ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

শিশুদের মধ্যে কিডনির টিউমার বা নেফ্রোব্লাস্টোমা (Wilms tumor) একটি মারাত্মক রোগ। এ রোগ মূলত ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং মেয়েশিশুর তুলনায় ছেলেশিশুর মধ্যে সামান্য বেশি ঝুঁকি থাকে। কিডনির ভেতরে যখন অস্বাভাবিক কোষের দ্রুত বৃদ্ধি শুরু হয়, তখন তা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক টিস্যু নষ্ট করে দেয় এবং চিকিৎসা না করলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নেফ্রোব্লাস্টোমা (Wilms tumor) বিশ্বব্যাপী শিশুদের মধ্যে অন্যতম সাধারণ কিডনি টিউমার হলেও এটি মোট ক্যান্সারের তুলনায় বিরল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা (IARC) এর তথ্য অনুযায়ী, উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশেই এ রোগের প্রকোপ রয়েছে, তবে শনাক্তকরণ ও চিকিৎসার মানের কারণে ফলাফল ভিন্ন হয়।

প্রকোপের হার: বিশ্বে প্রতি দশ লক্ষ শিশুর মধ্যে গড়ে ৮-১০ জন নেফ্রোব্লাস্টোমায় আক্রান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর আনুমানিক ৫০০-৬০০ নতুন রোগী শনাক্ত হয়। ইউরোপে গড়ে প্রতি ১০ লক্ষ শিশুর মধ্যে ৮-৯ জন আক্রান্ত হয়। উন্নত দেশে রোগটি সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশি ধরা পড়ে।

বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক তথ্য: পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩-৫ বছর বয়স এ রোগের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ সময়। জন্মের পর এক বছরের মধ্যে রোগ ধরা পড়া বিরল হলেও সম্ভব। ছেলেশিশুরা সামান্য বেশি আক্রান্ত হয় মেয়েশিশুর তুলনায়, তবে পার্থক্য খুবই কম।

বেঁচে থাকার হার: উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে নেফ্রোব্লাস্টোমার চিকিৎসা সাফল্যের হার ৯০% বা তার বেশি। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও পশ্চিম ইউরোপে উন্নত সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির কারণে মৃত্যুহার অত্যন্ত কম।

উন্নয়নশীল দেশের চিত্র: আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় মৃত্যুহার বেশি।উদাহরণস্বরূপ, আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে বেঁচে থাকার হার মাত্র ২৫-৪০%, আর দক্ষিণ এশিয়ায় গড়ে ৫০-৭০%। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো দেরিতে চিকিৎসা শুরু, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধার অভাব এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা।

বিশ্বব্যাপী বার্ষিক আক্রান্তের সংখ্যা: গবেষণা অনুযায়ী, সারাবিশ্বে প্রতিবছর আনুমানিক ৮,০০০-১০,০০০ শিশু নেফ্রোব্লাস্টোমায় আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে উন্নত দেশের রোগীরা তুলনামূলক ভালোভাবে চিকিৎসা পায়, আর উন্নয়নশীল দেশে মৃত্যুর ঝুঁকি এখনো বেশি।সব মিলিয়ে, বিশ্বব্যাপী নেফ্রোব্লাস্টোমা বিরল হলেও শিশুদের ক্যান্সারের মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সচেতনতা, সময়মতো শনাক্তকরণ এবং সবার জন্য উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করাই এ রোগের মৃত্যুহার কমানোর মূল চাবিকাঠি। এ রোগের সঠিক কারণ এখনও বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারেননি। তবে গবেষণায় কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ কারণ শনাক্ত করা হয়েছে, যা এ রোগের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

১. জেনেটিক মিউটেশন : মানবদেহে কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে নির্দিষ্ট কিছু জিন। এ জিনগুলোর মধ্যে কোনো একটি বা একাধিক জিনে স্থায়ী পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটলে কিডনির কোষ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা পরবর্তীতে টিউমারে রূপ নেয়।

২. জন্মগত সমস্যা : কিছু শিশুর জন্মের সময়ই এমন কিছু শারীরিক ত্রুটি থাকে, যা নেফ্রোব্লাস্টোমার ঝুঁকি বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ : অ্যানিরিডিয়া: চোখের কালো অংশ (আইরিস) অনুপস্থিত থাকা। ইউরোজেনিটাল ত্রুটি: মূত্র ও প্রজনন অঙ্গের গঠনগত ত্রুটি। এ ধরনের জন্মগত ত্রুটির সাথে কিডনির টিউমারের একটি সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

৩. পারিবারিক ইতিহাস : পরিবারের অন্য কোনো সদস্য, বিশেষ করে ভাই-বোন যদি আগে নেফ্রোব্লাস্টোমায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তবে একই পরিবারের শিশুদের মধ্যে এ রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এটি সাধারণত বংশগত জিনগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে বলা যায়, নেফ্রোব্লাস্টোমা হঠাৎ করেই হয় না; বরং নির্দিষ্ট কিছু জিনগত বা জন্মগত কারণ এবং পারিবারিক ইতিহাস শিশুর ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোর শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নেফ্রোব্লাস্টোমা বা Wilms tumor প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক সময় কোনো স্পষ্ট উপসর্গ ছাড়াই বেড়ে ওঠে। ফলে অভিভাবকরা সহজে বুঝতে পারেন না যে শিশুর শরীরে গুরুতর কোনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু টিউমার বড় হলে বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে, যা রোগ শনাক্তের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হতে পারে। সাধারণ লক্ষণগুলো হলো-পেট ফুলে যাওয়া বা গোঁটা অনুভব হওয়া: সাধারণত পেটের এক পাশে শক্ত গোঁটা পাওয়া যায়, যা ব্যথাহীন হলেও ধীরে ধীরে বড় হতে পারে। কিডনির টিউমারের কারণে প্রস্রাবের সাথে রক্ত মিশে যেতে পারে, যা মাঝে মাঝে খালি চোখেও দেখা যায়। ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া: টিউমারের প্রভাবে শিশুর খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায় এবং ওজন দ্রুত হ্রাস পায়। কোনো সংক্রমণ ছাড়াই দীর্ঘস্থায়ী হালকা জ্বর থাকতে পারে। শিশু স্বাভাবিক খেলাধুলা বা হাঁটার সময় দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অনেক অভিভাবক স্নানের সময়, কাপড় পরানোর সময় বা খেলাধুলার সময় পেটের গোঁটা টের পান, যা সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এ লক্ষণগুলো তেমন গুরুতর মনে না হলেও, এগুলো অবহেলা করা বিপজ্জনক। তাই কোনো শিশুতে উপরোক্ত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা শিশুর জীবন রক্ষার সবচেয়ে বড় উপায়।

নেফ্রোব্লাস্টোমার নানাবিধ জটিলতা দেখা যেতে পারে-

১. শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়া : টিউমার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে এটি রক্ত ও লিম্ফের মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাধারণত ফুসফুস, লিভার ও হাড়ে ক্যান্সার কোষের বিস্তার বেশি দেখা যায়। এতে রোগের চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে পড়ে এবং সাফল্যের হার কমে যায়।

২. কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস : আক্রান্ত কিডনিতে টিউমারের চাপের কারণে ধীরে ধীরে তার স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অপর কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষত যদি টিউমার দুই কিডনিতেই তৈরি হয়। কিডনির কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে গেলে শিশুর জীবন বাঁচাতে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন হতে পারে।

৩. প্রাণহানি : উন্নত চিকিৎসা না পেলে এবং রোগ দেরিতে শনাক্ত হলে নেফ্রোব্লাস্টোমা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। টিউমার যত বেশি ছড়িয়ে পড়ে, চিকিৎসার ফলাফল তত কমে যায় এবং মৃত্যুঝুঁকি দ্রুত বেড়ে যায়।সব মিলিয়ে বলা যায়, নেফ্রোব্লাস্টোমার জটিলতা রোধে সবচেয়ে জরুরি হলো দ্রুত শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং চিকিৎসকের দক্ষ ব্যবস্থাপনা শিশুর জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এ রোগের প্রধান চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো- ১. সার্জারি (নেফ্রেকটমি): আক্রান্ত কিডনি সম্পূর্ণ বা আংশিক অপসারণ করা হয়।

২. কেমোথেরাপি: ওষুধের মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়।

৩. রেডিওথেরাপি: উচ্চ-শক্তির রশ্মি দিয়ে ক্যান্সার কোষ নষ্ট করা হয় (প্রয়োজনে)। উন্নত দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হলে চিকিৎসার সাফল্যের হার ৯০% পর্যন্ত হতে পারে।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি মূলত রোগীর সামগ্রিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসা প্রদান করে। এ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র রোগের নাম বা লক্ষণ নয়, বরং রোগীর ব্যক্তিগত গঠন, মানসিক অবস্থা, জীবনযাপন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। নেফ্রোব্লাস্টোমার মতো জটিল ও জীবনঘাতী রোগে হোমিওপ্যাথি সরাসরি টিউমার অপসারণ করতে না পারলেও রোগীর সাপোর্টিভ কেয়ার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রচলিত চিকিৎসা যেমন—সার্জারি, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির সাথে সাথে হোমিওপ্যাথি ব্যবহার করলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমে যায় এবং সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।

হোমিওপ্যাথির সম্ভাব্য উপকারিতা নেফ্রোব্লাস্টোমায় :

১. চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমানো: কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির ফলে বমি, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা ও চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। হোমিওপ্যাথি এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

২. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: সঠিকভাবে নির্বাচিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক।

৩ . দ্রুত পুনরুদ্ধার: অপারেশন বা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার পর রোগীর শারীরিক ও মানসিক শক্তি ফিরিয়ে আনতে হোমিওপ্যাথি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

৪. মানসিক স্থিতি বৃদ্ধি: ক্যান্সারের মতো রোগে শিশুর পাশাপাশি অভিভাবকরাও মানসিক চাপে ভোগেন। হোমিওপ্যাথি রোগীকে মানসিকভাবে শান্ত ও ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে।ন্যাশনাল হোমিও রিসার্চ সেন্টার, ভাটিয়ারী শাখার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া নেফ্রোব্লাস্টোমা রোগীদের ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি সাপোর্টিভ কেয়ার হিসেবে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দিয়েছে। বিশেষ করে কেমোথেরাপির সময় রোগীরা তুলনামূলক কম দুর্বল হয়েছে এবং দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে।তাই নেফ্রোব্লাস্টোমার চিকিৎসায় মূল ভরসা হলেও প্রচলিত চিকিৎসা, হোমিওপ্যাথি একটি সহায়ক ও পরিপূরক পদ্ধতি হিসেবে কাজ করতে পারে। সঠিক সময়ে এবং অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে শিশুর জীবনমান উন্নত করা সম্ভব। যেহেতু নেফ্রোব্লাস্টোমা হঠাৎ করেই দেখা দিতে পারে, তাই প্রতিরোধের মূল উপায় হলো সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপ— শিশুদের শারীরিক পরিবর্তনের প্রতি নজর রাখা।* বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। পেটে অস্বাভাবিক গোঁটা বা ফোলা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া। এ রোগে সঠিক খাবার রোগীর শক্তি ফিরিয়ে আনতে ও চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে সহায়ক হয়।

১. পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ : প্রোটিন টিস্যু মেরামত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। মাছ, মুরগি, ডিম, দুধ, দই, পনির,মসুর ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি। ২. তাজা ফল ও শাকসবজি : ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই ও কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে। আপেল, কমলা, পেঁপে, কলা,গাজর, পালং শাক, ব্রকলি। ৩. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার : চিকিৎসার সময়ে শরীর ডিহাইড্রেশন এড়াতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। স্যুপ, ডাবের পানি, লেবুর শরবত। ৪. সহজপাচ্য খাবার : চিকিৎসার সময় অনেক শিশু ক্ষুধামন্দা ও বমি ভাব অনুভব করে। তাই হালকা, নরম ও সহজপাচ্য খাবার দিন। খিচুড়ি, নরম ভাত, সবজি স্যুপ। ৫. খাবারে সতর্কতা : অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন,বাজারের প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণকৃত খাবার কম খাওয়ান,অপরিষ্কার বা অর্ধসিদ্ধ খাবার দেবেন না। ৬. অল্প অল্প করে বারবার খাওয়ানো : একবারে বেশি খাবার না দিয়ে দিনে ৫-৬ বার অল্প পরিমাণে খাওয়ান, যাতে হজমে সমস্যা না হয়।

পরিশেষে বলতে চাই, শিশুর কিডনির টিউমার বা নেফ্রোব্লাস্টোমা একটি বিরল হলেও মারাত্মক রোগ, যা সময়মতো শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে শিশুর প্রাণনাশের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এ রোগের উপসর্গ খুব স্পষ্ট নাও হতে পারে, কিন্তু সামান্য লক্ষণ যেমন পেটে গোঁটা, প্রস্রাবে রক্ত বা অস্বাভাবিক ওজন কমে গেলে অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত। এ সময় দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াই শিশুর জীবন রক্ষার প্রথম ধাপ। চিকিৎসার ক্ষেত্রে সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং প্রয়োজনে রেডিওথেরাপি এখনো মূল পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে এসব চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক সময় রোগীকে দুর্বল করে তোলে। এখানে হোমিওপ্যাথি একটি সহায়ক চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিকভাবে প্রয়োগকৃত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং অপারেশন-পরবর্তী সুস্থতার গতি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করতে পারে। তাছাড়া, রোগীর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক সমর্থন ও সঠিক বিশ্রামও চিকিৎসার সমান গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত তরল গ্রহণ, এবং সহজপাচ্য খাদ্য শিশুর শরীরকে চিকিৎসার ধকল কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, পরিবারের সদস্যদের ইতিবাচক মনোভাব ও মানসিক সহায়তা শিশুর আরোগ্যে গভীর প্রভাব ফেলে। লেখক : চিকিৎসক ও কলাম লেখক