স্বল্প দিনের ব্যবধানে আমরা বেশ কয়েকজন খ্যাতনামা লেখক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীকে হারিয়েছি। দিনকাল সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী হঠাৎ চলে গেলেন, অনেকটা নিভৃতে অপরিণত বয়সে। ডানপন্থী সাংবাদিকতায় তার অসামান্য অবদান ছিল। তারপর কয়েক সপ্তাহ আগে নয়াদিগন্ত সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি অসামান্য পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন; তার লেখনী ছিল ক্ষুরধার, তথ্য ও তত্ত্ব সমৃদ্ধ। শুধু লেখক, সাংবাদিক হিসেবে নয়, সম্পাদক হিসেবেও উপরোক্ত দুজনের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা ছিল অপরিসীম। আল্লাহ তাদের বেহেশত নসীব করুন। গত ৭ সেপ্টেম্বর আরেকজন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী জনাব বদরুদ্দীন ওমর মারা গেছেন। তিনিও অসাধারণ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। যদিও অনেকে তাকে বামপন্থী বলে আখ্যায়িত করতেন। তার পিতা জনাব আবুল হাসেম পাকিস্তান আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন এবং ইসলামী জীবনব্যবস্থার উপর তার অগাধ জ্ঞান ছিল। শেষ জীবনে তিনি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং অন্ধ হিসেবে তৎকালীন ইসলামী একাডেমির পরিচালক হিসেবে সামগ্রিক দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের (বাইতুল মোকাররম) পূর্বসুরী ছিল ইসলামিক একাডেমি। কবি ফারুক মাহমুদ আবুল হাসেম সাহেবের সেক্রেটারি ছিলেন এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রশাসনিক চিঠিপত্রের মুসাবিদা ও সম্পাদন, কুরআন-হাদিস ও বইপত্র পড়ে তাকে শোনানো ছিল তার কাজ। Islam and Communism The Spirit of Islam অনেকগুলো গ্রন্থ তিনি প্রণয়ন করেছিলেন। একাডেমির সেমিনারসমূহে তিনি জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা করতেন।

এখন অন্য প্রসঙ্গে আসি। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিপিএল সভাপতি জনাব আবদুর রব একটি দৈনিক পত্রিকার মানোন্নয়ন ও কাটতি বৃদ্ধির পদ্ধতি সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চেয়েছেন। প্রশ্নটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। এর জবাব দেয়ার জন্য যে পাণ্ডিত্যের দরকার তা আমার নেই। তথাপিও আমি বিষয়টি আলোচনা করার আগে সাংবাদিকতা ও সাংবাদিকের সংজ্ঞা সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।

সাংবাদিকতা হচ্ছে বিভিন্ন ঘটনা, তথ্য, তত্ত্ব, ভাব, ধারণা, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও তাদের সামগ্রিক কর্মতৎপরতা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মিথস্ক্রিয়ার দৈনন্দিন খবরকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে নির্ভুল ও নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপনার নাম। ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাষ্ট্র বা খেলাফতের এজেন্ট বা গুপ্তচররা প্রত্যন্ত এলাকার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলী, জনগণের জীবনযাত্রা প্রণালী, শাসন ও বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের আচরণ, ইসলাম বিরোধীদের তৎপরতা প্রভৃতি সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের নিকট প্রেরণ করতেন। সরকার তার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক প্রতিবেদনগুলো একত্র করে গেজেট আকারে প্রকাশ করতেন। আধুনিক বিশ্বে সাংবাদিকতার যে নীতিমালা (Code of ethics) অনুসরণ করা হয় তার ভিত্তি ইসলামী শাসনামলে গৃহীত নীতিমালা থেকে গৃহীত।

বিশ্বের প্রতিথযশা সাংবাদিক ও সংবাদপত্র বিশেষজ্ঞ স্যার ওয়াল্টার বিংহামের দৃষ্টিতে সাংবাদিক হচ্ছেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি মুদ্রিত পাঠ্যবস্তু, হস্তলিপি, অডিও-ভিডিও বা তথ্যচিত্র আকারে খবর সংগ্রহ করে তাকে জনগণের বোঝার উপযোগী করে সাধারণ্যে বিতরণ করেন। তার সংবাদ বিতরণের মাধ্যম হচ্ছে দৈনিক, সপ্তাহিক, অর্ধ-সাপ্তাহিক বা মাসিক পত্রিকা, ম্যাগাজিন ওয়েব সাইট, রেডিও-টেলিভিশন, ইউটিউব প্রভৃতি। দেশে-বিদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা, বিনোদন, সরকার ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রসমূহের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সম্পর্ক প্রভৃতি অঙ্গনের ঘটনাপঞ্জী সম্পর্কে জনগণকে অবহিত রাখা হচ্ছে সাংবাদিকের কাজ। তিনি এ উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, সাক্ষাৎকার গ্রহণ, নিরীক্ষা ও গবেষণা পরিচালনা, সংশ্লিষ্ট মহল বা মহলগুলোর মতামত গ্রহণ করবেন যাতে করে তার বিবরণী নিখুঁত, নিরপেক্ষ ও তথ্যবহুল হয়।

সাংবাদিকের কাজ বহুমুখী। তাদের মধ্যে রয়েছেন রিপোর্টার, সম্পাদক, সহসম্পাদক, সহকারী সম্পাদক, ফিচার সম্পাদক, ফটো সাংবাদিক এবং প্রযোজক প্রমুখ। এদের কেউ কেউ সাধারণ খবরের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন, কেউ কেউ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য, খেলাধুলাসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর বিশেষভাবে কাজ করে বিষয় যাই হোক না কেন, সাংবাদিকের কাজ হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠতা ও ভারসাম্য রক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী জনসাধারণের কাছে তুলে ধরা। তিনি আগ্রাসী সাংবাদিক হলে বিষয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নতুন ঘটনা সৃষ্টি করে তা পরিবেশন করতে পারেন। মোদ্দাকথা হচ্ছে তার তৈরি সংবাদ থেকে মানুষ অনুপ্রাণিত হবে এবং তা কাজে লাগাবে।

১৯৬৪ সালে সাংবাদিক হিসেবে আমার হাতে খড়ি। প্রথমে সাপ্তাহিক জাহানে নও পত্রিকার মাধ্যমে। তখন এর সম্পাদক ছিলেন মাওলানা আবদুর রহীম। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর। আমি তখন ডিগ্রি ক্লাসের ছাত্র । এরপর ভারতের স্টার অব ইন্ডিয়ার সম্পাদক ও পাকিস্তানে হিজরতকারী সাংবাদিক জনাব আজিজ আহমদ বিলিয়ামিনির সম্পাদনায় প্রকাশিত ইংরেজি সাপ্তাহিক ইয়ং পাকিস্তান ও সংবাদ সংস্থা ঢাকা প্রেস সিন্ডিকেট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে ১৯৬৭ সালে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম পাকিস্তান অবজার্ভার ও পরে বহুল প্রচারিত দৈনিক পূর্ব দেশে যোগদান করি। ফেনীর অন্যতম কৃতী সন্তান পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রথম সারির আইনজীবী পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র ও অর্থ বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী এবং তৎকালীন পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক দলের প্রধান জনাব হামিদুল হক চৌধুরীর মালিকানায় আল হেলাল প্রেস থেকে এ দুটি দৈনিক ছাড়াও ওয়াতন নামে একটি উর্দু দৈনিক প্রকাশিত হতো। এ তিনটি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে জনাব আবদুস সালাম, জনাব মাহবুবুল হক এবং জনাব নাসিম আহমদ। জনাব আবদুস সালাম এবং জনাব মাহবুবুল হক উভয়েই ফেনীর বাসিন্দা ছিলেন। জনাব মাহবুবুল হক অবজার্ভারের সম্পাদক ছিলেন। তিনি রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্যও ছিলেন। জনাব আবদুস সালাম ছিলেন অবিভক্ত ভারতের হিসাব ও হিসাব নিরীক্ষা বিভাগে কর্মরত। একজন আইসিএস অফিসার ও হামিদুল হক চৌধুরীর সহপাঠী। ১৯৪৮ সালে তিনি তাকে সম্পাদক করে পাকিস্তান অবজার্ভার প্রকাশ করেন। এর ডেপুটি এডিটর ছিলেন ফেনীরই আরেক কৃতী সন্তান জনাব ওবায়দুল হক। জনাব হক ঢাকা ল’ রিপোর্ট (DLR) এরও (ডিএলআর) সম্পাদক ছিলেন।

ফেনীর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাংবাদিকের মধ্যে যারা এ পত্রিকাগুলোতে কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে জনাব আবদুল গনি হাজারী, জনাব এবিএম মূসা (বার্তা সম্পাদক ও পরে সম্পাদক) সিতারা মূসা. আহসান উল্লাহ চৌধুরী (প্রেস ম্যানেজার), আবদুর রহিম, আবদুল মান্নান, মোফাজ্জল হোসেন, মুজিবল হক, সামছুল হুদা প্রমুখ। এছাড়াও চৌধুরী মঈন উদ্দিন, আবদুল ওয়াহেদ, মোহাম্মদ ফয়েজ, মোহাম্মদ মোস্তফা, এরশাদ মজুমদার, নাজিমুদ্দিন মানিক এবং আমি স্বয়ং এই পত্রিকাগুলোর সাথে ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরিতে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত কাজ করেছি এবং চাকরিকালে কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেছি। শেখ মুজিবের আমলে পত্রিকাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অবজার্ভারকে বাংলাদেশ অবজার্ভার নামকরণ করে সরকারি মালিকানায় নেয়া হয় এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী অবজার্ভারের সম্পাদক পদে আসীন হন। জনাব ইকবাল সোবহান চৌধুরী বাংলাদেশ অবজার্ভারের সর্বনাশ করেন। তিনি অবজার্ভার ভবন ও আল হেলাল প্রেস বিক্রি করে দেন এবং ২০১০ সালে বাংলাদেশ অবজার্ভার বন্ধ করে ডেইলি অবজার্ভার নামে আরেকটি পত্রিকা নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি নিরুদ্দেশ রয়েছেন। ইকবাল সোবহান অজ্ঞ, লোভী ও মুর্খ সম্পাদকের একটি উদাহরণ, যিনি গড়তে পারেননি, ভাঙতে পারঙ্গম ছিলেন।

ষাটের দশকে অবজার্ভার গ্রুপের পত্রিকাগুলোর ফেনী সংবাদদাতাদের মধ্যে ওবায়দুল হক পেয়ারা ছিলেন ফেনীরই কৃতী সন্তান। সাবেক সিএসপি কাজী ফজলুর রহমান ও জনাব মফিজুর রহমান (যথাক্রমে অর্থ সচিব ও পরিকল্পনা সচিব) ফেনীর বাসিন্দাদের মালিকানাধীন পত্রপত্রিকাসমূহে লেখালেখির মাধ্যমে হাত শাণিত করে সেন্ট্রাল সুপেরিয়র পরীক্ষায় কৃতীত্ব অর্জন করেছিলেন।

বলতে ভুলে গেছি ফেনীর আরেক সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরীর সম্পাদনায় ঢাকার আরেকটি দৈনিক প্রকাশিত হতো। এটা ছিল দৈনিক সংবাদ। মালিকানায় ছিলেন মুসলিম লীগের জনাব নূরুল আমিন। শহীদুল্লাহ কায়সার ও তার ভাই জহির রায়হান এই পত্রিকার প্রোডাক্ট। স্বাধীনতাপূর্বকালে ফেনী থেকে যে কয়টি পত্রিকা বের হতো তার মধ্যে প্রায় সবগুলোই ছিল সাপ্তাহিক। সাপ্তাহিকগুলোর মধ্যে রয়েছে আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ওবায়দুল হকের সাপ্তাহিক তা’লিম ও আওয়ামী লীগ নেতা খাজা আহমদের সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক আমার দেশ এবং এরশাদ মজুমদারের ‘ফসল’। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ফেনী থেকে অনেকগুলো পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে আবদুল ওয়াদুদের ফেনী বার্তা, গোলাম মোস্তফার ফেনী নিউজ, এডভোকেট জাফর উল্লাহর সংবাদ বুলেটিন প্রভৃতি। ফেনীর সৌরভ, সাপ্তাহিক ফেনী বার্তা ফেনীর সাংবাদিকদের পেশাগত উৎকর্ষের প্রমাণ হিসেবে অনেক কৃতিত্বের স্বাক্ষর হয়ে আছে।

ফেনীর অন্যতম সাংবাদিক আওয়ামী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে তাদের রোষানলে পড়ে জীবনকে বিপন্ন করেছিলেন। এই সাহসী সাংবাদিক টিপু সুলতান ইউএনবির রিপোর্টার হিসাবে ২০০২ সালে সিপিজে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিলেন। আমরা সকল সাহসী সাংবাদিকদের গঠনমূলক সাংবাদিকতার জন্য গর্বিত। শেষ করার আগে মূল প্রশ্নে আসি।

প্রশ্নটি হচ্ছে সংবাদপত্রের মান ও সাংবাদিকের আকর্ষণ ক্ষমতা নিয়ে। আলোচনার শুরুতে সাংবাদিকতা ও সাংবাদিক উভয়ের সংজ্ঞা, কর্মক্ষেত্র এবং বিস্তৃতি নিয়ে আমি আলোচনা করেছি। একজন সাংবাদিক যদি তার লেখার মান দিয়ে পাঠকদের আকৃষ্ট করতে না পারেন তা হলে মানুষ তার পত্রিকা পড়বে কেন? রাজনৈতিক দল বা কোনও একটা গোষ্ঠী তার বিশেষ পত্রিকা বা বুলেটিন তার কর্মী সমর্থকদের কি পড়তে বাধ্য করতে পারেন? আমি হরহামেশা এ প্রশ্নের সম্মুখীন হই। আমার উত্তর না। বিক্রিতব্য পণ্যকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটি Pull Product আরেকটি Push Product. নিজের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী দ্বারা পাঠকদের টেনে আনার ক্ষমতা যদি পত্রিকার না থাকে তাহলে তা বাজারে চলে না। এ ধরনের পণ্য ধাক্কা দিয়ে বা ঠেলে দিয়ে অন্যের দুয়ারে পৌঁছে দিলেও মানুষ তা খাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আমি যুগ যুগ ধরে এটা দেখে আসছি।

দুনিয়ার বিদ্যমান অবস্থায় Print Media গবফরধ বা মুদ্রিত খবরের কাগজের অবস্থান অত্যন্ত জটিল। মানুষ এখন পড়তে চায় না সেটা দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকা বা বইপত্র যাই হোক না কেন? গত ১৮ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি দীর্ঘ তুরস্ক সফরে ছিলাম। সে দেশে যেখানেই আমি গিয়েছি কোথাও মুদ্রিত খবরের কাগজ আমার নজরে পড়েনি। মিল্লি গেজেট ও ডেইলি সাবাহ নামক দু’টি খ্যাতনামা দৈনিকের সম্পাদকের সাথে আমার আলোচনা হয়েছে। সবাই এখন অনলাইন ভার্সনে চলে গেছেন। সরকারি বেসরকারি অফিস আদালত, হোটেল লবি কোথাও এখন মুদ্রিত পত্রিকা পাওয়া যায় না। সবার কথা করোনা ভাইরাসের পর প্রিন্ট মিডিয়া পরিত্যাগ করে তারা অনলাইনে চলে গেছেন। কেউ সকাল বেলা পত্রিকা পড়ার জন্য অপেক্ষা করেন না, রাতেই সবাই অনলাইনে পড়ে ফেলেন। সাংবাদিকদেরও অলি গলিতে সংবাদ সংগ্রহের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না। সামাজিক মাধ্যমে সবকিছুই পাওয়া যায়। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উপযুক্ত এ্যাপের মোড়ক দিয়ে নিউজ ও ভিউজকে আকর্ষণীয় করে অনলাইন হিট বৃদ্ধির জন্য এ জগতে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ও সংবাদপত্র কর্মীর সংখ্যা যে কমছে তা নয় বরং Survival of the fittest এ নীতির ভিত্তিতে অযোগ্যদের স্থান যোগ্যরা দখল করে নিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence ও তার স্থান দখল করছে। তবে তার অপব্যবহার রোধ করাও অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিদ্যমান প্রবণতাকে প্রাধান্য দিয়ে গণমাধ্যমকে আকর্ষণীয় করে তোলার বিকল্প আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। এ ব্যাপারে আমাদের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।