ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আবর, ভারতীয় ও পারস্যের বণিকদের মাধ্যমে থাইল্যান্ডে ইসলামের আগমন শুরু হয়। শুরুর দিকে মুসলমানরা থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। পরে ধীরে ধীরে দেশটিতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে শুরু করেন। বস্তুত দেশটির দক্ষিণাঞ্চল একসময় পাত্তানি সালতানাত নামে পরিচিত হয় এবং এটি মুসলিম রাজ্য এবং মালয়েশিয়ার কেলান্তান ও তেরেঙ্গানুর সাথে সংযুক্ত ছিল। ১৯০২ সালে সিয়াম (বর্তমান থাইল্যান্ড) এ অঞ্চল দখল করে নেয়। থাইল্যান্ডের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে মুসলিমরা প্রধানত ইরান, ভারত, বাংলাদেশ ও চীন থেকে এসে বসবাস শুরু করেন। ব্যাংককের বাংলা মহল্লা ও চুলালংকর্ন মসজিদ তাদের ঐতিহ্যের স্মারক ও সাক্ষ্য বহন করে।

থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার মাত্র ৪.৯ শতাংশ মুসলিম। এ সংখ্যা আসলে ৫ শতাংশের ওপরে বলে ভিন্ন পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। বেশিরভাগ থাই মুসলমানরা সুন্নি। থাইল্যান্ডের চারটি দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সাতুন, ইয়ালা, পাত্তানি এবং নারাথিওয়াতে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ওই তিনটি প্রদেশে মাত্র ১৮ শতাংশ মুসলিম বাস করেন। বাকিরা থাইল্যান্ডজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫ সালে দক্ষিণ থাইল্যান্ডের মুসলমানরা ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে সাধারণ জনসংখ্যার ৩০.৪ শতাংশ ছিল এবং দেশের অন্যান্য অংশে তিন শতাংশেরও কম ছিল।

৯ম শতাব্দীতেও থাইল্যান্ডে মুসলিম বণিক সম্প্রদায় বসবাস করতেন। কিছু সমস্যা থাকলেও থাইল্যান্ড ধর্মীয় সহিষ্ণুতার জন্য পরিচিত ছিল এবং সেখানে মুসলিমরা সিয়ামের (থাইল্যান্ডের পুরাতন নাম) রাজকীয় সরকারের অধীনে কাজ করতেন। উল্লেখ করা দরকার যে, দক্ষিণ থাইল্যান্ডে মালয় বিচ্ছিন্নতাবাদ মূলত জাতিগত ভিত্তিতে একটি স্বাধীনতা সংগ্রাম। কারণ এ অঞ্চলের মালয়রা থাইল্যান্ড থেকে আলাদা হওয়ার চেষ্টা করছে। মূলত, থাইল্যান্ডের মুসলিমরা বেশ বৈচিত্র্যময়। নৃতাত্ত্বিক এ গোষ্ঠীগুলো সুদূর চীন, পাকিস্তান, কম্বোডিয়া, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে স্থানান্তরিত হয়েছেন। পাশাপাশি থাই জাতিও রয়েছে। থাইল্যান্ডের মুসলমানদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ থাই মালয় বলে জানা যায়।

দেশটির অনেক মুসলিম জাতিগত এবং ভাষাগতভাবে থাই, যারা হয় বংশগত মুসলিম, আন্তঃবিবাহের মাধ্যমে মুসলিম, অথবা সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মান্তরিত মুসলিম। নৃতাত্ত্বিক থাই মুসলমানরা প্রধানত মধ্য এবং দক্ষিণ প্রদেশে বাস করে। তিনটি দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত প্রদেশে স্থানীয় মুসলিম জনসংখ্যার বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রধানত মালয়, যা এ অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ।

সুদূর উত্তর ও তৎসংলগ্ন মধ্য ও দক্ষিণ শহুরে অঞ্চলে হুই বংশোদ্ভূত থাই মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। বেশিরভাগ চীনা মুসলমানরা থাই ভাষায় চিন হাউ নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। যদিও বেশিরভাগ চিন হাও মুসলিম নয়। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে, চিন হাউ নামটি ‘চিন’ (চীন) এবং ‘হো’ (হুই) এর সংমিশ্রিত রূপ। এভাবে চিন হাউকে ব্যবসায়ী এবং এমিগ্রেস (বাধ্য হয়ে অভিবাসী হওয়া) হিসাবে দেখা যেতে পারে, যারা তাদের সাথে চীন থেকে হুই ঐতিহ্য বহন করে এনেছিল। চীনের অন্যতম পরিচিত মসজিদ হচ্ছে চিয়াং মাই প্রদেশের বান হো মসজিদ।

রোহিঙ্গা সহ জাতিগত গোষ্ঠীগুলোকে থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবির, মাছ ধরার গ্রাম, সে সাথে মায়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি অনেক ছোট শহরে পাওয়া যায়। অনেক চীনা মুসলমানের বাসস্থান হওয়ার পাশাপাশি, উত্তর থাইল্যান্ড অনেক বার্মিজ এবং মিশ্র চীনা-বর্মী বা পাকিস্তানি-বর্মী জনগণের আবাসস্থল।

১৬৮৫ সালের একজন পার্সিয়ান কূটনীতিকের বিবরণ এবং সে সাথে ফরাসি পর্যটক গাই টাচার্ডের নোট অনুসারে, সে সময়ে থাইল্যান্ডে একটি উল্লেখযোগ্য পারসিয়ান শিয়া সম্প্রদায় ছিল, যেখানে রাজার দেওয়া অনুদানের মাধ্যমে আচার অনুষ্ঠান ও তাজিয়া পালন করা হতো। প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজধানী ব্যাংকক এলাকায় বসবাসকারী ফার্সি বংশোদ্ভূত মুসলিম রয়েছেন এবং তারা সংখ্যায় নেহায়েত কম নন। সাধারণত থাইল্যান্ডের মুসলমানরা সুফিবাদী বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত। একই সাথে বেশ শান্তিপ্রিয়ও।

জাতীয় পরিসংখ্যান মতে, দেশটিতে ৩৪৯৪টি মসজিদ আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৩৬টি মসজিদ ছিল পাট্টানি প্রদেশে। ধর্ম বিষয়ক বিভাগের (আরএডি) মতে, ৯৯ শতাংশ মসজিদ সুন্নি মুসলিমদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং অবশিষ্ট এক শতাংশ শিয়া ইসলামের অনুসারী।

থাইল্যান্ডের মুসলমানরা নানাবিধ বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের অনুসারি। যা তাদের দৈনন্দিন জীবনাচারণ থেকে উপলব্ধি করা যায়। বস্তুত, চুলারাতচামন্ত্রি থাইল্যান্ডের শাইখ আল-ইসলামের উপাধি। উপাধিটি প্রথম আয়ুথায়া রাজ্যে ব্যবহার করা হয়েছিল, যখন রাজা সংথাম (১৬১১-১৬২৮) শেখ আহমদকে রাজকর্মে নিযুক্ত করেছিলেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাজা দ্বারা চুলারাতচামন্ত্রি নিয়োগ করা হয়। তিনি দেশের সমস্ত ইসলামী বিষয় পরিচালনা করার এবং সরকারী সংস্থাগুলিকে ইসলামী বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা সংরক্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে রাজা কর্তৃক মৃত্যু, পদত্যাগ এবং অপসারণের পরে চুলারাচামন্ত্রি তার অফিস খালি করে দেয়।

থাইল্যান্ডের মুসলমানরা সুশৃঙ্খল ও সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী। দেশটিতে একটি সেন্ট্রাল ইসলামিক কাউন্সিলও রয়েছে। সিআইসিও শিক্ষামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ইসলামী বিষয়ে পরামর্শ দেয়। এর প্রিজাইডিং অফিসার হলেন চুলারাচামন্ত্রি। প্রাদেশিক ইসলামী কাউন্সিলগুলি এমন প্রদেশগুলিতে বিদ্যমান যা মুসলিম সংখ্যালঘু ছিল। দেশটিতে সরকার এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরকারী আর্থিক সহায়তা, কিছু বড় মসজিদ নির্মাণে সহায়তা এবং থাইল্যান্ডের মুসলমানদের হজ্জ পালনে আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। যা বৌদ্ধ প্রধান দেশটির ধর্মীয় স্বাধীনতার অনন্য নিদর্শন।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, থাইল্যান্ডে প্রায় সাত কোটি জনসংখ্যার প্রতি ২০ জনের একজন মুসলমান। দেশটিতে ৯৫ লাখের বেশি মুসলমান রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই বাস করেন গ্রামাঞ্চলে। মুসলিমরা থাইল্যান্ডের বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। আরব ব্যবসায়ী এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলিম অভিযানের মাধ্যমে এদেশে ইসলামের বিস্তার ঘটে। থাইল্যান্ডের মুসলিম প্রধান তিনটি রাজ্য হলো-পাত্তানি, নারাথিওয়াট ও ইয়ালা। এ তিনটি প্রদেশে থাইল্যান্ডের মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ বাস করেন। বিগত এক শতাব্দী আগে থাইল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটি স্বাধীন মুসলিম সালতানাত হিসেবে পরিচিত ছিল। এ ছাড়া মালয়েশিয়া সংলগ্ন সাতুন প্রদেশেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

পাটানি, ইয়ালা এবং নারাথওয়াত রাজ্যকে থাইল্যান্ডের ‘ডিপ সাউথ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বৌদ্ধপ্রধান দেশটির এ রাজ্যগুলোতে মুসলমানদের বসবাস বেশি। গত দু’দশক ধরে দেশটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছে। তাদের দাবি হচ্ছে, মুসলিম প্রধান রাজ্যগুলোকে স্বায়ত্তশাসন। কিন্তু থাই সরকার সে দাবি মেনে নেয়নি। বরং দেশটির সেনাবাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

থাইল্যান্ডে সরকারিভাবে মুসলমানদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলেও শ্রীলংকা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে প্রায়ই মুসলিমবিরোধী মনোভাব দেখা যায়। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটি অংশের প্ররোচতা এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি শ্রীলংকার ক্যান্ডিতে চার মুসলমানের হামলায় এক বৌদ্ধ নাগরিকের আহত হওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের মসজিদ, ঘরবাড়ি ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছিল সরকার। এছাড়া ১২ দিনের জন্য সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কারণ ‘বুদ্ধিস্ট ফোর্স’ নামে ভিক্ষুদের একটি সংগঠনসহ চরমপন্থি বৌদ্ধরা মুসলিমদের ওপর হামলা চালাতে মানুষজনকে উৎসাহী করতে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিল। সেখানে তারা এমনও বলার চেষ্টা করেছিল যে, বৌদ্ধ জনসংখ্যা কমাতে মুসলমানরা নাকি খাবার আর কাপড়ে ‘কন্ট্রাসেপ্টিভ' মিশিয়ে দিচ্ছে! মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে মুসলমানরোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়ার পেছনেও মৌলবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষুদের একটি অংশের ভূমিকা রয়েছে।

মূলত, শ্রীলংকা, মিয়ানমারের মতো থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও সংঘাতের একটি অংশ। ২০১৫ সালের অক্টোবরে থাইল্যান্ডের একজন জনপ্রিয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ফেসবুকে বলেছিলেন, একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি মসজিদ পুড়িয়ে দেয়া উচিত। এ ঘোষণার পর ঐ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে সন্ন্যাসী সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

থাইল্যান্ড সম্পর্কে অনেকেরই নেতিবাচক ধারণাও রয়েছে। দেশটিকে পতিতাদের দেশও বলা হয়। জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে পতিতা বৃত্তির উৎস থেকে। মূলত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে যা প্রয়োজন সবই এখানে আছে। এত কিছুর পরও আশার কথা হলো, থাইল্যান্ডে সাম্প্রতিক সময়ে ‘আল ফাতুনি’ নামে একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চালু হয়েছে ইসলামি ব্যাংক ‘ইসলামি ব্যাংক অব থাইল্যান্ড। ’ যার বেশিরভাগ গ্রাহকই হচ্ছেন অমুসলিম। আর ব্যাংকটির ডিপোজিটও সন্তোষজনক বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। তা ছাড়া থাইল্যান্ডে হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বের সেরা ‘রেড বোল’ নামে পানীয়টিও হালাল ফুড ইন্ডাস্ট্রিজেরই একটি পণ্য। আরও মজার বিষয় হলো, এখন থাইল্যান্ডের মসজিদগুলোও পর্যটকদের টানছে। অন ইসলামের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডে বেড়াতে যাওয়া প্রায় ১০ শতাংশ পর্যটক বেশ ঘটা করে ঐতিহাসিক মসজিদগুলো দেখতে যান। ফলে ওই সব মসজিদকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে খাবার ও হালকা শখের জিনিস বেচাকেনার দোকান।

থাইল্যান্ডে হালাল খাবারকে আরও জনপ্রিয় করতে সম্প্রতি ওই দেশে অবস্থিত কাতার দূতাবাসের উদ্যোগে হালাল খাদ্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এ প্রদর্শনীর অবকাশে পবিত্র কুরআনুল কারিম তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন গ্রুপে অনুষ্ঠিত এ কুরআন প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব ছিলেন থাইল্যান্ড ও আল আজহার ইসলামি কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা।

থাইল্যান্ডে বসবাসরত মুসলমানদেরকে কুরআনুল কারিম হেফজ, তেলাওয়াত এবং হাদিস পাঠের প্রতি উৎসাহ প্রদান ও গবেষণার প্রতি উৎসাহ দেওয়ার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাটির ব্যবস্থা করা হয়। এমন একটি সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্যে প্রতিযোগিতা আয়োজনকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত। ৫ টি গ্রুপে বয়সভিত্তিক এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতি গ্রুপের বিজয়ী প্রতিদ্বন্দীদের বিভিন্ন অংকের নগদ অর্থ পুরস্কার প্রদান করা হয়। থাইল্যান্ডে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মসজিদ (৩ হাজার ৪ শ’ ৯৪টি) রয়েছে। এর মাঝে প্রাচীন কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৩শ’ বছর পূর্বে। এসব মসজিদের প্রায় সবগুলোর সঙ্গেই রয়েছে মাদ্রাসা। হাল সময়ে থাইল্যান্ডে তাবলিগের কাজ এগিয়ে চলছে প্রচণ্ড গতিতে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলো অনেকটা স্বাধীনভাবেই পালন করতে পারেন। দুই ঈদে সরকারি ছুটি না থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে খুব সহজেই ছুটি নেয়া যায়। রোজার সময় এখানকার মুসলমানরা একসঙ্গে মসজিদে ইফতারের আয়োজন করতে পারেন। সে সাথে তারাবি ও ঈদের নামাজও। অনেক মসজিদে জুমার দিন খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। থাই মিষ্টি, ভাত, মুরগির গোশত, গরুর গোশত, বিভিন্ন রকমের ফল ও কোকাকোলা দিয়ে আগত মুসল্লিদের আপ্যায়ন করা হয়। এটা তাদের আন্তরিকতার প্রকাশই বটে।

থাইল্যান্ডের মুসলিমরা বেশ আত্মসম্মান সম্পন্ন, স্বাধীনচেতা ও শান্তিপ্রিয়। দেশটিতে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া মুসলমানরা বেশ স্বস্তিতেই রয়েছেন। তারা বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে স্বাধীনভাবেই নিজেদের ধর্মচর্চা, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষা লাভের সুযোগ এবং তারা নির্বিঘ্নে চর্চা করতে পারেন। দেশটিতে মুসলমানরা দ্রুত বর্ধিষ্ণু এবং উদীয়মান শক্তি। তাই মুসলিম বিশ্ব যদি তাদের দিকে খেয়াল রাখে তাহলে তারা আগামী দিনে সম্ভবনা শক্তি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্টরা বিশ্বাস করেন।