রাজনীতির কক্ষচ্যুতি ও আমলাতান্ত্রিক বিচ্যুতির কারণেই দেশে আইনের শাসনের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নানাবিধ সঙ্কট। এক শ্রেণির রাজনীতিকরা রাজনীতিকে আত্মস্বার্থ চরিতার্থ করার মোক্ষম হাতিয়ার বানিয়েছে। এদের সাথে যুক্ত হয়েছে এক শ্রেণির দলান্ধ আমলা। একথা কারো অজানা নয় যে, আমলারা জনপ্রতিনিধি বা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত নন। কিন্তু শাসনকাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন তারাই। সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলারা পদ হারান না। ফলে তারা সব সময়ই ঝুঁকিমুক্ত থেকেই নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সরকারের সাবেক সদস্যদের জেলে দলে দলে যেতে হলেও আমলারা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে একশ্রেণির অসাধু আমলা দায়িত্ব পালনে অতিমাত্রায় স্বেচ্ছাচারি হওয়ার সুযোগ পান। যা সুশাসনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধক। যদিও আগস্ট বিপ্লবের পর সে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। রাজনীতিকদের সাথে একশ্রেণির আমলারাও এখন রীতিমত জেলের ঘানি টানছেন। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতিও।
ঐতিহাসিকভাবেই আমলারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই সরকার ও আমলাদের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নিকট অতীতে তা রক্ষিত হয়নি। পতিত সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নির্ভরতার পরিবর্তে আমলা নির্ভর হওয়ার অভিযোগ কারো অজানা নয়। কারণ, আমলাদের সন্তষ্ট রেখেই তাদেরকে চলতে হয়েছে। ফলে নিকট অতীতে আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা হয়ে উঠেছিলো একশ্রেণির অসাধু রাজনীতিক ও দলবাজ আমলাদের অভয়ারণ্য।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় রাষ্ট্রের অঙ্গ তিনটি। নির্বাহী তথা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। নির্বাহী বিভাগের মূল কাজ আইন অনুযায়ী শাসনকাজ পরিচালনা করা। আইন বিভাগের কর্তব্য নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরনো আইন সংশোধন। আর আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে সুবিচার নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। রাষ্ট্রের সব অঙ্গের চেয়ে নির্বাহী বিভাগের কর্মপরিধি ও ক্ষমতা বিস্তৃত। তাই অপরাপর সব বিভাগের ওপরই নির্বাহী বিভাগ কর্তৃত্বশীল। আর রাষ্ট্রের সব অঙ্গের সুসমন্বিত কার্যক্রমই সুশাসনের চালিকাশক্তি।
সার্বিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে গ্রাম পুলিশ পর্যন্ত সকলেই নির্বাহী বিভাগের আওতাভুক্ত। সাধারণভাবে রাষ্ট্র প্রধান ও সরকারপ্রধানকে কেন্দ্র করে যে বিভাগ গড়ে ওঠে তাকেই এক কথায় নির্বাহী বিভাগ বলা হয়। নির্বাহী বিভাগের মধ্যমণি হচ্ছে ব্যুরোক্রেসি বা আমলাতন্ত্র। রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ স্বতন্ত্র সত্তা হলেও সেগুলো একে অন্যের পরিপূরক। তবে নির্বাহী বিভাগ রাষ্ট্রের অপরাপর বিভাগের ওপর সংবিধিবদ্ধ পরিসরে কর্তৃত্বশীল।
অধ্যাপক গার্নার নির্বাহী বিভাগের কার্যাবলীকে পাঁচ ভাগে ভাগ করেছেন। (এক) অভ্যন্তরীণ শান্তি ও শৃঙ্খলা বিষয়ক (Administrative), (দুই) পররাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও বৈদেশিক সম্পর্ক (Diplomatic), (তিন) সামরিক ব্যবস্থা (Military), (চার) বিচার বিষয়ক ক্ষমতা (Judicial) ও (পাঁচ) আইন বিষয়ক ক্ষমতা (Lagislative)। নির্বাহী তথা শাসন বিভাগকে সফল ও সার্থক করে তুলতে হলে উপরোক্ত সব উপবিভাগের একটি কার্যকর সেতুবন্ধন জরুরি। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের যেমন সক্রিয়তা দরকার ও ঠিক তেমনিভাবে নাগরিকদেরও হতে হবে দায়িত্বশীল। অন্যথায় রাষ্ট্রের সফলতা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়।
সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদে সুনাগরিকের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য’। তাই দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে সরকার, আমলাতন্ত্র, রাষ্ট্রযন্ত্র, রাজনৈতিক শক্তি ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ববান হতে হবে। কিন্তু পতিত সরকারের আমলে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিচ্যুতি ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণেই স্বাধীনতার প্রায় ৫ দশক পরও আমরা সে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারিনি। পতিত সরকারের সে অনাকাক্সিক্ষত অনাসৃষ্টি এখনো কিছুটা অব্যাহতই রয়েছে।
যার প্রমাণ মেলে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসের অপরাধপ্রবণতার দিকে লক্ষ্য করলে। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে খুনের ঘটনা। জানুয়ারিতে সারাদেশে খুনের মামলা হয় ২৯৪টি, জুনে হয়েছে ৩৪৪টি। এ সময় ডাকাতি, দস্যুতা, ধর্ষণ ও পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার মতো ঘটনায় মামলা কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রেস উইং বলেছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরে অপরাধ বেড়েছে, যা নাগরিকদের মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে। প্রেস উইংয়ের সরবরাহ করা অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে খুনের মামলা বেড়েই চলছে। জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে ২৯৪টি। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ৩০০টি। এরপর মার্চে খুন ৩১৬টি, এপ্রিলে ৩৩৮টি, মে মাসে ৩৪১টি। আর গত জুনে খুনের মামলা ছিল ৩৪৪টি।
সম্প্রতি পুরান ঢাকায় চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রেস উইংয়ের সরবরাহ করা অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জানুয়ারিতে মামলা হয়েছে ২৯৪টি। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে হয় ৩০০টি। এরপর মার্চে খুন ৩১৬টি, এপ্রিলে ৩৩৮টি, মে মাসে ৩৪১টি। আর গত জুনে খুনের মামলা ছিল ৩৪৪টি। আবার ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলেও খুনের মামলা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। যেমন ২০২০ সালে সারা দেশে খুনের মামলা ছিল ৩ হাজার ৫৩৯টি, ২০২১ সালে ৩ হাজার ২১৪টি, ২০২২ সালে ৩ হাজার ১২৬টি এবং ২০২৩ সালে ৩ হাজার ২৩টি মামলা হয়।
আধুনিকরাষ্ট্র ব্যবস্থার অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ জনপ্রশাসন বা আমলাতন্ত্র। সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে আমলারাই আইন ও বিধি-বিধানের আওতায় থেকে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু সে ঔপনিবেশিক শাসনামল থেকেই আমলাতন্ত্রে পেশদারিত্ব গড়ে ওঠেনি বা গড়ে উঠতে দেয়া হয়নি। মূলত আমলারা রাষ্ট্রের কর্মচারি হিসেবে আখ্যা পেলেও উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন দীর্ঘায়িত করতেই যাত্রা শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের। ফলে আমলারা রাষ্ট্রের কর্মচারী হওয়ার পরও উপনিবেশবাদীদের অশুভ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তাই গণপ্রশাসনের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বরাবরই অভিযোগ করা হচ্ছে।
মূলত, আমাদের দেশের নেতিবাচক রাজনীতিই গণপ্রশাসনকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে একশ্রেণির আমলার উচ্চাভিলাষ ও দলবাজি। প্রশাসনে যারা এখনো দুর্নীতি ও অবক্ষয়ের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেননি তারাও অনেক ক্ষেত্রেই সুযোগ সন্ধানী হয়ে উঠেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ক্ষমতার প্রভাব বলয় থেকেই আমলাতন্ত্রের সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে নিকট অতীতে। কোনো সরকারই ব্যুরোক্রেসিকে একটি পেশাদারি সত্তা হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেনি। তবে ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সরকারি সরকারি চাকরি বিধি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। জারিকৃত অধ্যাদেশে আমলাতন্ত্রে দলবাজী বা কথিত আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান রাখা হয়েছে। যা দেশের আমলাতন্ত্রকে দলবাজী ও রাজনীতি মুক্ত করতে অনেকটা সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসনকাজে মূল ভূমিকায় থাকেন রাজনীতিকেরা। তবে এর বিভিন্ন স্তরে বিচিত্র ধরনের কাজের জন্য দরকার হয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর। সাধারণ্যে তারা সরকারি কর্মচারীরূপে পরিচিত হলেও আমাদের সংবিধান প্রণেতারা আখ্যায়িত করেছেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বলে। সরকারকে নীতিনির্ধারণে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা এবং সেই নীতি ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন তাদের দায়িত্ব। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমলাদের অপেশাদারী ও দলবাজ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা সম্পর্কে রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অগ (Ogg) বলেন, (‘The body of the civil servants is an expert, professional, non-political, permanent and subordinate staff) অর্থাৎ ‘রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা হবে সুদক্ষ, পেশাদারী, অধীনস্থ কর্মকর্তা যারা স্থায়ীভাবে চাকরি করেন এবং রাজনীতির সাথে যাদের কোনো সংশ্রব নেই’।
বস্তুত, নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারেনি। বিগত সরকারের আমলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের রাজনৈতিক বিবেচনায় পদায়ন, পদোন্নতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিয়োগ গণপ্রশাসনের কার্যকারিতা হ্রাস করে ফেলেছে। একশ্রেণির দলবাজ কর্মকর্তাও এ জন্য কম দায়ী নন। দুঃখজনক হলেও এটি সত্য, এসব কর্মচারীর একটি অংশ পতিত ফ্যাসিবাদী আমলে দলীয় বিবেচনাতেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। ১৯৯৬ সালের আমলা বিদ্রোহের ঘটনাও এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যুক্তিযুক্ত হতে পারে। এতে ব্যক্তিগতভাবে তারা হয়তো অনেকেই লাভবান হয়েছেন। কিন্তু পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমলাতন্ত্রের পেশাদারিত্ব। অর্ন্তবর্তী সরকারের আমলেও একশ্রেণির আমলা নানা ছলছুতায় সরকারকে বিব্রত ও বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছে। কিন্তু সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে তারা খুব একটা সুবিধা করতে পারেন নি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নির্বাচনগুলোতে প্রশাসন বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে বলে বিরোধী দলের পক্ষে জোরালো অভিযোগ করা হয়েছে। তারাই ছিলেন দিনের ভোট রাতে এবং ডামি নির্বাচন করার নেপথ্যের শক্তি। এ বিষয়ে সদ্য গ্রেফতারকৃত দু’জন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আত্মস্বীকৃতিও রয়েছে। মূলত, নির্বাচনে যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার ক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের দায়িত্ব হবে দৃঢ়তার সাথে আইন ও ন্যায়ের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকে এবং কোনো ধরনের আবেগ, অনুরাগ ও বিরাগের বশবর্তী না হয়ে দায়িত্ব পালন করা। তারা আইনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন, কোনো ব্যক্তি বা দলকে নয়। কিন্তু বিগত ৩ টি নির্বাচনে এসব ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটেছে। তাই নির্বাচনগুলো দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ফলে জুলাই বিপ্লব অনিবার্য হয়ে উঠেছিলো।
বিগত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদের নির্বাচনে নির্বাচনের মাঠকে বিরোধী দলমুক্ত করার জন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গণগ্রেফতারের অভিযান চালানো হয়েছিলো। এসব কাজকে আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দায়িত্ব বলে দাবি করা হলেও তা মোটেই প্রশ্নাতীত ছিলো না বরং তা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ও সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন বলেই বিবেচিত। সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মচারীদের কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সব সময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য’।
সার্বিক দিক বিবেচনায় বিগত দিনের নির্বাচনগুলোতে জনপ্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন নিজেদের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। মূলত আমলাতান্ত্রিক বিচ্যুতি ও নেতিবাচক রাজনীতির কারণেই দেশে সুশাসন প্রক্রিয়া কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছতে পারেনি। তবে গত বছরের আগস্ট বিপ্লব আমাদেরকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। একটি অর্ন্তবর্তী সরকার এখন দেশ পরিচালনা সহ রাষ্ট্্রীয় সংস্কারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু মতবিরোধ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো মোটামোটি ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে বলেই দৃশ্যত মনে হচ্ছে। ফলে আমরা এক স্বপ্লিল প্রভাতের স্বপ্নে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
তবে এক্ষেত্রে রাজনীতিকদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা খুবই জরুরি। তারা ইতিবাচক হলে দেশের রাজনীতি সহ আমলাতন্ত্রে কাক্সিক্ষত সংস্কার সম্ভব। আর তা সম্ভব হলেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আমরা চলমান শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে পারবো।