॥ সৈয়দ মাসুদ মোস্তফা ॥
পাক-ভারত যুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চলছে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে। রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে দীর্ঘ মেয়াদে। উভয় দেশ শক্তির দিক থেকে অসম হলেও এ যুদ্ধ কিন্তু একতরফা হয়নি। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও সাধারণ জনতা রাশিয়াকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়নি। শুরুর দিকে সামরিক বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছিলেন যে, এ যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে বিজয়ী হওয়া বা বেশিদিন লড়াইয়ে টিকে থাকার কোন সম্ভবনা নেই বরং এক অনিবার্য পরিণতিতে তাদেরকে পরাজয় বরণ করতে হবে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ যুদ্ধ চললেও অপেক্ষাকৃত দুুর্বল প্রতিপক্ষ ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে এখনো টিকে আছে। আর সহসাই যে এ যুদ্ধের কোন পরিসমাপ্তি ঘটবে এমনটা মনে হচ্ছে না।
সম্প্রতি হঠাৎ করেই সন্ত্রাসবাদী অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়ে বসে। এতে ইরানের বেশকিছু সংখ্যক সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। ইসরাইল ও দেশটির মিত্রশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধরেই নিয়েছিলো হামলার পাল্টা জবাব দেওয়া বা প্রতিশোধ গ্রহণ করা ইরানের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয় বরং তারা ইসরাইলের কাছে রীতিমত আত্মসমর্পণ করে বসবে। কিন্তু তাদের সকল হিসাবে-নিকাশ ভুল প্রমাণ করে ইরান এ হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে। শুধু জবাবই দেয়নি বরং ১২ দিনের হামলা-পাল্টা হামলা ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব ও বন্দর নগরী হাইফাতে রীতিমত তা-ব চালিয়েছে। ইরান যে এ যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়নি এমন নয়। তবে ইসরাইল বা তাদের মিত্রশক্তি যা ভেবেছিল তা কিন্তু হয়নি বরং ইরানের উপর্যুপরি হামলায় জায়নবাদীরা একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আর ইরানী হামলার তা-ব থেকে ইসরাইলকে রক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও তেহরানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে হয়েছিলো। কিন্তু তবুও ইরানকে দমানো যায়নি বরং যুদ্ধের সাময়িক ইতি টেনে যুদ্ধবিরতি মানতে হয়েছিলো উভয় পক্ষকেই। কিন্তু এর মধ্যে হয়েছিলো বেশকিছু বেসামরিক লোকের প্রাণহানি। বোমা হামলায় উভয় পক্ষের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রীতিমত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিলো।
মূলত, কোন যুদ্ধই সামরিক লাখ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সঙ্গত কারণেই সকল যুদ্ধেই প্রচুর বেসামরিক লোকের হতাহতের ঘটনা ঘটে থাকে। যেমনটি আমরা চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে প্রত্যক্ষ করছি। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ইতিমধ্যেই উভয়পক্ষের বিপুলসংখ্যক সৈন্যের প্রাণহানি ঘটেছে। ইউক্রেনের অনেক সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনা মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি শিশু ও মাতৃসদনও। সর্বোপরি বেসামরিক স্থাপনাও ছিলো হামলার লক্ষ্যবস্তু।
বস্তুত, এ ভূম-লকে সৃষ্টিই করা হয়েছে সৃষ্টিকূলের অনুকূল ও বসবাসের উপযোগী করে। শুধু জীবের জীবন ধারণ নয় বরং জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতে যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই আছে এই নশ্বর পৃথিবীতে। এ সৃষ্টিনিচয়কে যে সর্বাঙ্গ সুন্দর, সাবলীল ও অতিশয় সমৃদ্ধ করে সৃষ্টি করা হয়েছে তা সার্থকভাবেই ফুটে উঠেছে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধন-ধান্যে পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ কবিতাংশে। যা সমঝদার কাব্য প্রেমিকদের মনে এক নির্মোহ আবেদন সৃষ্টি করে।
মানুষের কল্যাণেই সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটেছে। আর অনুসন্ধিৎসা ও নতুন কিছু করার ইচ্ছা মানুষের চিরন্তন। সে অনুসন্ধিৎসা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যও এসেছে। সে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালেই মানুষ চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছে। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে তারা মঙ্গলগ্রহে অবতরণ করতে সক্ষম হবেন। এমনকি পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহকে মনুষ্য বসতির জন্য উপযোগী করার চেষ্টাও করছেন তারা। কিন্তু নির্জীব চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহকে সজীব করার জন্য মানুষ যতটা তৎপর কিন্তু সুজলা ও সুফলা বসুন্ধরার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্রে তারা ততটাই উদাসীন। সম্প্রতি ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ সে কথার প্রতিই অঙ্গুলি নির্দেশ করে।
চন্দ্র ও মঙ্গল পৃষ্ঠকে জীবন ধারণের উপযোগী করার চেষ্টায় অঢেল অর্থও ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু পৃথিবী নামক এ গ্রহটি যে পরিবেশ বিপর্যয় ও সংঘাতের মুখোমুখি হয়ে ক্রমেই মনুষ্য বসতির অনুপযোগী হয়ে উঠছে তা নিয়ে সেভাবে ভাবা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণেই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global Warming) ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব রীতিমত উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণকারী বস্তুর নিঃসরণ; বিশেষত সালফেট কণা শৈত্যয়ন ক্রিয়া সৃষ্টি করছে। যা পৃথিবীর বৈশিষ্ট্য ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য শুধু ক্ষতিকরই নয় বরং উদ্বেগজনকও।
গ্রীন হাউস ইফেক্ট বা বৈশ্বিক উষ্ণায়নই যে শুধু পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও সভ্যতার জন্য হুমকি এমন নয় বরং বিশ্বরাজনীতিতে সংঘাত ও শক্তির প্রতিযোগিতাও বড় হুমকী হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব পরাশক্তিগুলো এখন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় বেশ পুলকবোধ করে। যুদ্ধ বা সমর বলতে রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় পক্ষগুলোর মধ্যে সুসংগঠিত এবং কখনও কখনও দীর্ঘস্থায়ী সশস্ত্র সংঘর্ষকে বোঝানো হয়। চারিত্রিক দিক দিয়ে এটি প্রচ- সহিংস এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। তাই একটি শান্তির বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য যেখানে নিরস্ত্রীকরণ প্রয়োজন সেখানে বৈশ্বিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধের ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে বৈ কমছে না। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বিশ্বে সামরিক খাতে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর আরও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিরক্ষা বাজেটে আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে।
সুইডেনভিত্তিক স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড মিলিটারি এক্সপেন্ডিচার রিপোর্ট’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে উত্থান-পতন ও রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার পরও সামরিক খাতে ব্যয়ের দিক থেকে দেশটি বিশ্বে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। সামরিক ব্যয়ে সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র এবং এরপর চীন।
বিশ্বের শীর্ষ সামরিক শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর প্রতিরক্ষা খাতে তাদের ব্যয় ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়াচ্ছে। যার সর্বশেষ পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। এশীয় দেশ চীন সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। প্রতিরক্ষা খাতে দেশটি ২৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার খরচ করছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ইউরোপীয় দেশগুলো গত বছর সামরিক ব্যয় অনেক বাড়িয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। ন্যাটোভুক্ত অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, গ্রিস, ফ্রান্স ও এস্তোনিয়ার সামরিক ব্যয় গত বছর আরও বেশি বাড়ানো হয়েছে। আর ভারত সামরিক খাতে ব্যয় বাড়িয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
সামরিক সংঘাত বা যুদ্ধের ফল যে কখনো ভাল হয় না, নিকট অতীতে ফিরে তাকালেই তা ভালভাবেই উপলব্ধি করা যায়। যুদ্ধ শুধু মানুষের প্রাণহানিই ঘটায় না বরং মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করে। একই সাথে ব্যয় হয় প্রভূত অর্থের। যা শান্তির কাজে ব্যবহার হলে সভ্যতা আরও অনেক বিকশিত হওয়া সম্ভব ছিল। বিষয়টি আরও ভালভাবে উপলব্ধি করার জন্য অতীতের কিছু যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি রোমন্থন করা যেতে পারে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ : ১৯১৪-১৯১৮ সালে এ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ নিহত হন। ইউরোপকেন্দ্রিক এ যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন প্রায় ৭ কোটি সেনা। এদের মধ্যে প্রায় এক কোটির মৃত্যু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ : এ যুদ্ধ ১৯৩৯-১৯৪৫ সালে হয়েছে। এতে ৭ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিহত হয় । ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড দখল করেন। এর দুদিন পরেই ফ্রান্স এবং ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ধীরে ধীরে তা বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়।
তাইপিং বিদ্রোহ : ১৮৫১-১৮৬৪ সালে এ যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এতে ২ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। এটি চীনের সবচেয়ে বড় গৃহযুদ্ধ।
মোঙ্গল শাসনকাল : ১২০৭-১৪৭২ সালে সংগঠিত এ যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ৩ কোটি থেকে ৬ কোটি।
লুসান রেবেলিয়ন : ১৭৫৫-১৭৬৩ সালে সংগঠিত এ যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৬০ লখ। চীনে ট্যাঙ্গ এবং ইয়ান রাজবংশের মধ্যে সিংহাসন দখলের এই লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় দুই কোটি মানুষের।
কুইঙ্গ স¤্রাজ্যের পতন : এ যুদ্ধ ১৬১৬-১৬৬২ সংগঠিত হয়েছিলো। এতে মৃতের সংখ্যা ২কোটি ৫০ লাখ। চীনের সর্বশেষ রাজবংশ হল কুইঙ্গ। মিঙ্গদের আক্রমণে এই রাজবংশের পতন হয়।
তৈমুর লং : ১৩৬৯-১৪০৫ সালে এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো। এতে মৃতের সংখ্যা ১ কোটি ৫০ লাখ থেকে ২ কোটি।
দুনগান অভ্যুত্থান : ১৮৬২-১৮৭৭ সালে সংগঠিত এ যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ। চীনে দুনগান জাতি বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল কুইঙ্গ রাজবংশের বিরুদ্ধে।
রাশিয়ার গৃহযুদ্ধ : ১৯১৭-১৯২১ সালে সংগঠিত যুদ্ধে ৫০ লাখ থেকে ৯০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। বলশেভিক পার্টির অভ্যুত্থান এবং ক্ষমতা দখলের সেই গৃহযুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৯০ লাখ মানুষের।
নাপোলিওনিক যুদ্ধ : ১৮০৩-১৮১৫ সালে সংগঠিত হওয়া এ যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা ৩৫ থেকে ৭০ লাখ। এক সঙ্গে একাধিক দেশ নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল সেই সময়ে। প্রায় বারো বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে চলা সেই যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ৭০ লাখ মানুষের।
অতীতের কোন যুদ্ধই সভ্যতার জন্য সুখস্মৃতি বয়ে আনেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু হামলায় শুধুমাত্র হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ লোক নিহত হন। নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ লোক মারা যান এবং পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২,১৪,০০০ জন।
অতীতে যুদ্ধ নিয়ে এমন দুঃসহ স্মৃতির পরও বৈশ্বিক রাজনীতিতে যুদ্ধোন্মাদনা বন্ধ হয়নি। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখল ও ইউক্রেন যুদ্ধ, দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ, সম্প্রতি পাক-ভারত এবং ইরান-ইসরাইল-মার্কিন যুদ্ধই বলে দেয়, আগামী দিনে সশস্ত্র সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে প্রত্যেক দেশকে তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো যে দেশগুলো ইতোমধ্যেই সামরিক শক্তিমত্তায় বলিষ্ঠ অবস্থানে পৌঁছেছে, তাদের মাঝেও এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য এখন বিশ্বের সবচেয়ে সঙ্কটময় অঞ্চলের একটি। সিরীয় যুদ্ধ এ সঙ্কটকে আরও প্রকট করে তুলেছিলো। যাহোক সিরীয় যুদ্ধ আপাতত একটি পরিণতিতে উপনীত হয়েছে। কিন্তু এখনো পুরোপুরি শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে মনে করার কোন কারণ নেই। মূলত, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ও নিজেদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার তাগিদেই যুদ্ধের সংশ্লিষ্ট সব দেশই তাদের সামরিক ব্যয় বাড়াতে বাধ্য হয়। অর্থনীতিবিদ ন্যান তিয়ানের মতে, ‘শুধুমাত্র ২০১৬ সালে সিরিয়া যুদ্ধে ৪৬৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে রাশিয়া।’ প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালে মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় করেছে সৌদি আরব। ২০১৬ সালে এই ব্যয় ছিল ৯ শতাংশ। ইউরোপেও সামরিক ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, মধ্য ইউরোপীয় দেশগুলো ২০১৬ সালে আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিরক্ষা গবেষক সিমন উইজম্যানের দেয়া তথ্যমতে, রাশিয়া ২৭ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর পর ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোও অনেকটা একই কাজ করেছে।
আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানবসভ্যতাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তা সকল ক্ষেত্রেই মানবকল্যাণে ব্যবহার করা হয়নি বা এখনো হচ্ছে না। চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহে প্রাণের স্ফুরণ ঘটানোর পরিকল্পনা নিঃসন্দেহ ইতিবাচক। কিন্তু পৃথিবীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে সবার আগে। যখন এমন তাগিদই অনূভব করছেন বিশে^র শান্তিপ্রিয় মানুষ তখন ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসন, পাক-ভারত এবং ইরান-ইসরাইল-মার্কিন সংঘাত পুরো বিশ^ পরিস্থিতিকে নতুন করে অস্থিতিশীল ও অশান্ত করে তুলেছে। তাই সভ্যতাকে শান্তিময় ও আর্তমানবতার কল্যাণে বিকশিত করতে অবিলম্বে সকল প্রকার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ হওয়া উচিত। যুদ্ধের জন্য বরাদ্দ অর্থ মানবকল্যাণে ব্যয় করা সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। তাহলেই বিশে^ শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হবে। অন্যথায় সভ্যতা কখনোই বিশ^শান্তির নিয়ামক হবে না বরং পুরো বিশ^ই মেতে উঠবে যুদ্ধোন্মাদনায়। মানবসভ্যতাও পড়বে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে!