ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী-বাকশালী অপশক্তি কর্তৃক পল্টন হত্যাযজ্ঞ। এ দিনে প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে এক নারকীয় জিঘাংসা চরিতার্থ করা হয়েছিলো। বিশ্ব দরবারে কলঙ্কিত করা হয়েছিলো দেশ ও জাতিকে। তাই ন্যায়-ইনসাফ এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে এসে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এ হত্যাকাণ্ডের সাথে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হলেও খুনীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। মূলত, লগি-বৈঠা কথিত আন্দোলন হলো ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আহুত একটি সন্ত্রাস নির্ভর রাজনৈতিক সমাবেশ, যা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গৃহীত কিছু কথিত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে সঙ্ঘটিত করা হয়। সংশ্লিষ্টরা এ কথিত কর্মসূচিকে আন্দোলন বলে দাবি করলেও তা যে দেশ ও জাতিস্বত্তাবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলো তা ঘটনার ধারাবাহিকতায় নিঃসন্দেহের প্রমাণিত হয়েছে।
কথিত এ সমাবেশের মূল দাবি ছিল, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন পরিচালনার জন্য যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার কথা ছিল তার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বিচারপতি কে এম হাসানকে নিয়োগ প্রদান না করা। নৈরাজ্যবাদীদের দাবি ছিলো, তিনি এক সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের আরো দাবি, কে এম হাসান যাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন সে জন্য বিএনপি সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা বাড়িয়ে দিয়েছিল। ২৮ অক্টোবর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়লেও অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলোর অভিযোগ ছিল যে, তিনি বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার নির্দেশে চলছিল। আর এ অজুহাতেই তারা কথিত আন্দোলনের নামে সারাদেশেই এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলো।
আওয়ামী লীগ ও তার মিত্র দলগুলো ২৮ অক্টোবর পল্টন এলাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এক নৈরাজ্যকর সমাবেশের ডাক দেয়। শেখ হাসিনার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সেখানে অনেকে লগি-বৈঠা নিয়ে হাজির হয়। একই দিন বিএনপি পল্টনে ও জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মুকাররম মসজিদের উত্তর গেটে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ ছিলো। ফলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যবাদীদের হামলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এবং জামায়াত-শিবিরের ৬ জন শাহাদাত বরণ করেন। ঐ দিন থেকে পরবর্তী একমাসের মধ্যে ৪০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয় এবং সংবাদমাধ্যমে হত্যা ও আক্রমণের বেশ কিছু স্পর্শকাতর ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হয়। টানা তিন-চার দিন আওয়ামী নৈরাজ্যবাদীরা গুলিস্তান-পল্টন এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এবং ব্যাপক সন্ত্রাসী অপতৎপরতা চালায়। এর মধ্যে বিচারপতি কে এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। যার ফলে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলগুলোর দাবি আদায় হলেও তারা তাদের নৈরাজ্য বন্ধ করেনি, বরং রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দীনের নেতৃত্বে গঠিত কেয়ারটেকার সরকারকে বিব্রত করার জন্য তাদের নাশকতা অব্যাহত থাকবে। ফলে সারাদেশেই এক অস্বস্থিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সুযোগেই একটি সাংবিধানিক কেয়ারটেকার সরকারকে উৎখাত করে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি মঈন ইউ আহমেদের সহায়তায় ইয়াজউদ্দিন আহমেদ কর্তৃক জরুরি আইন জারি হয় এবং ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। যার কোন সাংবিধানিক ভিত্তি ছিলো না। ফলে আওয়ামী নৈরাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রই পুরোপুরি সফল হয়। এমনকি ১/১১-এর জরুরি সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা দাবি করে বসেন যে, জরুরি সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল।
মূলত, ২০০৬ সালের এ দিনে এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে দেশের পবিত্র জমিনকে রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করা হয়েছিলো। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদান্তে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমাবেশ থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে লগিবৈঠা দিয়ে তরতাজা তরুণদের পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। যা ইতিহাসের সকল নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতাকে হার মানায়। শুধু প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ পিটিয়ে হত্যা নয় বরং লাশের উপর উদ্দাম নৃত্য করার বিভৎস দৃশ্যও অবলোকন করেছে বিশ্ববাসী। আর এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইন ও সাংবিধানিক শাসন ধ্বংসের সূচনা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি। মূলত, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবার ছিলো ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়; সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যায় খুনীরা পৈশাচিক উম্মত্ততায় মেতে উঠেছিলো।
২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও-টিভিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পরই আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্রশক্তি সারাদেশেই জ¦ালাও-পোড়াওসহ ব্যাপক তাণ্ডব শুরু করেছিলো। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত অফিসসহ নেতাকর্মীদের বাড়িতে চালানো হয় হামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অনেক অফিস ও বাড়িঘর। ফলে সারাদেশেই এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বিদায়ী সরকারের মেয়াদপূর্তি উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষিত সমাবেশ সফল করার জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হয়। কিন্তু দিনের শুরুতেই অতর্কিতভাবে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জামায়াতের সমাবেশ স্থলে স্বশস্ত্র হামলা চালায়। এসব সন্ত্রাসীদের প্রত্যেকের হাতেই লগিবৈঠা লক্ষ্য করা গেছে। তারা একযোগে বিজয়নগর, তোপখানা রোড ও মুক্তাঙ্গন থেকে পল্টন মোড় দিয়ে আক্রমণ চালানো শুরু করে। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা পল্টনের বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে এবং নিরীহ জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের ওপর এলোপাথারী হামলা শুরু করে।
অতর্কিত হামলায় নির্মমভাবে আহত হতে থাকে নিরস্ত্র জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। তারা শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলামকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লগি-বৈঠা দিয়ে একের পর এক আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিনকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা তার লাশের উপর ওঠে নৃত্য-উল্লাস করতে থাকে। যা ইতিহাসের সকল পৈশাচিকতাকে হার মানায় এবং হালাকু খানের বাগদাদ ধ্বংসের কথাই নতুন করে স্মরণ করিয়ে দেয়।
এদিকে হামলা চলতে থাকে দিনভর বিরতিহীনভাবে। বিকেলে বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে জামায়াতের সমাবেশ শুরু হয়। আর তখনই চোরাগোপ্তা হামলা শুরু করে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী এবং তাদের সহযোগিরা। এ সময় বিজয়নগরসহ অন্যান্য এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চালাতে থাকে আওয়ামী লগি-বৈঠা বাহিনী। আসর নামাজের বিরতির পর বক্তব্য রাখেন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মাওলানা আবদুস সুবহান,আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। এরপরই বক্তব্য দিতে দাঁড়ান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। মাওলানা নিজামীর বক্তব্য শুরু হওয়ার ৪/৫ মিনিট পর পল্টন মোড়ে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। সে সময় সমাবেশ লক্ষ্য করে ১০/১২টি বোমা ও প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে দফায় দফায় গুলী ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা। অপরদিকে পল্টন মোড় থেকে গুলী ছুঁড়তে ছুঁড়তে তারা সমাবেশের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এসময় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা তৈরি করে মানব ঢাল। আওয়ামী অস্ত্রধারীদের ছোঁড়া গুলী মাথায়বিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়েন জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান ও জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিন। এ ঘটনায় জামায়াত ও শিবিরের ৬ জন নেতাকর্মী শহীদ এবং আহত হন সহস্রাধিক। যা বিশ্ব ইতিহাসের সকল পৈশাচিকতাকে হার মানালেও এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি।
ঘটনার পরের দিন এ হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের ৪০ জন নেতার নামসহ সহস্রাধিক ব্যক্তিকে আসামী করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পলাতক আসামী হিসেবে উল্লেখ করে ৪৬ জন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। চার্জশীট দাখিলের পর ২২ এপ্রিল ২০০৭ মামলার চার্জশিট গ্রহণ করেন, মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। চার্জশিট গ্রহণ করেই আদালত পলাতক আসামী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরদিন ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার নাটকীয় আবেদনের প্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। কিন্তু এর পরের ঘটনা খুবই হতাশাব্যঞ্জক ও দুঃখজনক।
স্মরণযোগ্য যে, ৩১ মে ২০০৭ সালে, কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের ১৯ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, এ ১৯ জন ব্যক্তি ইসলামিক সমাজ কল্যাণ পরিষদের অফিসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট চালিয়েছেন। আওয়ামী সরকারের শাসনামলে ৮ জুন ২০১১ সালে, আদালতে সকল আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। এর পূর্বে ১০ অক্টোবর বরিশাল শহরের ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে লগি বৈঠা দিয়ে আক্রমণের অভিযোগ এনে মামলা করা হয় এবং ২০১১ সালের ৮ জুন বিভাগীয় আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সকল অভিযুক্তকে খালাস দেওয়া হয়। আর এভাবেই ২৮ অক্টোবরের খুনীরা তাদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি পায়। আর এভাবেই ধ্বংস করা হয় দেশের আইন ও সাংবিধানিক শাসন। আর তা অব্যাহত থাকে প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী-বাকশালী আমলে।
শুধু তাই নয় বরং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাদের দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবু সাঈদ পল্টন থানায় দায়ের করা হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসককে একটি পত্র দেয়। ১৭ আগস্ট আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করে। যা বাংলাদেশের আইনের শাসনের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। বিশ্ব ইতিহাসে খুনীদের এভাবে অব্যহতি দেওয়ার নজীর খুব একটা দেখা যায় না।
আইন অনুযায়ী যেকোন হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ছাড়া প্রত্যাহার করার সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও, মহাজোট সরকার তাই করেছে। আইন বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, কোন হত্যাকাণ্ডের মামলাই রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। যদি কোন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত করা হয়েও থাকে তদন্ত শেষে আদালতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। স্পর্শকাতর হত্যা মামলা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে বিচার পাওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিও প্রাতিষ্ঠনিক রূপ পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে অপরাধীরাই উৎসাহিত হয়েছে। ফলে আওয়ামী শাসনামলে দেশ পরিণত হয়েছিলো অপরাধ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে। মূলত, ২৮ অক্টোবরের পৈশাচিকতা বিশ্ব বিবেককে আঘাত দিয়েছে। নাড়া দিয়েছে বিবেকবান সকল মানুষকে। রাজনৈতিক সমাবেশ ভন্ডুল করার জন্য প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বিরল। যা এখনো হাজার হাজার মানুষকে কাঁদায়। এ লোমহর্ষক হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পারছি। এ অক্টোবরেই একই কায়দায় নাটোরের বড়াইগ্রামের উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্য পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটেছে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পল্টন ট্রাজেডি বিশ্ব ইতিহাসের এক কলঙ্কিত ও ন্যাক্কারজনক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। সেদিন ৬ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে লাশের উপর মাতম করা হয়েছে। আর এ ঘটনার জের ধরেই সরাদেশে ৪০ জন মানুষের প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ঘটনার দীর্ঘদিন পরেও এসব ঘাতকদের আইনের আওতায় আনা যায়নি বরং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। কারণ, বিগত প্রায় ১৬ বছর হত্যাকারী এবং তাদের দোসররাই ক্ষমতায় ছিলেন।
জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ও বাকশালী শাসনের অবসান ঘটছে। তাই সময় এসেছে ২৮ অক্টোবর সহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই পল্টন ট্রাজেডিসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়ার সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি। অন্যথায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আশা যাবে না; দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে না সাংবিধানিক ও আইনের শাসন।