ভারত নিজেদেরকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করলেও দেশটিতে কয়েক বছর ধরেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত পর্যায়ের আগ্রাসন চলমান রয়েছে। বিজেপি সরকার পরপর তিন মেয়াদে টানা ১১ বছর দেশ পরিচালনা করছে। এ সুযোগে মুসলিমদেরকে মূলধারা থেকে হটিয়ে অনেকটাই প্রান্তিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মূলত ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চলমান আগ্রাসন বা বৈষম্যপূর্ণ আচরণ একটি বহুস্তর বিশিষ্ট সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্টতা, মিডিয়ার প্রোপাগান্ডা এবং সরকারের নিপীড়নমূলক নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে মুসলিমদের আলাদা করে দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি। পুরো ভারতজুড়েই মুসলিমদেরকে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দুত্ববাদের চরম আধিপত্য দেখা যাচ্ছে উত্তর প্রদেশ, আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়।

উত্তর প্রদেশে এখন শাসন চলছে বিজেপি নেতা এবং নরেন্দ্র মোদির পরে প্রধানমন্ত্রী পদে বিজেপির অন্যতম দাবিদার ব্যক্তিত্ব যোগী আদিত্যনাথের। এই কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতার শাসনের অধীনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ভাঙচুর, গ্রেফতার এবং রাজনৈতিক বর্জনের ঘটনা ক্রমেই বেড়েছে। এখানে উল্লেখ্য, বিশ্বখ্যাত দেওবন্দ মাদরাসা এ উত্তর প্রদেশেরই দেওবন্দ শহরে অবস্থিত একটি প্রখ্যাত ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মাদরাসার মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী শিক্ষা প্রদান করা। উত্তর প্রদেশে দেওবন্দ মাদরাসা ছাড়াও অসংখ্য মাদরাসা রয়েছে, যেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন ধর্মীয় বিষয়ে পাঠদান করা হয়। মাদরাসাগুলো মুসলিম যুবকদের ইসলামি শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নেও সহায়তা করে। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর প্রদেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মুসলিমবিরোধী মনোভাবের কারণে এই মাদরাসাগুলো প্রকটভাবে সরকারী নজরদারি এবং প্রশাসনিক চাপের মুখে পড়ছে। এর পাশাপাশি সেখানে উত্তর প্রদেশের আরো কিছু নির্মম বাস্তবতাও রয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে লাভ জিহাদ আইনের কথা বলা যায়। মুসলিম পুরুষদের বিরুদ্ধে হিন্দু মেয়েদের বিয়ে করার অভিযোগ এনে তাদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঘটনা এখন অহরহই ঘটছে। মুসলিম তরুণদেরকে সন্ত্রাসবাদ কিংবা লাভ জিহাদের অভিযোগে গ্রেফতার করা এবং পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। এর সাথে আছে বুলডোজার নীতি। মুসলিম বিক্ষোভকারীদের বাড়িঘর আদালতের আদেশ ছাড়াই বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ২০২২ সালে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিজেপি নেতাদের কটূক্তির প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বুলডোজার প্রয়োগ করা হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালেও সিটিজেন এমেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট বা সিএএ ও এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের সময় মুসলিম বিক্ষোভকারীদের দাঙ্গাবাজ আখ্যা দিয়ে বহু মুসলিম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর সরকারিভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে উত্তর প্রদেশের প্রাচীন মসজিদ এবং মাদরাসাগুলোকেও অবৈধ স্থাপনা আখ্যা দিয়ে এগুলো উচ্ছেদ করে ফেলা হয়েছে। উন্মুক্ত স্থানে নামাজ পড়া কিংবা লাউডস্পিকারে আজানকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বেড়েছে। উত্তর প্রদেশের অনেক স্থানেই আজান দেয়া এখন রীতিমতো অপরাধ হয়ে গেছে, সাথে জীবন হারানোর ঝুঁকি তো আছেই।

একই ধরনের দমনমূলক অবস্থা চলছে আসাম রাজ্যেও। আসামে মুসলিমদের নাগরিকত্বের অধিকার হরণ করার জন্য সরকার ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনস বা এনআরসি চালু করে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেই ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে যায়, যাদের মধ্যে প্রায় ১২-১৪ লাখ মুসলিম। বিজেপি বাদ পড়ে যাওয়া নাগরিকদেরকে অনুপ্রবেশকারী ও বাংলাদেশি হিসেবে অভিহিত করছে। ফলে, ন্যূনতম সম্পর্ক না থাকলেও ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশের নামও জড়িয়ে যাচ্ছে। আসামের অনেক মুসলিম পরিবার শত শত বছরের জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও ডাউটফুল ভোটার বা সংশয়পূর্ণ ভোটার হিসেবে চিত্রিত হয়েছে।

আসামে বিভিন্ন স্থানে ডিটেনশন ক্যাম্প চালু করা হয়েছে যেখানে হাজার হাজার মুসলিমকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, যাদের অনেকেই আদালতে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তাদের জীবন মারাত্মকভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সিটিজেন এমেন্ডমেন্ট এ্যাক্ট বা সিএএ’র মাধ্যমে মুসলিমদের বাদ দিয়ে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্সিদের নাগরিকত্বের পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে, যা ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা আদর্শের বিরোধী। এর পাশাপাশি আসামে একাধিক মাদরাসাকে জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আখ্যা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শিক্ষক-ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে যারা এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়েছে। দরিদ্র মুসলিম গ্রামবাসীদের বসতবাড়ি ও মসজিদ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে দরাং জেলায় উচ্ছেদের প্রতিবাদ করায় একজন কৃষককে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে এবং তার দেহের ওপর পুলিশ আলোকচিত্রী নাচানাচি করেছিল যা মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসী অবলোকন করেছে।

সম্প্রতি ‘মিডল ইস্ট আই’ ভারতের আসামে মুসলিম নিধনের একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে। এ তথ্যচিত্রে আসামের যে পরিস্থিতি উঠে এসেছে তা বাস্তবতার তুলনায় খুবই নগণ্য; তারপরও তথ্যচিত্রে কথিত ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মুখোশের আড়ালে সাম্প্রদায়িক ভারতের মুখচ্ছবি উঠে এসেছে।

সাম্প্রতি মুর্শিদাবাদেও একই ধরনের হিন্দুত্ববাদের উত্থানের খবর পাওয়া যাচ্ছে। মুর্শিদাবাদ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা হলেও সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য, পুলিশি হয়রানি এবং রাজনৈতিক বঞ্চনা প্রকটভাবেই বিদ্যমান। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে বহু মুসলিম যুবককে পুলিশ গ্রেফতার ও হয়রানি করা হয়েছে। জমি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ মুসলিম এলাকাগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্প কম বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের মাদরাসাগুলোতেও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল বা বিজেপিÑ উভয় দলই মুসলিমদের কেবল ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করলেও তাদের সার্বিক উন্নয়নে তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বিজেপির প্রকাশ্য নির্যাতনের মুখেও তৃণমূল এখানকার মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। বিগত বছরগুলোতে পরিকল্পিতভাবে এ জেলায় বিজেপির উত্থান ঘটানোর পর অঞ্চলটিতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে দাঙ্গাও উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

মুর্শিদাবাদে ব্যাপকমাত্রায় আর্থিক ও প্রশাসনিক বৈষম্য বিদ্যমান। মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে সব ধরনের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানে বৈষম্য প্রকটতর হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন প্রায়শই হিন্দু সংগঠনের চাপের মুখে মসজিদ বা কবরস্থানের জমি দখল বা পুনঃবিন্যাসের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফলে এ এলাকার দীর্ঘদিনের সামাজিক সংহতি ও কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মিডিয়ায় এবং রাজনৈতিক বক্তব্যেও বিজেপি নেতারা প্রায়ই মুর্শিদাবাদের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোকে ‘পাকিস্তানি গ্রাম’ বলে অপমান করা হচ্ছে এবং স্কুল-কলেজে মুসলিম ছাত্রদেরকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে।

চলমান এ মুসলিম বিরোধী আগ্রাসনের পিছনে মূল চালিকাশক্তি হলো হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা। বিজেপি এবং সংশ্লিষ্ট হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো বিশেষ করে আরএসএস বা বজরঙ্গী দলের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো ‘মুসলমান’ পরিচয়কে ভারতের জাতীয় পরিচয়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে সংখ্যালঘুদেরকে আতঙ্কিত করার কৌশল নিয়েছে। মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যমে মুসলিমবিরোধী প্রচার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রশাসন, পুলিশ এবং বিচারব্যবস্থার মধ্যেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে। ভারতের উত্তর প্রদেশ, আসাম এবং মুর্শিদাবাদের ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি পরিকল্পিত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং রাজনৈতিকভাবে অনুমোদিত বৈষম্য চলছে। এটি শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বরং ভারতের দাবিকৃত ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে ভেঙে ফেলার একটি গভীর সংকেত।

সম্প্রতি ভারতের মুসলিম ওয়াকফ আইনও বিতর্কিতভাবে সংশোধন করা হয়েছে যা মুসলিম সমাজের মধ্যে তীব্র উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এ আইনি সংশোধনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার হয়েছে এবং মুসলিমদের ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার হুমকির মুখে পড়েছে। কেননা আইন সংশোধনের ফলে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের প্রশাসনিক ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। এর অর্থ হলো, মুসলিমদের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, এখন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তি অধিগ্রহণের পথ আরও সহজ করা হয়েছে। আগে যেসব সম্পত্তি ওয়াকফ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলে অধিগ্রহণ কঠিন ছিল, এখন সংশোধনের মাধ্যমে অনেক বাধা তুলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে মসজিদ, কবরস্থান, মাদরাসা, দরগা বা অন্য ধর্মীয় স্থাপনা সরকারের দখলে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে।

ওয়াকফ বিরোধ নিয়ে যে ওয়াকফ ট্রাইবুনাল কাজ করত, সংশোধিত আইনে তার ক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে। আদালতের বাইরে মুসলিমদের ন্যায়বিচার পাওয়ার যে পথ ছিল, তা সংকুচিত করা হয়েছে। ফলে ওয়াকফ সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিলম্ভ এবং বিচার পাওয়া কঠিন হবে। ওয়াকফ বোর্ডের সদস্য নির্বাচনে আগে মুসলিম ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সমাজকর্মী এবং মসজিদের প্রতিনিধিদের গুরুত্ব থাকলেও, সংশোধনের মাধ্যমে বোর্ডে সরকারি আমলাদের প্রাধান্য বাড়ানো হয়েছে। এতে মুসলিম সমাজের মতামত ও প্রতিনিধিত্ব খর্ব হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছে যে ওয়াকফ সম্পত্তি অবৈধ দখল বা বিশেষ সুবিধার প্রতীক। সংশোধিত আইন এ চাপকে আরও যুক্তিসঙ্গত করে তুলছে এবং বহু জায়গায় হিন্দু মন্দির বা স্থানীয় সরকার ওয়াকফ সম্পত্তির দাবি তুলছে, যেমন কাশ্মীর জ্ঞানব্যাপী মসজিদ বা গুজরাটের অনেকগুলো মাদরাসা। ওয়াকফ আইন সংশোধনের নেতিবাচক প্রভাব সামগ্রিকভাবে মুসলিম সমাজের ওপরই পড়বে। কেননা ওয়াকফ সম্পত্তির আয় দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং কল্যাণমূলক কাজ পরিচালিত হয়। এ সংশোধনের ফলে ওয়াকফ আয় ব্যবস্থাপনায় সরকারি হস্তক্ষেপ বাড়বে, যা মুসলিম সমাজের স্বনির্ভরতা ও দারিদ্র‍্য বিমোচনের প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দেবে।

দৃশ্যমান আগ্রাসনের পাশাপাশি ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনও চলছে চরমমাত্রায়। ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং মুসলিমবিরোধী রাজনৈতিক পরিবেশে ইতিহাসকে বিকৃত করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। এ প্রবণতারই একটি অংশ হলো ইতিহাসের মহান মুসলিম শাসকদের অপমান ও তাঁদের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলা, যার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হলো মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মাজার ভাঙা এবং এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুসলিমদের ব্যাপকভাবে হয়রানি। আওরঙ্গজেবের মাজার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন, যা তিনি নিজেই নির্মাণ করেছিলেন অত্যন্ত সাদামাটাভাবে, একটি খোলা মাঠে। বহু মুসলমান ও ইতিহাস-অনুরাগী পর্যটকের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, এমন ধর্মীয় বা ঐতিহাসিক স্থানে হস্তক্ষেপ ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন।

এতকিছুর পরেও হিন্দুত্ববাদীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মোঘলদের পুরো ইতিহাসকে এখন হিন্দুত্ববাদী প্রচারে বর্ণবিদ্বেষী’ ও ‘হিন্দুনিধনকারী’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। আওরঙ্গজেব, বাবর, হুমায়ুন, শাহজাহানÑপ্রতিটি মোঘল শাসকের নামে রাস্তাঘাট, শহরের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। এভাবে মুসলমানদের ইতিহাসকে ভারত থেকে মুছে ফেলার প্রচেষ্টা চলছে। আমাদের জন্য ভারতের এ মুসলিম বিরোধী তৎপরতা ভীষণই উদ্বেগজনক কেননা ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশি দেশ। আর ধর্মীয় সত্তার দিক থেকে আমরা মুসলিম হওয়ায় ভারতের চলমান আগ্রাসনের বহুমাত্রিক প্রভাব আমাদের ওপরও যে আসবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও পরিতাপের বিষয় হলো, ভারতের এ সংকটগুলোর উত্তাপ আমাদের খুব কাছ দিয়ে বহমান থাকলেও এ সকল বিষয়ে আমাদের সার্বিক সচেতনার যথেষ্ট কমতি রয়েছে।