পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভবনার দেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আবহমানকাল থেকেই পর্যটকরা মুগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ এবং মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, অরণ্য অন্যতম। এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা বিভিন্ন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে বিশেষায়িত। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজার। যা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।

আমাদের দেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অসুবিধা ছাড়াও, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তা নিয়ে পর্যটকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, পর্যটন শিল্পের প্রচার এবং প্রসারের জন্য সরকারি-বেসরকারি উভয়ের উদ্যোগের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন পর্যটন স্পটে পর্যটকরা ছিনতাইসহ নানা রকমের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বিশেষত নারী ও বিদেশি পর্যটকরা বেশি সমস্যায় পরেন। দিনের বেলায় ফেরিওয়ালাদের উৎপাত ছাড়াও পর্যটন স্পটে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের কারণে পর্যটকেরা নিরুৎসাহিত হন। যা আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পের জন্য নেতিবাচকই বলতে হবে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার কারণেই আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পের কাক্সিক্ষত বিকাশ ঘটছে না। যদিও নতুন করে কৌশল নির্ধারণ করে সম্ভাবনার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পর্যটনে মডেল হতে পারে। বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও বিদ্যমান পর্যটক আকর্ষণে যে বৈচিত্র তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিশ্বের নানা দেশ ও জাতির প্রাচীনকালের ইতিহাস-ঐহিত্য, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঐতিহাসিক স্থান দেখার জন্যও পর্যটকরা নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে দূর-দূরান্তে ছুটে চলে প্রতিনিয়ত। মূলত, পর্যটন শিল্প হলো একটি বহুমাত্রিক শিল্প। এ শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্যই অপার সম্ভাবনাময়। সঙ্গত কারণেই এ শিল্পের মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি অনুদান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় সাধন করার পাশাপাশি উন্নত ও বিশ্বমানের পর্যটন অবকাঠামো, সঠিক পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা প্রয়োজন পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য। এ শিল্পের উপাদান ও ক্ষেত্রগুলো দেশে ও বিদেশে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের অধিকতর বিপ্লব ঘটানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাবিশ্বেই পর্যটন শিল্প একটি অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক খাত হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আমাদের দেশও তা থেকে মোটেই আলাদা নয়। পর্যটন শিল্প পৃথিবীর একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। প্রায় ১০৯টি শিল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এ শিল্প বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের নিয়ামক। পর্যটনের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বিশ্বের জিডিপিতে পর্যটনের হিস্যা ছিল ১০.৪ শতাংশ যা ২০২৭ সালে ১১.৭ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ২০১৭ সালে পর্যটকদের ভ্রমণখাতে ব্যয় হয়েছে ১৮৯৪.২ বিলিয়ন ডলার। আর একই বছর পর্যটনে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৮২.৪ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ এ শিল্পে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ২০১৭ সালে আমাদের জিডিপি খাতে পর্যটনশিল্পের মোট অবদান ছিল ৮৫০.৭ বিলিয়ন টাকা। এ খাতে কর্মস্থান তৈরি হয়েছে মোট ২৪ লাখ ৩২ হাজার। একই বছর পর্যটন খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৮৩ বিলিয়ন টাকা। বিশ্বায়নের প্রেক্ষিতে পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সাধন করাই হলো বাংলাদেশের পর্যটনের মূল মন্ত্র।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে দেশে বিদেশি নাগরিক এসেছেন ৫ লাখ ৬৬৫ জন, ২০১৮ সালে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৩০ জন। ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ বিদেশি নাগরিক দেশে আসেন, এ সংখ্যা ছয় লাখ ২১ হাজার ১৩১। করোনার সময় ২০২০ সালে এসেছেন ১ লাখ ৮১ হাজার ৫১৮ জন, ২০২১ সালে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৬ জন, আর ২০২২ সালে দেড় লাখ বিদেশি আসেন। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার। গত বছর তথা ২০২৪ সালের হিসাব এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। এসব বিদেশের কতজন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে এবং কতজন প্রকৃত পর্যটনের উদ্দেশ্যে এসেছেন সে তথ্য দিতে পারেনি বিটিবি।

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এ বাংলাদেশ। বিশ্বের সর্ববৃহত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র শৈকত কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের অকৃত্রিম সৈন্দর্য, সিলেটের সবুজ অরণ্যসহ আরো অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর আমাদের এই বাংলাদেশ। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর একমাত্র দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সমুদ্র সৈকতের চেয়ে কক্সবাজারের সমুদ ্রসৈকত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এবং এর রয়েছে অফুরন্ত সম্ভাবনা। বর্তমানে কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে নেওয়া হচ্ছে নানা পরিকল্পনা। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড় বেঁধে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের আকর্ষণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক আকর্ষণে কক্সবাজারে তিনটি পর্যটন পার্ক তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। যা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে প্রতিবছর বাড়তি ২শ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ তিনটি ট্যুরিজম পার্ক হলো সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক।

সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। সুন্দরবন ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে সঙ্গে এ বনের জীববৈচিত্র এটিকে বিশ্বের যেকোনো পর্যটনকেন্দ্র থেকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য বর্ধন করেছে সামুদ্রিক গ্রোতধারা, খাল, শত শাখা নদী, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। সুন্দরবন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। বনভূমিটিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির, ডলফিন ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। যা এ ম্যানগ্রোভকে পর্যটকদের অতি আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

পর্যটনের অপার সম্ভাবনার নাম বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকা, যা তিনটি জেলা, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন নিয়ে গঠিত। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটনের মূল উপকরণ হলো পাহাড় ঘেরা সবুজ প্রকৃতি যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানে শীতে যেমন এক রূপ ধরা দেয় ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ঠিক তেমনি বর্ষায় অন্য এক রূপ হাজির হয়। শীতে পাহাড় কুয়াশা আর মেঘের আড়ালে যেমন ডাকা থাকে তার সঙ্গে থাকে সোনালি রোদের মিষ্টি আভা। আবার বর্ষাকালে চারদিক জেগে উঠে সবুজের সমারোহে। এ সময় প্রকৃতি ফিরে পায় নতুন যৌবন। বর্ষায় মূলত বিশেষ শ্রেণির ট্যুরিস্টদের পদচারণা সবচেয়ে বেশি থাকে এই পার্বত্য অঞ্চলে। এ সময় সেখানে ঝরনা, ঝিরি কিংবা নদীপথগুলো নতুন রূপে সেজে ওঠে যা দেখার জন্য অসংখ্য পর্যটক এইখানে ভিড় করে। এর সাথে থাকে পাহাড়ের মানুষের ভিন্নধর্মী জীবনাচরণ যা আমাদের চেয়ে অনেকটা আলাদা। যা পর্যটকদের অধিকতর আগ্রহী ও প্রাণবন্ত করে তোলে।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট অঞ্চল। এ শহরে রয়েছে উপমহাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহত চা বাগান মালনীছড়া চা বাগান। এ অঞ্চলে আসা পর্যটকদের মন জুড়ায় সৌন্দর্যের রানি খ্যাত জাফলং, নীল নদ খ্যাত স্বচ্ছ জলরাশির লালাখাল, পাথর জলের মিতালিতে বয়ে যাওয়া বিছনাকান্দির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, পাহাড় ভেদ করে নেমে আসা পাংথুমাই ঝরনা, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল, ‘মিনি কক্সবাজার’ হাকালুকি এবং কানাইঘাটের লোভাছড়ার সৌন্দর্য। মূলত সিলেট অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই পর্যটকদের জন্য অন্যতম অনুসঙ্গ।

বাংলাদেশের হাওর অঞ্চল পর্যটনের কাছে অতি আকর্ষণীয়। দেশের জেলাগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া এ সাতটি জেলার ৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর জলাভূমিতে ৪২৩টি হাওর নিয়ে হাওরাঞ্চল। হাওর অঞ্চলের সাগরতুল্য বিস্তীর্ণ জলরাশির এক অপরূপ মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকরা নৌকায় বসে বিস্তীর্ণ নীল জলরাশির মায়ায় ভেসে বেড়াতে পারে। হাওরের কোল ঘেঁষে থাকা সীমান্ত নদী, পাহাড়, পাহাড়ি ঝরনা, হাওর-বাঁওড়ের হিজল, করচ, নলখাগড়া বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নানান প্রজাতির বনজ, জলজ প্রাণী আর হাওরপারের বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার মতো খোরাক মিলবে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের। যা আমাদের পর্যটন শিল্পকে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

পানি, হাওর এবং জলাভূমি বাংলাদেশের পর্যটন উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। সরকার ও পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা যদি এ খাতের উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে, তাহলে রিভারট্যুরিজম থেকে প্রভূত পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা সম্ভব। এজন্য সরকারের সঠিক পরিকল্পনা ও তার সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে নদী ও জলাভূমি রক্ষার আন্দোলনে।

আমাদের দেশে পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল পক্ষকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। দেশীয় পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে প্রচার-প্রচারণার ওপর গুরুত্ব¡ আরোপ করাও খুবই জরুরি। পাশাপাশি এ শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির দিকে বিশেষ নজর দেয়াও আবশ্যক। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ তাদের অবকাশযাপনের ঠিকানা হিসেবে ভাবতে পারে, যদি আমরা মেধাবী ও যোগ্য মানুষদের এ শিল্পের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত করতে পারি। সময়োপযোগী ও পরিকল্পনামাফিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এসব পর্যটন-স্পট যদি পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে একটি মাইল ফলক সৃষ্টি হবে। তবে পর্যটন বলতে প্রথাগত ধারণা পরিবর্তন করে এ সম্ভবনাময় শিল্পকে বহুমুখী করা গেলে তা মানব সম্পদ উন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। আর তা করতে পারলেই প্রাকৃতি সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এ প্রিয় জন্মভমিকে বিশ্বের বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ অবকাশযাপনের ঠিকানা হিসেবে চিন্তা করবে। সমৃদ্ধ হবে আমাদের জাতীয় অর্থনীতিও।

কর্মব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনে ভ্রমণপিপাসু মানুষজন যখনই একটু সময় পেয়েছে, একটু বিনোদনের তাগিদে সে সময়টুকুকে যথার্থ এবং সুন্দরভাবে সাজিয়েছে বিনোদনের মধ্য দিয়ে। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রধান বিনোদন মাধ্যম হচ্ছে পর্যটনশিল্প। হাজারো কর্মব্যস্ততার ভিড়ে মানুষ একটু সময় পেলেই বের হয়ে পড়ে জানা-অজানা বিশাল সৌন্দর্যে ডুব দিতে। লাভ করে আত্মবিনোদন।

মানুষ স্বভাবতই বিনোদনপ্রিয়। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুসঙ্গ ও সামাজিক অনুষ্ঠানকে মানুষ পর্যটনের অনুসঙ্গ হিসেবে বেছে নেয়। ফলে ভ্রমণপিপাসু মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যা দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। প্রতি বছর ৬ লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সর্ববৃহত সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। ৮০ কিলোমিটার জুড়ে দৃষ্টিগোচর মেরিন ড্রাইভ কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পকে আরো দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। কক্সবাজার ছাড়াও দেশের বেশ কয়েকটি পর্যটনের স্থানগুলোতে মানুষজনের ছিল উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত পটুয়াখালীর সাগরকন্যাখ্যাত কুয়াকাটাতেও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে। সুন্দরবনে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন লঞ্চ ছেড়ে গিয়েছে এর বিশাল সৌন্দর্য উপভোগ করার তাগিদে।

এছাড়াও সিলেটের জাফলং, রাতারগুল ,বিছানাকান্দি, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, লাওয়াছড়া ফরেস্টের বিভিন্ন বন্য প্রাণীর পদভারে মুখরিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায়ও দেখা গিয়েছে পর্যটকদের ভিড়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দিনাজপুরের হিলি বন্দর এবং কান্তজির মন্দির। এছাড়া বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম সাজেক ভ্যালি, রাঙ্গামাটি। এছাড়া বাংলাদেশের পর্যটনের প্রত্মতাত্বিক স্থানগুলো যেমন মহাস্থানগড়, ময়নামতি কুমিল্লা, শালবনবিহার, সোমপুর বিহার পাহাড়পুর সবগুলো স্থানই দৃষ্টি কেড়েছে দেশি-বিদেশী পর্যটকদের কাছে।

মূলত, পর্যটন শিল্প শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং গোটা বিশ্বেই এক সম্ভবনাময় শিল্প। সর্বপরি এ শিল্পের আমাদের অপার সম্ভবনার বিষয়টিও অনস্বীকার্য। তাদের দেশের সকল পর্যটন স্পষ্টগুলোকে সর্বাধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। একই সাথে পর্যটন শিল্পে আনতে হবে অভিনবত্ব ও বহুমাত্রিকতা। আর এ কাজ সফল ও সার্থকভাবে সম্পাদন করতে পারলেই দেশ আন্তর্জাতিক পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হবে। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকখানিই এগিয়ে যাবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা যতদ্রুত উপলব্ধি করবেন ততই দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ।

[email protected]