DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

কলাম

রমযানে বাজার পরিস্থিতি

রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির অমীয় বার্তা নিয়ে আবার আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে মাহে রমযান।

Printed Edition
Default Image - DS

এইচ এম আব্দুর রহিম

রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির অমীয় বার্তা নিয়ে আবার আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে মাহে রমযান। কিন্তু মুনাফা খোর ব্যবসায়ীরা রমযানের আগেই পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। কোনো বিশেষ উপলক্ষে বাজারের নাটাই থাকে অশুভ চক্রের হাতে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি থাকে বটেই। অসাধূ ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বে ও তারা আমলে নেয় না। বিগত আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে ও দুর্নীতির কারণে অভাব আর দারিদ্র্যের কষাঘাতে জনজীবন দুঃখ ও হাহাকারে পূর্ণ হয়ে উঠছিল।

চাল, ডাল, মাছ, মাংস, তেল, তরিতরকারি, ফলমূল, লবণ, গম, আটা, রুটি, বিস্কুট, ইত্যাদি দ্রব্যের মূল্য আগের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ মানুষ বিশেষ করে খেটেখাওয়া মেহনতি মানুষের নাভিশ্বাস। অতি মুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সাধারণ ক্রেতাদের জীবন ত্রাহি ত্রাহি করছে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বলগা ছাড়া মূল্য বৃদ্ধি হত-দরিদ্র মানুষের জন্য বজ্রাঘাততুল্য। বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করছেন। সরকার কঠোর হাতে অতিলোভী অসাধু মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের দমন করতে পারছে না। এমতবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার রমযান মাসকে সামনে রেখে শুল্ক ছাড় দিয়েছে, যাতে রমযানের সবচেয়ে ব্যবহৃত পণ্যগুলোর দাম কমে। শুল্ক ছাড়ের কারণে আমদানি কারকরা পর্যাপ্ত পরিমাণ আমদানি করছেন। ফলে রমযানের পণ্য মূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। পবিত্র রমযান মাসে নৈত্য-প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যসহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি বছর রমযানকে ঘিরে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে, যা গোটা রমযান মাসের চাহিদা পুরণ করবে।

বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ ও ডালের। দাম ও অনেক সহনীয় পর্যায়ের। দেশী পেঁয়াজ কেজি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা। চিনি প্রতিকেজি প্যাকেট ১২৫ টাকায়, দেশী মসুর ডাল কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়, মোটা মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। এ ছাড়া দেশী রসুন বাজারে চলে আসায় দাম ও কমেছে। নতুন দেশী রসুন ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায়, আদা কেজি ১২০ টাকা, নতুন আলু মাত্র ২০ টাকা। এবার রমযান মাসে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্যকোন ভোগ্য পণ্যের ঘাটতি নেই। তাই এবার রোজা উপলক্ষে দাম বাড়াবার সম্ভবনা নেই বরং বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে বাজারে সয়াবিন তেলের সমস্যা প্রকট। বিগত দুই মাস ধরে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। মূলত ন্যাচারাল ক্রাইসিসের কারণে বাজারে এখন সয়াবিনের সংকট চলছে। বিশ্ব বাজারে পাম তেলের উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানি কারকরা পাম তেলের আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। এতে যে কারখানাগুলোতে (বিস্কুট কারখানা ও বেকারি পণ্য) পাম তেলের ব্যবহার করা হতো, তারা এখন সয়াবিন তেলের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানিকারকরা বাড়তি চাহিদার সয়াবিন তেল আমদানি করতে পারছে না। ভোগ্যপণের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছিল। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে রোজার বাজারে ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকে প্রায় তিন লাখ টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর তথ্য মতে, জানুয়ারি মাসের ২৯ দিনে দেখা যায়, সয়াবিন পাম তেল আমদানি হয়েছে প্রায় চার লাখ টন। আবার সয়াবিন তেল তৈরির কাঁচামাল সয়াবিন বীজ আমদানি করা হয়েছে তিন লাখ টন। এই বীজ মাড়াই করে পাওয়া যাবে অর্ধলাখ টন।

বলার অপেক্ষা রাখে না, মূল্য সন্ত্রাসী, মুনাফা খোর, মজুতদারী সিন্ডিকেট ও সাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যেমূল্যের ও উর্ধ্বগতি, নকল ভেজাল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্যের কারণে আজ নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ; মানুষের জীবন জীবিকার অধিকার মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। এক শ্রৈণীর নীতি আর্দশহীন, অতি মুনাফা লোভী, অসাধু ব্যবসায়ীদের অল্পদিন কোটিপতি হওয়ার বাসনায় ইচ্ছামতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে ও দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা প্রায় অচল করে দিচ্ছে ; যার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়লে ও ওই পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার কমলে ও তারা আর কমায় না। সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলে গুটি কয়েক অসৎ ব্যবসায়ীর স্বার্থ সংরক্ষণে যাবতীয় রীতিনীতি প্রনয়ণ করার কারণে রমযানে বাজারে যে বৈরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, এর পশ্চাৎ কারণ অজানা নয়। অতি মুনাফা খোর ব্যবসায়ীদের কঠোর আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। মজুদ বৃদ্ধি ও সিন্টিকেটের দিকে নজর দিতে হবে। দুষ্টি দিতে হবে একেবারে উৎসে। বাজারে চালাতে হবে নিয়মিত অভিযান।

আর একটি বিষয় আমলে নিতে হবে ব্যবসায়ীরা একাধিবার বলেছেন রমযান উপলক্ষে চাঁদাবাজী বেড়ে যায় এবং নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ভোগ্য পণ্যের উপর। তাদের অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া যাবে না চাদাঁবাজদের শিকড় উৎপাঠনে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তাদের দমন করা না গেলে বিরুপ প্রভাব থেকে মুক্ত করা যাবে না। অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করার অপচেষ্টা থামাতে হবে। আর্ন্তজাতিক বাজারের সাথে সর্ম্পক নেই এমন কতগুলো পণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে। প্রতি বছর রমযান উপলক্ষে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সরকারি সংস্থা টিসিবির এই ‘ট্রাকসেল’সিন্ধুর মাঝে বিন্দুর মতো। নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং এর কথা ইতিমধ্যে নানা মহল থেকে বলা হয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্য যে, এটা কথার কথা হয়ে গেছে। এমতবস্থায় ইতিবাচক কিছু আশা করা দুরাশার নামান্তর ছাড়া আর কিছুই না। বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির ক্ষমতা বড়ানো হয়নি। অসাধূ ব্যবসায়ীরা যে কারসাজি করে ভোক্তা ও ক্রেতার বিড়ন্বনা বাড়ায় এ বিষয়টি নতুন কিছু নয়। আমাদের এ অভিজ্ঞতায় এও আছে, রমযান যত শেষের দিকে এগোবে তখন ঈদ সামনে রেখে বাজারে অস্থিরতা আর ও এক দফা বাড়বে। আমরা হয়ত এও শুনব, দায়িত্বশীলরা এ ব্যাপারে সজাগ। কিন্তু মানুষ যদি সুফল পায় শুধু তাদের পরিকল্পনায় সার্থকতার কথা বলা যাবে। মাত্রাতিরিক্ত কৃত্রিম সংকট তৈরি যারা করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক।