সাইয়েদ ফিরদাউস বিন ইসহাক
আমরা চাই-আমাদের দেশ ও দেশবাসীর শান্তি ও সমৃদ্ধি। এ জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন-দেশবাসীর নৈতিক, মানবিক, আর্থিক ও শিক্ষাগত উন্নতির সুপরিবেশ। “মানবজাতির প্রধান চাহিদা হল, গ্রহণযোগ্য অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও মানবিকতা, এমনকি পরিবার ও সন্তানদের কল্যাণময় বর্তমান ও ভবিষ্যৎ”। এ লক্ষ্য হাসিলে অধিক প্রয়োজন হচ্ছে-সৎসঙ্গ ও উপযুক্ত সুপরিবেশে অবস্থান। যেখানে থাকবে-নিরাপত্তাসহ আধুনিক ও নৈতিক সুপরিবেশ, সুশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সুকর্মের জরুরি ব্যবস্থা। মানুষের সুবিকাশের জন্য আবশ্যক স্থান-কাল ও পাত্রের সুসমন্বয়। এ লক্ষ্য অর্জনেও প্রয়োজন হচ্ছে পরিবারসহ সুপরিবেশে আবাসন ও অবস্থান।
আমাদের মূল কথা হচ্ছে-উপযুক্ত সৎসঙ্গে ও সুপরিবেশে মানুষ ভাল ও উন্নত হয় আর অসৎসঙ্গে ও কুপরিবেশে মানুষ মন্দ ও অনুন্নত হয়। মানুষের পরিমিত অর্থ প্রয়োজন, তবে শুধু অর্থ হলেই প্রকৃত শান্তি ও কল্যাণ লাভ হয় না। অতিলোভ ও ভোগ-বিলাস মানুষের কাম্য হলেও তা মানুষকে দেউলিয়া বানায়। আবার মানবিক প্রয়োজন পূর্ণ না হলে মানুষের সুবিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। মধ্যমপন্থা উত্তমপন্থা। তুলণামূলক কম খরচে না হলে সুপরিবেশে আবাসন গড়ে তোলা অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না। এমনকি ভাল মনের মানুষদের যৌথ প্রচেষ্টা ছাড়া এককভাবে তা অনেকের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না। তাই মিতব্যয়ে বিজ্ঞানসম্মত ও যৌথভাবে মডেল সুপরিবেশ বা সোসাইটি গঠন করা আমাদের লক্ষ্য। যার সুফল দেখে অন্যরাও আকৃষ্ট হয়ে কম সামর্থ্য নিয়ে তা গড়ে তুলে নিজ, সমাজ, দেশ ও বিশ্বকে আরও শান্তি সম্মান ও মানবিকতা লাভের আইডিয়া উপহার দিতে সক্ষম হবে।
এ লক্ষ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে দেশবাসী ও প্রবাসী ভাইদেরকে দুটি মডেল উপহার দিতে চাই-১). ১০ শতাংশের মডেল মাদরাসা বাড়ি বা টেন ডিসিমেলস একাডেমিক হোম ২). ৪০ শতাংশের মডেল মাদরাসা-ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স অথবা ফোরটি ডিসিমেলস মডেল একাডেমিক এন্ড ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স।
আমার এ আইডিয়া দর্শন দেশ সেরা আধ্যাত্মিক পীরের ঔরসে জন্ম নিয়েও দীর্ঘ শিক্ষা-দীক্ষা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, বিদেশ ভ্রমণ ও অভিজ্ঞতা তথা মানবকল্যাণে কয়েক যুগের চিন্তা-চেতনা, অনুসন্ধান ও। আত্মিক সাধনার ফসল বা আবিষ্কার। দেখতে সাধারণ মনে হলেও নিগুঢ়ভাবে লক্ষ্য করলে বর্ণিত-অবর্ণিত সবগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন হলে মানব তথা দেশের উন্নয়নে এর সুফল হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী।
মহান আল্লাহ এ প্রচেষ্টাকে মানবিক উৎকর্ষ সাধনে দেশে ও বিশ্বে ব্যাপকভাবে কবুল করে নিন। আমীন!
১). ১০ শতাংশের মডেল মাদরাসা বাড়ি বা টেন ডিসিমেলস্ একাডেমিক হোম: জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ। সাধারণত: সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে-পাশ/প্রস্থ ৭৭.৭৮′ ও দৈর্ঘ্য ৫৬’। উত্তম যাতায়াত ব্যবস্থায় দেশের যেকোন স্থানে হতে পারে। জমির পরিমাণ ১১ শতাংশ হলে-৮০.৭৫’ দ্ধ৫৯.৩৩’। এককভাবে অথবা ২/৩ বা ৪ জনের যৌথ উদ্যোগে অংশীদারী চুক্তি ও রেজিস্ট্রি করত: এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। প্রাথমিকভাবে ৪ জনে ২ বছরে জনপ্রতি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প গড়ে তোলা সম্ভব। নীচতলা ও ৩য় তলা মাদরাসার নামে ওয়াকফ করা হলে অনুদান লাভ করা যাবে। ২য় তলার ৪ ফ্ল্যাট (প্রতিটি ২ কক্ষ বিশিষ্ট) উদ্যোক্তাদের নামে হবে। ওপেন প্লেসে কার পার্কিং করা যাবে। (২য় তলার এক বা একাধিক ফ্ল্যাটে অনলাইন মাদরাসা, ফ্রিল্যান্সিং ও লাইব্রেরীসহ রিসার্চ রুমের সুযোগ করা যাবে। এ প্রকল্প পর্যটন প্লেসে হলে ২য় তলায় খাদ্য ব্যবস্থাসহ পর্যটক ভাড়া দেয়া যাবে। মাসিকভাবেও ভাড়া দেয়া যাবে)। কয়েকটি নিম গাছ লাগিয়ে দিলে পরিবেশ ভালো থাকবে। সামর্থ্য থাকলে ফাউন্ডেশনসহ ভবনের ফ্লোর বৃদ্ধি করা যাবে এবং ৪৬দ্ধ২০’ আরেকটি কয়েক তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা যাবে। ফলে শিক্ষা ও সেবা প্রতিষ্ঠান, আবাসন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা যাবে। আমীন!
২). ৪০ শতাংশের মডেল মাদরাসা-ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স অথবা ফোরটি ডিসিমেলস মডেল একাডেমিক এন্ড ফ্ল্যাট কমপ্লেক্স: জমির পরিমাণ ৪০ শতাংশ। সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে হলে উত্তম। পাশ/প্রস্থ ১৩২’ এবং দৈর্ঘ্য-১৩২’। উত্তম যাতায়াত ব্যবস্থায় দেশের যেকোন স্থানে হতে পারে।
১ নং ভবন ৫ তলা হলে প্রায় ১০০০ বর্গফুটের ২৪টি ফ্ল্যাট-প্রতিটি ১৭/১৮ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলা সম্ভব। ২ নং ভবন ৫ তলা হলে প্রায় ৫৫০ বর্গফুটের ১৮টি ফ্ল্যাট-প্রতিটি ৯/১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে গড়ে তোলা সম্ভব। ৩ নং ভবন ৫ তলা হলে প্রায় ৫৫০ বর্গফুটের ১৬টি ফ্ল্যাট-প্রতিটি ৯/১০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে নির্মাণ করা যাবে। ইসলামী ব্যাংকিং সহযোগিতাও নেয়া যাবে। চুক্তি ও রেজিস্ট্রি সাপেক্ষে ফ্ল্যাট অনুপাতে অংশীদার নিয়ে এ মহৎ প্রকল্প গড়ে তোলা যায়। এ সব প্রকল্পে মাদরাসা কাম মসজিদ ও আবাসন ছাড়াও থাকবে স্বাস্থ্য সেবা, কর্মশিক্ষা ও সম্ভাব্য বাণিজ্যিক কার্যক্রম।
১০ শতাংশের প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা এ প্রকল্পে আরও উত্তমভাবে গড়ে তোলা যাবে। ৪০ শতাংশের প্রকল্পে ৩ ভবনে ৩টি মডেল পাশাপাশি থাকবে।
এ ছাড়াও আমাদের আইডিয়ায় রয়েছে-৩০ শতাংশের মসজিদ কমপ্লেক্স (প্রস্থ ১০৬.২৫’ দ্ধ দৈর্ঘ্য ১২৩’, রোডের দক্ষিণে বা উত্তরে): যাতে থাকবে-নর-নারীর মসজিদ-মাদরাসা (পৃথকভাবে), মার্কেট, রেস্তোরা, অফিস, ফ্ল্যাট, মুসাফিরখানা ও কমিউনিটির ব্যবস্থা।
আমাদের আইডিয়ায় আরও রয়েছে-২০ শতাংশের (প্রস্থ ৭৭.৭৫’ দ্ধ দৈর্ঘ্য ১১২’ ) এবং ২৫ শতাংশের (প্রস্থ ৬০’ দ্ধ দৈর্ঘ্য ১৮১.৫ ) বা ৫০ শতাংশের (প্রস্থ ১২০’ দ্ধ দৈর্ঘ্য ১৮১.৫ ) অথবা ৫৫ শতাংশের (প্রস্থ ১৩২’ দ্ধ দৈর্ঘ্য ১৮১.৫’ ) স্থায়ী কবরস্থান প্রকল্প। যাতে থাকবে-অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ী, চিকিৎসা কেন্দ্র, কবর, বয়স্ক নিবাস, স্টোর, ফ্ল্যাট এবং মসজিদ কাম মাদরাসা। অনুরূপ পরিমাণ জমিতে বাগানবাড়িও গড়ে তোলা যায়। কেউ বেশি চাইলে ও সক্ষম হলে ইচ্ছামত ও সুপরিবেশসম্মত বাগানবাড়ি, কৃষি/ খামার বাড়ি, পুকুর/মৎস বাড়ি, ফ্যাক্টরী বাড়ি, বাংলো বাড়ি, ট্যুরিস্ট বাড়ি, রিসোর্ট এবং মার্কেট-ফ্ল্যাট-ইত্যাদি গড়ে তুলতে পারেন।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে-ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যানে ও ক্লিয়ারেন্সে স্বল্প জায়গায় ও মিতব্যয়ে আধুনিক ও নৈতিক সুযোগ-সুবিধায় মজবুত নির্মাণে আবাসন, নৈতিক ও কর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আয়-রোজগার ও সমাধি তথা সুপরিবেশে উত্তম জীবন-মরণের বাস্তব সুপথ প্রদর্শন ও ব্যবস্থা গ্রহণ। শিক্ষা কারিকুলাম ও অন্যান্য আলাদাভাবে বর্ণিত।
কেউ কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসলে তার বা তাদের সাথে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে-ইনশাআল্লাহ। [যেকোনো ভুল সংশোধন যোগ্য]
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ।