বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দীর্ঘ ৭৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আলোচিত দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দলটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু চলতি মাসের ১২ তারিখে ঐতিহাসিক একটি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে সকল ধরনের কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। প্রাচীন একটি দলের এমন করুণ পরিণতি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের জন্য নয় বরং বাংলাদেশসহ বিশ্ব রাজনীতির পরিসরেও এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এর মধ্যে সকল রাজনৈতিক দলের জন্যই বার্তা রয়েছে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালিদের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে দলটি গঠিত হয়। ১৯৫৫ সালে নাম থেকে “মুসলিম” শব্দ বাদ দিয়ে “আওয়ামী লীগ” রাখা হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় দেশজুড়ে উত্তাল আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয় দলটি। এর আগে ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণভ্যুত্থানেও আওয়ামী লীগের ভূমিকা ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পায় এবং দলটি নতুন রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করে। কিন্তু প্রবল জনপ্রিয় এ দলটি মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে অজনপ্রিয় ও জনবিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়।

১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একদলীয় শাসনব্যবস্থা “বাকশাল” প্রবর্তন এবং পরবর্তী সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্যে ফাটল ধরে। এরপর ২১ বছর বাংলাদেশের মানুষের কাছে দলটি আর গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ’৯১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু সে স্বপ্নও দলটির পূরণ হয়নি। এরপর তাকে পুনরায় রাজপথে নামতে হয়। এবার আন্দোলনের অংশীদার হিসেবে বেছে নিতে হয় আওয়ামী বলয়ের একদমই বিপরীত ধারার দল জামায়াতে ইসলামীকে। দলের বামঘেঁষা ও সেকুলার নেতাকর্মীরা এর বিরোধিতা করলেও কিংবা নানা সময়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালালেও ’৯৪ সালের কথিত মাগুরা নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলনে শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ নেতারা জামায়াতকে সাথী বানানোর ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেনি। জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের সে সময়কার বৈঠক ও সমাবেশের অজস্ত্র ছবি এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়ায়।

’৯৬ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি একটি বিতর্কিত নির্বাচন করেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। এরপর তারা ক্ষমতায় এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পাস করে। ফলে সে সময়ে বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ বাড়তি সুবিধা পায়। এরপরও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা জাতির কাছে বিগত সময়ের তার দলের সকল ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে আরো একবার ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জনসমর্থন কামনা করেন। সে যাত্রায় জনগণ সাড়া দেয় এবং ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার সুযোগ পায়। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ আবারও জনগণের মাধ্যমে প্রত্যাখাত হয়। ক্ষমতায় আসে চারদলীয় জোট সরকার। ২০০৬ সালে জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আওয়ামী লীগ দেশজুড়ে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজপথে লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে কয়েক ডজন মানুষ হত্যা করে। নিহতদের সিংহভাগ ছিল জামায়াত-শিবিরের কর্মী। এর কয়েকদিন শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদেরকে লগিবৈঠা নিয়ে ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সঙ্গত কারণেই অনেকেই শেখ হাসিনাকে ২৮ অক্টোবরসহ সে সময়ের আন্দোলনে পরিচালিত নৃশংস কর্মকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে বিচারের দাবি তুলেছিল। কিন্তু সে চাওয়া কখনো পূরণ হয়নি।

২০০৮ সালে বিতর্কিত এবং পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২৮ অক্টোবরসহ সে সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সবগুলো মামলা তুলে নেয়। ক্ষমতায় আসার মাত্র দু’মাসের মধ্যে বিডিআর বিদ্রোহের নামে পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। ভিকটিমদের সহযোগিতা না নিয়ে একরকম দায়সাড়া কাজ করে আওয়ামী লীগ। সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচানোর সুযোগ থাকলেও সেনা সদস্যদের পিলখানার ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়নি তৎকালীন সরকার। প্রতিবেশি দেশের সংশ্লিষ্টতার তথ্য ভিকটিমদের পক্ষ থেকে আসলেও সে বিষয়টিও চেপে যাওয়া হয়। এর পরই শুরু হয় জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে ক্র‍্যাকডাউন। সে ধারাবাহিকতায় প্রথমে শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়। দলীয় সকল অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়। তৃণমূল পর্যন্ত জনশক্তিদের আটক, গ্রেফতার, গুম ও খুন করা হয়। বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষ ৫ নেতাকে হত্যা করা হয়। জেলে ও হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা যান দলটির আরো ৬ নেতা।

বিএনপি, জামায়াত এবং অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে মামলা, গ্রেফতার এবং হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ ও সরকারসমর্থক সংগঠনগুলোর হাতে বিরোধী দলের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন অহরহ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে আওয়ামী লীগ কয়েক হাজার গায়েবি মামলা দায়ের করে। বিরোধী দলের অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহসহ নানা অভিযোগে মামলা দায়ের ও সাজা প্রদান করা হয়।

বিরোধী দল যখনই বড় ধরনের গণসমাবেশ বা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে, তখন প্রশাসন নানা অজুহাতে অনুমতি দেয়নি বা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে। সমাবেশের আগে-পরে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। বহু বিক্ষোভে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির মাধ্যমে ভিন্নমত দমন করা হয়েছে। ভিন্ন মতাবলম্বী মিডিয়াকে বন্ধ করে দেওয়া বা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয় আওয়ামী আমলে। আওয়ামী আমলে দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভি, চ্যানেল ওয়ান, সিএসবি নিউজসহ অনেকগুলো অনলাইন পোর্টাল ব্লক বা নিয়ন্ত্রণ করার ঘটনাও ঘটেছে।

আওয়ামী লীগ জাতির সাথে সবচেয়ে বড়ো যে প্রতারণাগুলো হয়েছে তাহলো তারা গত ১৫ বছরের শাসনে আওয়ামী লীগ দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনটি বিএনপি ও অধিকাংশ বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে। ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা। ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এটিকে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলেছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের দিনেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক কারচুপি, ভুয়া ভোট, ব্যালট বাক্স ভর্তি, কেন্দ্র দখলসহ নানাবিধ অভিযোগ ওঠে। নির্বাচন আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার ঘটনা সংবাদমাধ্যম ও বিদেশি গণমাধ্যমেও আসে। বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাত্র ৭টি আসন পায়, যা “অবিশ্বাস্য” বলে অনেকে মন্তব্য করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ এ নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের নির্বাচনটাও বিএনপিসহ বেশিরভাগ বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়, অনেকেই গা-ঢাকা দেন। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিরোধী দল নির্বাচনে না যাওয়ায় আওয়ামী লীগ নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকেই ডামি বিরোধী প্রার্থী হিসেবে সেট করে। এভাবে আমি-ডামির নির্বাচনটি করে আওয়ামী লীগ জণগণের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র ও তরুণদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া আন্দোলন, যা “জুলাই আন্দোলন” নামে পরিচিত, সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তীতে ব্যাপক রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। এ আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে। এ সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে আগস্ট ২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সরকার গঠনের পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ছিল। নানা সময়ে এ দাবি উঠলেও পরবর্তীতে আবার তা স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হয়।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সরকার ২০২৫ সালের মে মাসে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর সংশোধনী প্রণয়ন করে। এ সংশোধনী অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকলে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। এর আলোকেই অন্তর্বর্তী সরকার ১২ মে তারিখে প্রজ্ঞাপন দিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়। সরকারি প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়: ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহত্যা, বেআইনি আটক, অমানবিক নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, সাক্ষীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে এবং সামাজিক মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রচার করছে। এমন বাস্তবতায় বিচারকাজ নির্বিগ্ন করা এবং সাক্ষীদের নিরাপত্তাসহ নানা লক্ষ্য নিশ্চিত করার জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো।

নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপট অবশ্য তৈরি হয়েছিল কয়েকদিন আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী অনলাইনে দলের নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠকে ক্রমাগত উস্কানি দিয়ে যাচ্ছিলেন। আওয়ামী লীগের খুনী ও সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিল। জুলাই বিপ্লবের শহীদের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় যার ফলশ্রুতিতে মেয়েটি পরে আত্মহত্যা করে। ট্রাইবুনালে বিচারের মুখোমুখি হওয়া নেতারা প্রকাশ্যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে বেয়াদবি ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণ করেন। সমন্বয়কদের ওপর পরিকল্পিতভাবে আক্রমণ করা শুরু হয়। তাদের গাড়ি বহরে হামলা করা হয়। সবকিছু মিলিয়েই জনগণ ক্ষোভে ফুসছিল। কিন্তু এ অসন্তোষ একদিনে তুঙ্গে উঠে যায় যখন আওয়ামী আমলের দু’মেয়াদের প্রেসিডেন্ট এবং হত্যা মামলার আসামী এডভোকেট আব্দুল হামিদের দেশে ছেড়ে চলে যাওয়ার খবরটি গোচরে আসে। এ তথ্যটি সামনে আসার পর এ সরকার ও প্রশাসনের ভেতর আওয়ামী দোসরদের অবস্থানের বিষয়টি জোরেশোরে আলোচনা শুরু হয়। এরপরই পরিস্থিতি এমন হয়ে যায় যে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা ছাড়া জুলাই বিপ্লবের ফলাফল বেহাত হওয়ার শংকা দেখা দেয়।

এমনই একটি পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষ নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে গণজমায়েতের ঘোষণা দেন। প্রথমে অন্যান্য সব ছাত্র সংগঠন এসে সেখানে সমবেত হয়। আর পরের দিন সকাল থেকেই মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। কেবলমাত্র বিএনপি সরাসরি এ আন্দোলনে অংশ না নিয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ইস্যুতে বরাবরই বেশ কৌশলী ভূমিকা পালন করে। তিনদিনের আন্দোলন যমুনা থেকে একটা সময়ে শাহবাগে চলে যায়। সেখানে দেড়দিন আন্দোলন চলার পর আবারও এসে আন্দোলনটি তৃতীয় রাতে এসে সমবেত হয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে। এরকম একটি সময়ে উপদেষ্টা পরিষদ জানায়, তারা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সোমবার এ বিষয়ে সরকারী প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

অবশেষে ১০ মে শনিবার, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস থাকার পরও জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে যে কোনো দলের পরিণতি কতটা করুণ হতে পারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম এরই একটি প্রমাণ হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে। আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলমান, যা নিষেধাজ্ঞার স্থায়িত্ব নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, এ সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সময়ই বলে দেবে।