প্রফেসর ড. এবিএম. মাহাবুবুল ইসলাম
পিআর পদ্ধতি বা সিস্টেম হলো আনুপাতিক জন প্রতিনিধিত্ব মূলক নির্বাচন (Proportional Representative Election System) এ পদ্ধতি চলমান নির্বাচনের চেয়ে অনেকটা ভিন্নতর। চলমান পদ্ধতি হলো ৩০০ শত নির্বাচনি আসনে একক ব্যক্তির প্রত্যক্ষ ভোট প্রদানের মাধ্যমে স্বস্ব পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করা প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় (Constituency) সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত প্রার্থী নির্বাচিত হবেন জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে যাকে সংক্ষেপে বলা হয়ে থাকে এম.পি। তবে পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি নির্বাচনি এলাকার ভোটারগণ কোন ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে তার পছন্দের দলকে বা জোটকে ভোট দেবেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ প্রস্তাবিত পদ্ধতি নতুন বটে তবে বিশ্বের প্রায় ৯০ টি দেশে পিআর পদ্ধতি এর বিভিন্ন ফরমেট চালু আছে বলে দাবি করা হয়। জুলাই বিপ্লব’ ২০২৪ এর পর নির্বাচন এবং সংবিধান সংস্কার কমিটির সামনে এ প্রস্তাবটি এখনও আলোচনাধীন রয়েছে। এর পক্ষে বিপক্ষে জোরালো বক্তব্যও চলমান রয়েছে। এতদ বিষয়ে চলমান সাংবিধানিক ভাষ্য কি, এর বিপরীতে যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা, রাজনৈতিক দল বিশেষভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (বিজেআই)নিজ নিজ পর্যালোচনা এবং লেখকের নিজস্ব বক্তব্য সংযোগ করার লক্ষেই প্রর্ণীত হলো এ সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটি।
চলমান পদ্ধতি এবং নতুন পদ্ধতি দু’টোই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদের আলোকে চলমান পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে “একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকা সমূহে হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে.... তিনশত সদস্য লইয়া.... সংসদ গঠিত হইবে।” এর অর্থ প্রত্যেক নির্বাচনি এলাকায় সর্বমোট ৩০০ টি আসনে ৩০০ জন সংসদ সদস্য (এমপি) থাকবেন। নতুন পিআর পদ্ধতিতেও ৩০০ শত আসনে প্রতিটি জোটের বা দলের সর্বাধিক ৩০০ শত প্রার্থী থাকবেন। পার্থক্য হচ্ছে ঐ প্রার্থী তার নিজের পক্ষের স্থলে তার দল বা জোটের জন্য ভোট প্রার্থনা করবেন। প্রতিটি দল এবং জোটের নিজস্ব ভোট কাস্টিং বক্স থাকবে পূর্বের ন্যায় গোপন কক্ষে। পূর্বের ন্যায় নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোট দান পদ্ধতি এক ও অভিন্ন থাকতে পারে। আরও একটা পদ্ধতি থাকতে পারে তা হলো: পূর্বের ন্যায় একক ব্যালট বাক্স থাকে এবং ভোটারগণ দল বা প্রতীকের উপর সীল দেবেন। দু’ টোই গণতন্ত্রের ভিন্ন ভিন্ন রূপ বা ধরন। প্রস্তাবিত এ পদ্ধতির পক্ষে বিপক্ষেও মতামত রয়েছে আর থাকাটাই স্বাভাবিক যেহেতু দুটোই মানব প্রসূত চিন্তার ফল। মানব রচিত ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত হলে ওয়াহী বা আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থার প্রয়োজনই হতোনা।
জুলাই বিপ্লব’ ২৪ এর পর ‘বিএনপি’ এবং ‘বিজেআই’ এ দুটি দলই নেতৃ-স্থানীয় প্লেয়ার এর ভূমিকায় রয়েছে, তবে পিআর পদ্ধতির বিষয়ে দু’ দল দুই মেরুতে অবস্থান করছে। জামায়াতে ইসলামী পিআর এর শুধু পক্ষেই নয় বরং উদ্যোক্তাও বটে। অপর দিকে বিএনপি এ পদ্ধতির সম্পূর্ণ বিরোধী। বিএনপির চলমান সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদের আলোকে শুধু নির্বাচনের পক্ষেই নয় বরং পিআর পদ্ধতির ব্যাপারে এর অনেক তীর্যক মন্তব্যও রয়েছে। মনে হচ্ছে তারা পিআর পদ্ধতি জেনেও না জানার ভান করেই চলেছেন। অথচ বিষয়টা একেবারেই সহজ। যেমন পিআর (Proportional Representative) এর মাধ্যমে ভোটারগণ কোন ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে তার পছন্দের দল বা জোটকে ভোট দেবেন। ৩০০ শত আসনের প্রাপ্ত ভোট একক ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হবে এবং সে আলোকে সংসদীয় সীট নির্ণীত হবে। এক্ষেত্রে এক শতাংশ (১%) এর মান হবে ৩ (৩০০ শত সীটের হিসেবে) এর অর্থ সারা দেশের প্রদত্ত ভোটের ১ শতাংশ প্রাপ্ত দল বা জোট পাবেন ৩ টি সংসদীয় আসন, অনুরূপভাবে ৫০ শতাংশ ভোট প্রাপ্ত দলের আসন সংখ্যা হবে ১৫০ টি। একক ভাবে সরকার গঠনের জন্য ৫১ শতাংশ ভোটের প্রয়োজন হবে। এ পদ্ধতিতে ছোট-বড় সকল দল এবং জোট উপকৃত হবেন, মূল্যায়িত হবেন। বিপরীত পক্ষে চলমান পদ্ধতিতে সর্বাধিক ভোট প্রাপ্ত দল এবং জোটের প্রাপ্ত সীটের সংখ্যাও কমে যেতে পারে এবং অতীতে হয়েছেও তাই। যেমন ১৯৯১ এর নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী প্রাপ্ত ভোটের পরিমান ছিল ১২ শতাংশ আর প্রাপ্ত আসন ছিল ১৮টি। বিপরীত পক্ষে জাতীয় পার্টির প্রাপ্ত ভোট ছিল ১১.৯ শতাংশ আর প্রাপ্ত আসন ছিল ৩৫টি। অনুরূপভাবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ৩৭.৪৪ শতাংশ ভোটের বিপরীতে ১৮৬ সীট পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে আর ৩৩.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে বিএনপি ১১৬ টি সীট পেয়ে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়। দৃশ্যমান বিষয় হচ্ছে: ৩.৩৪ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে সীটের সংখ্যা কমে গেল ৭০টি অথচ পিআর পদ্ধতিতে এর ব্যবধান হতো ৯টি সীট মাত্র। এমন সহজ এবং সরল ব্যবস্থা বিএনপি বোঝে না (তা মানেনা) এমন বক্তব্য বিএনপি’র মত বড় দলের পক্ষে শোভনীয় নয়। এটাকে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব বলা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে! মূল বিষয় এটি নয় মূল বিষয় হলো বিএনপির নিজ দলের গণতন্ত্রহীনতা, নেতৃত্বের সংকট, শৃংখলার অভাব ৩০০ আসনের বিপরীতে ৩/৪ হাজার প্রার্থী, অথচ পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি দল এবং জোটকে সর্বাধিক ৩০০ সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম নির্বাচন কমিশনে নির্বাচনের পূর্বেই জমা দিতে হবে। এর বেশী নয়।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ এজন্যই বলে দিয়েছেন যে, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন দলকে স্বৈরাচারের ভ’মিকায় দাঁড় করাবে। এর অর্থ এও হতে পারে যে, প্রথমত: ৩০০ শত আসনে প্রার্থী নির্বাচনে, দ্বিতীয়ত: এ আসনের প্রথম দিকে নাম অন্তর্ভূক্তির প্রতিযোগীতায় এক দিকে নেতৃত্বের পকেট ভারীর সম্ভাবনা, দ্বিতীয়ত: নেতৃত্বকে চেয়ে কান বন্ধ করে পছন্দের লোকদের তালিকাভূক্তি করার দৃঢ়তা, এটাও হতেই পারে তাদের ক্ষেত্রে যাদের দলে গনতন্ত্রের চর্চা নেই: যাদের প্রধান লক্ষ্য হলো নেতৃত্বের লোভ আর আর্থিক স্বার্থ অর্জন। বিএনপির মধ্যে এ সমস্যা প্রকট। জামায়াতের মধ্যে এ সমস্যা এখনও পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। উল্লেখ্য, এ পদ্ধতিতে আসন বন্টনের বিষয়টি নির্বাচন শুরুর পূর্বেই প্রতিটি দল এবং জোট অনধিক ৩০০ জনের নাম নির্বাচন কমিশনে জমা দেবেন এবং প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবেন। যেমন যে দল বা জোট ৫১ শতাংশ ভোট পাবেন সে দলের লিস্টের প্রথম থেকে ১৫৩ জন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবেন, ৪০ শতাংশ যারা পাবেন সেদলের প্রথম থেকে ১২০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। এভাবে শতাংশের হিসেবে অপরাপর দলের বিজয়ীদের নামও ঘোষণা করা হয়। এক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, ৪০ শতাংশ করে দু’টো পেয়ে গেলে বাকী ১০ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রার্থী বা জোটের ব্যাপারেও একটা নীতিমালা তৈরী করা যেতে পারে।
পিআর পদ্ধতিই সংবিধান প্রদত্ত অধিকার এবং ক্ষমতা প্রয়োগের নির্ভর যোগ্য ব্যবস্থা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রণেতা বা বিধায়কদের এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্বের বিষয়টি আলোচনার দাবিদার সমকালীন রাষ্ট্রনীতিতে আইন পরিষদ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ বলে ধরা হয় এবং তা স্বীকৃতও বটে। (উল্লেখ্য এ প্রতিবেদকের মতে ৪র্থ মৌলিক স্তম্ভটি সংস্কৃতি এবং সভ্যতা হওয়া উচিত)। (Culture &Civilization) । এ ব্যবস্থার অর্থ হলো: আইন পরিষদ আইন প্রণয়ন এবং সংশোধন করবে, শাসন বিভাগ প্রণীত আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনা করবে আর বিচার বিভাগ প্রণীত আইন অনুযায়ী বিচার ফয়সালা করবে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ থেকে ৯৭ অনুচ্ছেদ পর্যন্ত ৩২ টি অনুচ্ছেদের সবগুলোতেই পার্লামেন্ট সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতি, তাদের যোগ্যতা, এবং ক্ষমতা ও দায়দায়িত্বের কথাই বলা হয়েছে। এর কোথাও তাদের প্রশাসনিক কোন অধিকার বা ক্ষমতার কথা বলা হয়নি, না তাদের নির্বাচনি এলাকায় না দেশের কোন অঞ্চলে। তবে তিনি মন্ত্রী হলে ভিন্ন কথা। তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে প্রশাসনিক এ দায়িত্বটি কার? সংবিধানের ৫৯-৬০ এ দু’টি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এ দায়িত্ব হলো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনি প্রতিনিধি যেমন উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদের সভাপতি বা মেয়র মহাদয়ের হাতে। অনুরূপ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের পক্ষ থেকে উপজেলা এবং জেলা পরিষদ এবং মেট্রোপলিটন সিটির অধিনস্থ থানা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), জেলা প্রশাসক (ডিসি) প্রমূখ এ দায়িত্ব পালনের সাংবিধানিক স্বীকৃত কর্মকর্তা। এমপিগণ (Member of Parliament) আইনগতভাবে, যৌক্তিকভাবে এবং নৈতিকভাবে প্রশাসনিক কর্মের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কোনই সুযোগ নেই। অথচ অন্যায়ভাবে চলে আসা প্রথাগত নীতিতে এম পি গণ সকল প্রশাসনিক কর্মের সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে রেখেছেন। এটা চরম বেআইনি, নিয়ম বহির্ভূত মাতুব্বরী যাকে প্রতিবেশীর বাড়া ভাতে ভাগ বসানোর শামিল বলা যেতে পারে। পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে এম পি বা বিধায়কগণ হবেন সারা দেশের জন্য এম পি, কোন নির্বাচনি অঞ্চলের জন্য নয়। এলাকার জনকল্যাণে হয়তো তিনি কাজ করবেন কিন্তু প্রশাসনের উপর কোন কর্তৃত্ব এবং খবরদারী হবে বেআইনি এবং অসাংবিধানিক। এ ব্যবস্থার সুফল হলো: তিনি যোগ্য বিধায়ক হয়ে দেশ ও জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবেন আর জেলা পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার তার উপর প্রদত্ত প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকে নেতৃত্ব সৃষ্টির অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশকে সঠিক পথে পরিচালনার লক্ষ্যে এটাই চলমান সংবিধানের মূলকথা। পিআর পদ্ধতি এ অবস্থার অবসান ঘটাতে সক্ষম হতে পারে কারণ এ ব্যবস্থায় এম পি দের স্থানীয় কোন পদ পদবী থাকবেনা।
তবে এটাও ঠিক যে, পিআর ব্যবস্থা যে রাতারাতি দীর্ঘ লালীত অসাংবিধানিক ব্যবস্থার উপসম ঘটাতে পারবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়না। তবে শুরু করতে পারাটাই একটা বড় সাফল্য। কারণ মানব প্রসূত কোন ব্যবস্থাই সমালোচনা এবং ত্রুটিমুক্ত নয়। চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও মানব প্রসূত ব্যবস্থা। এর প্রকৃত সমাধান পেতে হলে ইসলাম প্রদত্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে হবে আর এ ব্যবস্থার জন্য জনগণকে ইসলামের বন্ধু হতে হবে যা বর্তমানে ব্যাপকভাবে অনুপস্থিত। প্রস্তাবিত এ নতুন পদ্ধতি পুরোপুরি ইসলামী না হলেও এ ব্যবস্থা সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জবাবদিহিতার অধীনে আনার পথ সুগম হতে পারে। এজন্য যে, এতে বিধায়কগণ বিধান রচনায় আর স্থানীয় সরকার সহ সরকারের কর্মকর্তাগণ প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত থাকবেন। এতে খবরদারী করাটা হবে অসাংবিধানিক।
বহুদল বহু এলাইয়েনসে বহু প্রার্থী একক স্বতন্ত্র প্রার্থী বিষয়ক সমস্যার করণীয়টা একটা চ্যালেনজিং বিষয়। এ সমস্যাটি পিআর বিষয়সহ অপরাপর বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত । এ সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক সমাধান নির্বাচনে প্রার্থী হলোঃ প্রতিটি দলকে নিবন্ধিত হতে হবে, স্বতন্ত্র কোন প্রার্থী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেনা। কারণ রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্যই হলো রাষ্ট্র ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করা।
এক জন দল বা জোটবিহীন ব্যক্তি কোনভাবেই সরকার গঠন করতে পারবেননা। অতএব, পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নমিনেশন গ্রহণ যোগ্য হওয়া উচিত হবেনা। নিম্ন আইন পরিষদে পিআর পদ্ধতির উপস্থিতির ফলে এম পি প্রার্থীগণ ৩০০ নির্বাচনি আসনের যে কোন একটি এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা চালাবেন। তাকে নয় বরং তার দলকে বা জোটকে ভোট দেয়ার আহবান জানানোর জন্য। নির্বাচিত তালিকায় তার নাম আসলে তিনি হবেন জাতীয় এম পি বা বিধায়ক। এতে কোন নির্দিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় তার রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব, কর্তব্য বা ক্ষমতা থাকবেনা। এর ফলে তার নির্বাচনী ব্যয় কমে যাবে, সময় বাঁচবে, আইনী গবেষণা কর্মে দেশ-জাতী ও বিশ্ববাসী তার রাষ্ট্র জ্ঞান থেকে উপকৃত হবেন। অনুরূপ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নির্বাচিত এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণও তাদের যোগ্যতার সাক্ষর রাখতে সক্ষম হবেন।
পরিশেষে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, কোন মানব রচিত ব্যবস্থা যেমন ত্রুটিমুক্ত নয় তেমনি চিরস্থায়ীও নয়। তবে চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থার আলোকে পিআর ব্যবস্থাকেই সর্বাধিক গ্রহণ যোগ্য বলা যেতে পারে। কারণ, এতে প্রত্যেক দলের যোগ্য ব্যক্তিগণ বিধায়ক হতে পারবেন, সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা ও অধিকার যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দলে গণতন্ত্রের চর্চার দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবেন। ছোট ছোট দলগুলো তাদের অস্তিত্বের স্বার্থেই জোটের সাথে সম্পৃক্ত হবেন এবং জোটের কল্যাণ ও স্থায়ীত্বের লক্ষ্যে কাজ করবেন, সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব প্রাপ্ত দল ও জোট তার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই নির্বাচনী ইশতিহার পালনে তৎপর হবেন যাতে জুলাই ২৪ এর গণরোশে পড়তে না হয়। সর্বোপরি এ অবস্থায় জনকল্যাণ এবং জবাবদিহীমূলক সরকার গঠিত হবে বলে আশা করা যায়। এ ব্যবস্থা গ্রহণ যোগ্য হোক এ প্রত্যাশায় আজকের প্রতিবেদনের সমাপ্তি টানছি।
লেখক : আইন বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। সাবেক ডীন এবং চেয়ারম্যান আইন অনুষদ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং আশা বিশ্ববিদ্যালয়।