচার করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এ অর্থের একটি বড় অংশই ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশি পাচার হয়েছে। পণ্য আমদানিকালে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গোয়েন্দা শাখা তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা বিদেশে বাংলাদেশিদের ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে।

ব্যাংক হচ্ছে মানুষের আস্থার স্থান। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টর সে অবস্থানে পৌঁছুতে পারেনি। মানুষ ব্যাংকে টাকা জমা রেখে স্বস্তির পরিবর্তে আতঙ্কে ভোগে। বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশে ৬২টি ব্যাংক ব্যবসায়রত রয়েছে। এটা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে সেগুলো ভালোভাবে চলছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু একীভূতকরণ কোন সমাধান হতে পারে না। বরং ব্যাংকগুলোকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে বলা যেতে পারে এ সময়ের মধ্যে তাদেরকে মুক্তবাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো অবস্থানে যেতে হবে। অন্যথায় বাজার থেকে চলে যেতে হবে।

রাজনৈতিক সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলে ব্যাংকিং খাত সংস্কার কতটা সম্ভব হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই ব্যাংকিং সেক্টর সংস্কারের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার্স।