মিয়ানমারের সামরিক জান্তা আগামী ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। এক মাস ধরে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা সরকার। তার একটি হলো নির্বাচনের নামে একটি মূলা ঝোলানো। ২০২১ সালে রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিলো জান্তা সরকার। সে সময় ক্ষমতা দখলের পর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিছু সময় বাদ দিলে আমাদের প্রতিবেশী দেশটি দীর্ঘ সময় ধরে সেনা শাসনে ছিল। দেশটিতে আরো সংকট বিদ্যমান। দেশের পুরো অংশের উপর জান্তা সরকারের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে দেশটি কার্যত বিচ্ছিন্ন। দেশটির আরাকান রাজ্য থেকে চরম হত্যা নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ রোহিঙ্গা। বিষয়টি নিয়ে এখনো সুরাহা হয়নি, তাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনার পর্যায়েই রয়ে গেছে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে ফিরে আসি। দেশটির গণতান্ত্রিক শাসন ক্ষণস্তায়ী, নির্বাচনও হয়েছে খুবই কম। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে বিরোধী দল অংসান সুচির এনএলডি সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। দলটি ২০১০ সালের নির্বাচন বয়কট করে, এতে সেনাসমর্থিত দল বিজয়ী হয়। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি আসনের মধ্যে ৪৩টি লাভ করে। ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল বিশাল বিজয় অর্জন করে এবং ক্ষমতায় বসতে সক্ষম হয়। ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে উৎখাত করা হয়। বর্তমান নির্বাচনের হাল হকিকত হচ্ছে, ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছে জান্তা সরকার। যা বিশ্লেষকদের মাঝে বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি করে। তারা একটি বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে বলে বলা হচেছ। আর ডিসেম্বরে হবে নির্বাচন। সে পরিকল্পিত জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সরকার গঠন করা হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দায়িত্বের পাশাপাশি জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বলা হচ্ছে ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীকে যে ফরমানের (ডিক্রির) মাধ্যমে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করা হয়েছে এবং আসন্ন নির্বাচন তত্ত্বাবধানের জন্য একটি বিশেষ কমিশনও গঠন করা হয়েছে।
সব ভাল ভাল কথা। তবে সরকারে বা প্রশাসনে তেমন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তার মানে প্রকারান্তরে সাবেক ব্যবস্থাই বহাল। বিশ্লেষকরা বলেছেন, মিয়ানমার জান্তার এ পদক্ষেপে দেশটির ক্ষমতাকাঠামো পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত নেই। কারণ, সামরিক অভ্যুত্থানের নেতা মিন অং হ্লাইং এখনো ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টসহ সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সামরিক বাহিনীর প্রধানের পদও ধরে রেখেছেন।
২০২১ সালে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির সরকারকে উৎখাতের পর থেকে মিয়ানমার চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। তখন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখো মানুষ। সেখানে কার্যত এখন তিনটি প্রশাসন রয়েছে। আর পুরো দেশের উপর জান্তা সরকারের নিয়ন্ত্রণ সেই। দেশের অর্ধেকেরও বেশি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বিরোধী একাধিক পক্ষ।
দেশের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে? ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পলিসির এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি বলা হয়েছে, জান্তা বাহিনি স্টেট এডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) মিয়ানমারের ৫০ শতাংশেরও কম নিয়ন্ত্রণ করে, যার মধ্যে ৭৭ শতাংশ প্রধান শহর অন্তর্ভুক্ত। প্রবাসী জাতীয় ঐক্য সরকারের প্রতি অনুগত জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএওএস) এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সমন্বয়ের ফলে বেশ কয়েকটি বৃহৎ শহরতলি সহ বিভিন্ন অঞ্চলের হাতবদল দেখা গেছে। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের সাথে প্রায় সমস্ত সরকারী বাণিজ্য পোস্ট জান্তা বাহিনির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের স্থল সীমান্ত এখন সম্পূর্ণরূপে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, জান্তার ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের চার বছর পর মিয়ানমারের সামরিক সরকার দেশের মাত্র ২১ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে বিদ্রোহী বাহিনী এবং জাতিগত সেনাবাহিনী ৪২ শতাংশ দখল করে। জাতিসংঘ জানিয়েছে যে এ সংঘাতের ফলে ত্রিশ লক্ষেরও বেশি বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং পঁচাত্তর হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে। সম্প্রতি কিছু কিছু এলাকা জান্তা বাহিনি পুনরুদ্ধার করেছে বলেও খবর পাওয়া গেছে। ক্ষমতাচ্যুত এনএলডি নেত্রী ও সাবেক স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচিসহ কয়েকটি বিরোধী দল উক্ত প্রবাসী জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করেছে। যদিও সুচি এখন গৃহবন্দী।
দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেকে নির্বাচনের এ আয়োজনকে লোক দেখানো বলে অভিহিত করছে। বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী জানিয়েছে, তারা কেন্দ্রগুলোয় কাউকেই ভোট দিতে দেবে না। ফলে মিয়ানমারে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে বিবিসি দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত প্রচারমাধ্যমের সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে প্রায় ৫৫টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে ৯টি দল সব আসনে লড়াই করবে। এবারের নির্বাচনে সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি অংশ নিতে পারছে না। এর আগের দুই নির্বাচনে সুচির দল ভূমিধস জয় পেয়েছিল। এবার রাজনৈতিক কারণে তার দলকে অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। বিবিসি বলছে, ‘ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন প্রসঙ্গে জান্তা সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। তবে এক্ষেত্রে জান্তা সরকার তার নিকটতম প্রতিবেশী চীনের সমর্থন পাচ্ছে। কৌশলগত স্বার্থের জন্যই তারা মিয়ানমারের নির্বাচনকে সমর্থন জোগাচ্ছে। এদিকে বিশ্লেষকদের দাবি, নির্বাচনের মাধ্যমে জান্তা সরকার নিজ ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা এ নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দলকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করবে।’ ৫৫টি দলের কথা বলা হলেও তারা নাম সর্বস্ব ও প্রক্সি দল এটা বলাই বাহুল্য।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রু বিবিসিকে জানিয়েছেন, জান্তা সরকার নিজ বৈধতা অর্জনের জন্য নির্বাচনের এক মরীচিকা তৈরি করছে। তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে এ নির্বাচনকে সমর্থন দেওয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। দেশটির অর্থনীতিও ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া গত মার্চে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও দেশটির প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ বিপর্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করলে তা সুষ্ঠু হবে না বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত।
দি ইরাবতী অনলাইন জানাচ্ছে, ‘মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, অর্ধেকেরও বেশি দেশ দারিদ্র্যের কবলে পড়েছে এবং ৩৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জান্তা সরকার নির্বাচনকে সংঘাতের অবসানের উপায় হিসেবে প্রচার করেছে এবং ভোটের আগে অস্ত্র সমর্পণ করতে ইচ্ছুক বিরোধী যোদ্ধাদের নগদ পুরষ্কার প্রদান করেছে। তবে, সুচি এখনও কারাগারে রয়েছেন, অন্যদিকে অভ্যুত্থানের ফলে ক্ষমতাচ্যুত অনেক বিরোধী আইন প্রণেতা এটি বয়কট করছেন এবং জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ এ ভোটকে অব্যাহত সামরিক শাসনের নামকরণের জন্য “জালিয়াতি” বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন ভোটটি ইতিমধ্যেই বিভক্ত বিরোধী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে আরও বিভক্তি সৃষ্টি করতে পারে।’ মিয়ানমারের আসন্ন নির্বাচনকে পশ্চিমা সরকারগুলো প্রহসন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, এ নির্বাচন জেনারেলদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার উপায় ছাড়া কিছু নয়।
মূলত সাড়ে পাঁচ কোটি জনসংখ্যার মিয়ানমার নামে একটি সংসদীয় প্রজাতন্ত্র হলেও দেশটির রাজনীতি গোলযোগময়। দীর্ঘ সময় ধরে দেশটি সামরিক শাসনে থেকেছে, এখনো আছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে। দেশের বাজেটের ১৫%-ই সামরিক খাতে বরাদ্দ করা হয়। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপক ইতিহাস বিদ্যমান। নৃগোষ্ঠীগত সংঘাত, সামরিক দমনপীড়ন ও পৌর এলাকাগুলিতে অপরাধের উচ্চহার জনগণের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। মিয়ানমার সোনালী ত্রিভুজের অংশ বিধায় ব্যাপক পরিমাণ মাদক চোরাচালান ঘটে, যা সংঘবদ্ধ অপরাধ ও অস্থিতিশীলতাকে উস্কে দেয়। সহিংসতার কারণে ৩০ লক্ষেরও বেশি ব্যক্তি বাস্তুচ্যুত হয়েছে ও তাদের জন্য সরকারি সহায়তা খুবই সীমিত। রাখাইন প্রদেশ থেকে আসা ১২ লাখের বেশি রোাহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে। এ নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা হলেও তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি মোটেই আগায়নি। মিয়ানমার আসিয়ান ও জাতিসংঘের সদস্য হলেও দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বিদ্যমান। চীনের সাথে দেশটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও মানবাধিকার লংঘনের কারণে পশ্চিমা দেশগুলির সাথে সম্পর্ক শীতল।
দেশটির গণতান্ত্রিক শাসন ক্ষণস্তায়ী তা আগেই বলেছি। অং সান সু চির দল এনএলডি ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সংসদের ৮১% আসন পেলেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর দীর্ঘ সংগ্রাম করেও তারা নির্বাচন আদায় করতে পারেনি। ২০১০ সালে নির্বাচন দেয়া হলেও তারা বয়কট করে, যা সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে তাৎপর্যপূর্ণ বিজয় এনে দেয়। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে সু চি সংসদের নিম্নকক্ষের এমপি হন এবং তার দল ৪৫টি ফাঁকা আসনের মধ্যে ৪৩টিতে জয়লাভ করে চমক সৃষ্টি করেন। তিন বছরের মাথায় ২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার দল বিশাল বিজয় অর্জন করে, অ্যাসেমব্লি অফ দ্য ইউনিয়নের (সংসদ) ৮৬% আসন অর্জন করে। সু চি-র প্রয়াত স্বামী ও সন্তানেরা বিদেশি নাগরিক হওয়ায় সংবিধান অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না; তাই তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা বা স্টেট কাউন্সেলর পদ গ্রহণ করেন, যা প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধানের সমান। গণতন্ত্র ও মানবতার পক্ষে সংগ্রামের জন্য তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৯১) সহ আরো অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন, যদিও রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে তার ভূমিকা তীব্রভাবে সমালোচিত। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমত্যাচ্যূত হন, বর্তমানে তিনি ও তার দলের অধিকাংশ নেতা গৃহবন্দী।
এসব বিবেচনায় বিভিন্ন পক্ষ কৌতুহলের সাথে দেশটির আগামী নির্বাচনের বিষয়টি দেখছেন। তারা তো বটেই মিয়ানমারের এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশটির বিরোধী দলগুলোর অধিকাংশ নেতাই যখন কারাবন্দি তখন এ নির্বাচন কীভাবে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে তা পরিষ্কার নয়। ফলে জান্তার এই কৌশলও কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক।