নূরুন্নাহার নীরু

সম্প্রতি বিতর্কিত এই নারী কমিশন তাদের “সংবিধান, আইন ও নারীর অধিকার: সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি নামক শিরোনামে তৃতীয় অধ্যায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি উল্লেখ করেছে। এই অধ্যায়ে তাদের স্লোগান হচ্ছে: “রাষ্ট্র এবং পরিবারে, সমান হব অধিকারে।” এই নারী কমিশন উক্ত অধ্যায়ের ৩.২.১.১.১ মৌলিক অধিকার বিষয়ক এর নং জ)তে দাবি করেছে, “বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫/৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে ‘নিষ্ঠুর, অমানুষিক যন্ত্রণা বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড’ এর পরে ‘মৃত্যুদণ্ড’ শব্দটি যুক্ত করে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলুপ্ত করা।”

বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী দেখা যায় উক্ত অনুচ্ছেদের মূল কথা হচ্ছে, কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না, কিংবা নিষ্ঠুর অমানুষিক বা লাঞ্ছনা কর দণ্ড দেওয়া যাইবে না, কিম্বা ঐরূপ ব্যবহার করা যাইবে না। এই অনুচ্ছেদটি ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় অভিযুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নারী কমিশনের মৃত্যুদণ্ড রহিতকরণ আবদারটি মেনে নেওয়ার আগে আমাদের উক্ত বিষয়ের উপরে একটি পর্যালোচনায় আসতে হয় অবশ্যই।

সংবিধানের ৩৫/৫ বিশ্লেষণ করলে এর মূল বিষয়গুলো দেখা যায় নিম্নরূপ :

এক. যন্ত্রণাকর কোন প্রকার শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে কারো কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় বা অন্য কোন উদ্দেশ্যে কোন প্রকার যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের দ্বারাও এই ধরনের আচরণ নিষিদ্ধ।

দুই. নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনা কর দণ্ডের মাধ্যমে এমন কোন শাস্তি দেওয়া যাবে না যা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা মানুষের মর্যাদার পরিপন্থী। এর অর্থ হলো শাস্তির ধরন এমন হতে পারবেনা যা অকারণে কষ্টদায়ক, অমর্যাদাকর বা সমাজে খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

তিন. ঐরূপ ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু দণ্ড নয়, কোন ব্যক্তির সাথে নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও করা যাবে না। এরমধ্যে তদন্তের সময় বা অন্য কোন পরিস্থিতিতে এই ধরনের আচরণ অন্তর্ভুক্ত।

এই অনুচ্ছেদটি বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত এবং এর লঙ্ঘন আইনত দণ্ডনীয়। এটি নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্র কর্তৃক শাস্তি বা অন্য কোন প্রক্রিয়ায় কোন নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার যেন ক্ষুন্ন না হয়। এই অনুচ্ছেদে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণারও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিফলন রয়েছে।

এবার আমরা দেখব মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিশেষ করে জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ড রহিত করণের পক্ষে কী বলছে। হ্যাঁ এ বিষয়ে তারা জোরালো অবস্থান নিয়েছে। জানা যায়; জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের (OHCHR) মূল বক্তব্য হলো:

১. জীবনের অধিকার : মৃত্যুদণ্ড জীবনের অধিকারের চরম লঙ্ঘন, যা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার। এ অধিকার কোন পরিস্থিতিতেই কেড়ে নেওয়া উচিত নয়।

২. নিষ্ঠুর ও অমানবিক শাস্তি : মৃত্যুদণ্ডকে নিষ্ঠুর অমানবিক ও মর্যাদাহানীকর শাস্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। বলা হয় এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থি।

৩. কার্যকর প্রতিরোধক নয় : জাতিসংঘের মতে এমন কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই যে মৃত্যুদণ্ড অন্য কোন শাস্তির চেয়ে অপরাধ কমাতে বেশি কার্যকর।

৪. ভুল সংশোধনের অযোগ্য : বিচারব্যবস্থায় ত্রুটি এবং ভুল রায় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর মৃত্যুদণ্ড একবার কার্যকর করা হলে সংশোধনের কোন উপায় থাকে না।

৫. বৈষম্যমূলক প্রয়োগ : প্রায়ই দেখা যায় যে দুর্বল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষের উপর মৃত্যুদণ্ড বেশি প্রয়োগ করা হয়, এটি বৈষম্যমূলক।

এইসব যুক্তির ভিত্তিতে জাতিসংঘ সার্বজনীনভাবে মৃত্যুদণ্ড রহিত করার আহ্বান জানায়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সাধারণ পরিষদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে দশম বারের মতো একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। এই রেজুলেশনে মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগকারী দেশগুলোকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ক. মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার স্থগিত করা।

খ. মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধের সংখ্যা সীমিত করা।

গ. মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার রক্ষা করা।

মূল কথা, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি ও তাদের সাধারণ পরিষদের মন্তব্য নং-৩৬ এ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে রাষ্ট্রগুলোর উচিত মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার সীমিত করা এবং চূড়ান্তভাবে এর বিলুপ্তি ঘটানো। কমিটি মনে করে যে, মৃত্যুদণ্ড কেবল গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেই এবং এর প্রয়োগ যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সম্পূর্ণরূপে সঙ্গতিপূর্ণ হয়।

সারসংক্ষেপে জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডকে মানবাধিকারের চরমলঙ্ঘন হিসাবে দেখে এবং বিশ্বব্যাপী এর বিলুপ্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

এবার আমরা দেখতে পারি দেশে দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধানাবলী কী

দেশে দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধানাবলী : মৃত্যুদণ্ড বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইনি কাঠামোর অধীনে প্রয়োগ করা হয়। কিছু দেশে এটি শুধুমাত্র গুরুতর অপরাধের জন্য সংরক্ষিত। যেমন: গণহত্যা, যুদ্ধ অপরাধ বা একাধিক হত্যাকাণ্ড। আবার কিছু দেশে যেমন রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা ধর্ষণের মতো অপরাধেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে। আবার অন্যদিকে এটি প্রয়োগও করছে : ইরান, সৌদি আরব, ইরাক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে অন্যতম। উল্লেখযোগ্য যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজ্যে মৃত্যুদণ্ড প্রচলিত নেই। কিছু রাজ্যে এটি বাতিল করা হয়েছে, আবার কিছু রাজ্যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধরনের অপরাধের জন্য এটি প্রয়োগ করা হয়।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পদ্ধতিও দেশভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন: ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, গুলি করে, বিদ্যুৎ তাড়িত চেয়ারে বসিয়ে বা প্রাণঘাতী ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ে থাকে।

ইসলামের দৃষ্টিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান কী :

ইসলাম ধর্মে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে তবে তা অত্যন্ত সীমিত পরিসরে। কঠোর এবং বিশেষ শর্তসাপেক্ষে প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান উল্লেখ আছে। তবে এই শাস্তি কার্যকরের ক্ষেত্রে সুবিচার, সুষ্ঠু তদন্ত এবং সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন :

আল কুরআনে বলা হয়েছে; “যে কেউ অন্যায়ভাবে অর্থাৎ কাউকে কতল করা বা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করার মতো ঘটনা ঘটানো ছাড়াই কাউকেও কতল করে, তবে সে যেন সমস্ত মানুষকে কতল করলো। আর যদি কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করে, তবে সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো। তাদের কাছে তো আমাদের রসূলরা স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তাদের অনেকেই পৃথিবীতে সীমালংঘনকারীই থেকে গেল।” (সূরা আল মাইদা; আয়াত :৩২।)

উক্ত সূরার ৩৩ নং আয়াতে আরো বলা হয়েছে; “যারা আল্লাহু ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে তাদের এই কাজের বদলা স্বরূপ শাস্তি হলো : তাদের হত্যা করা হবে, অথবা শূলবিদ্ধ করা হবে, কিংবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে, নতুবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এ হলো তাদের দুনিয়ার লাঞ্ছনা, আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে বিরাট আযাব।”

যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করে তাহলে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের অধিকার আছে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড দাবি করার। তবে তারা চাইলে ক্ষমা করতে বা রক্তপণ গ্রহণ করতে পারে। এ ব্যাপারে আল কুরআনে বলা হয়েছে, “হে ঈমানদার লোকেরা তোমাদের জন্য হত্যা মামলার বিধান লিখে দেওয়া হল কিসাস। স্বাধীন ব্যক্তি হত্যা করে থাকলে সেই ব্যক্তিরই মৃত্যুদণ্ড হবে, কোন দাস হত্যাকারী হিসেবে প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড সেই দাসেরই হবে। কোন নারী হত্যাকারী হলে মৃত্যুদণ্ড সেই নারীকেই দিতে হবে। তবে কোন হত্যাকারী ব্যক্তির সাথে এর উত্তরাধিকারীর পক্ষ থেকে কোমল ব্যবহার অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড ক্ষমা করা হলে হত্যাকারীর জন্য অপরিহার্য হবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ধার্যকৃত বা দাবিকৃত রক্তপণ সততার সাথে তাকে প্রদান করা। তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এটা একটা লাঘব, অনুকম্পা। কিন্তু এরপরেও যদি কেউ সীমালংঘন করে তার জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।” (সুরা আল বাকারা : ১৭৮ আয়াত)

আরো বলা হয়েছে, “তোমাদের জন্য কিসাসের বিধানের মধ্যেই রয়েছে জীবনের নিরাপত্তা, হে বুদ্ধি বিবেকওয়ালা লোকেরা! আশা করা যায় তোমরা এই আইনের প্রতি অবজ্ঞা করা থেকে বিরত থাকবে। (সূরা ঐ ;আ-১৭৯)

ব্যাভিচার তথা জেনা বা ধর্ষণের শাস্তি সংক্রান্ত কুরআনের আয়াতগুলো হল: “ব্যভিচারিণী নারী ও ব্যভিচারী পুরুষ-তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হও, তবে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। অর্থাৎ প্রভাবিত না করে। আর মুমিনদের একটি দল তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করুক।” (সুরা নূর ২ নং আয়াত)

এ প্রসঙ্গে সূরা আন-নিসা (৪), আয়াত ১৫-১৬ তে আরো বলা হয়েছ: “তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী তলব করাও; যদি তারা চার জনই সাক্ষ্য দেয়, তবে তাদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখ যতক্ষণ না মৃত্যু তাদেরকে গ্রাস করে অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ খুলে দেন। আর তোমাদের মধ্যে যে দুজন ওই ঘৃণ্য কর্মে লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি দাও; অতঃপর যদি তারা তওবা করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে, তবে তাদেরকে ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (জানা গেছে পরবর্তীতে ব্যভিচারীদের দণ্ডবিধি নাযিল হয় সূরা নূরে এবং তখন এই বিধান রহিত হয়েছে বলে অনেক ইসলামী পণ্ডিত মনে করেন।)

ইসলামী আইন অনুযায়ী, বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তার শাস্তি পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড (যার নাম রজম)। তবে কুরআনের সরাসরি আয়াতে রজমের উল্লেখ নেই। এটি হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে শাস্তি হলো একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন (কিছু বিদ্বান নির্বাসনকে তা’যীর বা অতিরিক্ত শাস্তি হিসেবে গণ্য করেন)।

এছাড়াও, ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদকারীর শাস্তির ব্যাপারে সূরা নূরের ৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

“আর যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অতঃপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না; আর তারাই হলো ফাসেক।”

সুতরাং, কুরআনে ব্যভিচারের শাস্তি এবং এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোন প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলিম যদি স্বেচ্ছায় ইসলাম ত্যাগ করে এবং তার উপর শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তওবা করার সুযোগ দেওয়ার পরও যদি সে তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে কোন কোন মাযহাবের মতে তার মৃত্যুদণ্ড হতে পারে তবে এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। অনেক আধুনিক আলেম মনে করেন ধর্ম ত্যাগের জন্য মৃত্যুদণ্ড যথেষ্ট নয় যদি না এর সাথে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা অন্য কোন অপরাধ জড়িত থাকে।

উপরোক্ত বাণী সাপেক্ষে দেখা যাচ্ছে ইসলামে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব দেওয়া হয় :

* সুস্পষ্ট প্রমাণ: অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ও অকাট্য প্রমাণ থাকতে হবে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না

* নিরপেক্ষ বিচার : ইসলামী আদালতের মাধ্যমে নিরপেক্ষ বিচারকার্য সম্পন্ন হতে হবে।

* সাক্ষ্য : শরীয়াতের নিয়ম অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রয়োজন। এমনকি মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারীর যথাযোগ্য বিচার করা হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া আছে।

* ক্ষমতার সুযোগ : নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীদের ক্ষমা করার বা রক্তপণ গ্রহণের অধিকার রয়েছে।

* সন্দেহের অবকাশ : যদি কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে, তাহলে মৃত্যুদণ্ড এড়িয়ে যাওয়া উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং পরিশুদ্ধতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

মূলত: ইসলামের মূল লক্ষ্য হলো ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এবং সমাজে শান্তি রক্ষা করা। আর এ জন্যই মৃত্যু দণ্ডের বিধান এবং তার প্রয়োগ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ও কঠোর নিয়ম মেনে করার কথা বলা হয়েছে। ফলে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষের যুক্তিগুলো যেমন: মানবাধিকার লঙ্ঘন, অপরিবর্তনীয় ও ভুল সংশোধনের অযোগ্যতা, কার্যকর প্রতিরোধক নয় বলে দাবি করা, বৈষম্যমূলক প্রয়োগ, নিষ্ঠুর ও অমানবিক শাস্তি, প্রতিশোধের সংস্কৃতি, নৈতিক ও ধর্মীয় আপত্তি ইত্যাদির অজুহাত তোলা বাতুলতা মাত্র।

উপরোক্ত বিষয়গুলির পর্যালোচনা সাপেক্ষে আরো বলতে হয় : যে দেশে এখনো প্রতিনিয়ত ব্যভিচার, ধর্ষণ, হত্যা, খুন খারাবী লেগেই আছে, তুচ্ছ ঘটনার বলিদান হচ্ছে পারভেজদের মত নিরীহ ছেলেরা। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আসিয়াদের মত নিষ্পাপ শিশুরা। সে ক্ষেত্রে উপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে পারে একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই। কিন্তু তা যথাযথ প্রয়োগ না করে রহিতকরণ ঘটালে দেশ ও জাতি অন্ধকারের অতলেই পৌঁছুবে। মানবতার দোহাই দিয়ে কথিত নারী সংস্কার কমিশন যা বলতে চাচ্ছে তাও সাংঘর্ষিক। যেমন একটা উদাহরণ দেখাচ্ছি : উক্ত তৃতীয় অধ্যায়ের ৩.২.১.৩.৪ ধর্ষণ সংশ্লিষ্ট আইন সংস্কার করা এর ‘গ’ নম্বরে বলা হয়েছে; “বারবার ধর্ষণ করা অপরাধীদের দাগী অপরাধীদের সাথে তালিকাভুক্ত কর”-তাদের এই দাবি অনুযায়ী অপরাধীর বিচার যদি দাগী অপরাধী হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না হয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তবে সেটি কি মানসিক চাপ সম্পন্ন নিষ্ঠুর ও অমানবিক হবে না? উপরন্ত ভিকটিম এর উপরেও কি অবিচার করা হবে না?

পরিশেষে বলতে বাধ্য হচ্ছি ঢালাওভাবে “মৃত্যুদণ্ড রহিতকরণ আবদার” মূলত: সমাজে মানবতার মূলে কুঠারাঘাত। এ ক্ষেত্রে আল কুরআনের বিধানই সার্বজনীন ও শাশ্বত।

লেখিকা : প্রাবন্ধিক।