আসিফ আরসালান
এখন থেকে আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত ৪ মাস কি জাতির জন্য দুর্যোগের মাস? এ ৪ মাসে কি দেশের মধ্যে অশান্তি এবং হানাহানি চলবে? এ ৪ মাসে কি সীমান্তের ওপার থেকে কোনো অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা চালানো হবে? এসব প্রশ্ন সচেতন মানুষের মনকে আলোড়িত করছে গত ৩০ অক্টোবর সংবাপত্রে প্রকাশিত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি চরম সতর্ক বার্তার কারণে। বুধবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে। সে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন যে, নির্বাচন বানচালে দেশের ভেতর ও বাহিরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাট নয়; বড় শক্তির কাছ থেকে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড় আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে। আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- সোশ্যাল মিডিয়ার অপপ্রচার আসবে, নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাহিরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানা রকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের রটনা হওয়া মাত্র সেটা ঠেকাতে হবে, যেন ছড়াতে না পারে।”
প্রধান উপদেষ্টার এ হাই এলার্টকে হালকাভাবে কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে না। কারণ, প্রথমত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি এমনিতেই স্বল্পভাষী। তার ওপর পলিটিক্স নিয়ে বিগত ১৪ মাসে তিনি ১৪টি কথা বলেছেন কি না, সন্দেহ। সে মানুষ যখন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা রাখঢাক না করে দেশবাসীকে এবং প্রশাসনকে জানান তখন সেটিকে অবশ্যই সিরিয়াসলি গ্রহণ করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা যে অশুভ সংকেত দিয়েছেন এবং সেটি মোকাবেলা করার জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তার অন্যতম প্রধান কারণ হতে পারে সীমান্তের ওপারের অপতৎপরতা। আরেকটি কারণ হতে পারে অভ্যন্তরীণ। সেটি হলো, ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাখিল করার পর অকস্মাৎ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে যে বিপদ আসতে পারে তার পেছনে নিম্নোক্ত কারণ থাকতে পারে।
আগামী ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) জানিয়ে দেবেন, কবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম হত্যা মামলার রায় প্রকাশিত হবে। এ রায়ে শেখ হাসিনাকে যে গুরুদণ্ড দেওয়া হবে সে বিষয়ে ইতোমধ্যেই দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহলে জ¦ল্পনা-কল্পনা চলছে। শেখ হাসিনাও প্রিএম্পটিভ এ্যাকশন হিসাবে বিশ্ববিখ্যাত রয়টার্স ও ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত সংবাদ এজেন্সি এএফপি এবং ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেটকে প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে নিজের অনেক সাফাই গেয়েছেন। সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, ভারত সরকার শেখ হাসিনার এ রাষ্ট্রদ্রোহী ও বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় সমর্থন দিচ্ছে এবং মদদ জোগাচ্ছে।
এ ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে শেখ হাসিনা এবং ভারত সরকারের টার্গেট আপাতত দু’টি বিষয়। একটি হলো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম রায় ঘোষণা। দ্বিতীয়টি হলো আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের নিবাচন অনুষ্ঠান। এ দুটি বিষয়কেই বানচাল করার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে ভারত এবং শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং ভারতের জনসমর্থন একেবারে শূন্য। এখন ২০২৫ সাল, ১৯৭১ সাল নয়। তখন জনসমর্থন ছিলো বলে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে এ্যাম্বুশ করতে পেরেছিলেন। এবারও অনুরূপ রক্তক্ষয়ী নাশকাতামূলক তৎপরতার অপচেষ্টা হবে। তবে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন, সামরিক বাহিনী এবং জনগণ যদি জুলাই বিপ্লবের মতো ইস্পাত কঠিন ঐক্য বজায় রাখতে পারেন তাহলে আওয়ামী লীগ কেনো, ভারতও বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট দাখিল নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ২টি দল বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কের ব্যারোমিটার উত্তপ্ত এবং উর্ধ্বমুখী হয়েছে। এ সুপারিশের সংক্ষিপ্ত সার নিম্নরূপ :
সরকার এখন একটি আদেশ জারি করবেন। আদেশটির নাম হবে সম্ভবত ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার আদেশ ২০২৫)।’ আদেশের পর এ আদেশের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে গণভোট। গণভোটের রায় যদি ইতিবাচক হয় তাহলে নির্বাচিত সংসদের থাকবে দ্বৈত ভূমিকা। একটি ভূমিকা হবে ২৭০ কার্য দিবসের জন্য বা ৯ মাসের জন্য। এ ৯ মাস জাতীয় সংসদ সংবিধান সংস্কারের কাজ করবে। এ জন্য ঐ সংসদকে ৯ মাসের জন্য দেওয়া হবে গাঠনিক ক্ষমতা। গাঠনিক ক্ষমতা অনেকেই বোঝেন না। তারা বোঝেন কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার। সংসদ যখন ২৭০ দিন সংবিধান সংস্কারের কাজে লিপ্ত থাকবে তখন তাকে বলা হবে সংবিধান সভা। এতদিন মানুষ সংবিধান সভা বলতে বুঝতো গণপরিষদ।
যে ৯ মাস সংবিধান সভা গাঠনিক ক্ষমতা বলে সংবিধান সংস্কার করবে সে ৯ মাস সংবিধান সংস্কারের পাশাপাশি সংবিধান সভা জাতীয় সংসদ হিসাবেও কাজ করবে এবং জাতীয় সংসদের মেজরিটি পার্টি সরকার গঠন করবেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, প্রথম ৯ মাস জাতীয় সংসদের থাকবে দ্বৈত ভূমিকা। ৯ মাস পর যদি সংবিধান সভা সংবিধান সংস্কারে ব্যর্থ হয় তাহলে গণভোটে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলি স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। আর এ ৯ মাস পর জাতীয় সংসদের সংবিধান সভার ভূমিকার অবসান হবে। অতঃপর জাতীয় সংসদ নিয়মিত পার্লামেন্ট রূপে কাজ করবে।
এ হলো ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের চুম্বক অংশ। এর বিস্তারিত পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিএনপি ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়েছে। সনদের স্বয়ংক্রিয় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ঐ আদেশ নাকি পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের এলএফও এবং আরেক সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের তুল্য হয়েছে বলে বিএনপি অভিযোগ করেছেন। দলটির অভিমত, কমিশনের সুপারিশে ঠিক একইভাবে দুটি দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তা-ভাবনা জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। হয়তো এগুলো বাংলাদেশে আনার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আদেশের খসড়ায় নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) উল্লেখ না রাখাকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন। পৃথক অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ ঐকমত্য কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে লন্ডন থেকে সংযুক্ত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। নেতারা গনভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়কে ইয়াহিয়া খানের এলএফও এবং আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করেন।
লিগ্যাল ফেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও), ১৯৭০ ছিল পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের জারি করা একটি ফরমান। এতে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র রচনার জন্য ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের নীতি উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ এ এলএফও ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, আইনসভায় ৩০০টি আসন থাকবে। ফ্রেমওয়ার্কে রাষ্ট্রের দু’অংশের জন্য সংখ্যা সাম্যের কথা বলা হয়। আরও উল্লেখ করা হয়, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বানের ১২০ দিনের মধ্যে একটি নতুন শাসনরতন্ত্র প্রণয়ন করবে। তবে এ সময়ের মধ্যে নতুন আইনসভা সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হলে নতুন নির্বাচন দেয়া হবে।
অন্যদিকে ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ হচ্ছে ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান প্রবর্তিত একটি পরোক্ষ নির্বাচনভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা, যা মূলত তাঁর ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার একটি উপায় ছিল। এ ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ সরাসরি প্রেসিডেন্ট বা সংসদ সদস্য নির্বাচন করত না। বরং ‘মৌলিক গণতন্ত্রী’ নামে পরিচিত প্রায় ৮০ হাজার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির একটি নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হতো, যাদের মাধ্যমেই প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যরা নির্বাচিত হতেন। এ ব্যবস্থার অবসান ঘটে ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের পতনের পর। বৈঠকে নেতারা বলেন, ঐকমত্য কমিশন যা করেছে তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এটা করে কমিশন চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে অনৈক্য সৃষ্টি করছে। বিএনপি একে জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে না করার ‘অপচেষ্টা’ হিসেবে দেখছে।
বিএনপির এ ধরনের মন্তব্য সঠিক নয়। কারণ আইয়ুব খান এবং ইয়াহিয়া খান উভয়েই সামরিক শাসন জারি করে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র বাতিল করেন। কিন্তু জুলাই বিপ্লবে সংবিধানকে অক্ষত রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান আইকেবি নামে অধিক পরিচিত জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া বাংলাদেশের বিগত ১৪ মাসের ইতিহাসের ওপর তার ফেসবুকে ১৭টি স্ট্যাটাস বা পোস্ট দিয়েছেন। ঐ ১৭ স্ট্যাটাসের ওপরে ধারাবাহিক আলোচনা করা যেতে পারে। তবে আজ যেটি প্রাসঙ্গিক শুধু সেটুকুই আলোচনা করবো। জেনারেল ভূইয়া বলেছেন যে, ৫ অগাস্ট ৩টি বড় ভুল করা হয়েছে। প্রথমটি হলো, শেখ হাসিনাকে তাড়িয়ে যারা জয়ী হলেন তারা ক্যান্টনমেন্টে যান। আইকেবির মতে তারা ক্যান্টনমেন্টে যাবেন কেনো? ক্যান্টনমেন্টেরই তো তাদের কাছে আসার কথা। দ্বিতীয় ভুল হলো, লাখ লাখ বিপ্লবী জনতা শুধুমাত্র গণভবন দখল করলেন। আইকেবির প্রশ্ন, সেই বিপ্লবী জনতা একই সাথে বঙ্গভবন দখল করেননি কেনো? বঙ্গভবন দখল বলতে তিনি বোঝান, হাসিনা বিতাড়নের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণ উচিত ছিলো। আর তৃতীয় এবং সম্ভবত সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো ১৯৭২ সালের সংবিধানকে বাতিল না করা। বাতিল না করলেও অন্তত স্থগিত করা দরকার ছিলো।
যদি এ তিনটি কাজ করা হতো তাহলে জুলাই বিপ্লবকে প্রকৃত অর্থেই জুলাই বিপ্লব বলা যেতো। আইকেবির মতে ৮ অগস্ট সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে যখন উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হলো সে মুহূর্তেই সর্বাত্মক বিপ্লব আধা বিপ্লবে রূপান্তরিত হলো। কারণ বিপ্লবের মাধ্যমে হাসিনার অপসারণ হলো। কিন্তু সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে বস্তুত আওয়ামী প্রশাসনের ছায়া এবং প্রচ্ছায়াকে বর্ধিত জীবন দান করা হলো। আজ সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন নিয়ে যত রকমের জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলির উৎস হলো ঐ ৩টি বড় ভুল।
রাজনৈতিক পরিস্থিতির যদি বেশি অবনতি না ঘটে তাহলে আগামীতে এসম্পর্কে আলোচনার ইচ্ছা রাখি।