সরকার শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে একত্রিভূত করে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক (ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক) নামে একটি ব্যাংক স্থাপন করতে যাচ্ছেন বলে এ মাসের শুরুতে পত্র-পত্রিকায় একটি সরকারি সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য এর মধ্যে সরকার আট সদস্যের একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছেন। এ কমিটিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় এর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে যে, ২০২৫ সালের ব্যাংক রেগুলেশন অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণের মূল দায়িত্ব ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালনা পরিষদ, স্বচ্ছল ও বিত্তবান শেয়ারহোল্ডার এবং শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওপর বর্তায়। তাদের ভাষায় কতিপয় দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ ও লোভী ব্যবসায়ীর কারণে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেয়া যায় না।

কমিশনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, একত্রিকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর শেয়ারের যদি বুক ভ্যালু বিবেচনা করা হয়, তাহলে শেয়ারহোল্ডাররা কিছুই পাবেন না। যদিও তাদের শেয়ারের সেইল ভ্যালু অনেক বেশি। অথচ Merger-এর জন্য সরকার গঠিত কমিটিতে শেয়ার মার্কেট সংক্রান্ত কোনো বিশেষজ্ঞ রাখা হয়নি। বলাবাহুল্য, সরকার যে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একত্রিভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। ব্যাংকগুলোতে চার ধরনের শেয়ার রয়েছে। (১) পাবলিক শেয়ার, (২) স্পন্সর ডাইরেক্টর শেয়ার, (৩) প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ও (৪) বিদেশি শেয়ার। এক্সিম ব্যাংকের মোট শেয়ার মূলধনের মধ্যে পাবলিক শেয়ারের পরিমাণ ৩৯.২৮%, প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার ২৭.৬৫%, স্পন্সর শেয়ার ৩২.৪৪% এবং বিদেশি শেয়ার ০.৬৩%। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বেলায় এর পরিমাণ যথাক্রমে ১৭.৯২%, ৬৯.৫৯%. ১১.৬২% ও ০.৮৭%, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বেলায় ৩১.৪৬%, ৫৩.১১%, ১৫.৪৩%, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বেলায়৩১.৪৬%, ৫৩.১১% ও ১৫.৪৩% এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের বেলায়ও যথাক্রমে ৩১.৪৬%, ৫৩.১১ ও ১৫.৪৩%। শেষোক্ত তিনটি ব্যাংকে কোনো বিদেশি শেয়ার নেই।

সিকিউটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সূত্রে জানা গেছে যে, ব্যাংকগুলো একত্রিভূত করার সরকারি সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হবার পর গত পাঁচ মাসে শেয়ার বাজারে ৫টি ব্যাংকেরই শেয়ারের মূল্য ৩৬ থেকে ৪৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এ আশঙ্কায় যে, বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের বিনিময়ে কিছুই পাবে না। পক্ষান্তরে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য ঘুরে দাঁড়াতে দেখা গেল। এখানে দুর্বল সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের মূল্য ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি শেয়ারের মূল্য ৪.৪০ টাকায় দাঁড়ায়। এতে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, বাজারের অনুমান বা ফটকাবাজি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সাথে জড়িত বিভিন্ন ইস্যুর সাথে সংশ্লিষ্ট। সরকার বা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে এ প্রেক্ষিতে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

এদিকে চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ৫১টি ব্যাংকের মধ্যে ২৪টি ব্যাংক তাদের বাধ্যতামূলক ন্যূনতম মূলধন ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ২৪টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১,৫৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি। এ ২৪টি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সাতটি ব্যাংক। যথাক্রমে বিকেবি, রাকাব, জনতা, সোনালী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। আবার বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিয়ন, আইবিবিএল, এফএস, আইবি, ন্যাশনাল, পদ্মা, গ্লোবাল, এবি, আইএফআইসি, আল আরাফা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। এর মূল কারণ খেলাপী ও স্থবির ঋণের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি। গত বছর ডিসেম্বর মাসে এ ধরনের ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ১৯টি, তাদের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১,৭২,০০০ কোটি টাকা। চলতি বছর মার্চ মাসে এর পরিমাণ ছিলো ১,১০,০০০ কোটি টাকা। এটা আসলে কোনো অগ্রগতি ছিল না বরং সরকার ২৮টি ব্যাংককে বিলম্বিত সুবিধা দেয়ার কারণে খেলাপী ব্যাংকের সংখ্যা কমে এসেছিল।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ব্যাংকিং খাতের ব্যবসা অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ একটি ব্যবসা। মানুষ নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকে টাকা-পয়সা আমানত রাখে, আবার যখন প্রয়োজন হয় তখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়। এ জমা-উত্তোলন প্রক্রিয়া ও প্রবণতা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, জমাকৃত অর্থের তুলনায় উত্তোলিত অর্থের পরিমাণ অনেক কম এবং এর ফলে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রচুর অর্থ থেকে যায়। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো আমানতকারীদের নগদ চাহিদা মেটানোর জন্য একটা পর্যাপ্ত অংশ রেখে বাকি অংশ বিনিয়োগ করে। বিনিয়োগ গ্রহিতাদের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা টাকা নেয়ার ব্যাপারে যত তৎপর পরিশোধের ব্যাপারে তত তৎপর নয়। আদানে ক্ষিপ্রকারিতা প্রতিদানে চিরায়তা এ প্রবচনটির এখান থেকেই সৃষ্টি। এ অবস্থা বোধ করার জন্য অর্থখাতের বিশেষ করে ঋণ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতাপ্রসূত দূরদর্শিতা অবলম্বন করা হয়। একে Banking Prudence ও বলা হয়। ব্যাংক জগতে 3Rs ও 3Cs এ Prudence-এরই অংশ 3R হচ্ছে Reliability এবং Repayability এবং Realisability হচ্ছে 3C এবং Character, Capacity এবং Capability অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা কর্জের/বিনিয়োগের জন্য আবেদন করে তাহলে ব্যাংক বা অর্থ প্রতিষ্ঠানকে আবেদনকারীর বিশ্বাসযোগ্যতা, ঋণের পরিশোধযোগ্যতা অর্থাৎ তিনি বা তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন কিনা, পারলে তার আদায় যোগ্যতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হয়। পরিশোধযোগ্যতা থাকলেই ঋণ আদায় হয় না। ঋণ গ্রহিতা যদি সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হয় তাহলে ব্যাংক কর্মকর্তারা ঋণ আদায়ে সক্ষম হবেন কিনা তাও দেখতে হয়। একইভাবে আবদেনকারীর চরিত্র; বিশেষ করে আর্থিক লেনদেনে তার সততা, প্রতিশ্রুতি রক্ষার রেকর্ড, ঋণের অর্থ বিনিয়োগ পরিকল্পনার যথার্থতা ও ব্যবসায়িক যোগ্যতা ও দক্ষতার বিষয়টিও গণনায় এনে বিনিয়োগের ও লগ্নিকৃত অর্থের পরিশোধ নিশ্চিতের স্বার্থে জমি বা অন্য কোনো স্থায়ী সম্পদ জামানতের ব্যবস্থাও রাখা হয়, আবার মক্কেল বা ঋণ গ্রহিতার সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখে কিস্তি পরিশোধের সময় নির্ধারণও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়।

দুর্ভাগ্যবশত ফ্যাসিস্ট শাসনামলের গত ১৭ বছরের উপরোক্ত নীতিসমূহ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করে রাজনৈতিক বিবেচনায় লগ্নিপদ্ধতি চালু হয়। ব্যাংক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, স্পষ্ট করে বলতে গেলে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, অভিনেতা, এমপি-মন্ত্রী সবাই মিলে এ খাতকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেন। একত্রিকরণ সংক্রান্ত সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, ব্যাপক দুর্নীতি, পুঞ্জিভূত অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক বিবেচনানির্ভর বিনিয়োগ ব্যবস্থা, খেলাপী ও মন্দ ঋণের অভূতপূর্ব রেকর্ডের প্রেক্ষিতে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা ভেঙে পড়া রোধের লক্ষ্যে শরীয়াভিত্তিক উপরোক্ত চারটি ব্যাংককে এত্রিভূত করে একটি ব্যাংকে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ নয়, সারা দুনিয়ায় ব্যাংক একত্রিকরণের এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রথম। ইতোপূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে Standard Chartered Bank ANZ Grindlays Bank নামক আরেকটি ব্যাংকের যাবতীয় কার্যক্রম অধিগ্রহণ করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল বিনিয়োগ প্রক্রিয়া ও ক্লায়েন্ট পোর্টফোলিও সমন্বয়ের মাধ্যমে মিতাচার অইন ও মুনাফা বৃদ্ধি। বাংলাদেশের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

সরকার যে পাঁচটি ব্যাংককে একত্রিভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেগুলোর আর্থিক অবস্থা ভয়াবহ; তাদের মোট খেলাপী ও মন্দ ঋণের পরিমাণ ১.৪৭ ট্রিলিয়ন টাকা। ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট দাদনকৃত ঋণের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ৯৬ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ ঋণই খেলাপীতে রূপান্তরিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, পলাতক ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিপরায়ন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে আঁতাত করে চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপ এই ব্যাংকগুলো কবজা করে নামে বেনামে বিনিয়োগ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে। প্রস্তাবিত নতুন ব্যাংকের অনুকূলে সরকার ইকুইটি হিসাবে ২০০ বিনিয়ন টাকা দিতে রাজি হয়েছেন। নতুন ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫০ বিলিয়ন টাকা। অবশিষ্ট ১৫০ বিলিয়ন আসবে ব্যক্তি আমানত, প্রাতিষ্ঠানিক আমানত ও বীমা তহবিল থেকে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে তাদের দু’জন নির্বাহী পরিচালক ও তিনজন পরিচালক বর্ণিত ব্যাংকগুলোর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের জন্য নির্বাচিত করেছে। মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে নতুন ব্যাংকের অফিসও স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসকরা যোগদান করা ও দায়িত্ব গ্রহণের সাথে সাথে ৫টি ব্যাংকেরই পরিচালনা বোর্ড বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং একত্রিকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

দেশের অর্থব্যবস্থা বিশেষ করে ব্যাংকসহ অর্থ প্রতিষ্ঠানসমূহের জিম্মাদার হিসেবে সরকার যে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকসমূহের সামগ্রিক পরিচালনার সাথে জড়িত।

আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং কোম্পানি আইন অনুযায়ী গঠিত। এ আইনটি ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইনের আদলে তৈরি এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে এটি সংশোধিত হয়। আইন অনুযায়ী এ ব্যাংকগুলোও একেকটি কোম্পানি। যে কোনও কোম্পানির তৎপরতা বা কাজকর্ম বন্ধ করতে হলে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং রেজিস্ট্রার, জয়েন্ট স্টক কোম্পানি তাদের আবেদনের ভিত্তিতে লিকুইডেটার নিয়োগ করেন। তিনি কোম্পানির দায়দেনা ও সম্পদ নির্ধারণ করে তা পরিশোধের ব্যবস্থা নেন। লিমিটেড কোম্পানিতে শেয়ার হোল্ডারদের দায়, শেয়ারের অংক পর্যন্ত সীমিত। শেয়ার যদি সম্পূর্ণ পরিশোধিত হয় তাহলে তার আর কোনও দায় নেই। একে বলা হয় Limited by Shares. আবার শেয়ারের অংক নির্বিশেষে কোন কোন কোম্পানিতে দায় পরিশোধের গ্যারান্টিও থাকে (Limited by Guarantee). শেয়ার হোল্ডারদের দায় এখানেই শেষ। দায়দেনা ছাড়াও নগদ ও স্থাবর সম্পত্তি মূল্যায়নের পর বাইরের পাওনাদারদের পাওনা মিটিয়ে যে অর্থ অবশিষ্ট থাকবে নিয়মানুযায়ী তা শেয়ার হোল্ডারদের প্রাপ্য।

এ পাঁচটি ব্যাংকের বেলায় এ নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা সরকারকে তা ভেবে দেখা দরকার। এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। শেয়ারহোল্ডারদের দেনাপাওনার যেমন প্রশ্ন আছে তেমনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনঃনিয়োগ/চাকরির ধারাবাহিকতা রক্ষা, বেতন ভাতা নির্ধারণ-পুনঃনির্ধারণের বিষয়, পে প্রটেকশানের বিষয়ও বিবেচনায় আনতে হবে। ব্যাংকগুলোর বর্তমান দুরবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের মধ্যে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা আছে কিনা, থাকলে তাদের চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে নতুন ব্যাংকের দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দেয়া মানে নতুনভাবে দুর্নীতি করার জন্য তাদেরকে Open General Licence দিয়ে দেয়া। শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক বলা হলেও এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন এ ব্যাংকগুলোতে নিয়োগকৃত জনবলের বেশির ভাগই Sharia Compliance সম্পর্কে অজ্ঞ বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা অর্থোপার্জনের জন্য মুসলিম জনগোষ্ঠীর সেন্টিমেন্ট নিয়ে ব্যবসা করেছেন। মোদ্দা কথা হচ্ছে নতুন ব্যাংকটি যেন পুরাতন ব্যাংকগুলোর মত দুর্নীতির আখড়া না হয় সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

এখন সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অবস্থা নিয়ে কিছু বলা দরকার। বাংলাদেশ হবার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের মালিকানাধীন একটি মাত্র ব্যাংক ছিল: ইস্টার্ন ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল পাটচাষি ও তুলাচাষিদের জন্য। এগ্রিকালচারাল ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক ও এগ্রিকালচারাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ছিল চা বাগানসমূহ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প চাহিদা পূরণের জন্য। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ন্যাশনাল ব্যাংককে সোনালী ব্যাংক, এডিবি ও এএফসিকে কৃষি ব্যাংক, পশ্চিম পাকিস্তানভিত্তিক ইউনাইটেড ব্যাংককে জনতা ব্যাংক, হাবিব ব্যাংককে অগ্রণী ব্যাংক নামকরণ করা হয়। ব্যাংকগুলোর বয়স এবং অভিজ্ঞতা প্রচুর। কিন্তু তারা ইতোমধ্যে তাদের যে ব্যর্থতা দেখিয়েছে তা লজ্জাজনক। এ সরকারি ব্যাংকগুলোর সবটিই তাদের মূলধন খেয়ে ফেলেছে। তাদের লগ্নিকৃত ঋণের ৯৭ থেকে ৯৮ ভাগ খেলাপী। এ ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন ও দুর্নীতিমুক্তকরণ অপরিহার্য্য। অর্থনীতির রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে আমি মনে করি।