অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের কিছুদিন পর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে দীর্ঘদিন ধরে স্থবির হয়ে থাকা সার্ক বা দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলো। কিন্তু তার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ১৬ মার্চ অতিক্রম করলেও এক্ষেত্রে লক্ষণীয় কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। খুনি ও পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি কার্যকর অর্থনৈতিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার ধারণাগত উদ্যোগসহ ২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর ৩৬ দফা কাঠমান্ডু ঘোষণার মাধ্যমে ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন সমাপ্ত হয়েছিল। এ সম্মেলনে একটি জ¦ালানি চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছিল। তবে এ চুক্তিসহ সামগ্রিকভাবে ঘোষণাপত্রের ফলপ্রসূতা নিয়ে বিশ্লেষক মহলে ঐ সময় নানা গুঞ্জন শোনা যায়।
বলাবাহুল্য, দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং নিজেদের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) গঠিত হয়েছে। উন্নয়ন আঞ্চলিক কৌশলের ওপর ভিত্তি করে সার্ক স্থাপিত। এটি মূলত একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতার আঞ্চলিক সংগঠন। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতার ধারণাকে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সহযোগিতার মাধ্যমে পূর্ণতা প্রদানই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। এ দর্শনকে সামনে রেখেই ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গঠনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮০ সালের মে মাসে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে এ মর্মে বাংলাদেশের একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেশ করেন। জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন এ অঞ্চলের জনগণের মধ্যে অর্থনীতি, প্রযুক্তি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, কারিগরি, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহজ ও স্বাভাবিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন ও সম্ভাবনা দৃঢ় হোক। দক্ষিণ এশীয় সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানরা এ প্রস্তাবে প্রাথমিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে সাড়া দেন। ১৯৮১ সালের ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল কলম্বোতে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রথম পররাষ্ট্র সচিব সম্মেলনে কাক্সিক্ষত সংগঠন গঠনের ব্যাপারে কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়। এরপরই ১৯৮৩ সালের আগস্ট মাসে এ অঞ্চলের সাতটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা দিল্লিতে তাদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে মন্ত্রিবর্গ একীভূত বা যৌথ কর্মসূচি বা Integrated Programme of Action (IPA) নামে একটি প্রোগ্রাম গ্রহণ করেন। এ কর্মসূচির আওতায় সার্কভুক্ত রাষ্টগুলোর মধ্যে সহযোগিতার মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন কাজ সম্পাদনের জন্য নয়টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়। অতঃপর ১৯৮৫ সালের ৭-৮ ডিসেম্বর ঢাকা সম্মেলনের মাধ্যমে সার্কের SAARC- South Asian Association for Regional Co-operation বা দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার আনুষ্ঠানিক সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদিত হয় এবং তার যাত্রা শুরু হয়। সার্ক ৭টি রাষ্ট্র নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৮। এ পর্যন্ত সার্কের ১৬টি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সার্কের সদর দপ্তর নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থিত।
সার্কের সদস্য রাষ্ট্র : দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ১৯৮৫ সালে শুরু হওয়া সার্ক ইতিমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিস্তৃতি লাভ করেছে। সার্কে আফগানিস্তানের অন্তুর্ভুক্তির ফলে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটে। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে: ১. বাংলাদেশ, ২. ভারত, ৩. পাকিস্তান, ৪. নেপাল, ৫. শ্রীলংকা, ৬. ভুটান, ৭. মালদ্বীপ, ৮. আফগানিস্তান।
সার্কের পর্যবেক্ষক দেশসমূহ : চীন ও জাপানের মতো উন্নত প্রযুক্তিশীল রাষ্ট্র সার্কের পর্যবেক্ষক। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান ও মরিশাসকে সার্কের পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দেয়া হয়।
সার্কের অবকাঠামো : সার্ক সনদে এ সংস্থার জন্য একটি পাঁচ স্তর বিশিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বিধান রাখা হয়েছে। এ কাঠামো হচ্ছে :
১. সদস্য দেশসমূহের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন: সার্ক সনদ অনুযায়ী প্রতি বছরই এ শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী সব সদস্য রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতিনিধিত্ব ছাড়া সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে না। প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত সার্কের ১৬ টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২. পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন: সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সাধারণত বছরে দু’বার মিলিত হন। সম্ভব না হলে বছরে অন্তত একবার মিলিত হবেন। এ সম্মেলনগুলোতে বিভিন্ন এজেন্ডা ও সিদ্ধান্ত প্রণয়ন করা হয়।
৩. স্ট্যান্ডিং কমিটি: সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পররাষ্ট্র সচিবদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠিত। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর পরিকল্পনা, অনুমোদন, তদারকি ও সমন্বয় সাধন এ কমিটির প্রধান কাজ। এ কমিটি প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো সময় বৈঠকে বসবেন এবং সংস্থার কার্যাবলি সম্পর্কে স্বস্ব দেশের মন্ত্রিপরিষদের কাছে নিয়মিত রিপোর্ট পেশ করবেন।
৪. টেকনিক্যাল কমিটি : সার্কের সব কর্মসূচি কতগুলো নির্দিষ্ট সহযোগিতার ক্ষেত্রের মাধ্যমে পরিচালিত। এসব কর্মসূচির টেকনিক্যাল কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিয়ে এ কমিটি গঠিত।
৫. সচিবালয়: সার্ক সনদের ৮নং ধারায় সার্ক সচিবালয় সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। বাঙ্গালোরে অনুষ্ঠিত সার্কের দ্বিতীয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সচিবালয়ের গঠন ও কার্যাবলি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নেপালের কাঠমান্ডুতে সার্ক সচিবালয় স্থাপন করা হয়েছে। ১৯৮৭ সালে এর কার্যক্রম শুরু হয়। সার্কের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে সচিবালয় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে থাকে।
সার্কের মূলনীতি : সার্কের মূলনীতিগুলো হলো :
১. সার্কের যে কোনো সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হতে হবে।
২. দ্বিপক্ষীয় বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো এ সংস্থায় তোলা হবে না।
৩. প্রত্যেকটি সদস্য রাষ্ট্র পরস্পরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, কেউ কারুর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। তদুপরি তারা পারস্পরিক লাভালাভের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকবে।
৪. এ অঞ্চলের দেশগুলোর আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি লক্ষ্য রেখে সার্ক ভূমিকা পালন করবে।
সার্কের সহযোগিতার ক্ষেত্র সার্কের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে :
১. কৃষি, ২. পল্লী উন্নয়ন, ৩. স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, ৪. নারী উন্নয়ন, ৫. পরিবেশ ও আবহাওয়া, ৬. বনায়ন, ৭. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ৮. মানবসম্পদ উন্নয়ন, ৯. পরিবহন ও যাতায়াত, ১০. পর্যটন, ১১. ডাক ও তার, ১২. শিশু অধিকার সংরক্ষণ, ১৩. মাদক পাচার ও ব্যবহার রোধ, ১৪. শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি।
সার্ক সনদ : ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনেই অনুমোদিত হয় সার্ক সনদ। এ সনদের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হচ্ছে-
১. দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের কল্যাণ সাধন এবং তাদের উৎকর্ষ বৃদ্ধি।
২. এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ দ্রুততর করা।
৩. দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যৌথভাবে আত্মনির্ভরশীলতার প্রসার ও শক্তিবর্ধনে সাহায্য করা।
৪. পরস্পরের সমস্যা অনুধাবন, পারস্পরিক বিশ্বাস ও বুঝাপড়ায় সাহায্য করা।
৫. অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, কারিগরি, বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে সক্রিয় সহযোগিতা এবং পারস্পরিক সাহায্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি।
৬. অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৭. সম স্বার্থ বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহের মুকাবিলায় নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার প্রসার।
৮. অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য অন্যান্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা।
সার্কের সচিবদের নাম ও মেয়াদকাল :
১. আবুল আহছান, ১৬ জানুয়ারি ১৯৮৭-১৫ অক্টোবর ১৯৮৯
২. কান্ট কিশোর বারগেভা, ১৭ অক্টোবর ১৯৮৯-৩১ ডিসেম্বর ১৯৯১
৩. ইবরাহিম হোসাইন জাকি, ১ জানুয়ারি ১৯৯২-৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৩
৪. যাবদ কান্ট সিলওয়াল, ১ জানুয়ারী ১৯৯৪-৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৫
৫. নাঈম ইউ হেসাইন, ১ জানুয়ারি ১৯৯৬-৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৮
৬. নিহাল রডরিগো, ১ জানুয়ারি ১৯৯৯-১০ জানুয়ারী ২০০২
৭. কিউ এ এম এ রহিম, ১১ জানুয়ারী ২০০২-২৮ ফেব্রম্নয়ারী ২০০৫
৮. চেনকিয়া দরজি ১ মার্চ ২০০৫-বর্তমান কাল পর্যন্ত।
৯. শীল শর্মা, ১ মার্চ ২০০৮-২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১
১০. ফাতিমা সাঈদ, ১ মার্চ ২০১১-১১ মার্চ ২০১২
১১. আহমেদ সেলিম, ১২ মার্চ ২০১২-২ মার্চ ২০১৪
১২. অর্জুন বাহাদুর থাপা, ৩ মার্চ ২০১৪-২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭
১৩. আমজাদ হোসেন সিয়াল, ১ মার্চ ২০১৭-২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
১৪. এসলা উইরাকুন, ১ মার্চ ২০২০-৩ মার্চ ২০২৩
১৫. গোলাম সারওয়ার, ৪ মার্চ ২০২৩ থেকে অদ্যাবধি
সার্কের সফলতা : দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক তৃতীয় দশকে পদার্পণ করেছে। সময়টা খুব দীর্ঘ না হলেও একটি আঞ্চলিক সংগঠনের পরিপক্বতার জন্য যথেষ্ট। এদিক থেকে সার্ককে মোটামুটিভাবে সফল বলা যায়। এই প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকার মতো যথেষ্ট সামর্থ্য দেখিয়েছে বলে মনে হয়। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতার সম্প্রসারণের জন্য এটি একটি প্লাটফরম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ প্ল্যাটফরম এ অঞ্চলে অরাজনৈতিক বিষয়ে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। সার্কের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে ওঠেছে যা আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এর একটি আনুষ্ঠানিক সনদ রয়েছে এবং কাঠমান্ডুতে সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সার্ক এ অঞ্চলে রাজনৈতিক নেতাদের থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবাইকে একে অপরের কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এর ফলে একে অন্যের সমস্যা, আশা-আকাক্সক্ষা সম্পর্কে জানতে পারছে। এতে অনেক ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটানোর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
সার্কের সাফল্যগুলো নিম্নরূপ : প্রতিষ্ঠার পর থেকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বড় কোনো সংঘাত হয়নি। এর কারণ সার্কের মূল্যবোধ।
সদস্য রাষ্টগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রায়ই আন্তর্জাতিক ফোরামে অভিন্ন নীতি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বা সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
সার্কের আওতায় কৃষিতথ্য কেন্দ্র (Agricultural Information Centre), খাদ্য সুরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের কমিশন গঠন সার্কের একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সাফ গেমস সার্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক বিষয়।
সার্ক সদস্য দেশগুলো সন্ত্রাস দমন সংক্রান্ত একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। এটি কার্যকর হলে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও সীমান্তবর্তী সন্ত্রাস হ্রাস পাবে।
সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে UNCTAD-এর সঙ্গে সার্কের একটি সমঝোতা স্মারক, দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য ESCAP ও UNDP এর সঙ্গে এগ্রিমেন্ট, অর্থনেতিক উন্নয়নের জন্য জাপানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক, শিশুদের অধিকার নিশ্চিতকরণ ও উন্নয়নের জন্য ইউনিসেফের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে এ ধরনের পদক্ষেপ সার্কের অন্যতম সাফল্য।
- SAFTA চুক্তি সম্পাদন সার্কের একটি বড় ধরনের সাফল্য। সার্কভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক সংযুক্তিকরণ এবং দক্ষিণ এশীয় বাণিজ্যে পারস্পরিক পক্ষপাতমূলক কাঠামো রচনার আলোকে এ চুক্তি সম্পাাদত হয়। ১৯৯৩ সালে ঝঅচঞঅ স্বাক্ষরিত হয় যা ১৯৯৫ সালে কার্যকর হয়। পারস্পরিক সহযোগিতার আওতায় প্রতিটি পণ্যের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা যাচাই করে শুল্কহার কমিয়ে আনার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। চাহিদাভিত্তিক একটি উৎপাদনব্যবস্থা পরিচালনার স্বার্থে একাধিক দেশের উৎপাদনের উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিকাশের একটি নতুন পরিবেশ তৈরি এবং একটি অভিন্ন বাজার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বকে সার্ক স্বীকৃতি দিয়েছে। SAFTA -এর একটি উদ্দেশ্য হলো ক্রমান্বয়ে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্যের উদারীকরণ, যার মাধ্যমে SAFTA (South Asian Free Trade Area) বা মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার একটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। ১৯৯৭ সালের ১২ থেকে ১৪ মে মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত নবম শীর্ষ সম্মেলনে ২০০১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল এবং একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠীতে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। SAPTA এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সম্পদ, সেবা , বিনিয়োগ এবং জনগণের মুক্ত যাতায়াত নিশ্চিত করবে। অবাধ বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ঝঅচঞঅ-এর আওতায় ২২৬ পণ্য এবং দ্বিতীয় দফায় ২০০ পণ্যের ১০% থেকে ৫০% শুল্ক কমানো হয়।
সার্কের উদ্যোগে সার্ক টিউবারকিউলোসিস সেন্টার (SAARC Tuberculosis Centre) , সার্ক ডকুমেন্টেশন সেন্টার SAARC Documentation Centre), সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র (SAARC Meta Research Centre) প্রভৃতির মাধ্যমে এ অঞ্চলে উল্লিখিত বিষয়ের ওপর উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
চতুর্দশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে সার্ক পাসপোর্ট প্রবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে অবাধ চলাচল বৃদ্ধি পাবে। বিভেদের দেয়াল অর্থহীন হয়ে পড়বে এবং রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জনবসতি ঘনত্বের সমতা আসবে। এছাড়া সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন ‘সার্ক মুদ্রা’ চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। অভিন্ন সার্ক মুদ্রা চালু হলে উন্নত দেশের মুদ্রানীতির আধিপত্য থেকে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ রেহাই পাবে। (চলবে)