সাবরিনা জাহান

ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত। শিক্ষা জাতিকে দক্ষ জনশক্তি, সচেতন নাগরিক ও মানবসম্পদে রূপান্তর করে। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে যাতে তত বেশি উন্নত। শিক্ষিত জাতি দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানসম্মত ও টেকসই উন্নয়নে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো অতীব জরুরি। ২০২১ সালে করোনা মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাখাত। প্রাথমিকে ঝরে পড়েছে প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। ইউনিসেফ এ তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকে ঝরে পড়েছে ১৪.৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ঝরে পড়েছে ৩৫.৬৬ শতাংশ। এ ঝরে পড়া শিশুদের হার দিন দিন বেড়ে চলেছে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেট ভর্তির হার ছিল ৯৭.৪২ শতাংশ। কিন্তু প্রাথমিকের শিক্ষা সম্পন্ন করার হার ছিল ৮৫.৮৫ শতাংশ। মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার ৩৫.৬৬ শতাংশ। এদের ফিরিয়ে আনতে হলে আর্থিক নিরাপত্তা ও সহায়তা দিতে হবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি অনুপাতে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ জিডিপি তুলনায় ১.৬৯% কথা বলা হয়েছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে মোট বরাদ্দ ছিল জিডিপির এক দশমিক ৭৬ শতাংশ। মেয়েদের শিক্ষা ভাতা বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহের হার রোধ, উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষ প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ দান, শিক্ষার মান উন্নয়ন করাসহ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাতেও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।

বাংলাদেশ তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে চীনের ব্যয় প্রায় ৭ গুণ বেশি। চীনের তুলনায় জার্মানিতে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় সাত থেকে আট গুণ বেশি। পূর্বের তুলনায় যদিও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ অনেক অংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে স্বাস্থ্যখাতে জনগণের ব্যয় নিরাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন ব্যতীত একটি রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মানুষের জীবনধারণের জন্য অন্যতম পরিহার্য উপাদান। দেশের সার্বিক উন্নয়নে কথা বিবেচনা করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কেননা একটি শিক্ষিত জনগোষ্ঠী যেমন দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারে, তেমনি একটি সুস্থ জাতি কর্মক্ষমতা উৎপাদনশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।