ভিয়েতনামে ইসলামের আবির্ভাব বেশ বৈচিত্রময়। নানা চড়াই-উৎরাই-এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে ইসলাম ও মুসলমানরা রীতিমত উদীয়মান শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দেশটিতে প্রতিনিয়তই মুসলমানদের সংখ্যা গাণিতিকহারে বেড়েই চলেছে। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভিয়েতনামে ইসলাম চাম জনগণের ধর্ম; যারা অস্ট্রোনেশিয়ান সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর অংশ। দেশটির এক-তৃতীয়াংশ মুসলমান অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্র্ভূক্ত।

ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনে আফফান ৬৫০ খ্রীস্টাব্দে ভিয়েতনাম ও তাং রাজবংশের শাসনামলে চীনে প্রথম সরকারী মুসলিম দূত পাঠান। ৯ম এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে বিভিন্ন আরব ভৌগোলিক আধুনিক কালের পূর্ব ইন্দোচীনকে কিমার, সানফ (চাম) এবং লুকিন (ভিয়েতনামি) এর ভূমি হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সে সময় ভিয়েতনাম তাং চীনের শাসনাধীন ছিল।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে চম্পার (পান্ডুরঙ্গা) সাথে ইসলামী সালতানাতের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছিলো। চামের গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, চম্পায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার মক্কার এক রাজকুমারী এবং কেলান্তান থেকে দু’ মালয়ী রাজপুত্রের মাধ্যমে শুরু হয়। রাজকন্যা যখন তার মাতৃভূমিতে ফিরে যান, তখন তার চাম প্রেমিক তার পূর্বপুরুষদের ধর্ম পরিত্যাগ এবং ইসলাম গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই চাম রাজা পো রোম (১৬২৭-৫১) মালয় রাজপুত্রদের পরামর্শে চাম সমাজে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে চাম প্রথা অনুসারে মিশ্র বিবাহের ধারণা গ্রহণ করেছিলেন।

১৫৮০-এর দশকের শেষের দিকে একটি স্প্যানিশ রেকর্ডে বলা হয়েছে, ‘অনেক মুসলমান চম্পায় বাস করতেন। সেখানকার হিন্দু রাজা ইসলামের প্রচার ও প্রসারে কোন বাধা প্রদান করেন নি। ফলে সেখানে হিন্দু মন্দিরের পাশাপাশি অনেক মসজিদও গড়ে উঠেছিলো এবং কুরআন-সুন্নাহর চর্চার পরিসর বৃদ্ধি পেয়েছিলো। ফলে দেশটিতে শুরু হয়েছিলো ইসলামের নির্বিঘ্ন পথচলা।

ইউরোপীয় মিশনারিরা ১৬৭০-এর দশকে বর্ণনা করেছিলেন যে, চম্পায় বসবাসকারী বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম। সেখানে একজন মুসলিম সুলতান এবং একটি মুসলিম আদালতও বিদ্যামান ছিলো। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে পান্ডুরঙ্গা রাজা পো সাউত (১৬৫৯-১৬৯২) জাভার ডাচদের কাছে লেখা চিঠির মাধ্যমে সেরি সুলতানের সাথে সম্পর্কের সূচনা করেন। গুয়েন ১৬৯০-এর দশকে পান্ডুরঙ্গা আক্রমণ এবং চাম রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়, ফলে চাম এবং মালয়দেরইসলামী বিশ্বের সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৮০০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ওল্ড চম্পা (মধ্য ভিয়েতনাম)-এর বেশিরভাগ চাম মুসলিম শিয়া ধর্ম অনুশীলন করছিলেন। এদিকে কম্বোডিয়ান এবং মেকং ডেল্টা চামসের বেশিরভাগই অর্থোডক্স সুন্নি মুসলমান হয়ে ওঠেন।

১৮৩২ সালে ভিয়েতনামের সম্রাট মিন মং শেষ চম্পা রাজ্য দখল করেন। মিন মাং বানি এবং বালমন উভয় চাম ধর্মকে নিষিদ্ধ করেন। মসজিদগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে কেলান্টনে শিক্ষিত চাম মুসলিম নেতা কাটিপ সুমাত ভিয়েতনামীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য ভিয়েতনামীরা চাম মুসলমানদের টিকটিকি এবং শূকরের মাংস এবং চাম হিন্দুদের গরুর গোস্ত খেতে বাধ্য করে এবং ভিয়েতনামের সংস্কৃতির সাথে তাদের আত্মস্থ করার চেষ্টা করা হয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে অনেক চাম মুসলিম কম্বোডিয়া থেকে চলে আসেন এবং মেকং ডেল্টা অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেন। যা ভিয়েতনামে ইসলামের উপস্থিতিকে আরও জোরদার করে তোলে। ১৮৮৫ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে হ্যানয়ের একমাত্র মসজিদ হ্যাং লুওক স্ট্রিটের আল-নূর মসজিদ, যা স্থানীয় ভারতীয় দ্বারা নির্মিত হয়। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইসলাম চামদের উপর ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। ধর্মীয় লেখাগুলো মালয় থেকে আমদানি করা হতো; মালয় আলেমরা মালয় ভাষায় মসজিদে খুতবা দিতেন; এবং কিছু চাম লোক মালয় মাদ্রাসায় গিয়ে ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করতেন। মেকং ব-দ্বীপও মালয় মুসলমানদের আগমন হয়েছিল।

১৯৫০-এর দশকে সাইগন (ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্র, আরভিএন) সরকার উত্তর কিনহ উদ্বাস্তুদের জন্য সংখ্যালঘুদের জমি দখল করার সাথে সাথে চাম এবং আদিবাসীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মনোভাব বৃদ্ধি পায়। চাম মুসলিম ও হিন্দুরা চাম স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মুসলিম লেফটেন্যান্ট-কর্নেল লেস কোসেমের নেতৃত্বে চ্যাম লিবারেশন ফ্রন্ট (Front de Liberation du Champa, FLC) গঠন করে। চ্যাম লিবারেশন ফ্রন্ট মন্টেগনার্ডস এবং খেমার ক্রোমের সাথে যোগ দেয় এবং ভিয়েতনামীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিপীড়িত জাতিগুলির মুক্তির জন্য ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন করে (Front Uni de Lutte des Races Opprimées, FULRO)।

১৯৬০-এর দশকে এবং ১৯৭৫ সালের আগে, বানি আওয়াল এবং চাম সুন্নিদের মধ্যে নিনহ থুয়ান এবং বিনহ থুয়ানে ধারাবাহিক উত্তেজনা ও সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়। সমস্যাগুলি চাম সুন্নিদের মধ্যে ইসলামের আরও সঠিক বৈচিত্র্যকে উন্নীত করার প্রচেষ্টার কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। সুন্নিরা মনে করতো যে বানিরা কুরআনের প্রকৃত শিক্ষাকে সমর্থন করছে না। এ প্রচেষ্টার জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং সক্রিয় সংগঠন ছিল হাইপ হুই চি চিম হ’ল গি গিও ভিয়েত ন্যাম (ভিয়েতনামের চাম মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন)। এসোসিয়েশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল চাম মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যান্য ইসলামী দেশ, বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সাথে সম্পর্ক প্রসারিত করা, যার ফলে ভিয়েতনামের নতুন সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সরকার সতর্কতার সাথে প্রতিক্রিয়া জানায়। এমনকি ভিয়েতনাম ১৯৯৫ সালে আসিয়ানে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে পুনরায় যোগ দেয়।

১৯৭৬ সালে ভিয়েতনামে সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর, ৫৫,০০০ চাম মুসলমানের মধ্যে কেউ কেউ মালয়েশিয়ায় অভিবাসিত হোন। এছাড়াও ১,৭৫০ জনকে ইয়েমেন অভিবাসী হিসেবে গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে বেশি বসতি স্থাপন করা হয়েছে তা’ইজে। যারা রয়ে গেছেন তারা সহিংস নিপীড়নের শিকার হননি। যদিও কিছু লেখক দাবি করেন যে, তাদের মসজিদগুলি সরকার বন্ধ করে দিয়েছিলো। ১৯৮১ সালে ভিয়েতনামে বিদেশী দর্শনার্থীদের তখনও আদিবাসী মুসলমানদের সাথে কথা বলার এবং তাদের সাথে প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়া হতো এবং ১৯৮৫ সালের একটি বিবরণে হো চি মিন সিটির মুসলিম সম্প্রদায়কে বিশেষভাবে জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। চাম জনগণ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ান, মালয়, বাংলাদেশী, পাকিস্তানি, ইয়েমেনি, ওমানি এবং উত্তর আফ্রিকানরাও ছিল; সে সময় তাদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার।

ভিয়েতনামের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদটি ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে জুয়ান লক, ইয়াং নাই প্রদেশে খোলা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর নির্মাণ আংশিকভাবে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে অনুদান দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল। মূলত, অনেক আগে থেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে ভিয়েতনামের একটি শক্তিশালী ও ঐতিহাসিক বন্ধন রয়েছে।

চাম এডভোকেসি গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল অফিস অফ চম্পা (আইওসি-চম্পা) এবং চাম মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট খলিলাহ পোরোমের মতে, চাম হিন্দু এবং মুসলিম উভয়ই বর্তমান ভিয়েতনামী সরকারের অধীনে তাদের বিশ্বাসের উপর ধর্মীয় ও জাতিগত নিপীড়ন এবং সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছে।ভিয়েতনাম চামদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস পালন করতে বাধা দিচ্ছে। ২০১০ এবং ২০১৩ সালে থানহ তিন এবং ফক নন গ্রামে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছিল যেখানে চামদেররকে ভিয়েতনামীর নির্বিচারে হত্যা করেছিলো। ২০১২ সালে চাউ জিয়াং গ্রামে ভিয়েতনামী পুলিশ একটি চাম মসজিদে হামলা চালায় এবং সেখান থেকে বৈদ্যুতিক জেনারেটর চুরি করে। মেকং ব-দ্বীপের চাম মুসলিমরাও অর্থনৈতিকভাবে একেবারে প্রান্তিকতায় এসে পৌঁছেছে। জাতিগত ভিয়েতনামীরা রাষ্ট্রীয় সহায়তায় চাম জনগণের মালিকানাধীন জমিতে বসতি স্থাপন করেছে।

১৯ সালের এপ্রিলে ভিয়েতনামের আদমশুমারিতে ৬৩,১৪৬ জন মুসলমানকে দেখানো হয়েছিল। ৭৭% এরও বেশি দক্ষিণ মধ্য উপকূলে বসবাস করত, ৩৪% নিনহ থুয়েন প্রদেশে, ২৪% বিনহ থুইন প্রদেশে, এবং ৯% হো চি মিন সিটিতে; অন্য ২২% মেকং ডেল্টা অঞ্চলে বসবাস করত। মাত্র ১% মুসলমান দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বাস করত।

১৯৭৫ সালের আগে দেশটির প্রায় অর্ধেক মুসলমান মেকং ব-দ্বীপে বাস করতেন এবং ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে হো চি মিন সিটিতে মুসলিম সম্প্রদায় প্রায় ১০ হাজার লোক নিয়ে গঠিত ছিল বলে জানা গেছে। ৫ বছরের বেশি বয়সী মুসলিম জনসংখ্যার ৫৪,৭৭৫ জন সদস্যের মধ্যে, ১৩,৫১৬ জন বা ২৫% বর্তমানে স্কুলে পড়াশোনা করছে, ২৬,১৩৪ জন বা ৪৮%, অতীতে স্কুলে গিয়েছিল, এবং অবশিষ্ট ১৫,১২১ জন, বা ২৭%, সাধারণ জনসংখ্যার ১০% এর তুলনায় কখনও স্কুলে যায়নি। এটি ভিয়েতনামের সমস্ত ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানদের স্কুলে অনুপস্থিতির হার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (প্রোটেস্ট্যান্টদের জন্য সর্বোচ্চ হার ৩৪%)। স্কুলে অনুপুস্থিতির হার পুরুষদের জন্য ২২% এবং মহিলাদের জন্য ৩২%। এছাড়াও মুসলমানদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার সবচেয়ে কম ছিল, যেখানে ১% এরও কম উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল, যা সাধারণ জনসংখ্যার মাত্র ৩%।

ভিয়েতনামে দু’টি মুসলিম গ্রুপ রয়েছে। সুন্নি মুসলিম এবং বানি চাম মুসলিম। বানি শাখাকে অপ্রচলিত বলে মনে করা হয়। কারণ এর অনুশীলনগুলো মূলধারার ইসলাম থেকে আলাদা। মূলত, এটি চাম লোকবিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত। চাম বানি মুসলমানরা সম্পূর্ণরূপে জাতিগত চামদের নিয়ে গঠিত। বানি সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা প্রায় ৬৪,০০০। এদের মধ্যে ৪০৭ জন আলেম। বানি ধর্মীয় নেতাদের কাউন্সিল দ্বারা সংগঠিত হয়। সুন্নি সম্প্রদায় জাতিগত বৈচিত্রের দিক দিয়ে (চাম, ভিয়েত, মালয়, খেমার, চীনা এবং আরব) বৃহত্তর। ২০০৬ সালে তাদের জনসংখ্যা ছিল ২৫,০০০; বেশিরভাগই মেকং ডেল্টার দক্ষিণ-পশ্চিমে বসবাস করে, পাশাপাশি হ্যানয় বা হো চি মিন সিটির মতো শহুরে অঞ্চলেও তাদের উপস্থিতি রয়েছে।

মূলত, ভিয়েতনামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। ভিয়েতনামের ৬টি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানরাই হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ি প্রায় ১০ কোটি অধিবাসীর দেশ ভিয়েতনামে মুসলমানের সংখ্যা ১ লাখের কিছু বেশি। পুরো ভিয়েতনামে মসজিদ রয়েছে মাত্র ৭৯টি। যার অধিকাংশই দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থিত। সম্প্রতি ভিয়েতনামের চিয়াওডক শহরের গিয়াং প্রদেশে উদ্বোধন করা হয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদটি তুরস্কের একটি সাহায্য সংস্থার উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে। দ্বিতল এ মসজিদে একসঙ্গে ১২শ’ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ভিয়েতনামের মুসলমানরা সবচেয়ে ছোট জনগোষ্ঠীর হলেও তাদের ধর্মচর্চার পরিধি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে এবং স্থানীয় ভাষায় পবিত্র কুরআন ও ইসলামী গ্রন্থাদি অনুদিত হয়েছে। প্রথমদিকে চাম মুসলমানরা এখানে কাঠ ও খড়ের ছাউনি দিয়ে ঘর নির্মাণ করেন। ১৯৯০-এর দশকে এখানে বিদ্যুৎ সুবিধা সংযুক্ত হয়। এর অনেক পরে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। যার মাধ্যমে মূল শহরের সঙ্গে এর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে ১৬টির মতো মসজিদ রয়েছে। চামদের অঞ্চলে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও রেডক্রিসেন্টের অর্থসাহায্য ২০০৬ সালে জামিউল আনোয়ার মসজিদটি পুনঃনির্মিত হয়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সমর্থন পেলেও চাম মুসলমানরা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গেই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে থাকেন। অনেক বয়স্ক মুসলমান পবিত্র হজব্রত পালন করেছেন। অধিকাংশ মুসলমানের নাম আরবিতে রাখা হয়। চাম মুসলিম মহিলারা সাধারণ হিজাব ও টিলেঢালা পোশাক পরেন। যা তাদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়।

ভিয়েতনামী মুসলানরা দেশটির অতিক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী। ১০ কোটি মানুষের দেশে তাদের সংখ্যা মাত্র ১ লাখ। কিন্তু তারপরও দেশটির মুসলমানরা তাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, বোধ-বিশ্বাস,তাহজিব-তামুদ্দন অনুসরণে আপসহীন। তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই নিজস্ব স্বকীয়তা রক্ষা করেই চলছেন। এমতাবস্থায় ভিয়েতনামে ইসলাম একটি দ্রুত বর্ধনশীল ধর্মে পরিণত হয়েছে। এখানকার মুসলমানরা খুবই ধর্মপরায়ন ও আত্মবিশ্বাসী। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানরা সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে বলেই সংশ্লিষ্টদের বিশ্বাস।

[email protected]