সাইদুল কবির স্বাধীন
বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। একটি দেশের মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে সেদেশের পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। কিন্তু নানা কারণে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। আমাদের নিজেদেরই কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস বা দৈনন্দিন ব্যবহার্য বর্জ্য আমাদের চারপাশের পরিবেশ কে দূষিত করে। আমাদের চারপাশে এইযে যা কিছু অপ্রয়োজনীয় সেসব জিনিস কে নতুন ভাবে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার প্রক্রিয়াকেই রিসাইকেল বা রিসাইক্লিং বলে।
প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে এমন অনেক জিনিস আমরা অপ্রয়োজনীয় মনেকরে ফেলে দেই যা আদতে রিসাইকেল করার মাধ্যমে অন্য কোনভাবে নতুন করে কাজে লাগানো সম্ভব। শুধু তাই নয় এসব ফেলে দেওয়া জিনিস আবার নানা ভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে থাকে, তাই সেসব জিনিস যদি সঠিক পদ্ধতিতে রিসাইকেল করা যায় তাহলে পরিবেশ দূষণ রোধ করাও সম্ভব। আমাদের চারপাশে পরিবেশ যেসব জিনিসের দ্বারা দূষিত হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যাদি। প্লাস্টিক জাতীয় জিনিস সহজেই মাটির সাথে মিশে যায় না, বছরের পর বছর মাটির সাথে থেকে মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়, তাই যদি ফেলে না দিয়ে সঠিক উপায়ে রিসাইকেল করা হয় তাহলে নতুন করে একটি জিনিস যেমন তৈরি হবে তেমনি পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা যাবে। আবার আমাদের চারপাশের প্রতিদিনকার বর্জ্য পদার্থ যেগুলো দৈনন্দিন ব্যাবহার করা নানান জিনিস থেকে বের হয়, যেমন শাক সবজির খোসা, পশুপাখির বিষ্ঠা, নষ্ট খাবার ইত্যাদি যা আশপাশের পরিবেশ কে মারাত্মক রকমের দুর্গন্ধ ছড়ানোর মাধ্যমে বায়ুদূষণ করে থাকে, এসকল বর্জ্য পদার্থ কেও রিসাইকেল করার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের উপকারী জিনিস বানানো যায়। যেমন নানান রকম জৈব সার, পশুপাখির খাবার ইত্যাদি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিচ্ছন্ন পরিবেশ গড়তে রিসাইকেল করার তাগিদ দিয়েছে এবং তারা সফলকামও হয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে মোট ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ৭৯ শতাংশ মাটিতে, ১২ শতাংশ পুড়িয়ে এবং মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয়। অর্থাৎ ৭৯ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্যই দীর্ঘদিন পরিবেশে থেকে যায়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ আসলে জানেই না রিসাইকেল কি বা কিভাবে করা হয় এবং এরকম একটা ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমে দেশকে আরো সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করে তোলা সম্ভব। তাই আমরা সচেতন সমাজ এই বিষয়ে গ্রাম থেকে শহর, সব জায়গার মানুষকে রিসাইকেল সম্পর্কে অবগত করানোর জন্য ব্যাপক ভাবে প্রচার প্রচারণা করা উচিত এবং নিজেরা এই কাজ বেশি বেশি করা উচিত যাতে আরো অনেক মানুষ দেখে রিসাইকেল করার প্রতি উদ্ভুদ্ধ হয়। পুরাতন জিনিস কে নতুন করে গড়ার কাজ মানেই হলো রিসাইকেল এই সহজ বিষয় টা জনমতে ব্যাপক আকারে পোঁছে দিতে হবে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা থেকে অতি সহজেই অনুমান করা যায় যে, দেশে দৈনিক কি পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ উৎপাদন হচ্ছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে প্রায় প্রতিটি সমস্যার কোনো না কোনো সুন্দর সমাধান আছে। আর ঠিক এ রকমই একটি কার্যকরী ও সময় উপযোগী সমাধান হচ্ছে উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থের রিসাইকেল। এর ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমে আসবে, সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক ভাবেও অগ্রসর হওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হবে।
রিসাইক্লিং-এর উপকারিতা :
অর্থনৈতিক অগ্রগতি : রিসাইকেল প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকেন শ্রমিক, শিক্ষিত যুবক, ইঞ্জিনিয়ারসহ অনান্য নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রিসাইকেল করার ফলে দেশ বেকারত্ব দূর হওয়ার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে। দেশে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী রিসাইকেল করার উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার কারখানা রয়েছে, এই সকল কারখানায় শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে যেমন নিজেদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ করছে তেমনি দেশের অর্থনৈতিক চাকাও সচল রাখছে। আর এভাবেই সঠিক পদ্ধতিতে সর্ব ক্ষেত্রে রিসাইকেল করার ব্যবস্থা করা হলে আরো বেশি অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব।
পরিবেশ দূষণ হ্রাস : রিসাইক্লিং করে যেমন অর্থনৈতিক উপকারিতা পাওয়া যাচ্ছে তেমনি পরিবেশ কে বিভিন্ন রকম দূষণের হাত থেকেও রক্ষা করা হচ্ছে। রিসাইকেল করার ফলে প্রতিদিন যে পরিমাণ বর্জ্য দেশের আনাচকানাচে ফেলা হতো তা ফেলা হবে না বা তার পরিমাণ অনেকাংশেই কমে যাবে, যেটা পরিবেশ দূষণ রোধে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে। পানি খাওয়ার পর যে বোতলটি ফেলে দিয়ে পরিবেশ দূষণ করা হতো, সেই প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে রিসাইকেল করার মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে ফাইবার। হ্যাঁ, অবাক হলেও সত্য । এই ফাইবার দিয়ে সুতা বানিয়ে রঙ-বেরঙের পলিস্টার কাপড় তৈরি হচ্ছে।
নতুন পণ্যের উৎপাদন খরচ হ্রাস : পুরাতন জিনিস কে প্রক্রিয়াজাত করে নতুন ভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয় বিধায় খরচ অনেকাংশেই হ্রাস এবং পাশাপাশি সময়ও কম খরচ হয়। এটি রিসাইক্লিং এর উপকারিতা গুলোর অন্যতম, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে কম খরচের এবং কম সময়ের তৈরি করা যাবে এমন পন্যের প্রাধান্য বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে সহায়তা : রিসাইক্লিং যেহেতু পরিবেশ কে বিভিন্ন প্রকার দূষণ থেকে রক্ষা করে, তাই এটি দূষণ কমানোর মধ্য দিয়ে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব কমাতে সাহায্য করে এবং জলবায়ু প্রতিরোধ করে।
এসব ছাড়াও আরো নানা ভাবে রিসাইকেল এর উপকারিতা ভোগ করা হয়, তাই বাংলাদেশের মতো ঘনবসতি পূর্ণ দেশে প্রতিদিনকার যে অগণিত বর্জ্য আছে সেসব সঠিক পদ্ধতিতে রিসাইক্লিং করার ব্যাপারে সমস্বরে আওয়াজ তুলতে হবে এবং সঠিক এবং যথোপযুক্ত পদ্ধতিতে রিসাইক্লিং করার মাধ্যমে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত করতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী।