॥ মোসা. মিশকাতুল ইসলাম মুমু ॥

যুবসমাজ দেশের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেবে, এগিয়ে নেবে। কথাগুলো এখন অনেকটা পুঁথিগত এবং কথার কথায় পরিণত হয়েছে। কারণ বাস্তবে এ কথার প্রতিফলন যুবসমাজের মধ্যে খুব কমই দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বড় সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাদকাসক্তি। বিশেষ করে দেশের যুবসমাজের এক বিশাল অংশ নেশার কবলে পড়ে নিজেদের জীবনের দিশা হারাচ্ছে। স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ-তরুণীরা পর্যন্ত আজ এ ভয়ঙ্কর আসক্তির শিকার। শুধু শহরাঞ্চল নয়, মফস্বল এমনকি গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মাদকের বিস্তার চোখে পড়ার মতো। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এখনই প্রয়োজন কঠোর পদক্ষেপ এবং জাতীয় ঐক্য।

মাদকাসক্তি বলতে সে অবস্থা বুঝায়, যেখানে কোন ব্যক্তি পুনরায় ও প্রায়ই মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে, ফলে তার শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবন ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। মাদকাসক্তি শুধুমাত্র শরীরের উপর প্রভাব ফেলে না বরং ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ ও সামাজিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যুবসমাজ হল সে জনগোষ্ঠী, যারা জীবনের নিরবচ্ছিন্ন সম্ভাবনা ও উদ্দীপনায় ভরা হলেও, তাদের মধ্যে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। বর্তমান জীবনের প্রগতিশীলতা ও আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মানসিক চাপ, একাকিত্ব ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার আগুনে ভরপুর তাদের মাঝে মাদকাসক্তি এক আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে রূপ নিতে শুরু করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদকাসক্তি ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ আইন প্রণয়ন করা হয়। এর আওতায় মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, বিক্রি, সরবরাহ এবং ব্যবহারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক ব্যবসা। দিনের পর দিন যেন মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী যুবকদের একটি বড় অংশ কোনো না কোনোভাবে মাদকের সংস্পর্শে এসেছে। মাদকসেবীর মধ্যে ৮০ শতাংশই তরুণ। তাদের ৪০ শতাংশ আবার বেকার। এদের ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। মাদকসেবীদের শতকরা ৬০.৭৮ ভাগই এসএসসি পাস করা। ২০ থেকে ৪০ বছরের মাদকসেবীর সংখ্যা শতকরা ৮১.৩৭ ভাগ। এ পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যাচ্ছে, মাদকের ভয়ংকর আগ্রাসনে কিভাবে তরুণ প্রজন্ম নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমানে তরুণদের মধ্যে বহুল প্রচলিত কিছু মাদকদ্রব্য হচ্ছে ফেন্সিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইন, স্পিরিট ইত্যাদি। অথচ এগুলো নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি স্বাভাবিকভাবে মানুষের আগ্রহ একটি বেশি এবং একই সঙ্গে কৌতূহলের জন্ম নেয়। তাই কৌতূহলবশত এগুলোর প্রতি তরুণদের আসক্তি সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে তারা এর সংস্পর্শে আসে। তারপর তাদের মধ্যে এক ধরনের নতুন ও রঙিন অনুভূতি কাজ করে। এভাবে তারা নেশার জগতে পা বাড়ায় এবং মাদক তাদের এমনভাবে গ্রাস করে যে, সেখান থেকে ফিরে আসা তাদের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। এসব মাদকদ্রব্য শুধু সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকেই আসছে না, বরং শহরের অভিজাত এলাকাগুলোর বিভিন্ন ক্লাবে, পার্টিতে এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশেও এগুলোর অবাধ ব্যবহার দেখা যাচ্ছে।

নেশার প্রতি যুবসমাজের ঝোঁকের পেছনে একাধিক কারণ কাজ করে, যার মধ্যে পারিবারিক সমস্যা, সামাজিক অবক্ষয়, বেকারত্ব, মানসিক চাপ ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের নেতিবাচক প্রভাব উল্লেখযোগ্য। পরিবারই একজন মানুষের প্রথম সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র হলেও আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা ও সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে অনেক সময় সন্তানরা সঠিক দিকনির্দেশনা ও স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ, অভিভাবকের অনুপস্থিতি বা পরিবারে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়ার ফলে সন্তানদের মধ্যে মানসিক দুর্বলতা তৈরি হয়, যা তাদের মাদকের মতো ভুল পথে পরিচালিত করে। এদিকে, সঙ্গদোষ একটি বড় কারণ। অনেক সময় তরুণরা কৌতূহলবশত বা বন্ধুরা প্ররোচনা দিলে প্রথমবারের মতো মাদক গ্রহণ করে, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাদের অবনতির যাত্রা। তার ওপর, বর্তমান সমাজে উচ্চ প্রত্যাশা, প্রতিযোগিতা ও পারফেকশনের চাপ যুবসমাজকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি সামাজিক মাধ্যম থেকেও তৈরি হয় নানা বিকৃত আদর্শ, যা তাদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ ও হতাশা সৃষ্টি করে। এ হতাশা থেকে মুক্তির সহজ উপায় হিসেবে অনেকেই মাদক সেবনের পথ বেছে নেয়। সাময়িক আরাম ও আনন্দের অনুভূতি তাদেরকে মাদকসেবনে অভ্যস্ত করে তোলে।

বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে বেকারত্ব বা অর্থনৈতিক চাপে ভুগছে, তাদের মধ্যে আত্মসমালোচনা ও নিরাশা আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। ফলে মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় তারা মাদকের মতো বিপজ্জনক অবলম্বন গ্রহণ করে। অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যম ও বিনোদন মাধ্যমেও মাদককে গ্ল্যামারাইজ করা হয়। সিনেমা, ওয়েব সিরিজ কিংবা ভিডিও কনটেন্টে মাদকসেবনকে ‘স্টাইলিশ’ বা ‘মুক্তিপথ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা তরুণদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করে। এসব মাধ্যমে প্রচারিত ভুল ধারণা ও বিপজ্জনক বার্তা অনেক সময় মাদকাসক্তিকে আকর্ষণীয় করে তোলে। সর্বোপরি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও প্রশাসনের তরফ থেকে পর্যাপ্ত নজরদারি ও সচেতনতার অভাবও তরুণদের এ ভয়ঙ্কর পথের দিকে ঠেলে দেয়। এ সকল কারণ একত্রে যুবসমাজের মধ্যে মাদকাসক্তির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে, যা তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ দুটোকেই অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মাদকাসক্তির ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে মাদক সেবনের ফলে হৃদরোগ, লিভারের রোগ ও নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের টক্সিন সিস্টেমে জমা হওয়া ও বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা কমে যাওয়ায় যুবসমাজে শারীরিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পায়। একসময় স্বাস্থ্যের প্রতি যতœ না নেওয়ার ফলে ভবিষ্যতে গুরুতর অসুখ হতে পারে। মাদকাসক্তির অন্যতম ভয়াবহ প্রভাব হলো মানসিক ও আচরণগত পরিবর্তন। মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তির আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা থেকে বিচ্যুত হয়ে, তারা অবাস্তব আকাক্সক্ষা ও ধ্রুবক মানসিক চাপের শিকার হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলে অবসাদ, নিদ্রাহীনতা, আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও উদ্বেগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, যা তাদের সামাজিক ও পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি সময়ের সাথে সাথে অবচেতন মনেও বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার ফলে ক্রমশ ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের ফাটল দেখা দেয়। মাদকাসক্তির ফলে যুবসমাজের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও অপরাধমূলক পরিবেশে প্রবেশের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ায় তারা নিজস্ব জীবনের পাশাপাশি পুরো সমাজের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলে।

ঐশী রহমান এর ঘটনা মাদকাসক্তির ভয়াবহ পরিণতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট সে নিজ বাসায় তার বাবা-মা পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও স্বপ্না রহমানকে খুন করে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াকালে খারাপ বন্ধুদের প্রভাবে ঐশী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। আচরণে পরিবর্তন দেখে তার বাবা-মা তাকে সংশোধনের চেষ্টা করলে, ক্ষিপ্ত হয়ে ঐশী এ নৃশংস কাজ করে। ঘটনা প্রমাণ করে, মাদকাসক্ত সন্তান কেবল নিজেকে নয়, পরিবারকেও ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। যৌবনে মাদকাসক্তির ছোঁয়া পড়লে, পুরো সমাজের সুনাম ও উন্নতির দিকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন একজন তরুণ মাদক আসক্ত হয়ে যায়, তখন তার পরিবার, সমাজ এবং এমনকি দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি হয়। সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে, পারস্পরিক সহমর্মিতা কমে যায় ও অপরাধের হার বাড়ে। এর ফলে সমাজে বিরূপ মানসিকতা ও অবনতি দেখা দেয়, যা পরবর্তীতে বৃহৎ সামাজিক সমস্যায় রূপান্তরিত হতে পারে। মাদকাসক্তির ফলে যুবসমাজের উৎপাদনশীলতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। চাকরির হার কমে যায়, কর্মক্ষমতার ক্ষতি হয় ও কর্মশক্তি হিসেবে যুব সমাজের অবদান কমে যায়। কাজের মান ও দক্ষতা হ্রাসের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। বহুমাত্রিক প্রভাব ফেললেও, দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি দেশের শিল্প ও বাণিজ্যে এর বিরূপ প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মাদকদ্রব্যের বিস্তার রোধ ও যুবসমাজকে এর ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন বহুমুখী ও সমন্বিত পদক্ষেপ। প্রথমত, পরিবারের ভূমিকা এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাবা-মা বা অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের প্রতি সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো ও তাদের আচরণে কোনো পরিবর্তন দেখলে তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা। একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশ সন্তানদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এবং তাদের বিপথে যাওয়া রোধ করতে পারে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদকবিরোধী সেমিনার, কর্মশালা ও মানসিক কাউন্সেলিং সেশন আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। শিক্ষকরা যাতে শিক্ষার্থীদের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারেন, সে ব্যাপারেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা উচিত। এর পাশাপাশি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রয়োগ অপরিহার্য।

সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধ করতে বিজিবি, কাস্টমস ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয়, সুশৃঙ্খল ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে মাদক চক্র, ডিলার ও আড়ত চিহ্নিত করে তা ধ্বংস করতে হবে নির্ভয়ে ও ধারাবাহিকভাবে। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেছে যে, কঠোর আইন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মাদক সেবনের হারকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হলে সমাজের সকল অংশীদারের সহযোগিতা ও সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে।এছাড়া মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন মানসম্মত ও সাশ্রয়ী পুনর্বাসন কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রে শুধুমাত্র চিকিৎসা নয়, মানসিক পুনর্বাসনের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে যুবসমাজের জন্য সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ামূলক কার্যক্রম বাড়ানো দরকার। খেলাধুলা, সাহিত্যচর্চা, নাটক ও সংগীতের মাধ্যমে তরুণরা নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পায়, যা তাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং সঠিক পথে রাখতে সহায়ক। মিডিয়াকেও এই যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সংবাদমাধ্যম, টিভি, সিনেমা ও সোশ্যাল মিডিয়াকে মাদকবিরোধী সচেতনতা বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে হবে এবং মাদকের গ্ল্যামারাইজেশন বন্ধ করতে হবে। সরকার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হবে একটি মাদকমুক্ত, সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ে তোলা।

নেশা কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি এক জাতীয় সংকট। নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি সমাজের ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাও মাদকে আসক্ত। তরুণদের পাশাপাশি তরুণীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের নীল ছোবলে কোমল হাত পরিণত হচ্ছে ভয়ংকর খুনির হাতে। এই সংকট রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে এক অন্ধকার যুগ নেমে আসবে। তাই মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি সামাজিক বা আইনি উদ্যোগ নয়; এটি আমাদের জাতীয় ও মানবিক দায়িত্ব। আজকের তরুণরা যদি মাদকের জালে আটকে পড়ে, তবে আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দেবে কারা? এখনই সময় পরিবার, সমাজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন ও মিডিয়া একযোগে কাজ করার। প্রতিটি যুবকের মধ্যে থাকা সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে সচেতন, স্বাস্থ্যবান ও সৃজনশীল করে তোলা আমাদের সবার কর্তব্য। কঠোর আইন, দৃঢ় সামাজিক সচেতনতা এবং মানবিক সহানুভূতির সমন্বয়েই রুখে দেওয়া সম্ভব এ নেশার থাবা। সত্যিকার অর্থে যুবসমাজকে শক্তিশালী করে তুলতে পারলেই ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এই সমাজ একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।