নিজ অভিজ্ঞতার কথা বলি। বড় মেয়ে সুমাইয়া সারোয়ার ভিকারুননিসা থেকে ভালো রেজাল্ট করে, ভর্তি পরীক্ষার জন্য নিজের পড়ার পাশাপাশি ইউ.সি.সি তে ক্লাস শুরু করেছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ‘ডি’ ইউনিটে পরীক্ষা দেবে। এটা বিভাগ পরিবর্তন। যেহেতু এরা সাইন্স থেকে এসেছে, তাই এখানে ইংলিশ, ইকোনোমিক্স, ফিন্যান্স, এসব সাবজেক্ট নেওয়া যায়। লিয়ানা তার বেস্ট ফ্রেন্ড। হিজাবি মেয়ে,বাবা এয়ারফোর্সের বড় অফিসার। মা অত্যন্ত বিনয়ী। আমি প্রায়ই আনতে যেতাম মেয়েকে। আর বলতাম দু’জন পাল্লা দিয়ে পড়াশোনা কর। ওরা উৎসাহে অনেক পরিশ্রম করেছে।

দু’জন ডিস্কাস করে পড়তো। ওখানে গেলে খেয়াল করতাম, আর ভাবতাম এরা হয়তো চান্স পাবে । অবশ্য মেধা তালিকা নির্ণয় অসম্ভব। হাজার হাজার ছেলে মেয়ে সেখানে পরীক্ষা দেয়। অবশ্য সে বছর লিয়ানা মেধায় প্রথম হয়ে যায়। আর আমার মেয়ে ১২৭ তম স্থান লাভ করে। আমি আশ্চর্য হয়ে যাই যাদেরকে ভেবেছি এরা হয়তো চান্স পাবে এবং তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই হয়ে গেছে। তখন আমার এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবীদের মূল্যায়ন করে।

ছোট্ট মেয়ে সামিয়া সারোয়ার। তার মেধা অনেকটা গড গিফটেড ছিল। তিন ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে ক্লাস ফোর তাকে পড়তে হয়নি। আমার তার পেছনে খুব পরিশ্রমও করতে হয় নি। বড় দু’ছেলে মেয়েকে নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতাম। তার প্রচুর বই পড়ার অভ্যাস ছিল। ভিকারুননিসা থেকে সে বছর আই.বি.এ তে সে একাই চান্স পেয়ে যায়। এখানে সবাই মেধাবী। আমি বললাম-তোমার চেয়ে ব্রিলিয়ান্টও আছে সবার আগে দু’রাকাত নামাজ পড়ে নাও! ১৪তম ব্যাচে সে ৪৩ তম স্থান লাভ করে। আর সে ছোট্টবেলায় কিন্টারগার্ডেনে পড়া অবস্থায় যে ছেলেটা ক্লাসে সেকেন্ড হত,সে রাজউক কলেজ থেকে এসেছে। ভর্তির সময় দেখা হলো, সেও চান্স পেয়েছে। তারমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবীদের মূল্যায়ন করে। স্বচ্ছতার সাথে বাছাই করে। এর ব্যত্যয় আমি হতে দেখিনি।

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচনে যে ফলাফল এসেছে, তা নির্দ্বিধায় নিরপেক্ষতার সাথে হয়েছে। এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই! এর সবকিছুই লাইভ কাস্ট হয়েছে। যারা এ নিয়ে এখনো বিতর্কে জড়িত তারা আসলে অবিবেচক! সারা দেশে অশান্তি ডেকে আনার চেষ্টা করছে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির নানা অজুহাত খুঁজছে।

আমার বিশ্বাস এখানে অনিয়মের কোন পথ নেই। বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিছু থাকবে কিন্তু ভোট হয়েছে পরিশীলিত এবং স্বচ্ছ। এখানেও ছেলেমেয়ে নির্বাচিত হয়েছে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে। আর যারা শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়াকে টাচ্ করতে পেরেছে। আর সুদীর্ঘ দিন পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যারা তাদেরকে আস্থা দিতে পেরেছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক।