॥ প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী ॥
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সার কথা হলো মানুষ কেবল আল্লাহকেই মেনে চলবে। কালিমা তাইয়্যেবাহ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জগতবাসীর সম্মুখে একজন ঈমানদার স্পষ্ট ঘোষণা দেয়, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ বা হুকুমকর্তা নেই)। এ ঘোষণা শুধু উম্মাতে মুহাম্মদ (সা.)-এর নয় বরং দুনিয়ায় আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে আগত সকল নবী-রসুল ও তাদের অনুসারীদের। কালিমা তাইয়্যেবাহর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে তাগুতকে অস্বীকার করে কেবল আল্লাহপাকের আনুগত্যের স্বীকৃতি দেয়া হয়। আল্লাহপাকের বাণী, ‘তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো’- সূরা নহল ৩৬। আল্লাহপাকের নির্দেশ, তোমরা পুরোপুরি ইসলামে দাখেল হও অথচ জাতির কী দুর্ভাগ্য, ইসলামকে মুসলিম উম্মাহ খ-িত করে ফেলেছে। ধর্ম নিরপেক্ষতার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। মানবজাতির দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য এক পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ হলো ইসলাম এবং আল্লাহপাক প্রদত্ত ইসলামে কোনো বিভাজন নেই, আল্লাহ ও তার রসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা হুবুহু মেনে চলার নামই ইসলাম (আত্মসমর্পণ করা) এবং যে মেনে চলে সেই প্রকৃত মুসলিম। ধর্ম ও রাজনীতির মাঝে যারা বিভাজন আনে তারা মূলত মুসলিম নয়, বলা যায় মুনাফিক।
এসব মুনাফিকরা ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড়ো অন্তরায় এবং মুসলিম পরিচয় দেয়া সত্ত্বেও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ^াসীরা ইসলামের বিজয় চায় না যেমন চায়নি আব্দুল্লাহ বিন উবাই। আল্লাহপাক তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা বলেছেন। তার বাণী, ‘তোমরা কি দীনের কিছু অংশ মানবে এবং কিছু অংশ অমান্য করবে, তাহলে দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখেরাতে রয়েছে ভয়াবহ আজাব’- সূরা বাকারা ৮৫। দীনকে বিভক্ত করে নেয়ার ফলে আল্লাহপাকের ঘোষণা মোতাবেক আজ মুসলিম উম্মাহর দুনিয়ার জীবনে নেমে এসেছে জিল্লতি এবং আখেরাতে রয়েছে জাহান্নামের আজাব। বিশ^কে শাসন করার জন্য আল্লাহপাক মুসলিম উম্মাহকে বাছাই করেছেন। আল্লাহ তায়ালার বাণী, ‘তোমরা শ্রেষ্ঠতম জাতি, তোমাদের সৃষ্টিই করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য, তোমরা মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিবে ও অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে’- সূরা আলে ইমরান ১১০। মানবজাতির কল্যাণ নয় আজ নিজেদেরই কল্যাণ সাধনে অক্ষম এবং আমরা আর আদেশ দানের পর্যায়ে নেই বরং হয়েছি কাফের-মুশরিকদের আদেশানুগত কাট্টা মুনাফিক।
রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব যাদের হাতে সমাজে মান-ইজ্জত-সম্মান তাদেরই। আল্লাহপাক সকল নবী-রসুলকে সমসাময়িক রাজশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন, নমরুদের বিরুদ্ধে হজরত ইব্রাহিম (আ.), ফেরাউনের বিরুদ্ধে মুসা (আ.) এবং আবু জেহেল ও আবু লাহাবদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ (সা.)-কে। সকল নবী-রসুল ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। নিজ নিজ জাতিসত্তার বিরুদ্ধে তাদের কোনো কর্মকা- ছিল না। নবী-রসুলদের সাথে সমসাময়িক শাসকগোষ্ঠীর বিরোধ হলো রাজনীতিক। তাদের পক্ষ থেকে কালিমা তাইয়্যেবাহর দাওয়াতকে ¯্রফে কোনো ধর্মীয় দাওয়াত মনে না করে তারা এটাকে তাদের কর্তৃত্ব কেড়ে নেয়ার ঘোষণা মনে করেছে। তাই কাফের-মুশরিকরা সর্বশক্তি দিয়ে নবী-রসুল ও তার অনুসারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। তাগুতের অধীনে কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালনের জন্য আল্লাহপাক নবী-রসুল পাঠাননি। পাঠিয়েছেন দুনিয়ায় প্রচলিত সকল নিয়ম-কানুনের উপর আল্লাহর দেয়া নিয়মকে বিজয়ী করার জন্য। এ দায়িত্ব সবার এবং যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবি করে তারও। আল্লাহপাকের বাণী, ‘তিনি তোমাদের জন্য দীনের সেসব নিয়ম-কানুন নির্ধারিত করেছেন যার নির্দেশ তিনি নুহকে দিয়েছিলেন এবং (হে মুহাম্মদ) যা এখন আমি তোমার কাছে ওহির মাধ্যমে পাঠিয়েছি। আর যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহিম, মুসা ও ইসাকে। তার সাথে তাগিদ করেছিলাম এই বলে যে, ‘দীন কায়েম করো এবং এ ব্যাপারে মতপার্থক্য সৃষ্টি করো না’- সূরা শুরা ১৩। দীন কায়েমের প্রশ্নে কোনো মতপার্থক্য আল্লাহপাক মেনে নেবেন না। হ্যা, দীন কায়েমের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। আর সর্বশেষ রসুল মুহাম্মদ (সা.)-কেও একই দায়িত্ব অর্থাৎ দীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যেই পাঠানো হয়েছে এবং রসুল (সা.)-এর সকল কর্ম-প্রচেষ্টা ছিল দীন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায়। কাফের-মুশরিকদের বিরুদ্ধে দীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে আল্লাহপাক দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কুরআন মজিদে তিন জায়গায় সূরা তওবা (৩৩ নং), সূরা ফাতাহ্ (২৮ নং) ও সূরা সফে (৯ নং) উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘তিনি আপন রসুলকে হেদায়াত ও সত্য-সঠিক জীবনব্যবস্থা (দীনে হক) দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে সকল জীবনব্যবস্থার ওপর একে বিজয়ী করে দিতে পারেন, মুশরিকদের কাছে তা যতই অসহনীয় হোক’- সূরা সফ ৯। নবীর (সা.) অনুপস্থিতিতে এ দায়িত্ব তার উম্মতের। ইসলাম গ্রহণের পর সাহেবায়ে কেরাম (রা.) জিজ্ঞাসা করেছেন, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.)! আমাদের কাজ কী? জবাবে বলেছেন, আমার যা কাজ তোমাদেরও তাই।
অতীতে ঈমানদারদের উপর জুলুম-নির্যাতনের কথা কুরআন মজিদে ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে। ধৈর্য ধারণের পাশাপাশি জুলুমের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করার কথাও বলা হয়েছে এবং মুমিনের অনেক গুণের সাথে প্রতিশোধ গ্রহণের কথাও রয়েছে। আল্লাহর বাণী, ‘আর তাদের উপর অন্যায় অত্যাচার করা হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। মন্দের বিনিময় তো অনুরূপ মন্দ। তবে যে ক্ষমা করে দেয় এবং সংশোধন করে নেয়, তার পুরস্কার আল্লাহর জিম্মায়। তিনি জালেমদের মোটেই পছন্দ করেন না’- আশ শূরা ৩৯-৪০। এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ। কেউ আঘাত করলে তার জবাব দেয়ার কথা বলা হয়েছে কিন্তু বাড়াবাড়ি নয়। প্রশংসা করা হয়েছে ক্ষমা ও নিজেদের মধ্যে সংশোধন করে নেয়াকে। প্রতিপক্ষকে ক্ষমা করা হলে মজলুমকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করার কথা বলা হয়েছে।
আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে পুরস্কার অর্থ রাজকীয় বিষয়। ফলে মুমিন প্রতিশোধপরায়ণ হয় না। প্রতিশোধ বলতে ঢাকায় একজনকে হত্যা করার বিনিময়ে সারা দেশে প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘর ভাঙা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং প্রতিপক্ষের যাকে পাওয়া যায় তার প্রতি জুলুম ইসলাম সমর্থন করে না। এমনকি পুত্রের অপরাধে পিতাকেও শাস্তি দেয়া যায় না। অবশ্য আমাদের এক নেত্রী বলেছিলেন, একটা মারলে দশটা মারবে। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো দুনিয়ায় হিংসা-বিদ্বেষ না ছড়িয়ে পরস্পরকে ক্ষমা ও সহাবস্থান নিশ্চিত করা। আল্লাহপাকের বাণী, ‘ভালো ও মন্দ কখনো এক নয়। তোমরা মন্দকে দূর করো সে ভালো দ্বারা যা অতি উত্তম। তা হলে দেখবে তোমাদের জানের দুশমনরা প্রাণের বন্ধু হয়ে গেছে’- সূরা হামিম আস সাজদা ৩৪।
মক্কায় দীর্ঘ তেরোটা বছর রসুলুল্লাহ (সা.) তার প্রতি ঈমান আনয়নকারীদের চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে কুরআনের শিক্ষা তুলে ধরেছেন। মক্কাজীবনে ছোট্ট ছোট্ট সূরায় বারবার আখেরাতের কথা বলা হয়েছে। আখেরাতে বিশ^াসই মানুষকে অন্যায় ও জুলুম থেকে ফিরিয়ে রাখে। জান্নাত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ঈমানের সাথে বারবার নেক আমলের কথা বলা হয়েছে। সূরা আসরে ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহপাক চারটি গুণের কথা বলেছেন। ঈমান, নেক আমল, একে অপরকে হকের দাওয়াত দান ও ধৈর্য ধারণের উৎসাহ দানের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে নেক আমলের কোনো ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়নি। বরং মানবপ্রকৃতি যে কাজটিকে ভালো মনে করে এবং যে কাজের সার্বজনিন গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এমন সকল কল্যাণকর কাজই নেক আমল। অবশ্য আল্লাহ ও তার রসুল (সা.) কর্তৃক কোনো কাজ ও কথাবার্তা হারাম ঘোষিত হলে সেটি ভিন্ন কথা।
আল্লাহর পথে সংগ্রাম (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) সবচেয়ে মর্যাদাকর আমল। রসুলুল্লাহ (সা.) নামাযকে বলেছেন দীনের ভিত্তি এবং জিহাদকে বলেছেন চূড়া। মানুষ ঘরের ভিত গড়েন উপরে ছাদ দেয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে। নামায, রোযা, হজ, যাকাত দীনের খুঁটি। আমাদের আঙিনায় ঘর তৈরির উদ্দেশ্যে চারদিকে খুঁটি গাড়া হয় এবং একটি ঘর নির্মাণের জন্য এটি প্রাথমিক কাজ। এগুলো ছাড়া ঘর নির্মাণ কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু এই প্রাথমিক কাজকে যথেষ্ট মনে করে দীন কায়েম থেকে নিজেকে বিরত রাখা কোনো মুসলমানের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা কিছু আয়াত উদ্ধৃত করি। আল্লাহপাকের প্রিয়ভাজন বান্দাদের পরিচয় দিয়েছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই ভালোবাসেন যারা আল্লাহর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের মতো জামাতবদ্ধভাবে লড়াই করে’- সূরা সফ ৪। ‘হে ঈমানদার লোকেরা! আমি কী এমন একটি ব্যবসার কথা বলবো যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে রক্ষা করবে? তা হলো আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি বিশ^াস এবং জান-মাল দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করা। তোমাদের জন্য এটিই কল্যাণকর যদি তোমরা জানো’- সূরা সফ ১০-১১। আল্লাহর পথে এ জিহাদের পরিণতি হলো সকল গুনাহের ক্ষমা এবং দাখিল করানো হবে এমন জান্নাতে যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত- সূরা সফ ১২। একজন মুমিনের প্রকৃত লক্ষ্য থাকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিনিময়ে মহান আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করার পাশাপাশি জান্নাতের বাসিন্দা করবেন। জান্নাত দানের ক্ষেত্রে মুমিনের সাথে আল্লাহপাকের একটি চুক্তি রয়েছে। আল্লাহর ভাষায়, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহপাক মুমিনদের জানমাল খরিদ করে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে মারে ও মরে’- সূরা তওবা ১১১। আখেরাতে ক্ষমা ও জান্নাত লাভ হবে প্রকৃত প্রাপ্তি। সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সকলেই চায় দুনিয়ার জীবনে বিজয়। হ্যাঁ, আল্লাহপাক সেটিও দান করতে চান। আল্লাহর ভাষায়, ‘তোমাদের জন্য আরো থাকবে যা তোমরা আকাক্সক্ষা করো তা হলো আল্লাহর সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। (হে নবী) মুমিনদের সুসংবাদ দাও’- সূরা সফ ১৩।
রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে অনেকগুলো যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধে জয়-পরাজয় দুই আছে। আল্লাহর রসুল (সা.)-এর জীবনে সবচেয়ে বড়ো বিজয় ছিল বিনা যুদ্ধে মক্কা বিজয়। মক্কা বিজয়ের পর মুসলমানরা এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এই বিজয়ের ক্রেডিট হলো আল্লাহপাকের। সূরা সফে ১৩ নং আয়াত এবং সূরা নসর পুরো সূরাটি বিজয় পরবর্তী নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর করণীয় বলা হয়েছে। ‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসলো তখন তুমি দেখলে লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে। তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং ক্ষমা প্রার্থনা করো তার কাছে, নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী’- সূরা নসর। সাধারণভাবে নির্বাচনে বিজয় বা যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয়ে মানুষ তাদের নেতা-নেত্রীদের নামে দীর্ঘ সময় ধরে বিজয়োল্লাস করে। কিন্তু ইসলামে ব্যক্তিপূজা বা সৃষ্টিপূজার কোনো সুযোগ নেই। মুসলমানের মুখ থেকে কখনো জয় মুহাম্মদ বা মুহাম্মদ জিন্দাবাদ উচ্চারিত হয়নি। শুধুই নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার। কেবলই আল্লাহর প্রশংসা ‘আলহামদু লিল্লাহ’। এবারে ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের পর ছাত্রশিবির কোনো বিজয়োল্লাস না করে সেজদাবনত হয়ে কেবল আল্লাহরই প্রশংসা করেছে। কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই, ছিল শুধু আল্লাহরই প্রশংসা এবং তারই গুণগান। এ শিক্ষা মূলত প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা.) থেকেই গৃহিত।
সূরা নসর পূর্ণাঙ্গ সূরা হিসেবে সর্বশেষ অবতীর্ণ। এখানে স্পষ্ট করা হয়েছে যে মুসলমানদের বিজয় একান্তভাবে আল্লাহপাকের অনুগ্রহ। তাই বিজয় নিয়ে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। এই সূরাটি নাজিল হওয়ার পর রসুলুল্লাহ (সা.) খুব করে আল্লাহপাকের প্রশংসা এবং তওবা-এস্তেগফার করেন। তার এতো পেরেশানি দেখে সাহাবায়ে কেরাম আল্লাহর রসুল (সা.)-কে বলেন, আপনি এতো পেরেশান কেন, আল্লাহপাক তো আপনার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মক্কাবাসীর জুলুম-নির্যাতন এবং মাতৃভূমি ত্যাগ করে মদিনায় আশ্রয় গ্রহণের পর রসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিদের (রা.) বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশের পর কোনো প্রতিশোধ নেই বরং মক্কায় প্রবেশের সময় রসুল (সা.) মহান আল্লাহর প্রতি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় যেন একবারে উটের পিঠে মিশে যাচ্ছিলেন। হাতে গোনা কয়েকজন বাদে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে বলেন, যে কাবায় আশ্রয় নেবে সে নিরাপদ, যে কুরাইশ দলপতি আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নেবে সে নিরাপদ এবং যে নিজ ঘরে অবস্থান করবে সেও নিরাপদ।
আবু জেহেলের ছেলে ইকরামা (পরবর্তিতে ইসলাম গ্রহণ করে অনেক খেদমত করেছেন) এবং আমীর হামজা (রা.)-এর কলিজা ভক্ষণকারী হিন্দাও ক্ষমা পেল। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর উদারতা, ক্ষমাশীলতা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক নঈম সিদ্দিকী তার রচিত ‘মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ (সা.)’ গ্রন্থে। লেখক তার বইতে উল্লেখ করেছেন, ‘রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এ সত্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট ছিল, যে বিপ্লব প্রতিশোধ নিতে আরম্ভ করে তা আপনা থেকেই খতম হয়ে যায়। আর যে বিপ্লব ক্ষমা ও মহানুভবতা প্রয়োগ করে, তা শত্রুকেও বশীভূত করে এবং প্রতিরোধকারীদের সেবকে পরিণত করে’ (পৃষ্ঠা ৩৭)।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক।