আলহামদুল্লিলাহি রাব্বিল আলামীন, আসসালাতু ওয়াসসালামু আ'লা সাইয়েদুল মুরসালিন, ওয়া আ'লা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করছি যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদি শাসন ও জুলুমের জগদ্দল পাথর থেকে আমাদেরকে মুক্ত করেছেন। বিগত ৫ আগস্ট ২০২৪ এক অবিস্মরণীয় ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ একটি শোষণমুক্ত নতুন বাংলাদেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সুযোগ পেয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জুলুম-নির্যাতন, মামলা-হামলা, কারাবরণ ও শাহদাতের পিয়ালা পান করে এই বিজয় অর্জনে যারা ঐতিহাসিক অবদান রেখে গেছেন তাদের সকল কুরবানি ও শাহাদাত মঞ্জুরের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আহত ক্ষতবিক্ষত ও অসুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কষ্ট পাচ্ছেন তাদের আশু সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে শেফা কামনা করছি। তাদের শোকাহত পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

আজকের প্রবন্ধের শুরতেই বিগত ৫ আগস্ট দেশের ছাত্র-জনতার সর্বাত্মক গণঅভ্যুথানের প্রেক্ষাপট এবং পূর্বাপর বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরছি। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে খুনি হাসিনার নির্দেশে লগি-বৈঠা দিয়ে রাজধানীর পল্টনে প্রকাশ্য-দিবালোকে নিষ্ঠুর ও লোমহর্ষকভাবে ৬ জন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীকে হত্যা ও অসংখ্য ভাইকে আহত করার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী তাণ্ডবের ঘৃণ্য সূচনা হয় এবং বাংলাদেশ তার রাজনীতির গতিপথ হারাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় বসেই আধিপত্যবাদী শক্তির সেবাদাস হিসেবে এদেশের মানুষের উপরে সীমাহীন জুলুম, দুর্নীতি, লুটপাট, খুন গুম রাষ্ট্র যন্ত্রের সর্বনাশা দলীয়করণ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর মিথ্যা মামলা, সকল গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার তথা ভোটাধিকার হরণ করে ইতিহাসের কলঙ্কিত এক স্বৈরশাসক হিসেবে চেপে বসেছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের প্রিয় এই জন্মভূমির আর্থ-সমাজিক অবস্থা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইসলামী মূল্যবোধ তথা আমাদের স্বতন্ত্র জাতি সত্ত্বাকে তিলে-তিলে ধ্বংস করে এক সর্বনাশা পরিণতিতে পৌঁছে দিয়েছে।

২০০৯ সালের পিলখানায় ৫৭ জন চৌকষ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনের নৃসংশ হত্যাকাণ্ড, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের মত বর্বর ঘটনাবলী ফ্যাসিবাদের বিভৎস রূপকে জাতির সামনে উন্মোচিত করে। তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নামে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা, সাজানো ও বানোয়াট মামলায় একের পর এক জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ১১জন নেতাকে হত্যা করা হয়। হাজার হাজার আলেম-ওলামা, ইসলামিক স্কলার ও লক্ষ-লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে কারাগারে আটক করা হয়। রিমান্ডে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয় ও মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়। আয়নাঘর এবং ক্রসফায়ারে নিয়ে বহু মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ০২ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে জনমতকে উপেক্ষা করে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে ইতিহাসের নজিরবিহীন প্রহসনের নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ করে। উল্লেখ্য যে, “আমি ও ডামি” নির্বাচনের পর ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট, বিদেশে অর্থ পাচার, দলীয় করণের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক পরিবেশ চরম অবনতির দিকে আগাতে থাকে। তৎকালীন আইজিপি, সেনা প্রধান, র‌্যাবের ডিজিসহ সর্ব পর্যায়ে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দেশের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে নিষেধজ্ঞা জারি করে। শেখ হাসিনা ও তার পরিবার দেশকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও সন্ত্রাসের রাজত্বে পরিণত করে। দেশী-বিদেশী রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত ছিলো, যে কোন সময় গণবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটতে পারে। ৫ জুন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় প্রদান করে। ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। ৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আবারো বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি মানতে ৩০ জুন পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেয়। বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দেয়। কোটা বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থাগিত চেয়ে রাষ্ট্র পক্ষের আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা আরিচা মহাসড়ক, মোমনশাহী শিক্ষার্থীরা রেললাইন অবরোধ এমনিভাবে চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবোরধ করতে থাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। ক্রমান্বয়ে আন্দোলনকারীরা সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন, ছাত্র ধর্মঘট ও সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের ডাক দেয়। পর্যায়ক্রমে সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা এ আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে। এর নাম দেয়া হয় "বাংলা ব্লকেড", ৭ জুলাই বাংলা ব্লকেডে রাজধানী স্থবির হয়ে পড়ে। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। ৮ জুলাই সারাদেশের ছাত্রদের নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়। ১০ জুলাই কোটার বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে চার সপ্তাহের জন্য আপিল বিভাগ নিদের্শ প্রদান করে। ছাত্ররা ভুল করেছে মর্মে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য রাখেন। এতে পুলিশের বাঁধার মুখেও বিভিন্ন স্থানে অবরোধ পালন করতে থাকে আন্দোলনকারীরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছে। ১২ জুলাই শুক্রবার সকল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুনরায় শাহাবাগ মোড় অবরোধ করে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করে।

১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। একই দিনে শেখ হাসিনা চীন সফর শেষে আহুত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যঙ্গ করে রাজাকারের নাতি-পুতি বলে বসেন। এর প্রতিবাদে রাত ৯টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে তুমুল বিক্ষোভ হয় এবং স্লোগান ওঠে- তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার। এই স্লোগান এতো জনপ্রিয় হয় যা মুহূর্তেই দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার ছোঁয়া লাগে এবং স্লোগানে স্লোগানে ক্যাম্পাসগুলো মুখরিত হয়ে উঠে। রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। ১৫ জুলাই ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনকারীদের রাজাকার স্লোগানের জবাব দেবার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম মন্তব্য করেন, যারা 'আমি রাজাকার' স্লোগান দিচ্ছে তাদের শেষ দেখিয়ে ছাড়বো।

ওবায়দুল কাদের ও সাদ্দামের এই জঘন্য মন্তব্যের পর ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র নিরীহ শিক্ষার্থীদের সশস্ত্রআক্রমণ করে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীদেরকে মারাত্মক আহত করে। ২৯৭ ছাত্র আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন। ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে পুলিশে গুীতে নিহত হয় ঐ বিশ্ববিদ্যালের ইংরেজী বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ। ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে আবু সাঈদের এই সাহসীকতা, দেশপ্রেম ও অবিস্মরণীয় আত্মদানের ঘটনা দেশ ও বিদেশের সকল মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই বিরত্বপূর্ণ আত্মদানের দৃশ্য গোটা জাতিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে। ঐ দিন পুলিশের গুলীতে আরো নিহত হন চট্টগ্রামের ওয়াসীম, শান্ত, ফারুক ও ঢাকায় শাহজাহানসহ ৭ জন। এখানে উল্লেখ্য যে, দেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামিক স্কলার, ক্বওমী ও আলিয়া মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদবিরোধী এ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল, ইসলামি সংগঠনসমূহ ব্যাপকভাবে এ আন্দোলনে অংশ নেয়ায় ছাত্রদের এ আন্দোলন একটি সার্বজনীন আন্দোলনে রূপ নেয়। রাস্তার হকার, ফেরিওয়ালা, রিক্সাওয়ালা, নারী-শিশুসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এ আন্দোলনে শামিল হয়। যা ছিল নজিরবিহীন। ১৭ জুলাই ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিতাড়িত করে রাজনীতি মুক্ত ক্যাম্পাস ঘোষণা করে সাধারণ ছাত্ররা। পুলিশের কাঁদনে গ্যাসের সেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল পন্ড হয়ে যায়। সারাদেশ চলতে থাকে বিক্ষোভ, সড়ক মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ। এই দিন দুপুরে মুহতারাম আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান পবিত্র হজ্জ্ব পালন শেষে ঢাকায় ফিরেন। সন্ধ্যায় আমীরে জামায়াতকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং জামায়াতের রাজনৈতিক কমিটির সিদ্ধান্ত অবহিত করা হয়। একইদিন সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি যুক্ত আন্দোলনকারীদের হুমকি দেন। হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশি তৎপরতার মুখেও হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে থাকে। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। ০১০৪ ১৮ই জুলাই জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে সরকারকে ছাত্রদের উপর গুলীবর্ষণ ও ছাত্র হত্যার ঘটনা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানানো হয়। ছাত্রদের ঘোষণা অনুযায়ী সারাদেশে কমপ্লিট সাটডাউন শুরু হয়। এ দিন সারাদেশ নরসিংদীর নবম শ্রেণির ছাত্র তামীম সহ প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। রাত ৯টা থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করার মাধ্যমে দেশকে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করা হয়। এ সময় প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিভিন্ন দেশ থেকে প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়ে এ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯ জুলাই সারাদেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ব্যাপক সংঘর্ষ ও কমপ্লিট সাটডাউন ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে থাকে। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়। পুলিশ ও বিজিবি ঐদিন নৃশংস গণহত্যা চালায়। নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর সশস্ত্র পুলিশের হিংস্রতা, অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতা জাতিকে হতবাক করেছে। তাদের গুলীতে সে দিন প্রায় ২ শতাধিক ছাত্রজনতা নিহত হয়। হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলীতে ৪ বছরের শিশু থেকে ৬ বছরের রিয়া গোপসহ বাসা বাড়িতে অনেকে নিহত হয়। ঐদিন মধ্য রাত থেকে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং দেখামাত্র গুলীর নির্দেশ প্রদান করা হয়। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের আইনমন্ত্রীর চাপে ছাত্ররা ৪৮ ঘন্টার জন্য আন্দোলন স্থগিত করতে বাধ্য হয়। কিন্তু সারাদেশ কারফিউ চলতে থাকে। ফলশ্রুতিতে সারাদেশ একদিকে ব্যাপক আন্দোলন ও অন্যদিকে ব্যাপকভাবে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও নির্যাতন শুরু হয়। এ সময়ে প্রায় প্রতিদিন শত শত নিরিহ ছাত্র জনতা নিহত হতে থাকে। কোটাপ্রথা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি করে সমন্বয়কারীদের আন্দোলন দূর্বল করা ও বিভক্ত করার অপকৌশলে মেতে উঠে ফ্যাসিস্ট সরকার। ২৯ জুলাই গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মুহতারাম আমীরে জামায়াত ৩০ জুলাই প্রদত্ত এক বিবৃতিতে, “১৪ দলীয় জোটের এ সিদ্ধান্তকে বেআইনী, এখতিয়ার বহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করেন।” ১ আগস্ট সংবিধান লংঘন করে সরকার এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান এক বিবৃতি প্রদান করেন। জামায়াত ও ছাত্র শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার আদেশের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন: সরকারের এ সিদ্ধান্ত বেআইনী। আন্দোলনকারী অধিকাংশ দলের নেতৃবৃন্দ এই আদেশের প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ জন সমন্বয়ককে পুলিশ আটক করে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। তারা সেখানে ৩২ ঘণ্টা অনশন করে। অবশেষে ১লা আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ জন সমন্বয়কদেরকে ডিবি পুলিশ ছেড়ে দেয়। সরকার ঘোষিত আগস্টের শোক পালনের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ছাত্ররা "রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ" কর্মসূচি পালন করে।

২ আগস্ট থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করলে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে। হত্যার বিচার চেয়ে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মিছিল করে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকরা। জাতিসংঘের মহাসচিবের বিবৃতিতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক গণহত্যা শুরু করলে ২ ও ৩ আগস্ট ঢাকাসহ সারাদেশর রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। পুলিশবক্স, থানা ও বিভিন্ন স্থাপনা আক্রান্ত হতে থাকে। শত সহস্র ছাত্র জনতা নিহত ও আহত হতে থাকে। ঢাকা শহর রীতিমতো একটি রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়। এমনি পরিস্থিতিতে ৩ আগস্ট রাতে সেনাবাহিনী জনগণের উপর গুলী না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এমতাবস্থায় ৫ আগস্ট ছাত্ররা "মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচি ঘোষণা করে। ক্রমান্বয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা পরোক্ষভাবে এ আন্দোলনের প্রতি তাদের এক ধরনের সংহতি প্রকাশ করতে থাকে।

৫ আগস্ট বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে ছাত্রজনতা সহ সাধারণ মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঢাকা শহর জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সারা ঢাকা শহরে সশস্ত্র পুলিশ নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর যুদ্ধাংদেহী আক্রমণ শুরু করে। সেনাবাহিনী ছাত্র জনতার উপর গুলী চালাতে অপারগতা প্রকাশ করে এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেয়। সেনাবাহিনী প্রধান দুপুর ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন বলে ঘোষণা দেন। ১টা ৩০ মিনিটের পর থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী শাহবাগসহ ঢাকা শহরের রাস্তার প্রতিরোধ তুলে নেয়। এমনই এক পরিস্থিতিতে মানুষ জেনে যায় যে শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ২টার কিছু আগে গণভবন ছেড়ে পালিয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই টেলিভিশন এবং গণমাধ্যমে প্রচারিত হয় যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে উঠে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। এতে করে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটে। সারাদেশর জনগণ স্বস্তির নিঃশাস ফেলে। সারাদেশর তথা বিশেষ করে ঢাকার সকল মানুষ রাস্তায় নেমে ঈদের মতো আনন্দ উদযাপন করতে থাকে। জনগণের মধ্যে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। মিষ্টি বিতরণ ও কোলাকুলি করতে থাকে মানুষ। রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদয় করতে থাকে।

অন্যদিকে আন্দোলনে নিহত সহস্রাধিক ছাত্র জনতা এবং হাজার হাজার আহতদের পরিবারে চলে শোকের করুণ মাতম। এ অবস্থায় সেনাবাহিনীর প্রধান বিকেল ৪টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন। রাজধানীর উচ্ছ্বসিত জনতার একাংশ গণভবনে গিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। সেদিনও পুলিশের গুলীতে প্রায় ২০০ ছাত্র জনতা নিহত হয়। ৬ আগস্ট থেকে কারাগারে আটক নেতাকর্মীরা মুক্তি লাভ করতে থাকেন। ৮ আগস্ট রাত ৯টায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শপথ গ্রহণ করেন এবং একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়।

প্রত্যাশা : * ২৪-এর মাধ্যমে আমরা এক নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছি। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি যেখানে লুটপাট, অর্থপাচার, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সন্ত্রাস, অবিচার, বৈষম্য ও ভিন্নমত দমন থাকবে না। * আমাদের জাতিসত্ত্বা ও মূল্যবোধবিরোধী আধিপত্যবাদীদের সেবাদাস কোন কর্তৃত্ববাদী শাসন থাকবে না। * দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন এবং ইনসাফপূর্ণ একটি সুষম অর্থনীতির কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। * প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে ভরা আমাদের কৃষিকে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে অর্থনীতির মূল নিয়ামকে পরিণত করতে হবে। * রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার, ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং পারস্পরিক সহমর্মিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। * জাতীয় নির্বাচনসহ সকল স্তরের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে মৌলিক সংস্কার কাজ সম্পন্ন করতে হবে। * দলীয়করণমুক্ত এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, বিচার ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাঠামো আমাদের প্রত্যাশা- যেখানে কোন নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে না। * জুলাই অভ্যুত্থানের আরেকটি প্রত্যাশা হচ্ছে একটি মজবুত, টেকসই ও স্থিতিশীল গণতন্ত্র এবং আধিপত্যবাদী শক্তির প্রভাবমুক্ত মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। * রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ তথা আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও অদক্ষতা উৎরে রাষ্ট্রযন্ত্র কর্মদক্ষ হয়ে উঠতে পারে। * প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সম্পর্ক। যেখানে অন্যায্য হস্তক্ষেপ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, সীমান্ত হত্যা, বৈষম্যপূর্ণ পানি বন্টননীতি এবং দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা প্রদান করা হবে না। * নৈতিকতা ও আদর্শিক মূল্যবোধ ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ও কারিগরি শিক্ষার ভিত্তিতে একটি আদর্শ ও সৎ প্রজন্ম গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

প্রাপ্তি : * জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা পেয়েছি অত্যাচারী, কর্তৃত্ববাদী শাসকের বিরুদ্ধে অকুতোভয় সদাজাগ্রত জনতা এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়দীপ্ত তারুণ্যের অজেয় শক্তি। * কিছুটা হলেও মুক্ত গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। * জুলাই গণহত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে পারা। * সন্ত্রাস, সহিংসতা, চাঁদাবাজ ও সমাজবিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য। * দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আধিপত্যবাদবিরোধী জনতার ঐক্য।

করণীয় : * জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পথপরিক্রমার প্রথম মাইলফলক হওয়া উচিত জুলাই গণহত্যার বিচার। আমরা ইতোমধ্যেই দেখেছি যে, এই বিচার শুরু হয়েছে। সব অপরাধীরা এখনো ধরা পড়েনি। তাদের গ্রেফতার করতে হবে এবং জুলাই হত্যাকান্ডের বিচার যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এই বিচার যদি যথাযথভাবে সম্পন্ন না হয় তবে ভবিষ্যতে স্বৈরতান্ত্রিক মনমানসিকতার পুনরুত্থান হওয়ার উৎসাহ পাবে। * প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিবাদীদের দোসরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। * জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও পঙ্গু হওয়া জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসা এবং তাদের পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন করতে হবে। * জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে স্থায়ী, টেকসই এবং আরো সামনে এগিয়ে নিতে হলে এবং আওয়ামী সরকারের মত ফ্যাসিস্ট শাসনের উদ্ভব যাতে না হতে পারে সেজন্য প্রথমেই প্রয়োজন মৌলিক রাষ্ট্রীয় সংস্কার। এজন্য প্রয়োজন দেশের রাজনৈতিক দলসমূহের বৃহত্তর ঐকমত্য গড়ে তোলা। * জুলাই সনদ ও ঘোষণা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। * প্রায় সোয়া এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশী ভোটারদের ভোট প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। * শিল্প কলকারখানাসমূহের দক্ষতা অনেকাংশে নির্ভর করে শ্রমিকদের আন্তরিকতার উপর, যা নিশ্চিত হতে পারে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই। শ্রমিকদের যথাযথ সর্বনিম্ন মজুরী, বিভিন্ন বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। * কৃষির আধুনিকায়নের পাশাপাশি কৃষক ভাইয়েরা যাতে তাদের পণ্যের যথাযথ মূল্য পায় সেদিকে নজর দিতে হবে। তাদের জন্য কোল্ড স্টোরেজের সহজলভ্যতা, মধ্যসত্ত্বভোগীর পরিমাণ কমানো, রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং পণ্য পরিবহনের সময় চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য দুর্ভোগ কমানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরিশেষে, সহস্র শহীদ, অসংখ্য আহত ও বিপুল আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের এই নতুন বাংলাদেশ। মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে আমরা কামনা করি- স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণে আমাদের এ অভিযাত্রা যেন সফল হয়। আমীন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আল্লাহ হাফেজ বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ।

লেখক : সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।