মানবসভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-শক্তিধর জাতি প্রায়ই দুর্বল জাতিকে পিষ্ট করেছে। ধর্মীয় ভিন্নতা ও মতপার্থক্যের কারণে সংঘাত জন্ম নিয়েছে এবং অধিকাংশ সাম্রাজ্য তাদের শত্রুদের রক্তের ওপর ভর করে গড়ে উঠেছে। তবে সবকিছুর মাঝেও মানব ইতিহাসে এক অসাধারণ ব্যতিক্রমের নামÑইসলাম। ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা যা শুরু থেকেই শান্তি, সহাবস্থান ও মানবিক মর্যাদার কথা বলেছে। ইসলামের সর্বশেষ নবী, আমাদের নেতা রাসূল (সা.) যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকেও ক্ষমা করেছেন। মানব ইতিহাসের শত-সহস্ত্র বছরের ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, ইসলামই একমাত্র সভ্যতা যার হাতে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পেয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। নির্মোহ ইতিহাস বারবার নিশ্চিত করেছে যে, মুসলমানদের শাসনে অমুসলিমরা কখনও গণহত্যা, ধর্মীয় নিপীড়ন বা জোরপূর্বক ধর্মান্তরের শিকার হয়নি বরং অনেক সময় মুসলমানদেরই রাজসভায় তারা উচ্চপদে থেকেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যে এগিয়ে থেকেছে, আর নিরাপদে নিজেদের ধর্ম পালন করেছে।
রাসূল (সা.) যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন শহরটি ছিল মুসলমান, ইহুদি ও পৌত্তলিক গোত্রের মিশ্র সমাজ। সেখানে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি প্রবর্তন করেন মদিনা সনদ-যা ইতিহাসের প্রথম লিখিত বহুজাতি সংবিধান। আলোচিত এ সনদে বলা হয়েছিল, “ইহুদিরা মুসলমানদের মতোই একটি সম্প্রদায়; তাদের ধর্ম তাদের জন্য, মুসলমানদের ধর্ম মুসলমানদের জন্য।” (সূত্র: ইবনে হিশাম, আস-সীরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ)
সনদের আরও একটি ধারা বলছে-“যে কেউ অন্যায়ের শিকার হবে, তার পাশে সবাই দাঁড়াবে, সে মুসলমান হোক বা না হোক।” এর মাধ্যমে নবীজি (সা.) স্পষ্ট করে দেন যে, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার ইসলামী রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি। এ ব্যবস্থায় কেউ কাউকে ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারত না, বরং সবাই ছিল আইনসম্মতভাবে রাষ্ট্রের সমান নাগরিক। ইসলামের মূল নীতিই হলো যে-“ধর্মে কোনো জবরদস্তি নেই” (সূরা আল-বাকারা, ২:২৫৬)। এ আয়াত শুধু তত্ত্ব নয়, রাসূল (সা.) নিজেই এর বাস্তবায়নও করে গেছেন। রাসূল (সা.) ঘোষণা করেছিলেন, “যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো অমুসলিম নাগরিককে কষ্ট দেবে বা হত্যা করবে, আমি কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব।” (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩১৬৬) অর্থাৎ নবী (সা.) ইসলামি রাষ্ট্রে ন্যায়বিচারের মানদণ্ড হিসেবে ধর্ম নয়, বরং মানবাধিকারকে ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। এ ঘোষণার বাস্তব রূপ দেখা গেছে তাঁর জীবনের অসংখ্য ঘটনায়। যেমন-
নজরান থেকে খ্রিস্টানদের একটি প্রতিনিধিদল যখন মদিনায় আসে, নবী (সা.) তাদের নিজস্ব উপাসনার অনুমতি দেন এবং মসজিদে নববীতে বসেই তারা নিজেদের ধর্মীয় রীতি পালন করে। রাসূল সা. খত-এ-মুয়াহিদুন নামে একাধিক অমুসলিম গোত্রের সঙ্গে চুক্তি করেন, যেখানে তাদেরকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছিল। নবীজি (সা.)-এর অবস্থান মুসলমান সমাজে অমুসলিমদের জন্য স্থায়ী নিরাপত্তার গ্যারান্টি হয়ে দাঁড়ায়। নবীজি সা. যতদিন শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলেন ততদিন মদিনায় মসজিদে নববির ছায়াতলেই অমুসলিম প্রতিনিধিদল আসত আলোচনা করতে, নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে, এমনকি নবী (সা.) নিজে তাদের জন্য জায়গা করে দিতেন। ইসলামী সমাজের উদারতার এটাই ছিল বাস্তব প্রকাশ।
মানবসভ্যতার ইতিহাসে যুদ্ধজয়ের পর প্রতিশোধ ও হত্যাযজ্ঞ সাধারণ ঘটনা। কিন্তু নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর মক্কা বিজয় তার সম্পূর্ণ বিপরীত। দীর্ঘ ২১ বছর ধরে নির্যাতিত হওয়ার পর যখন মুসলমানরা মক্কায় বিজয়ী হয়ে প্রবেশ করল, তখন কেউ ভাবেনি, এ দিনে প্রতিশোধ নয়Ñ বরং ক্ষমার বাণী ধ্বনিত হবে। অথচ এমনটাই হয়েছিল। রাসূল (সা.) বলেন: “আজ তোমাদের ওপর কোনো দোষারোপ নেই, তোমরা সবাই মুক্ত।” এ এক অনন্য উদাহরণ-যেখানে বিজয়ী জাতি বিনা রক্তপাতে শত্রুকে ক্ষমা করে দিল। ইতিহাসে এর সমকক্ষ উদাহরণ খুব কমই আছে। এরকম উদাহরণ আরো কিছু দেয়া যায়।
রাসূল (সা.) এর ওফাতের পর খলিফা উমর (রা.)-এর সময় যখন মুসলমানরা জেরুজালেম জয় করলেন, তখন খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা নিজেরাই শহরের চাবি উমরের হাতে তুলে দেন। উমর (রা.) সেদিন তাদের প্রতি যে আচরণ করেছিলেন, তা মানবতার ইতিহাসে সোনালী অধ্যায় হিসেবে লেখা আছে। তিনি ঘোষণা দেন: “ খ্রিস্টানদের জীবন, সম্পদ, গির্জা ও ক্রুশ সব নিরাপদ থাকবে। কেউ তাদের ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য করবে না।” (তথ্যসূত্র: তাবারি, তারিখুর-রুসুল ওয়াল-মুলুক) আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, উমর (রা.) যখন Church of the Holy Sepulcher নামের বিখ্যাত গির্জায় গিয়েছিলেন, তখন প্রার্থনার সময় উপস্থিত খ্রিস্টান নেতারা তাঁকে ভেতরে নামায পড়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এ বলে-“যদি আমি এখানে নামায পড়ি, ভবিষ্যতে মুসলমানরা হয়তো বলবে, উমর এখানে নামায পড়েছিলেন, তাই এ জায়গা এখন মসজিদ হওয়া উচিত।” একজন বিজয়ী শাসকের এ সংবেদনশীলতা আজও মানবতার এক শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। বিজয়ের পর দ্বিতীয় খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব স্থানীয় খ্রিস্টানদের সঙ্গে যে চুক্তি করেন, তা ইতিহাসে “আহদে উমর” নামে খ্যাত। এতে বলা হয়, “তাদের জীবন, সম্পদ, গির্জা, ক্রুশ ও ধর্মীয় রীতি সব নিরাপদ থাকবে। কেউ তাদের ক্ষতি করবে না বা ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করবে না।” (তথ্যসূত্র: তাবারি, তারিখুর রুসুল ওয়াল-মুলুক) এটি ইতিহাসের এমন এক শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর, যেখানে একটি ধর্মীয় নগর জয় হলো এক ফোঁটা রক্তপাত ছাড়াই।
ইসলামের ইতিহাসে গণহত্যার কোনো নজির নেই। বিশ্বের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় বিদ্বেষের জেরে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, জাতিগত নিধনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে এমন কোনো অধ্যায় নেই যেখানে মুসলমানরা শুধুমাত্র ধর্মের কারণে সংগঠিতভাবে অমুসলিমদের হত্যা করেছে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখলের পর প্রায় ৭০,০০০ মুসলমানকে হত্যা করে, এমনকি গির্জার ভেতরে আশ্রয় নেওয়া লোকদেরও রক্ষা করেনি। অথচ এ নির্মমতার ৮৮ বছর পর সালাহউদ্দিন আইউবী শহরটি পুনরুদ্ধার করলেও তিনি খ্রিস্টানদের হত্যা না করে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেন। ইতিহাসবিদ স্ট্যানলি লেন-পুল এ প্রসঙ্গে লিখেছেন-“সালাহউদ্দিন এমন উদারতা দেখিয়েছিলেন, যা ইউরোপীয় খ্রিস্টান বিজেতারা কখনো দেখাতে পারেনি।” ane- Poole, Saladin and the Fall of the Kingdom of Jerusalem).
১২৫৮ সালে মঙ্গলরা বাগদাদে প্রবেশ করে একদিনে লাখো মানুষ হত্যা করে, শহর ধ্বংস করে ফেলে। আবার ১৫শ শতকে স্পেনে রিকনকুইস্তা চলাকালে মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়, মসজিদগুলো আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়, হাজারো মানুষকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়। অন্যদিকে, ইসলামের ইতিহাসে কোনো ইহুদি বা খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় কারণে কোনো গণহত্যার উদাহরণ নেই।
এক্ষেত্রে আমরা মুসলিম স্পেন তথা আন্দালুসের দৃষ্টান্ত দিতে পারি। স্পেনের আন্দালুস ছিল একসময় মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগ। সেখানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানরা শতাব্দীর পর শতাব্দী পাশাপাশি বসবাস করেছিল, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে অবদান রেখেছিল। কর্ডোভা, গ্রানাডা, সেভিল্লাÑএই শহরগুলো হয়ে উঠেছিল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, যেখানে মুসলিম পণ্ডিতদের পাশাপাশি ইহুদি চিকিৎসক, খ্রিস্টান দার্শনিকও গবেষণা করতেন। ইতিহাসবিদ স্ট্যানলি লেন-পুল লিখেছেন, “মুসলমান শাসনের অধীনে ইহুদি জাতি এমন নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করেছে, যা তারা খ্রিস্টান শাসনের অধীনে কখনও পায়নি।” (তথ্যসূত্র: The Moors in Spain) মুসলিম শাসনের অধীনে আন্দালুস ছিল সহাবস্থান ও জ্ঞানের এক অনন্য কেন্দ্র। ইহুদি পণ্ডিত মাইমোনিডিস কর্ডোভায় চিকিৎসক ও দার্শনিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেনÑমুসলিম শাসকদের পূর্ণ সহযোগিতায়। ইতিহাসবিদ Karen Armstrong লিখেছেন-“ইসলামি শাসনের অধীনে ইহুদিরা ইউরোপের অন্য যেকোনো অঞ্চলের তুলনায় নিরাপদ ও মর্যাদাবান জীবনযাপন করেছিল।” (তথ্যসূত্র: History of God) কিন্তু মুসলমানদের পতনের পর, ১৪৯২ সালে যখন খ্রিস্টান শাসকরা গ্রানাডা দখল করে, তখনই শুরু হয় ভয়াবহ ইনকুইজিশন। মুসলমান ও ইহুদিদের নির্বিচারে হত্যা, ধর্মান্তর, এমনকি মসজিদ-সিনাগগে আগুন দেওয়ারও ঘটনা ঘটে।
এরপর আসা যাক উসমানীয় আমল প্রসঙ্গে। প্রায় ছয় শতাব্দী ধরে উসমানীয় সাম্রাজ্য (Ottoman Empire) ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বিশাল অঞ্চল শাসন করেছে। সেখানে ইহুদি, খ্রিস্টান, কপ্টিক, আরমেনীয়, কুর্দিসহ অসংখ্য জাতি শান্তিতে বাস করত। ইউরোপে যখন ইহুদিদের নির্যাতন করা হচ্ছিল, তখন উসমানীয় খলিফারা নিজ ভূখন্ডে ইহুদিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। ১৪৯২ সালে স্পেন থেকে বিতাড়িত ইহুদিরা আশ্রয় পেয়েছিল তুরস্কে। খলিফা দ্বিতীয় বায়েজিদ ঘোষণা দিয়েছিলেন- “স্পেনের রাজা যদি তার দেশ ধ্বংস করে থাকে, আমি তাদের ধনসম্পদ ও জ্ঞান অর্জন করছি।” এ উদারতাই ইসলামের প্রকৃত চিত্র। ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিকদের বলা হয় “আহলে যিম্মা”-যারা রাষ্ট্রের সুরক্ষায় বসবাস করে এবং মুসলমানদের মতোই নাগরিক অধিকার ভোগ করে। রাসূল (সা.) বলেন, “যে কেউ কোনো অমুসলিম নাগরিককে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, তার বিরুদ্ধে আমি নিজেই বিচার দাবি করব।” (আবু দাউদ, হাদিস ৩০৫২)
যেখানে ইউরোপীয় ইতিহাসে ধর্মীয় যুদ্ধ ছিল রক্তাক্ত অধ্যায়-ত্রিশ বছরের যুদ্ধ, ক্রুসেড, ইনকুইজিশন, উপনিবেশবাদী নিপীড়ন-সেখানে মুসলিম শাসনের ইতিহাসে ছিল সহাবস্থান, সাংস্কৃতিক বিকাশ ও জ্ঞানের প্রসার। ইসলাম কখনও বলপ্রয়োগে ধর্ম প্রচার করেনি, বরং মানুষকে চিন্তা, যুক্তি ও উদাহরণের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছে। মুসলিমদের কাছে অুমসলিমরা যেভাবে নিরাপদ থাকে আর কারো কাছে তা থাকতে পারেনি, পারবেও না। ইতিহাস ও দৃশ্যমান বাস্তবতা আমাদের এই ধারণাই দেয়। ইতিহাস থেকে জানতে পারি, রাসূল (সা.) মুসলিম বাহিনীকে কোথাও কোনো অভিযানে যাওয়ার আগে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশনা দিতেন। অন্য ধর্মের উপসনালয়কে সুরক্ষা দেয়ার নির্দেশ দিতেন। যুদ্ধবন্দীদের সাথে সর্বোত্তম আচরণ করতেন।
মুসলিমরা জয়ী হলে স্থানীয় মানুষেরা তাদের বরণ করে নিতো। অন্যদিকে, মঙ্গল বা ক্রূসেডাররা যুদ্ধজয়ের পর তাদের হিংস্রতার প্রমাণ রেখেছে। রাস্তাঘাট মানুষের রক্তে ভাসিয়েছে। মৃত মানুষের কংকাল দিয়ে পাহাড় তৈরি করেছে। মসজিদে জীবন্ত মানুষদের পুড়িয়ে মেরেছে। আশপাশের নদীকে রক্তের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে। আর আমাদের চারপাশের বাস্তবতাও যদি মূল্যায়ন করা হয়, তাহলেও দেখা যায় যে, ইহুদিরা বেশি নির্যাতিত হয়েছে খৃষ্টানদের হাতেই। ভারতে হিন্দুদের হাতে অন্য ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিন নিগৃহিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে বৃটেনসহ ইউরোপের নানা দেশে মুসলিম খেদাও আন্দোলন চলছে। অথচ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে খৃস্টানেরা সংখ্যালঘু হলেও তারা আনন্দের সাথে বড়োদিন উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা আন্তরিকভাবে কামনা করে, যাতে ইসরাইল বা আমেরিকা তাদের ওপর চড়াও না হয়; কেননা তাহলে তাদের শান্তি নষ্ট হবে।
খুবই বিস্ময়কর কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ এ বিষয়টি হাইলাইট করেনি যে, গাজায় অনেকগুলো চার্চ ছিল, ক্যাথোলিকদের স্থাপনা ছিল। এবারের ইসরাইলী আক্রমণে তার অনেকগুলোই ধ্বংস হয়েছে। সর্বশেষ যিনি পোপ ছিলেন তার সাথে গাজার ক্যালোচিক বিশপের করুণ আলোচনাও গোটা বিশ্বে আলোচিত হয়েছিল। অথচ এ গাজা ২০০৬ সাল থেকে হামাস শাসন করে আসছে। অথচ কোনো মার্কিন বা বৃটিশ প্রেসিডেন্ট বা জাতিসংঘ কেউ বলতে পারবে না, হামাসের এ দীর্ঘ শাসনামলে একটি গির্জাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিংবা একজন খৃস্টানও ধর্মপালনে বিন্দুমাত্র প্রতিবন্ধকতা ফেইস করেছে। এরপরও ইসলামী অনুশাসন এবং ইসলামপন্থীদের শাসনামলে অমুসলিমদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা যারা করেন, তারা হয় জ্ঞানপাপী অথবা তাদের চোখ কান আল্লাহ বন্ধ করে দিয়েছেন।
প্রকৃত সত্য হলো, ইসলাম কোনো একটি জাতির জন্য নয়; এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য ন্যায়, করুণা ও শান্তির বার্তা। রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ বলেছেন-“আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।” (সূরা আল-আম্বিয়া, ২১:১০৭) এ রহমতের প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই মদিনা সনদে, উমরের জেরুজালেম চুক্তিতে, মক্কা বিজয়ের ক্ষমায়, আন্দালুসের আলোকিত সভ্যতায় এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের সহাবস্থানে। তাই আজও সত্যটি অটুট-অমুসলিমরা মুসলমানদের হাতেই সবচেয়ে নিরাপদ। ইতিহাস এই সাক্ষ্য বহন করে, আর মানবতার ভবিষ্যৎও এই নীতিতেই শান্তি খুঁজে পেতে পারে।